ইনসাইড বাংলাদেশ

লকডাউন না দিয়েও যেভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/04/2021


Thumbnail

বাংলাদেশ আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউনে যাচ্ছে। প্রথম দফায় ৫ এপ্রিল থেকে যে লকডাউন দেয়া হয়েছিলো কার্যত সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। জন চাপে কোনো লকডাউন হয়নি। এখন সরকার কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করবেন বলে সরকারের অন্তত দুইজন মন্ত্রী গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। এই লকডাউন নিয়ে জনমনে ইতিমধ্যেই অস্থিরতা এবং অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। গত বছরের শুরু থেকেই বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করছে করোনা। করোনা মোকাবেলায় লকডাউনই সেরা উপায় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে লকডাউন এর বিকল্প নিয়েও এখন কাজ করছেন এবং অনেকগুলো দেশ লকডাউন না দিয়েও করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে দেশগুলো উন্নত দেশ, অর্থনৈতিকভাবে মজবুত ভিত্তি আছে এবং জনসংখ্যা কম, তারা লকডাউনে যায় এবং লকডাউনে গিয়ে তাদের জনগণের তেমন কোনো কষ্ট হয় না। কারণ যে পরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা তাদের দেয়া হয়, সেটা দিয়ে তারা ঘরে বসে 
স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য লকডাউন এক ধরনের নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা বাড়িয়ে দেয়, জীবন-জীবিকাকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে লকডাউন এর ব্যাপারে তীব্র নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। 

সাধারণ মানুষ মনে করে যে, না খেয়ে মরার চেয়ে করোনায় মরা ভালো। মানুষ শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে চায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এরকম মনোভাব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে যে, করোনায় অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার পথ আসবে, কিন্তু জীবিকা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ এমনিতেই মারা যাবে এবং সেখান থেকে উদ্ধারের কোনো পথ থাকবে না। আর এই কারণেই লকডাউনের বিকল্প চিন্তা ভাবনা নিয়ে কাজ করছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দেশ লকডাউন এর বদলে বরং স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন তার লকডাউন এর অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বরং স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে যে পাঁচটি কারণ পাওয়া গেছে যা দিয়ে লকডাউন ছাড়াই করোনা মোকাবেলা করা যায়। সেগুলো হলো,

১. কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা: স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের মাধ্যমেই করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব এবং এটি করোনা মোকাবেলার সবচেয়ে ভালো উপায়, এটি মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। একজন মানুষ যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করে, মাস্ক ব্যবহার করে এবং বার বার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করে, তাহলেই তিনি করোনা থেকে বাঁচতে পারেন। এই ধারণাটা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের চেয়ে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. জনসমাগমের বিষয়গুলো বন্ধ করা: পৃথিবীর বহু দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লকডাউনে যায় নি। কিন্তু জনসমাগম হতে পারে এমন কর্মকাণ্ড গুলো বন্ধ করেছে। যেমন, বিয়ের অনুষ্ঠান, ওয়াজ-মহাফিল, সামাজিক সম্মেলন, সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সমাবেশ ইত্যাদি বন্ধ করে এসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অনেকখানি সাফল্য আসতে পারে। পাবলিক গ্যাদারিং হয় বা জনসমাগম হয় এমন বিষয়গুলোর ওপর শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা করে সবকিছুকে সচল রাখা যায়।

৩. দোকানপাট এবং বাজার-হাটের সময়সীমা পৃথক পৃথক করে দেওয়া: ব্রিটেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অত্যন্ত সফল হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় দোকানপাট খোলা রাখা, ব্যাংক খোলা রাখার পদ্ধতি চালু করেছিল। টিআর-ফোর এর আওতায় তারা এলাকাভিত্তিক দোকানপাট খোলা সময়সূচী দিয়েছিলো এবং এক এলাকার মানুষ অন্য দোকানে যেন না যায় সেটি নিশ্চিত করেছিলো। এর ফলে করোনা সংক্রমণ অনেক কমে এসেছিলো। 

৪. কন্টাক্ট ট্রেসিং: করনা মোকাবেলার সবচেয়ে ভালো পথ হল কন্টাক্ট ট্রেসিং করা। যখন একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হলো, তখন তার সংস্পর্শে যারা আসছে তাদেরকে চিহ্নিত করা এবং তাদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদেরকে পৃথক করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যায়। এটি যদি বাংলাদেশে করা যায় তাহলে করোনার সংক্রমণ অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা সম্ভব হবে বলে মানুষ মনে করছে।

৫. এলাকা স্থানান্তর বন্ধ করা: এক এলাকার মানুষ যেন অন্য এলাকায় যেতে না পারে সেটি যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, বিশেষ করে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে করোনা সংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে সেই এলাকাগুলোতে অন্য এলাকার মানুষ যেনো প্রবেশ করতে না পারে এরকম বিধি-বিধান করে করোনা মোকাবেলা করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে যে লকডাউন এর চিন্তাভাবনা করছে তার বিকল্প হিসেবে সরকার এগুলাে বিবেচনা করতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭