ইনসাইড বাংলাদেশ

কোন দিকে যাচ্ছে দেশে করোনায় মৃত্যু?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/04/2021


Thumbnail

বাংলাদেশে চলছে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। আর এই দ্বিতীয় ঢেউ যেনাে ভালোভাবেই লেগেছে দেশের মানুষের ওপর। গত কয়েক দিন ধরে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন নিত্যনতুন রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। যেখানে এক সময় ২০ থেকে ৩০ জন মারা গেলেই ভয় কাতর হয়ে পড়তো মানুষ সেখানে গতকাল করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। আজও ১০১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সব থেকে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড রয়েই গেলো। আর এই রেকর্ডই যে শেষ সর্বোচ্চ রেকর্ড তাও বলা যাচ্ছে না। ফলে মৃত্যুর হারের দিক থেকে ভয় জাগাচ্ছে করোনা।

দেশে করোনায় মৃত্যু গত কয়েকদিন ধরেই উর্ধ্বগতি ছিলো এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিলো। কিন্তু গতকালের ১০১ জন এবং আজকের ১০১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনার সংক্রমণ যে কতটা ভয়াবহ হয়েছে তা বোঝা গেলো। এর আগে বাংলাদেশে কোনদিন করোনায় একদিনে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এরই মধ্যে দেশে করোনায় সর্বমোট মৃত্যু বরণ করেছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। আজ পর্যন্ত করোনায় ১০ হাজার ২৮৩ জন মারা গেছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপরও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নি। এতো মৃত্যু দেখে নি দেশ। কিন্তু এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা কেড়ে নিচ্ছে অনেকের প্রাণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে মার্চে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৭১ জন মানুষ মারা গেছে। কিন্তু পরবর্তী এক মাসে, অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৫ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার চারশ বিয়াল্লিশ জন মানুষ মারা গেছেন। অর্থাৎ পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে পাঁচ গুন বেশি।

দ্রুত মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ চিকিৎসার অভাবে, নাকি নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার এবারের ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ফুসফুস ড্যামেজ করে দিচ্ছে। অসুস্থতা বুঝে ওঠার আগেই রোগীকে নিতে হচ্ছে আইসিইউতে কিংবা লাইফ সাপোর্টে। সেখান থেকে আর রোগী জীবিত ফিরছে না। 

মৃত্যু বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, করোনায় মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ চিন্তা-ভাবনা করে বলতে হবে। কেউ বলছেন, অক্সিজেনের অভাব, কেউ বলছেন চিকিৎসার অভাব। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ কিনা সেটিও দেখার আছে। তবে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, চিকিৎসার অভাব, আইসিইউ শয্যার সংকট ও অক্সিজেনের অভাবে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে। দেশের ৩৬ জেলায় এখনো পর্যন্ত করোনার সুচিকিৎসা করা যাচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা অনেক সময় পেয়েছি। কিন্তু চিকিৎসাসেবার সক্ষমতা বাড়াতে পারিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যে সব রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগেরই আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হচ্ছে। আগে প্রতি ১০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে সর্বোচ্চ একজনের আইসিইউ প্রয়োজন হত। এখন প্রয়োজন হয় তিন জনের। আর সংক্রমিত বড় একটি অংশের অক্সিজেনের মাত্রা শুরুতেই ৭০-৮০ ভাগে নেমে যাচ্ছে। ফলে তাদের আইসিইউ এর প্রয়োজন হচ্ছে। এবার সিরিয়াস রোগীর সংখ্যা বেশি। আর রোগীও প্রতিদিনই বাড়ছে। আইসিইউ সাপোর্ট আগের চেয়ে বেশি লাগছে। কিন্তু  আইসিইউ বেড তো বাড়েনি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী আইসিইউ বেড দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করে। গত বছরে এত মৃত্যুর সংখ্যা দেখেনি দেশ। কিন্তু এবার সব রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিনই রেকর্ড করছে করোনায় মৃত্যু। ফলে প্রশ্ন জাগছে কোন দিকে যাচ্ছে দেশে করোনায় মৃত্যু?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭