ইনসাইড পলিটিক্স

প্রশাসনে এত জামাত-শিবির এলো কিভাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/08/2020


Thumbnail

সরকারের জন্যে এখন সবথেকে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের ভেতরে থাকা জামাত-শিবিরের অপতৎপরতা। সিভিল প্রশাসনে যেমন, তেমনি পুলিশ প্রশাসনে জামাতের ঘাপটি মারা লোকজন সরব হচ্ছে এবং তাঁরা বিভিন্ন অপকর্মে নিয়োজিত হয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করছে। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল যে এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এখন দেখা যাচ্ছে যে এগুলো বিএনপি-জামাত-শিবিরের চক্রান্ত।

২০০৮ সাল থেকেই জামাত, শিবির এবং বিএনপি সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। সরকারের উদারতার সুযোগে বিএনপি এবং জামাতপন্থি এই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো আছে এবং কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা মনে করছে যে, তাঁরা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়েও শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী। এই জামাত-বিএনপিরাই সরকার যখন কোন সঙ্কটে পরে তখন তারা তাদের অপতৎপরতা শুরু করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য সক্রিয় থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফাহাদ হত্যা বা করোনাকালের বিভিন্ন সঙ্কটে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, যারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় জামাত-শিবির এবং বিএনপিপন্থীরা রয়েছে তারাই সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য নানারকম অপকর্ম করছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রশাসনে এত জামাত-শিবির এলো কিভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মোটা দাগে পাঁচটি কারণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে-

১. আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশ

জামাত-শিবিরের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশে থাকা কর্মকর্তাদের জন্যে পদোন্নতি বা ভালো পোস্টিংয়ের জন্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সুপারিশ করেছেন। তাঁরা জেনে বা অনৈতিক প্রলোভনের শিকার হয়ে এই সুপারিশ করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, একজন জামাতপন্থি সরকারি কর্মকর্তাকে তাঁর জেলায় জেলা প্রশাসক করার জন্যে একজন এমপি সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তীতে ঐ এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এমপি বলেন যে, তাঁর একজন কর্মীর মাধ্যমে তিনি এসেছিলেন এবং নির্দোষভাবে ঐ সুপারিশ তিনি করেছিলেন। একইভাবে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে, বিএনপি-জামাতের লোকজন তাঁদের কথায় ওঠবস করবেন এবং তাঁদের বাধ্য থাকবে এই কারণেই তাঁরা অনেক সময় আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের থেকে জামাতপন্থী কর্মকর্তাদের পছন্দ করে।

২. আওয়ামীপন্থী সহকর্মীদের ভুল তথ্য

সাম্প্রতিক সময়ের একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, একজন ভালো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আওয়ামী পন্থী হিসেবে পরিচিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সচিব, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রুমমেট, যিনি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং একজন মন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন, তাঁকে সচিব বানান এবং আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী ঐ সচিবের আগ্রহে এবং চেষ্টাতে বিএনপিপন্থী ঐ সরকারি কর্মকর্তা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। এরকম ঘটনা ভুঁড়ি ভুঁড়ি রয়েছে। সরকারের প্রশাসনে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত তাঁরা তাঁদের বন্ধুবান্ধব বা অনুজদের সুপারিশ করেন এবং সেক্ষেত্রে তাঁরা ভুলে যান যে তাঁর আদর্শিক অবস্থান কি। এভাবেই প্রচুর জামাত-শিবির প্রশাসনের ভালো জায়গায় ঢুকে পড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

৩. আওয়ামীপন্থী আত্মীয়দের তদবির

আওয়ামীপন্থী অনেক নেতা বা এমপি তাঁর জামাতপন্থী আত্মীয়দের জন্যে সুপারিশ করেন এবং তদবির করেন। এই সমস্ত তদবির হরহামেশাই ঘটছে এবং এই ধরণের সুপারিশ মাঝেমাঝে উপেক্ষা করা যায়না, ফলে তাঁদেরকে পদোন্নতি দিতে, গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দিতে হয়।

৪. কৌশলে ভোল পাল্টে ফেলা

জামাত-শিবির যেহেতু কৌশলে কাজটি করছে তাই তাঁরা কৌশলে ভোল পাল্টে ফেলতে পারে। অনেক সময় তাঁরা নিজেদেরকে নির্যাতিত হিসেবে জাহির করে, পদোন্নতি বঞ্চিত হিসেবে উপস্থাপিত করে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগার হয়ে যান। এভাবেও প্রশাসনে জামাত-শিবির এবং বিএনপির অনেক লোক জাঁকিয়ে বসেছেন।

৫. প্রভাবশালীদের আস্থা অর্জন

অনেক সময় জামাত-শিবির বা বিএনপিপন্থীরা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে প্রভাবশালীদের আস্থা অর্জন করেন এবং প্রভাবশালী মহল সে কোন দল বিবেচনা না করে বরং তাঁদের দক্ষতাকে বিবেচনা করে। এরকমভাবেও অনেক জামাত-শিবির এবং বিএনপি প্রশাসনে ঢুকে পড়েছে।

তবে এখন এটা ভাবার সময় এসেছে যে, এই সমস্ত আদর্শবঞ্চিত বা ভিন্ন আদর্শপন্থী সরকারি কর্তাদের পদোন্নোতি দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া উচিত কিনা। কারণ তাঁরা সঙ্কটের সময় অন্যরূপে আবির্ভূত হয় এবং তারাই সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭