কালার ইনসাইড

কৌতুকহীন সিনেমা পানসে লাগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/09/2017


Thumbnail

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক সময়কার শক্তিমান অভিনেতা টেলি সামাদ। অনেকটা নীরবে নিভৃতেই এখন তাঁর বসবাস। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং কৌতুক নিয়ে তাঁর কিছু প্রত্যাশার গল্প শোনান বাংলা ইনসাইডারকে।  

কেমন আছেন?

শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শরীর নিয়ম অনুযায়ী দুর্বল হয়েছে। আগের মত যাতায়ত করতে পারি না। সেই দিনগুলো মিস করি ভীষন। ঘুম থেকে উঠে এফডিসির জন্য রেডি হতাম। চাকরির মতো ছিল। প্রতিদিন নিয়ম করে যথাসময়ে হাজির হতাম। শুটিং আড্ডা সবকিছু হতো চলচ্চিত্রকেন্দ্রীক। সবার ভিতর একটা উৎসবের আমেজ ছিল। সেসব দিনের কথা মনে করে মাঝে মাঝে বিষন্ন হয়ে পড়ি। অফার যে এখনো পাই না তা নয়। কিন্তু শরীর এমনভাবে দূর্বল হয়ে যাচ্ছে, সাহসে কুলায় না। মনের জোর দিয়ে তো সব সম্ভব নয়।

বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন দেখছেন?

দেখছি না বললেই চলে। আমি যখন শেষ চলচ্চিত্রের খোজখবর নিতাম। তখন অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছিল। তবে গত কয়েকবছরে ভালোর দিকে যাচ্ছে শুনতে পাই। এটাতে আশাবাদী। 

চলচ্চিত্রে কৌতুকের একটা অবস্থান রয়েছে। বর্তমান চলচ্চিত্রে তা কেমন উপস্থিত?

এখন তো ভাড়ামিই বেশি হচ্ছে। তাই কৌতুক অভিনেতারা মানুষের মনও জয় করতে পারে না। অথচ একজন কৌতুক অভিনেতা যে মানুষের মনে কতটা জয়াগা তৈরি করতে পারে। তা দিলদার দেখিয়েছেন। হয়তো আমিও কিছুটা পেরেছি। বাঙালি জন্মগতভাবেই রসিক। একটা সময়ে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকাররা বাঙালির এ রসবোধকে চলচ্চিত্রের পর্দায় শিল্পের মত নিয়ে যেতে পেরেছেন। এ জন্য কৌতুক বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবস্থান করে নিতে পেরেছে। এখন পরিচালকরা নায়ক নির্ভর হয়েই আছে। কৌতুক অভিনেতাদের দিয়ে ভাড়ামি করে।

একজন কৌতুক অভিনেতার কী কী গুণ থাকতে হবে বলে মনে করেন ?

কৌতুক পরিবেশন সৃষ্টিশীল একটা কাজ, তাই কঠিনও। রোমান্টিক একজন নায়ক দাড়িয়ে থাকলেও দর্শক দেখবে। কিন্তু কৌতুক অভিনেতার এমন কিছু করতে হবে যাতে দর্শক আলাদা করে তাঁর প্রতি লক্ষ্য করে। নিজেকে স্বাবলিল হতে হবে। মনে রাখতে হবে জোর করে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা তৈরি করতে পারবে না। হাস্যরস তৈরির সহজাত একটা ক্ষমতা শিল্পীর থাকতে হবে। একজন কৌতুক শিল্পী শুধু চেহারা নয়। হাত পা , চোখ মুখ , সংলাপ সবকিছুরই ব্যবহার জানতে হবে। তাহলেই একজন কৌতুক শিল্পী সহজ হবেন। অনুষঙ্গিক হয়ে উঠবেন। রবিউল ভাই কথা বলার সময় কান নাড়াতে পারতেন। খান জয়নুল ভাইয়ের নিজস্ব কিছু ঢং ছিল। আমি যেমন চাইতাম সংলাপ দিয়ে কথার পিঠে কথা বলে দর্শক মাতাতে। দিলদারের সংলাপ দেয়ার একটা ভঙ্গি ছিল। বাংলা চলচ্চিত্রে একটা সময় রবিউল, খান জয়নুল, আশীষ কুমার লৌহ, আনিস, লালু, হাসমতের মতো গুণী কৌতুক অভিনেতারা ছিলেন। শুধু নায়করা নয়। আমরাও প্রতিযোগিতা করে অভিনয় করতাম। আস্তে আস্তে গল্প থেকে কৌতুক উঠে গেল। অথচ একটা সময় সিনেমার আনুষঙ্গিক উপকরণ ছিল কৌতুক। না থাকলে সিনেমা পানসে লাগতো।

আপনার মতে কী কৌতুক শিল্পটা হারিয়েই যাবে?

আসলে সব সংকটেরই একটা উত্তরণ আছে। আমি সেটা বিশ্বাস করি। কাজী জহির, মিতা, সুভাষদা কৌতুক যতটা বুঝতেন। এখনকার সবাই সেটা বুঝে না। গল্পে চিত্রনাট্যে যদি আরও প্রাণ দিতে হয়। তাহলে কৌতুক থাকতেই হবে। কৌতুক দরকার নেই- এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের যাপিত জীবনে কি সবাই ভালো আছি? ভালো থাকটা যেন ভুলেই যাচ্ছি। নাটক সিনেমার কৌতুক হয়তো কিছুটা সময়ের জন্যও আনন্দের খোড়াক হতে পারে।

কৌতুক অভিনেতা বনাম কেন্দ্রীয়, প্রতিযোগিতা কেমন হত?

গল্পে তো কখনোই আমাদের মূল করা হত না। যতটুকু চরিত্র পেতাম। সেখানে দর্শকের দৃষ্টি আমরাও নিতে পারতাম। হল থেকে বের হয়ে আমাদের নিয়েও হত আলোচনা -সমলোচনা। আমরা কেমন করলাম? খান জয়নুল ভাই, আমি, দিলদার, হাসমত ভাই- সবাই এর উদাহরণ। কলকাতাতে, ভানু-জহর এদের উদাহরণ তো আর নতুন করে না দিলেও চলবে।

আপনার আঁকা-আঁকিটা কেমন চলছে?

জীবনে অনেক ছবি এঁকেছি। বড়ভাই (প্রয়াত আবদুল হাই) এত বড় একজন শিল্পী ছিলেন। তার ঘরে জন্মে আমি আর নাম করতে পারিনি। বর্তমানে কিছু ছবি আকার প্ল্যান করছি। আইডিয়া মাথায় আছে। শক্তিও আছে আঁকা আকি করার। এখন দরকার তুলি নিয়ে বসা।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭