কালার ইনসাইড

দেশী ওটিটি প্ল্যাটফর্মঃ পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর ইনভেস্টমেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2020


Thumbnail

 

আপনি কি জানেন বাংলাদেশ থেকে নেটফ্লিক্সের আয় কতো? আপনি কি জানেন বাংলাদেশে নেটফ্লিক্স ছাড়াও আরো কি কি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাদের ব্যবসা করে যাচ্ছে। অথবা তাদের সফলতা কতটুকু!

২০১৬ সাল! যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স প্রবেশ করে বাংলাদেশে। কিন্তু সেই প্রবেশ অফিশিয়ালি নয়। এশিয়া অঞ্চলে এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসা শুরু করে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে। সে বছর এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও রিড হ্যাস্ট্রিংস বলেছিলেন এশিয়াতে তাদের সাফল্য সময়ের ব্যপার মাত্র। হ্যা ঠিক তাই, নেটফ্লিক্স সিইও ঠিকই বলেছিলেন। নেটফ্লিক্সের এশিয়া যাত্রার ১০০ দিনের মাথায় রিড হ্যাস্ট্রিংস জানান এক কোয়ার্টারে ৪০ লক্ষের বেশি ইন্টারন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার বেড়েছে নেটফ্লিক্সের। সুযোগ লুফে নেয় আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত। নেটফ্লিক্সকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ভারতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের। ফলাফল এখন চোখের সামনে পরিস্কার, বলিউডি সিনেমায় নেটফ্লিক্স ভরার পাশাপাশি হিন্দি ভাষার সবথেকে বড় বড় ওয়েব সিরিজের অর্থায়ন এসেছে নেটফ্লিক্স থেকে। অথচ নেটফ্লিক্স বাংলাদেশেও বর্তমানে সমান জনপ্রিয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ঢোকা নেটফ্লিক্স প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা করেছিলো ওই সময়েই। সেইসাথে প্রতিবছর সেই সংখ্যা তারা বাড়িয়ে নিচ্ছে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেরও রয়েছে বেশকিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। আইফ্লিক্স, বঙ্গ, বায়োস্কোপ, বাংলাফ্লিক্স, টেলিফ্লিক্স, র‍্যাবিটহোলবিডি, রবিটিভি, সিনেস্পট, জাগোবিডি, টফি এবং সর্বশেষ যুক্ত হয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ। এতো গলো বাংলাদেশী ওটিটি থাকলেও দর্শক কি পাচ্ছে এদের কাছ থেকে?

অনেকেই বলে থাকেন ওটিটি তে দর্শক অভ্যস্ত নয়, টাকার বিনিময়ে কন্টেন্ট দেখে না, তারা দেশি কন্টেন্টের চাইতে বিদেশী কন্টেন্ট এ বেশি আকৃষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশী ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো দর্শকদের আসলে কি দিচ্ছে? দেশীও ওটিটি গুলো দর্শক ধরে রাখতে কি ধরণের পরিকল্পনা নিচ্ছে?

আপনি যখন আপনার ব্যবসা পরিচালনা করবেন তখন অবশ্যই আপনার একটি গোপন রেসিপি থাকতে হবে। সেইসাথে অন্যরা কিভাবে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি কাস্টমার ধরে রাখছে সে বিষয়েও দৃষ্টিপাত করতে হবে। আমাদের দেশের ওটিটি গুলোর ব্যবসা পদ্ধতি কেমন তা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষই হয়তো ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু দেশীয় ওটিটি গুলোর ব্যবসায়িক ধরন খেয়াল করলে দেখা যায় অনেকটাই “মাছের তেলে মাছ ভাজার মতো”। এখানে প্রায় প্রতিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়না নিজস্ব কোনো স্বকীয়তা। প্রায় সবগুলো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট এর ধরনেও পাওয়া যায় একই ধরণের মিল। সেইসাথে টেলিভিশনে জনপ্রিয় হওয়া কন্টেন্ট আপলোড আর ওটিটি ভার্সন নামেই যেন তাদের কাজ শেষ। “ওমুক অরিজিনাল কন্টেনট” নামে তাদের যে চ্যাপ্টার থাকে ওখানেই হাতে গোনা কয়েকটি কাজ ছাড়া দেশীয় কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অরিজিনাল সিরিজ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এমনটি বিরল। এর পেছনের কারণ কি ? কেন পাশের দেশের বাংলা কন্টেন্ট নির্ভর ওটিটি এদেশে ব্যবসা করলেও আমাদের ওটিটিগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে?

বিশ্বের সফল সব ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রধানতম ওপেন রেসিপি হচ্ছে বিশাল কন্টেন্ট লাইব্রেরী। বিশ্বের বড় বড় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর আপডেটেড কন্টেন্ট লাইব্রেরী থাকার কারণে সাবস্ক্রাইবাররা তাদের বিনোদনের সকল আয়োজন একসাথে পায়। এছাড়াও তাদের থাকে নানান রকম দর্শক ও তাদের চাহিদা ভেদে হাজার রকমের কন্টেন্ট যা দর্শকদের বেঁধে রাখে এবং দর্শক মুগ্ধ হয়ে সাবস্ক্রাইব করে থাকে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সাধারণত দর্শক মাসিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রিপশন ফি এর বিনিময়ে তাদের কন্টেন্ট উপভোগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠিত ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো সেটাই দেখায় যা দর্শকের চাহিদা। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা কি? টেলিভিশনে যার চেহারা দেখতে দেখতে দর্শক প্রায় বিরক্ত সেই তারকাকেই আবার গিলতে হচ্ছে দেশীয় ওটিটি গুলোতে। গল্পের বেলাতে নতুনত্ব তো আমাবস্যার চাঁদ।

ধরা যাক দেশীয় ওটিটিতে একজন দর্শক তার পকেটের টাকার বিনিময়ে সাবস্ক্রাইব করলেন, একটা দুটো কন্টেন্ট দেখার পড়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মালিকেরা যেন ভুলেই যান যে একজন দর্শক তার নতুন কন্টেন্ট দেখবার আশায়  টাকা খরচ করে তার ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রাইবার হয়েছেন। কিন্তু না থাকে নতুন কন্টেন্ট না থাকে কন্টেন্ট এর বৈচিত্র। বিরক্ত হয়ে সাবস্ক্রাইব করা ওটিটি ছেড়ে অনেকেই ঝুকছেন উন্নত বিনোদন সেবা দেওয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

পাশের দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত নতুন সিনেমার প্রিমিয়ার শুরু হয়ে গেলেও আমাদের দেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মালিকদের আগ্রহ আর ব্যবসায়িক উদাসীনতায় সিনেমার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রিলিজ এখনো তেতুলিয়া দূরত্বে। দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মালিকদের আচরণকে তুলনা করা যেতে পারে সাম্প্রতিক সময়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সাথে। পেঁয়াজের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায় যেমন লাভবান হয়ে থাকেন কিছু ব্যবসায়ী ঠিক তেমন শুধুমাত্র বিনিয়োগেই তাদের কাজ শেষ। তারা কোনো ধরণের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আর সঠিক মার্কেট রিসার্চ ছাড়াই ব্যবসা করতে নামবেন, এক রাতে রাতারাতি তারা নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন বা হৈচৈ হয়ে বসবেন। আবার ঢাল হিসাবে খোঁড়ার যুক্তি দেখাবেন এদেশের দর্শক অভ্যস্ত নয়, তাদের চোখের সামনেই নেটফ্লিক্স তাদের ভিনদেশী কন্টেন্ট দেখিয়ে নিয়ে যাবেন কোটি কোটি টাকা।

এইতো কিছুদিন আগেই পাশের দেশের প্রতিষ্ঠিত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চার বছরে পা দেওয়ার দিন তাদের চলতি বছরের কর্মপরিকল্পনা দর্শকের সামনে নিয়ে আসলেন। এটি অবশ্যই তাদের ব্যবসায়িক চিন্তার গভীরতার প্রতিফলন। কারণ পরিকল্পনায় তারা নতুনদের পাশাপাশি এবার নিয়ে আসছেন প্রতিষ্ঠিত নির্মাতাদের। সেই সাথে এক ঝাঁক নতুন কন্টেন্ট যেখানে রয়েছে বেশকিছু বাংলাদেশী পরিচালকের কন্টেন্টও। অথচ আমাদের দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাছে তরুণরা এক রকম উপক্ষিতই বলা চলে। এপর্যন্ত দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে উঠে এসেছে এমন পরিচালকের সংখ্যাও এদেশে বলতে গেলে শুন্যের কোঠায়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশের হৈচৈ এর উদাহরণ টানলেই দেখা যায় আজকের হৈচৈ এর এই অবস্থানে আসার পেছনে তরুণ নির্মাতাদের অবদান কতখানি ছিলো।

দিনদিন বাংলাদেশী বাজার দখল করে নিচ্ছে বৈশ্বিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রতিটি সাবস্ক্রাইবারের গুরুত্ব সমান, কারণ এখানে স্ব স্ব দর্শক তাদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে অবশ্যই উন্নত এবং মানসম্পন্ন কন্টেন্ট দেখতে চান। বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কতৃপক্ষ এখনই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে আমরা দর্শকেরা হারাবো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির শেকড়ের গল্প আর দিনশেষে বিজয়ীর হাসি অবশ্যই হাসবে সঠিক পরিকল্পনায় মাঠে নামা ভিনদেশী ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭