ইনসাইড পলিটিক্স

ঘনিষ্ঠ আত্নীয়ই দুদক ছাড়পত্র দেয় মিঠুকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2020


Thumbnail

দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের সঙ্গে মিঠুর ইঁদুর দৌড় সেই ২০১১ সাল থেকে। মিঠুর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগপত্র গঠন করা হলেও জাল ছিড়ে কিভাবে যেন মুক্ত স্বাধীন হয়ে যায় মিঠু। মিঠুর এই খুঁটির জোর কোথায়? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বশে এনে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এক কথা, কিন্তু দুদক থেকে ছাড়পত্র পায় কিভাবে? সেক্ষেত্রে মানুষ দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুলও তুলছে।

তবে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সৎ, সজ্জন, বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। তিনি দায়িত্ব পালনকালে দেশের অনেক বড় বড় রাঘব বোয়ালকে এনেছেন আইনের আওতায়। তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের দুর্নীতি দমন করার জন্য। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর দুদকের বেশ কিছু দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে এমন আন্তরিক আরও অনেকেই আছেন। যেমন দুদুক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সৎ, মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। বাকি থাকে কি?

দুর্নীতি দমন কমিশনে এখনো কিছু দুর্বৃত্ত রয়ে গেছে। যাদের কারণে প্রতিষ্ঠানটি সমালোচনার মুখেও পড়ছে বারবার। এর মধ্যে অন্যতম দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুবিধা দেয়ার সুযোগ করে দেন। যা ফাঁস হয়ে গেলে বাছিরও ফেঁসে যান। দুদক তাকে ছাড় দেয়নি। বাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানসহ কমিশনের অনেকের আন্তরিকতা সত্বেও দুদক সেই উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারছে না। কারণ নিচের দিক থেকে কিছু অফিসার লাগাম টেনে ধরছেন।

সাম্প্রতিক সময় পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের আলোচিত মাফিয়া ডন মোতাজ্জেরুল মিঠুর এক নিকটাত্নীয় এই সংস্থার পরিচালক পদে রয়েছেন। যার ফলে মিঠু বারবার দুদকের ‘সাদা’ সার্টিফিকেট পাচ্ছে। এই আত্নীয়র যোগসাজশেই মিঠুর দুর্নীতির ফাইল বারবার ধামাচাপা পড়ে যায়। দুদকের বারবার পাঠানো চিঠিও তাই তোয়াক্কা করতে হয় না মিঠুর। আর দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ছাড়পত্র পেয়ে মিঠু আরও দুর্নীতিতে মাতে। যার ফলে স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা বেহাল থেকে বেহালতর হয়।  শুধুমাত্র মিঠুকে বাঁচানোই নয়, মিঠুর প্রতিদ্বন্দ্বিদের মামলায় জড়িয়ে তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়াও এই দুদক কর্মকর্তার কাজ। মিঠুর সঙ্গে মিলে তাদেরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কাজ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই কর্মকর্তা এমন পরিস্থিতি তৈরী করেছেন, যেন মিঠুই স্বাস্থ্যখাতে শুধু ব্যবসা করতে পারেন। গতকাল বাংলা ইনসাইডার ‘এবারও কি মিঠুকে সততার সার্টিফিকেট দেবে দুদক?’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যার ফলে দুদকে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। মিঠুর মতো দুর্নীতিবাজ একজনকে কিভাবে দায় মোচন দেওয়া হলো তা নিয়ে কমিশনের শীর্ষ মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এবার মিঠুকে শক্ত হাতে ধরা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনে মিঠুর যে আত্নীয় তাকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সূত্রমতে, গত অর্ধযুগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে কয়েক দফায় তদন্তের উদ্যোগ নিলেও কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনো নোটিস হলেই হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মিঠু। পরে সেটি নথিভুক্ত করার মাধ্যমে ‘অভিযোগ নিষ্পত্তি’ করিয়ে নেন তিনি। মিঠুর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত একটি ‘নন-সাবমিশন’ মামলা করেছে দুদক। ২০১৬ সালের ১০ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক। গত দুই বছরে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুদক অনেক অনুসন্ধান করলেও মিঠু রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি দুদকের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ১৪ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে সেখানেও মিঠুর ২০ টি প্রতিষ্ঠানের একটিরও প্রতিষ্ঠানেরও নাম নেই।

এরই মধ্যে ১ জুলাই মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘অতীব জরুরি তলবি নোটিস’ পাঠিয়েছে দুদক। দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে তাকে ৯ জুলাই কমিশনে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। যদিও সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, মিঠু দেশের বাইরে অবস্থান করছে। আর মিঠু যে পন্থা বারবার অবলম্বন করেন, তিনি নোটিস কপি পাননি বলে জানান। এবারও তেমন কিছু হচ্ছে কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে। আর মিঠু উপস্থিত না হলে তার যে কোম্পানিগুলো সেগুলোর কার্যক্রম কি স্থগিত করা হবে? মিঠুর আয়কৃত ব্যংক ব্যালেন্স বা অবৈধ সম্পত্তিরও কোন ব্যবস্থা হবে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭