ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে পাকিস্তানপন্থীরা কোণঠাসা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2020


Thumbnail

পাকিস্তানি চিন্তা আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই গঠিত হয়েছিল বিএনপি। পাকিস্তানের সংসদে আইএসআই এর সাবেক প্রধান এক জবানবন্দীতে বলেছিলেন, বিএনপির জন্য আইএসআই নিয়মিত টাকা দিতো। বিশেষ করে ২০০১ এর নির্বাচনে আইএসআই টাকা দিয়েছিলো এমন জবানবন্দী পাকিস্তানের পার্লামেন্টে রেকর্ড করা হয়েছে।

পঁচাত্তরের এর ১৫ আগস্টের ঘটনাটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের একটি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে পাকিস্তানের মদদ ছিল অনস্বীকার্য। পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করা। এই প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে নাই, তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছিল এবং পাকিস্তানি ভাব ধারা বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তাদের একটি রাজনৈতিক দলের দরকার ছিল। কারণ পাকিস্তানপন্থী যে রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম লীগ বা জামাতে ইসলামের জনগ্রহণযোগ্যতা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার কারণে তারা জনধিকৃত এবং জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।

এই বাস্তবতায় একটি মোডারেট গণতান্ত্রিক এবং ইসলামপন্থী খিচুড়ি রাজনৈতিক দল জন্ম দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই রকম একটি খিচুড়ি রাজনৈতিক দল হল বিএনপি। আর এজন্যই বিএনপিতে শুরু থেকে দেখা গিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থী এবং পাকিস্তান ফেরতদের প্রাধান্য। বিএনপি যখন গঠিত হয় তখন শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ ছিলেন রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী। শাহ আজিজ, মাজিদুল হক, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো ব্যক্তিরা শুরুতে বিএনপির নীতিনির্ধারক হয়েছিলেন, যারা ছিলেন পাকিস্তানপন্থী। এছাড়াও, বিএনপির শুরুতে ভারতবিরোধী মুক্তিযোদ্ধারাও জায়গা করে নিয়েছিলেন। যেমন- কর্নেল অলি আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মীর শওকত আলী প্রমুখ। আর এই কারণেই শুরু থেকে বিএনপি পাকিস্তানী ভাবধারা, পাকিস্তানী মোড়কে বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মিশনে ছিল। এ কারণেই তারা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে নাই। এই কারণেই তারা পঁচাত্তরের খুনীদের বিচারের প্রক্রিয়া করেনি। বরং খুণীদের লোভনীয় চাকরি দিয়ে বিদেশে প্রেরণ করেছে। এ কারণেই তারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে নাই। এ কারণেই তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী পথে হেঁটেছিল।

কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৮১ সালের পর শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। চেতনা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বড় যে কাজটি করেছিলেন তাহলো জনগণের জাগরণ করা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আমাদের স্বাধীনতা প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা একটি নিরলস দীর্ঘ কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করেন। তার বাস্তবতায় বাংলাদেশে যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের ঘৃণা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে কোন রকম বিতর্ককে বরদাশত করে না। আর এই বাস্তবতায় যে বিএনপি এক সময় তারুণ্য নির্ভর দল ছিল। সেই বিএনপি তরুণদের কাছ থেকে বিচ্যুত হতে থাকে। সেইসাথে তরুণদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে থাকে। এই বাস্তবতায় বিএনপির ভেতরে পাকিস্তানপন্থীরা আস্তে আস্তে কোণঠাঁসা হতে থাকে। বিএনপিতে যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে, তরুণ প্রজন্মের আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে নীতি কৌশলের পরিবর্তন হতে থাকে। বিএনপিতে এখন ভারতবিরোধী বক্তব্য খুব একটা দেওয়া হয় না। বিএনপিতে এবার ১৫ আগস্টে কেক কাটার উৎসবও হল না। এমনকি যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষে যে প্রকাশ্য অবস্থান ১০ বছর আগে বিএনপি নিতো, এখন বিএনপি নেয় না। এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপিতে কি পাকিস্তানপন্থীরা কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছে?

বিএনপিতে এখন যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন, তাদের মধ্যে ভারতপন্থী বা প্রাক্তন বিভ্রান্ত বামদের প্রাধান্য বেশি। নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো চৈনিক বামরা এখন বিএনপিতে প্রাধান্য বিস্তার করছেন। বিএনপি’র অর্থ প্রবাহের উৎসে যারা আছেন। যেমন- আবদুল আওয়াল মিন্টুরা তারাও ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। এই বাস্তবতায় বিএনপিতে পাকিস্তানপন্থীরা কি কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছেন? আর এই কারণেই কি বিএনপির নীতি কৌশলের পরিবর্তন হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তেমনটি মনে করছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপিতে পাকিস্তানপন্থীদের প্রধান হোতা তারেক জিয়া। তারেক জিয়া শুধু পাকিস্তানী এজেন্ট নয়, পাকিস্তানপন্থীদের সৃষ্টি। এখন বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হয় তারেক জিয়ার নির্দেশেই। কাজেই বিএনপিতে পাকিস্তানপন্থীরা কোণঠাসা হয়েছেন এমনটি ভাবার কোণ কারণ নেই। বরং পাকিস্তানীদের কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসাবেই বিএনপি হয়তো এখন এই সব বিষয়ে নমনীয় অবস্থানে আছে। সুযোগ পেলে তারা খোলস পাল্টে ফেলবে এবং পঁচাত্তরের সময় তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতার যে ভূমিকা ছিল, সেই রকম ভূমিকা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এতোটুকু পিছপা হবে না।                            

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭