ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কোন দেশের সেনাবাহিনী কতোটা শক্তিশালী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/09/2017


Thumbnail

সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানোয় বাংলাদেশে আগত শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। টেকনাফ-উখিয়ায় প্রাণ বাঁচাতে লাখোরোহিঙ্গা শরণার্থীরা জড়ো হয়েছেন। চলমান সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই হেলিকপ্টার নিয়ে প্রবেশ করেছে। এসেছে সামরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতি বছর বিশ্বের সব দেশের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে র‌্যাংকিং প্রকাশ করে থাকে।

সিআই এর ফ্যাক্টশিট ও উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারা তালিকা তৈরি করে। চলতি বছর তাদের র‌্যাংকিং অনুযায়ী মিয়ানমার তালিকায় ৩১তম এবং বাংলাদেশ৫৭তম।

তবে এখানে পরমাণু অস্ত্রকে শক্তি হিসেবে ধরা হয়নি। দেশের আকার, সামরিক খাতে বাজেটের অংক, সেনাসদস্যের সংখ্যা ও যুদ্ধের সরঞ্জামের সংখ্যা অনুযায়ী এখানে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

ওয়েবসাইটটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারে মোট সেনাসদস্য পাঁচ লাখ ১৬ হাজার। আর বাংলাদেশের রয়েছে দুই লাখ পঁচিশ হাজার। মিয়ানমারের মোটবিমান রয়েছে ২৪৯টি। যার মধ্যে ৫৬টি ফাইটার বিমান। অ্যাটাক হেলিকপ্টারে আছে নয়টি। যুদ্ধট্যাংক আছে ৫৯২টি। কোনো যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী নেই।ডুবোজাহাজও নেই। ফ্রিগেট রয়েছে পাঁচটি। বছরে তাদের সামরিক বাজেট ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের রয়েছে ১৬৬টি বিমান। এর মধ্যে ফাইটার বিমান ৪৫টি। কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার নেই। যুদ্ধট্যাংক আছে ৫৩৪টি। বাংলাদেশেরও ডেস্ট্রয়ার, ডুবোজাহাজ ও বিমানবাহী রণতরী নেই। নৌবাহিনীর মাত্র ৮৯টি নৌযান রয়েছে। সামরিক বাজেট ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তালিকা অনুযায়ী শক্তিশালী দশ সেনাবাহিনী হল-

১. যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে পাঁচ হাজার ৮৭৮ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে যা অন্যান্য দেশের থেকেও বেশি। তাদের ১০টি বড় যুদ্ধবিমান ক্যারিয়ার আছে।অন্য কোনো দেশে এ পরিমাণ ক্যারিয়ার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতে সবচেয়ে বেশি ক্যারিয়ার আছে। আর ভারত তার তৃতীয় ক্যারিয়ার তৈরি করেছে।সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ছয় হাজার আটশটি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।

২. রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের বহর আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি ডুবোজাহাজ আছে। রাশিয়া সামরিকখাতে তাদের বাজেট আরো বড় করেছে। সামরিক শক্তিতে রাশিয়াও যে এগিয়ে আছে তা সিরিয়া সেনাবাহিনী পাঠানোর মাধ্যমে প্রমাণ করেছে। রাশিয়ারবাজেট চার হাজার ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। ডুবোজাহাজ আছে ৫৫টি এবং ট্যাংকের সংখ্যা ১৫,৩৯৮। রাশিয়ার রয়েছে প্রায় সাত হাজারটি পারমাণবিক ওয়ারহেড।

৩. চীন

গত কয়েক দশকে চীনের সামরিক শক্তি খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে। যদি শুধু সৈন্যদের সংখ্যা ধরা হয় তবে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনীর অধিকারী।মোট ২৩,৩৩,০০০ সদস্য আছে তাদের সেনা বহরে। রাশিয়ার পর তাদের সবচেয়ে বেশি ট্যাংকের মজুদ আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশিডুবোজাহাজ রয়েছে তাদের। সেনাশক্তি আধুনিকায়নের জন্য চীর দীর্ঘ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও পঞ্চম প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা আছে। চীনের রয়েছে ২৬০টি ওয়ারহেড।

৪. ভারত

ভারতের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছে ভারতের। ৬,৪৬৪ টি ট্যাংকও ১,৯০৫টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। ভারতের কাছে পরমাণু অস্ত্রও রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ভারত সামরিক শক্তিতে বিশ্বের চতুর্থশীর্ষ দেশ হবে। দেশটির কাছে ১১০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে।

৫. ফ্রান্স

ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু তারা উচ্চ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। তাদের নতুন যুদ্ধবিমান ক্যারিয়ার চার্লস ডি গল রয়েছে। তারা প্রায়ইআফ্রিকার দেশগুলোতে সেখানকার সরকারি ব্যবস্থা স্থির রাখতে ও উগ্রবাদ রুখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। ফ্রান্সের সামরিক খাতে বাজেট মোট ৬২৩কোটি মার্কিন ডলার। মোট ৩০০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে দেশটির অধীনে।

৬. যুক্তরাজ্য

২০১০ ও ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য তাদের সেনাবাহিনী ২০ শতাংশ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাদের নৌবাহিনী এইচএমএস কুইন এলিজাবেথযুদ্ধবিমান ক্যারিয়ার যোগ করার পরিকল্পনা করেছে। ২০২০ সালে এটি যুক্ত হবে। এই ৪০টি এফ-৩৫বি ফাইটার বিমান বহন করতে পারে। যুক্তরাজ্যেরসামরিক বাজেট ৬০৫ কোটি মার্কিন ডলার। মোট ২১৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে।

৭. জাপান

জাপানের সৈন্য সংখ্যা খুবই কম এবং সামরিক সরঞ্জামও তাদের পর্যাপ্ত না। কিন্তু ক্রেডিট সুইস এরপরও জাপানকে চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হিসেবেদেখিয়েছে। ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধবিমানের সংখ্যা দিয়ে তারা এই দেশকে শক্তিশালী হিসেবে দেখিয়েছে। চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপানে সবচেয়েবেশি হেলিকপ্টার আছে। জাপানের সামরিক বাজেট মোট ৪১৬ কোটি মার্কিন ডলার। তবে জাপানের নিজস্ব কোনো পরমাণু অস্ত্র নেই।

৮. তুরস্ক

পূর্ব ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী রয়েছে তুরস্কের। দেশটির কোনো যুদ্ধবিমান ক্যারিয়ার নেই; কিন্তু ডুবোজাহাজের পরিমাণ অনেকবেশি। তুরস্কের হেলিকপ্টার, ১০২০টি যুদ্ধবিমান ও ৩৭৭৮টি ট্যাংক রয়েছে। সামরিক খাতে তাদের বাজেট ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সামরিক জোট ন্যাটোর অধিভুক্ত হওয়ায় তুরস্ক ও জার্মানি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরমাণু অস্ত্রের সহায়তা পেয়েছে।

৯. জার্মানি:

জার্মানির কোনো বিমানবাহী রণতরী নেই। মাত্র ৪টি ডুবোজাহাজ রয়েছে। প্রতি বছর সামরিক খাতে ৪০২ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট বরাদ্দ রাখে। মোট৪০৮টি যুদ্ধট্যাংক রয়েছে। সামরিক কর্মকর্তার সংখ্যা মোট দুই লাখ দশ হাজার। সম্প্রতি ইউরোপের ন্যাটো সদস্যদের সামরিক সহায়তা দেয়ার ক্ষমতাপেয়েছে।

১০. মিসর:

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন ও তুলনামূলকভাবে বড় সেনাবাহিনী আছে মিসরের। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বের পঞ্চমবৃহৎ ট্যাংকবাহিনী আছে দেশটিতে। মোট চার হাজার ৬২৪টি যুদ্ধট্যাংক আছে তাদের। শুধু তাই নয় দেশটির রয়েছে অন্যতম বড় বিমানবাহিনী। মোটসামরিক বাজেট ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

লিংক: https://www.globalfirepower.com/countries-listing.asp

বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭