ইনসাইড বাংলাদেশ

রিয়াজ রহমান: কানাডায় ইমিগ্রান্ট বাংলাদেশের প্রথম আমলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/12/2020


Thumbnail

তিনি বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন খুবই কম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের সদস্য ছিলেন। সিএসপি এবং ফরেন সার্ভিসের অনেক সদস্যই চাকরির মায়া ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারকে সহযোগীতা করেছিলেন। কিন্তু রিয়াজ রহমান ছিলেন তার আশ্চর্য ব্যতিক্রম। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ফরেন সার্ভিসের অফিসার হিসেবে পাকিস্তানেই কাজ করেছেন। ১৯৭৩ সালে আফগানিস্তান হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশে তিনি চাকরিও পান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলাদের সর্বোচ্চ পদ ফরেন সার্ভিসের সদস্য হয়েছিলেন তিনি।
 
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ড. রিয়াজ রহমান হলেন বাংলাদেশের প্রথম আমলা যিনি কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হয়েছিলেন। কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার পরও তিনি বাংলাদেশে সরকারি চাকরি করেছেন।  শুধু সরকারি চাকরি করেননি তিনি পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বেগম জিয়া তাকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। রিয়াজ রহমান কানাডায় স্বপরিবারে ইমিগ্র্যান্ট হন ১৯৯২ সালে। তিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানরা কানাডায় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে কানাডার পাসপোর্টও পেয়ে যান। তারপরেও তার সরকারি চাকরি করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয়নি কেন সে এক বড় প্রশ্ন?


কানাডায় রিয়াজ রহমানের সম্পত্তি পাওয়া যায় অটোয়াতে। রিয়াজ রহমান বাঙালি এলাকায় থাকেন না। অটোয়ায় তার দুটি বিলাশবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হলেও অবসরের পর তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হন। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি তার গাড়িতে এক রহস্যময় হামলার পর থেকে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এখন তিনি কানাডা এবং বাংলাদেশে যাওয়া আসায় মধ্যে থাকেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সমস্ত বাঙালি অফিসাররা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিলেন এবং বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রিয়াজ রহমান। তাকে বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তারা পাকিস্তানপন্থি কর্মকর্তা হিসেবেই বিবেচনা করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার আমলে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।  ভারত বিরোধী নীতি গ্রহণ করে চীন এবং জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রেও ড. রিয়াজ রহমানের দর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো বলে জানা যায়।


বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা পাকিস্তান ধারাকে লালন করেন সেখানে রিয়াজ রহমানের নাম আসবে। দীর্ঘদিন কূটনৈতিক চাকরি করার সুবাদে আন্তর্জাতিক মহলে তার ভালো জানাশোনা ও যোগাযোগ আছে। আর এই যোগাযোগের কারণেই তিনি বাংলাদেশের ভারত বিরোধী এলিট গ্রুপকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দীর্ঘদিন। এই রাজনৈতিক বাতাবরণের কারণেই তার দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি আলোচিত থাকেনি।


ফরেন সার্ভিসের একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও কানাডায় তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক। এসব নিয়ে কোনো অনুসন্ধানও কখনও হয়নি কারণ তিনি একজন আমলা। আর আমলা হলে তিনি বিদেশে বাড়ি বানান আর ইমিগ্র্যান্ট হন, কেউ আপনার টিকি স্পর্শ করতে পারবে না। রিয়াজ রহমান বোধহয় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কারণ আওয়ামী লীগের আমলেও তিনি যেমন চাকরি করেছিলেন ঠিক তেমনি বিএনপি আমলেও আমলাদের সর্বোচ্চ পদ পেয়েছেন এবং আমলা থেকে মন্ত্রীও হয়েছেন। এখনও তিনি বহাল তবিয়েতে আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭