নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৩ পিএম, ১১ অক্টোবর, ২০১৭
জানেন কি, পর্দায় অমিতাভ বচ্চনের প্রিয় নাম হলো বিজয়। ২০টিরও বেশি ছবিতে এই নামে দেখা গেছে তাঁকে। অমিতাভ বচ্চনের প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব। পরে নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ অর্থাৎ যে আলোর শেষ নেই। তিনিই প্রথম এশিয়ান অভিনেতা, যার মোমের প্রতিকৃতি লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে স্থান পায়। ঘড়ি এবং কলম সংগ্রহ করা এই তারকার অন্যতম শখের কাজ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়িও আছে তাঁর সংগ্রহে। প্রথম হিট ছবি ‘জাঞ্জির’ এর আগে পরপর অনেকগুলো ছবি ফ্লপ হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের। সব্যসাচী অমিতাভ দুই হাতেই সমানভাবে লিখতে পারেন। একবার মাত্র ৫ ঘণ্টায় ২৩টি দৃশ্যের ডাবিং করেছেন তিনি , যা বলিউডের চলচ্চিত্র ইতিহাসে রেকর্ড।
শুরুটা ‘সাত হিন্দুস্তানি’ দিয়ে। ১৯৬৯ সালের ঘটনা। সিনেমার সাতটি প্রধান চরিত্রের তিনি একটিতে অভিনয় করেছেন। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি। কিন্তু তিনি তার জাত চিনিয়েছেন। নবাগত হিসেবে জাতীয় পুরস্কার বগলবন্দি করেছেন। তাঁর উথানটা মূলত ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। অভিনয় করেন আরেক সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সঙ্গে। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসাও আদায় করতে সক্ষম হয়। সে বছর ফিল্মফেয়ারে সেরা সহশিল্পীর পুরস্কার পান। সে বছরই মুক্তি পায় ‘পরওয়ানা’। সে ছবিটাও প্রশংসিত ও ব্যবসাসফল হয়।
এরপরই ভাগ্যদেবী মুখ ফিরিয়ে নেন তার থেকে। বেশ কিছু সিনেমা সুপার ফ্লপ হয়। ১৯৭৩ সালে ফের বক্স অফিস মাত, প্রকাশ মেহরার ‘জানজির’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। ইন্সপেক্টর বিজয় খান্নার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। এই ছবির মাধ্যমেই মূলত তার নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ খ্যাতিটা। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি টানা অভিনয় করেন। তারপর কিছুটা বিরতী।
অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতেও ছিলেন সরব। পারিবারিক বন্ধু ছিলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে রাজীব গান্ধীর সমর্থনে অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতে যোগ দেন। এ সময়ে অভিনয়ে বিরতী নেন। এলাহাবাদ লোকসভা আসনের জন্য উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুনার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (৬৮.২% ভোট পেয়ে) ভোটে জয়লাভ করেন। এর ঠিক তিন বছরের মাথায় অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিকে নর্দমা আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন। অভিনয়ের প্রতি আবার মনোযোগী হন।
যশরাজ ফিল্মসের `মোহাব্বতে` ছবির মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন। এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ,‘ আঁখে’ , ‘বাগবান’ ,‘খাকি’ ,‘দেব’,বান্টি অউর বাবলি এর মত ছবিতে।
২০০৫ সাল ছিল, অমিতাভ বচ্চনের জীবনের অন্যতম সেরা বছর। সঞ্জয় লীলা বানসালির `ব্ল্যাক` ও রামগোপাল ভার্মার `সরকার` এই ছবি দুটি পৌঢ় অমিতাভ বচ্চনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। ‘দ্য কিং লিয়র’, ‘চিনিকম’, ‘পা’ ছবি দিয়ে নিজেকে আবার নিরীক্ষা করেছেন। `পিকু`তে অনবদ্য অভিনয়ে নিজের ক্যারিয়ারে আরেকটি বিশেষ পালক যুক্ত করেছেন।`পিংক` ছবিতেও নিজের প্রতিভার মূল্য রেখেছেন।এই সময়ে এসেও নিজেকে ভাঙছেন ,দর্শক মাতাচ্ছেন। শুটিং চলছে `থাগস অব হিন্দুস্তান`এর মত বহুল অপেক্ষমান ছবি। গায়ক হিসেবেও রয়েছে তার সুপরিচিতি। ভরাট কন্ঠ এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। টেলিভিশনে `কোন বনেগা ক্রোড়পতি`র সফল উপস্থাপক তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে কিন্তু ভরাট কন্ঠই ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কম কটুক্তি শুনতে হয়নি নানা সময়ে। মজার ঘটনা, সিনেমায় আসার আগে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। শুরতেই তাকে খারিজ করে দেয়া হয়। অথচ আজ সেই অমিতাভ অজস্র অনুষ্ঠানে সূত্রধর, নেপথ্য গায়ক এবং উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
সমালোচনাটাও তার জীবনের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলছে। যেন একই পথের পথিক। তবে তার বিশ্বাস সমালোচকরাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী। তাইতো কিছুদিন আগে নিজের অফিশিয়াল ব্লগে লিখেছেন, ‘যখন কেউ আপনার সমালোচনা করেন, মনে রাখবেন তিনি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবেন। এটা সবার উপভোগ করা উচিত। এটা আমার কথা নয়। তবে এই কথাগুলোকে আমি খুব সম্মান করি।’
শোনা যায় পর্দার ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ব্যক্তিজীবনে খুবই বিনয়ী। নানা সময়ে রেখার সঙ্গে তার প্রেম পদ্য প্রকাশ পেলেও স্ত্রী জয়া বচ্চনের সঙ্গে সংসার আজও অটুট। ১৯৭৩ সালে জয়া ভাদুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে শ্বেতা নন্দা এবং ছেলে অভিষেক বচ্চন।
অমিতাভ বচ্চনের জন্ম উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক হিন্দু-শিখ পরিবারে। তার পিতা হরিবংশ রাই বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তার মা তেজি বচ্চন ছিলেন ফৈসলাবাদের এক শিখ-পাঞ্জাবি। পিতামাতার দুই ছেলের মধ্যে অমিতাভ বড়। হরিবংশ রাইয়ের পদবি ছিল শ্রীবাস্তব কিন্তু নিজের লেখা প্রকাশ করার সময় তিনি ছদ্ম-পদবি ‘বচ্চন’ ব্যবহার করতেন। অমিতাভ বচ্চনের মায়ের অভিনয়ে খুব উৎসাহ ছিল। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পান। কিন্তু সাংসারিক কর্তব্যের চাপে তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অভিনেতা হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ বছর বয়সেই তিনি কলকাতার ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোং নামে জাহাজ কোম্পানির কাজে ইস্তফা দেন। পরে মুম্বাইতে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যান। শুরুর পথটা তার জন্যে সহজ ছিল না। জীবন-সংগ্রামের দিনগুলোতে মুম্বাইয়ের রাস্তার পাশে বেঞ্চিতেও রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলিউডের এই শাহেনশাহ্ অমিতাভের প্রথম বেতন ছিল ৩০০ রুপি।
বর্নিল ক্যারিয়ারে পেয়েছেন পদ্মশ্রী,পদ্মভূষণ,পদ্মবিভূষণ সহ নানা খেতাব। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার, এর মধ্যে তিনটিই পৌঢ় বয়সে।এছাড়া বেশ কয়েকবার ফিল্মফেয়ার সহ পেয়েছেন অসংখ্য দেশী বিদেশী পুরস্কার। অপেক্ষা এখন দাদাসাহেব ফালকের সম্মানের কিংবা যেভাবে নিজেকে আরো বর্নাঢ্য করে যাচ্ছেন,হয়তো পুরস্কারের পাল্লা আরো ভারী হবে।
আজ অমিতাভের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। প্রতি জন্মদিনে প্রিয় মানুষেরা কীভাবে শুভেচ্ছা জানায় তা তিনি হুবহু মনে রাখতে পারেন।
১৯৪২ সালের আজকের এই দিনে (১১ অক্টোবর) জন্মগ্রহণ করেছেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৭৫ টি বছর। বয়সটা কখনোই তার জন্য বোঝা হয়নি। বরং দিনে দিনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন সবার উপরে।
বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
বেশ
কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল, অন্তঃসত্ত্বা হেইলি বিবার। বাবা হতে চলেছেন জাস্টিন বিবার।
তবে এ প্রসঙ্গে একটা শব্দও বলেননি এই তারকা জুটি। এর আগেও একাধিকবার হেইলি বিবারের
মা হওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।
তবে এবার আর গুঞ্জন নয়। বাবা হতে চলেছেন বিশ্বখ্যাত পপ তারকা জাস্টিন বিবার। জাস্টিন ও হেইলির সুখের সংসারে আসতে চলেছে নতুন সদস্য।
বাবা হওয়ার সংবাদটি নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন পপতারকা জাস্টিন বিবার। স্ত্রীর বেবিবাম্পের ছবি পোস্ট করে অনুরাগীদের দিলেন সুখবর। শুধু তাই নয়, খ্রিস্টান সংস্কৃতি মতে আবারও ফাদারের সামনে বিয়ে করলেন জাস্টিন ও হেইলি।
বেশ
কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে হেইলি জানিয়েছিলেন, তাঁদের দাম্পত্যজীবন কাটছে সিনেমার
মতো। তিনি আরও বলেন, জাস্টিনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া খুব ভাল বলেই আপাতত সুখে সংসার
করছেন তাঁরা। ২০১৮ সালে অনেকটা চুপিসারেই বিয়ে করে নেন জাস্টিন-হেইলি।
বিয়ের
খবর কেউই প্রকাশ্যে আনেননি। এরপর বিয়ের চার বছর পূর্তিতে তাঁদের বিবাহের কথা স্বীকার
করেন তারকা জুটি। আর বিয়ের ৬ বছর পর অবশেষে পিতৃত্বের স্বাদ পেতে যাচ্ছেন জাস্টিন।
দীর্ঘ
৮ বছরের সম্পর্কের পর বিচ্ছেদ হয় সেলেনা গোমেজ ও জাস্টিন বিবারের। তারপরই ২০১৮ সালে
মার্কিন মডেল হেইলির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জাস্টিন। গোমেজ ভক্তদের দাবি, সেলেনা
গোমেজের কাছ থেকে জাস্টিনকে ছিনিয়ে এনেছেন হেইলি। জাস্টিন-গোমেজ সম্পর্ক ভাঙার মুল
কারিগর তিনিই। জাস্টিনের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে হেইলির সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দেন গোমেজ।
একে
অপরের মুখও দেখেননি। তবে সম্প্রতি দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে। তাদের মাঝে তিক্ততার বরফও
গলতে শুরু করেছে। গোমেজও মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন, হেইলির সঙ্গে তার কোনো বিবাদ নেই।
মন্তব্য করুন
খুনের ঠিক পাচ মাস আগে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে
প্রচণ্ড ঝগড়া হয় অভিনেতা সোহেল চৌধুরীর। ঘটনাস্থল বনানীর ট্রাম্প ক্লাব। সোহেল চৌধুরী
এর জের ধরে ওই রাতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার হুমকি দেন। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আজিজ
মোহাম্মদ ভাইকে মারধরের চেষ্টা করেন সোহেল। আজিজ মোহাম্মদ ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল
ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের কক্ষে ঢুকে যান। একপর্যায়ে তিনি বাথরুমে পালিয়েও থাকেন।
পরে বান্টি ইসলাম ও ক্লাবের ব্যবস্থাপকের হস্তক্ষেপে সে দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার পর আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও ব্যবসায়ী আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেল
চৌধুরীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই মামলার সাক্ষীদের আদালত ও পুলিশের দেওয়া জবানবন্দিতে
এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরীন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে
বলেন, ‘খুন হওয়ার কয়েক মাস আগে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল
চৌধুরীর প্রচণ্ড বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাই
ও বান্টি ইসলামরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সোহেলকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।’
২৫ বছর আগে সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই
ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তারা তিনজনই পলাতক। বাকি ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এই রায় ঘোষণা করেন। খালাস
পাওয়া ছয়জন হলেন আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম
ইমন, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, সেলিম খান ও ফারুক আব্বাসী।
রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, সোহেল চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সাক্ষীরা সত্য গোপনের
চেষ্টা করেছেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর পূর্বশত্রুতা ছিল, সেটা
প্রমাণিত হয়েছে।
আসামি ও সাক্ষীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য বলছে, চিত্রনায়ক
সোহেল চৌধুরী খুন হন ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এর সাড়ে পাঁচ মাস আগে তিনি চার থেকে পাঁচজন বন্ধুকে নিয়ে বনানীর ট্রাম্প
ক্লাবে যান। রাত তখন ২টা। ক্লাবের এক কোনায় বন্ধুদের নিয়ে বসে ছিলেন সোহেল। ক্লাবের
অন্য প্রান্তে বান্ধবীদের নিয়ে চেয়ারে বসে ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ। একপর্যায়ে আজিজ মোহাম্মদ
তাঁর পূর্বপরিচিত রাবেয়া মাহফুজ ওরফে সোনালীকে গান গাইতে বলেন। তিনি আজিজ মোহাম্মদকে
কয়েকটি হিন্দি গান শোনাতে থাকেন। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী রাবেয়াকে গান গাইতে নিষেধ
করেন।
সোহেল চৌধুরী খুন হওয়ার পর রাবেয়া মাহফুজ ১৯৯৯ সালের ১৮ মার্চ সাক্ষী
হিসেবে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। সেই জবানবন্দিতে তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমার
স্বামীসহ ট্রাম্প ক্লাবে নাচগান করি। এভাবে রাত দুইটার মতো বেজে যায়। ওই সময় হঠাৎ দেখি
আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। তাঁর সঙ্গে একজন বিদেশি বন্ধু ছিল। আর ছিল তিনজন বান্ধবী। আমি
তখন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সালাম দিই। ভাই তখন আমাকে তাঁর টেবিলে বসতে বলেন। তখন আজিজ
মোহাম্মদ ভাই আমাকে গান গাইতে বলেন। আমি তিন থেকে চারটা হিন্দি গানের অংশবিশেষ গাই।
গান গাওয়ার একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী চিৎকার করে বলেন, গান থামাও।’
রাবেয়া মাহফুজ আদালতকে আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরীর চিৎকারে আমি একটু
ভয় পাই। তৎক্ষণাৎ সোহেল চৌধুরী আমাদের টেবিলের সামনে আসেন। তখন আমার পাশে বসা আজিজ
মোহাম্মদ ভাইয়ের বান্ধবী ফারজানার উদ্দেশে সোহেল চৌধুরী বলেন, তুমি আমার সঙ্গে আসো।
ফারজানা আগে সোহেলের বান্ধবী ছিল। তবে ফারজানা সোহেলের সঙ্গে যেতে রাজি হন না। তখন
সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে ও ফারজানাকে গালিগালাজ করেন। ক্রমান্বয়ে সোহেল উত্তেজিত
হতে থাকেন। একপর্যায়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাই বান্টি ইসলামের অফিসের বাথরুমে যান। তখনো সোহেল
চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের উদ্দেশে বলেছিলেন, আজ ওকে ছাড়ব না।’
মামলার আরও কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে ওই রাতের এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। সোহেল চৌধুরী ওই রাতে আজিজ মোহাম্মদের কাছ থেকে যে নারীকে চলে আসতে বলেছিলেন, সেই ফারজানা ইউসুফ এ মামলায় পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তিনি বলেছিলেন, সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল আগে। পরে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
ফারজানা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ‘১৯৮৩ সালে আমার
বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে আমার মনোমালিন্য চলতে থাকে। এরপর ১৯৯৬ সালে
সোহেল চৌধুরীর বোনের ননদ পাপিয়ার গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যাই। সেদিন সোহেলের সঙ্গে আমার
পরিচয় হয়। পরে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আমি কয়েকবার সোহেল চৌধুরীর বাসায় যাই।
এরপর ১৯৯৮ সালে জুথি নামের এক মেয়ের একটি অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে প্রথম আজিজ
মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’
ফারজানা বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আমার বান্ধবী সাথীকে সঙ্গে
নিয়ে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই কয়েকজন মেয়েবন্ধু,
ছেলেবন্ধুসহ একত্রে বসে আছেন। আমি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চেয়ারের পাসে বসি। ক্লাবের
বারের কাছে সোহেল চৌধুরী, কালা নাসিরসহ আরও পাঁচ থেকে সাতজন ছেলে সেখানে ছিল। এমন সময়
সোনালীকে (রাবেয়া মাহফুজ) গান গাইতে বলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সোনালী গান গাওয়া শুরু
করেন। তখন সোহেল চৌধুরী, কালা নাসির ও তাঁর বন্ধুরা গান বন্ধ করার জন্য চিৎকার শুরু
করেন।’
ফারজানা জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘তখন সোহেল চৌধুরী আমাকে আজিজ মোহাম্মদ
ভাইয়ের কাছ থেকে তাঁর টেবিলে আসতে বলেন। আমি না যাওয়ায় তিনি আমাকে গালিগালাজ করেন।
আজিজ মোহাম্মদ ভাইকেও গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন আজিজ মোহাম্মদ ভাইও সোহেল চৌধুরীকে
বকাবকি করতে থাকেন। তখন আমি ভয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াই। আর আজিজ মোহাম্মদ ভাই দৌড়ে বান্টি
ইসলামের অফিসের বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।’
ফারজানা আরও বলেন, ‘এ সময় হোটেলের ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) সোহেল
চৌধুরী ও তাঁর বন্ধুদের নিচে নামিয়ে দেয়। তখন বান্টি ইসলাম ক্লাবে আসেন। সোহেল চৌধুরীর
বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ক্লাবের ভেতরে আসেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
ভোররাত পাঁচটার দিকে সোহেল চৌধুরী চলে গেলে আমি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গাড়িতে করে বাসায়
ফিরি।’
কেবল রাবেয়া মাহফুজ কিংবা ফারজানা নন, সোহেল চৌধুরীর মা নূর জাহান
বেগমও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের কথা আদালতকে বলেছিলেন। সাক্ষী হিসেবে ১৬৪
ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে নূর জাহান বেগম বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আমার ছেলে সোহেল
চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে ট্রাম্প ক্লাবে খুব ঝগড়াঝাঁটি হয়। মারামারি
হওয়ার উপক্রমও হয়। এরপর বান্টি ইসলাম এবং বোতল (আশীষ রায় চৌধুরী) নামের এক ব্যক্তির
সঙ্গেও আমার ছেলের গুরুতর ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর থেকে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। আমার
ছেলেকে ট্রাম্প ক্লাবে যেতে নিষেধ করে। মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বান্টি ইসলাম ও
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের লোকেরা আমার ছেলেকে “মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে এসেছে” বলে হুমকি দিয়েছিল।’
সোহেল চৌধুরীর মা নূর জাহান বেগম আদালতকে আরও বলেন, ‘আমার ছেলের
হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে (১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর) আজিজ মোহাম্মদ ভাই ব্যাংককে যান।
এর তিন দিন পর আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি
ইসলাম ও তাঁদের লোকজনেরা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।’
সোহেল চৌধুরীর মা আরও বলেন, ট্রাম্প ক্লাবে অনেক অবৈধ কাজকারবার
হতো। ওই ক্লাবের পাশে বড় জামে মসজিদ। মুসল্লিরা ক্লাবের অসামাজিক ও অন্যায় কাজকর্মের
বিষয়ে অনেক প্রতিবাদ করেছেন, বাধা দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প ক্লাব কর্তৃপক্ষ কোনো বাধা
মানেনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু চৌধুরী গোলাম
মোহম্মদ ওরফে ওমর চৌধুরীও সে দিনের ঘটনার বিষয়ে প্রায় একই রকমের বক্তব্য পুলিশের কাছে
দিয়েছিলেন। মামলার অভিযোগপত্রে রাবেয়া মাহফুজ, ফারজানা ইউসুফ, নূর জাহান বেগম ও ওমর
চৌধুরী এ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন। অবশ্য সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর
সাদিয়া আফরীনের তথ্যমতে, এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সোহেল চৌধুরীর মা নূর জাহান
বেগম বিচার চলাকালে মারা যান। বাকিরা বিচার চলাকালে সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হননি।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন তাঁর বন্ধু
আবুল কালাম। তিনিও সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি পুলিশ ও আদালতের কাছে জবানবন্দি
দিয়েছেন। তাঁর জবানবন্দিতে উঠে আসে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ। আবুল কালাম বলেন, ‘১৯৯৮
সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ১টার সময় সেলিম ভাইয়ের অফিসে গিয়ে কাবাব ও হুইস্কি খাই। এরপর
ট্রাম্প ক্লাবে যাই। সেখানে সোহেল চৌধুরীকে পাই। এরপর তাঁর সঙ্গে আবার তাঁর বাসায় যাই।
আবার সেখানে বিয়ার পান করি। পরে সোহেল চৌধুরী আমাদের নিয়ে ট্রাম্প ক্লাবে যাওয়ার আগে
টেলিফোনে বান্টি ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন।’
সোহেল চৌধুরীর বন্ধু আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা ট্রাম্প ক্লাবের গেট
ও লিফটের কাছে পৌঁছলে সাত থেকে আটজন লোক আমাদের লক্ষ্য করে রিভলবার ও পিস্তল দিয়ে গুলি
শুরু করে। আমি পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাই। দৌড়ে আমি ওমর ভাইয়ের (সোহেল চৌধুরীর বন্ধু)
বাসার সামনে গিয়ে পড়ে যাই এবং জ্ঞান হারাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ট্রাম্প ক্লাবে গিয়ে জানতে পারি, নীরব ও দাইয়্যান
(ট্রাম্প ক্লাবের কর্মচারী) সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে
পারি ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাসী ও আদনান সিদ্দিকী সেদিন গাড়িতে করে ক্লাবের গেটে
আসেন। সোহেল চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এরপর তিনি মারা যান।’
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা আজিজ মোহাম্মদ আদালত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
গুঞ্জন সত্যি হলো। আর সারপ্রাইজ নয় অবশেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চলে আসলো। বলিউডের নতুন জুটি হতে যাচ্ছেন বলিউড ভাইজান সালমান খান ও দক্ষিণ ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা।
সালমান খানের পরবর্তী সিনেমা ‘সিকান্দার’-এ অভিনেতার বিপরীতে দেখা যাবে দক্ষিণের এই তারকাকে। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা প্রযোজিত এবং এ আর মুরুগাদোস পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পাবে আগামী বছরের ঈদে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ বৃহস্পতিবার ( ৯ মে) সকালে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। যেখানে সালমান আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন।
এরপর রাশমিকার নাম প্রকাশ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে এই নায়িকা লিখেছেন, ‘অনেকদিন ধরেই সবাই আমার নতুন কাজের খবর জানতে চেয়েছিলেন। খবর ছিল না দেখে আমি কিছুই জানাতে পারছিলাম না। এবার জানাচ্ছি। আপনাদের জন্য এটাই ছিল বড় চমক। ‘সিকান্দার’-এ আমি সালমান খানের বিপরীতে কাজ করছি। এমন একটি দুর্দান্ত কাজে আমাকে যুক্ত করার জন্য আমি কৃতজ্ঞ এবং সম্মানিত।’ সিনেমার শুটিং শুরু হবে এ বছরের শেষের দিকে।
বর্তমানে রাশমিকা তার ‘পুষ্পা ২’ সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই সিনেমার কাজ শেষ হওয়ার পরেই তার নতুন সিনেমার শুটিং শুরু হবে।
মন্তব্য করুন
খুনের ঠিক পাচ মাস আগে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়া হয় অভিনেতা সোহেল চৌধুরীর। ঘটনাস্থল বনানীর ট্রাম্প ক্লাব। সোহেল চৌধুরী এর জের ধরে ওই রাতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার হুমকি দেন। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে মারধরের চেষ্টা করেন সোহেল। আজিজ মোহাম্মদ ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের কক্ষে ঢুকে যান। একপর্যায়ে তিনি বাথরুমে পালিয়েও থাকেন। পরে বান্টি ইসলাম ও ক্লাবের ব্যবস্থাপকের হস্তক্ষেপে সে দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনার পর আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও ব্যবসায়ী আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই মামলার সাক্ষীদের আদালত ও পুলিশের দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।