কালার ইনসাইড

জানা-অজানার অমিতাভ বচ্চন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/10/2017


Thumbnail

জানেন কি, পর্দায় অমিতাভ বচ্চনের প্রিয় নাম হলো বিজয়। ২০টিরও বেশি ছবিতে এই নামে দেখা গেছে তাঁকে। অমিতাভ বচ্চনের প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব। পরে নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ অর্থাৎ যে আলোর শেষ নেই। তিনিই প্রথম এশিয়ান অভিনেতা, যার মোমের প্রতিকৃতি লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে স্থান পায়। ঘড়ি এবং কলম সংগ্রহ করা এই তারকার অন্যতম শখের কাজ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়িও আছে তাঁর সংগ্রহে। প্রথম হিট ছবি ‘জাঞ্জির’ এর আগে পরপর অনেকগুলো ছবি ফ্লপ হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের। সব্যসাচী অমিতাভ দুই হাতেই সমানভাবে লিখতে পারেন। একবার মাত্র ৫ ঘণ্টায় ২৩টি দৃশ্যের ডাবিং করেছেন তিনি , যা বলিউডের চলচ্চিত্র ইতিহাসে রেকর্ড।

শুরুটা ‘সাত হিন্দুস্তানি’ দিয়ে। ১৯৬৯ সালের ঘটনা। সিনেমার সাতটি প্রধান চরিত্রের তিনি একটিতে অভিনয় করেছেন। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি। কিন্তু তিনি তার জাত চিনিয়েছেন। নবাগত হিসেবে জাতীয় পুরস্কার বগলবন্দি করেছেন। তাঁর উথানটা মূলত ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। অভিনয় করেন আরেক সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সঙ্গে। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসাও আদায় করতে সক্ষম হয়। সে বছর ফিল্মফেয়ারে সেরা সহশিল্পীর পুরস্কার পান। সে বছরই মুক্তি পায় ‘পরওয়ানা’। সে ছবিটাও প্রশংসিত ও ব্যবসাসফল হয়।

এরপরই ভাগ্যদেবী মুখ ফিরিয়ে নেন তার থেকে। বেশ কিছু সিনেমা সুপার ফ্লপ হয়। ১৯৭৩ সালে ফের বক্স অফিস মাত, প্রকাশ মেহরার ‘জানজির’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। ইন্সপেক্টর বিজয় খান্নার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। এই ছবির মাধ্যমেই মূলত তার নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ খ্যাতিটা। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি টানা অভিনয় করেন। তারপর কিছুটা বিরতী।

অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতেও ছিলেন সরব। পারিবারিক বন্ধু ছিলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে রাজীব গান্ধীর সমর্থনে অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতে যোগ দেন। এ সময়ে অভিনয়ে বিরতী নেন। এলাহাবাদ লোকসভা আসনের জন্য উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুনার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (৬৮.২% ভোট পেয়ে) ভোটে জয়লাভ করেন। এর ঠিক তিন বছরের মাথায় অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিকে নর্দমা আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন। অভিনয়ের প্রতি আবার মনোযোগী হন।

যশরাজ ফিল্মসের `মোহাব্বতে` ছবির মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন। এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ,‘ আঁখে’ , ‘বাগবান’ ,‘খাকি’ ,‘দেব’,বান্টি অউর বাবলি এর মত ছবিতে।

২০০৫ সাল ছিল, অমিতাভ বচ্চনের জীবনের অন্যতম সেরা বছর। সঞ্জয় লীলা বানসালির `ব্ল্যাক` ও রামগোপাল ভার্মার `সরকার` এই ছবি দুটি পৌঢ় অমিতাভ বচ্চনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। ‘দ্য কিং লিয়র’, ‘চিনিকম’, ‘পা’ ছবি দিয়ে নিজেকে আবার নিরীক্ষা করেছেন। `পিকু`তে অনবদ্য অভিনয়ে নিজের ক্যারিয়ারে আরেকটি বিশেষ পালক যুক্ত করেছেন।`পিংক` ছবিতেও নিজের প্রতিভার মূল্য রেখেছেন।এই সময়ে এসেও নিজেকে ভাঙছেন ,দর্শক মাতাচ্ছেন। শুটিং চলছে `থাগস অব হিন্দুস্তান`এর মত বহুল অপেক্ষমান ছবি।  গায়ক হিসেবেও রয়েছে তার সুপরিচিতি। ভরাট কন্ঠ এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। টেলিভিশনে `কোন বনেগা ক্রোড়পতি`র সফল উপস্থাপক তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরুতে কিন্তু ভরাট কন্ঠই ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কম কটুক্তি শুনতে হয়নি নানা সময়ে। মজার ঘটনা, সিনেমায় আসার আগে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। শুরতেই তাকে খারিজ করে দেয়া হয়। অথচ আজ সেই অমিতাভ অজস্র অনুষ্ঠানে সূত্রধর, নেপথ্য গায়ক এবং উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা গেছে।

সমালোচনাটাও তার জীবনের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলছে। যেন একই পথের পথিক। তবে তার বিশ্বাস সমালোচকরাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী। তাইতো কিছুদিন আগে নিজের অফিশিয়াল ব্লগে লিখেছেন, ‘যখন কেউ আপনার সমালোচনা করেন, মনে রাখবেন তিনি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবেন। এটা সবার উপভোগ করা উচিত। এটা আমার কথা নয়। তবে এই কথাগুলোকে আমি খুব সম্মান করি।’

শোনা যায় পর্দার ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ব্যক্তিজীবনে খুবই বিনয়ী। নানা সময়ে রেখার সঙ্গে তার প্রেম পদ্য প্রকাশ পেলেও স্ত্রী জয়া বচ্চনের সঙ্গে সংসার আজও অটুট। ১৯৭৩ সালে জয়া ভাদুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে শ্বেতা নন্দা এবং ছেলে অভিষেক বচ্চন।

অমিতাভ বচ্চনের জন্ম উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক হিন্দু-শিখ পরিবারে। তার পিতা হরিবংশ রাই বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তার মা তেজি বচ্চন ছিলেন ফৈসলাবাদের এক শিখ-পাঞ্জাবি। পিতামাতার দুই ছেলের মধ্যে অমিতাভ বড়। হরিবংশ রাইয়ের পদবি ছিল শ্রীবাস্তব কিন্তু নিজের লেখা প্রকাশ করার সময় তিনি ছদ্ম-পদবি ‘বচ্চন’ ব্যবহার করতেন। অমিতাভ বচ্চনের মায়ের অভিনয়ে খুব উৎসাহ ছিল। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পান। কিন্তু সাংসারিক কর্তব্যের চাপে তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অভিনেতা হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ বছর বয়সেই তিনি কলকাতার ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোং নামে জাহাজ কোম্পানির কাজে ইস্তফা দেন। পরে মুম্বাইতে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যান। শুরুর পথটা তার জন্যে সহজ ছিল না। জীবন-সংগ্রামের দিনগুলোতে মুম্বাইয়ের রাস্তার পাশে বেঞ্চিতেও রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলিউডের এই শাহেনশাহ্  অমিতাভের প্রথম বেতন ছিল ৩০০ রুপি।

বর্নিল ক্যারিয়ারে পেয়েছেন পদ্মশ্রী,পদ্মভূষণ,পদ্মবিভূষণ সহ নানা খেতাব। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার, এর মধ্যে তিনটিই পৌঢ় বয়সে।এছাড়া বেশ কয়েকবার ফিল্মফেয়ার সহ পেয়েছেন অসংখ্য দেশী বিদেশী পুরস্কার। অপেক্ষা এখন দাদাসাহেব ফালকের সম্মানের কিংবা যেভাবে নিজেকে আরো বর্নাঢ্য করে যাচ্ছেন,হয়তো পুরস্কারের পাল্লা আরো ভারী হবে।

আজ অমিতাভের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। প্রতি জন্মদিনে প্রিয় মানুষেরা কীভাবে শুভেচ্ছা জানায় তা তিনি হুবহু মনে রাখতে পারেন।

১৯৪২ সালের আজকের এই দিনে (১১ অক্টোবর) জন্মগ্রহণ করেছেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৭৫ টি বছর। বয়সটা কখনোই তার জন্য বোঝা হয়নি। বরং দিনে দিনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন সবার উপরে।

বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭