নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 23/02/2021
১ অক্টোবরে রাতেই নির্ধারিত হয়ে যায় যে বিএনপি জামায়াত দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়েছে এবং তারাই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। ১০ অক্টোবর সরাকার গঠনের দিন ধার্য করা হয় আর মন্ত্রীসভা গঠনের দিন ধার্য করা হয় ৬ অক্টোবর। মন্ত্রীসভা চূড়ান্ত করতে হাওয়া ভবনে নিলাম ডাকে তারেক জিয়া। এই নিলামের বিরোধীতা করেছিলেন বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং তারা মন্ত্রীত্বের এ ধরনের বেচাকেনার তীব্র আপত্তি করেন। সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা খালেদা জিয়ার বাসভবনে দেখা করেন ৫ অক্টোবর। সেখানে গিয়ে তারা বলেন যে, এভাবে নিলাম করাটা অশোভন এবং রাজনীতির অবমাননাকর। যারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলাম। এরা সকলেই বিএনপিতে তারেক বিরোধী বলে পরিচিত ছিলো।
ওই বৈঠকে খালেদা জিয়া এদেরকে আশ্বস্ত করেন যে আপনারা সকলেই মন্ত্রী থাকবেন, তারা যাই করুক তার ব্যাপারে আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন না। যথারীতি ৬ অক্টোবর রাতে হাওয়া ভবনে নিলাম অনুষ্ঠিত হয় এবং তরুণদের প্রাধান্য ছিলো। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ওই নিলামে যোগদান করেছিলেন এবং সব কাজের জন্য ২৫ শতাংশ চাঁদা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি সবাইকে চমকে দেন। আর এই চমকে দেয়ার মাধ্যমেই তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। তার সঙ্গে শর্ত ছিলো তিনি মাসে হাওয়া ভবনের জন্য অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করবেন। আর এই শর্তেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলামে পান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তবে তার ওপরে পুরোপুরি আশ্বস্ত ছিলো না তারেক এবং মামুন। আর এ কারণে নাজমুল হুদার পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেয়া হয় হাওয়া ভবনের একনিষ্ঠ সালাউদ্দিন আহমেদকে।
নিলামে মন্ত্রিসভা গঠনের সবচেয়ে বড় চমক ছিলো লুৎফুজ্জামান বাবর। নেত্রকোনার একটি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। বাবরের অতীত ইতিহাস ছিলো খুবই করুন এবং বিতর্কিত। তিনি বিমানবন্দরের লাগেজ চোরাচালান দলের নেতৃত্ব দিতেন এবং এই জন্য তার নাম হয়েছিলো লাগেজ বাবর। ১৯৮৬ এবং ৮৮ সালে এই চোরাচালানের দায়ে দুবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি তার এই চোরাচালানের পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করেছিলেন। এরপর নেত্রকোনায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে এলাকায় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হন। বাবর নগদ ১০০ কোটি টাকা দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যদিও তাকে প্রথমে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো যে এই মন্ত্রণালয়ে কোনো পূর্ণ মন্ত্রী থাকবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীত্ব দেয়া হয় খালেদা জিয়ার পছন্দে। অবশ্য আলতাফ হোসেন বেশি দিন থাকতে পারেননি।
হাওয়া ভবনের যে নিলাম সে নিলাম থেকে পরবর্তীতে বাবরকে পূর্ণ মন্ত্রীত্ব দেয়া হয়। নিলামে অংশ নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিনি সব কাজে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ হাওয়া ভবনকে দেয়ার অঙ্গীকার করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর মোর্শেদ খান হাওয়া ভবনের নিলামে না এলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। তবে এই নিলামে আরেকটি চমক ছিলো তা হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। যারা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলো তাদের কাউকেই পছন্দ হয়নি তারেক-মামুনের। আর এ কারণে হাওয়া ভবনের আগ্রহেই মাহমুদুর রহমানকেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা করা হয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা হওয়ার পরই মাহমুদুর রহমান খাম্বা প্রকল্প চালু করেন। আর এই খাম্বার মাধ্যমেই হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেন তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন।
পর্ব-৩ : টাকা দিয়ে সচিব হওয়ার মিছিল
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭