ইনসাইড বাংলাদেশ

আজও বেদনার সুর বাজে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/10/2017


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সঙ্গে গৌরব ও ত্যাগের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। দেশের জন্য যেকোনো বড় আন্দোলনে এই হলের শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই হলের শিক্ষার্থীদের বড় ভূমিকা ছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী প্রথম জগন্নাথ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরই হামলা চালায়। সেদিন ছাত্র-শিক্ষক যাকে তাঁরা পেয়েছে তাকেই তাঁরা হত্যা করেছে । স্বাধীনতার প্রায় ১৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসে আরেকটি বড় ট্র্যাজেডি। এই দিনটিকে ভোলার নয় বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর এই দিনটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করছে। কি ঘটেছিল সেই দিনে?

জগন্নাথ হলে সেসময় পূজার আমেজ চলছিল। পরদিন থেকে ছিল দুর্গাপূজার ছুটি। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাড়িতে যেয়ে পুরো পরিবারের সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুরো হলের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাই পূজার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে। কিন্তু এমন একটা ট্র্যাজেডি যে সেসময় অপেক্ষা করছে তা তারা ভাবতেই পারেনি।

জগন্নাথ হলের অণুদ্বৈপায়ন ভবনে সেসময় একটি টিভি রুম ছিল। পুরো হলের ছাত্ররা এই ভবনে এসে টিভি দেখতো। ঘটনার দিন টিভি রুমে বসে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় নাটক ‘শুকতারা’ দেখছিলেন। এই নাটকটি দেখার জন্য সবসময়ই শিক্ষার্থীদের ভিড় হতো।

নিজেদেরই এক সতীর্থ মনন অধিকারীর অভিনয় দেখার প্রত্যাশায় সেদিন টিভি রুমে ভিড় আরও বেশি ছিল। হঠাৎ ভয়ংকর শব্দ সেই সঙ্গে সব কিছু মিলিয়ে গিয়ে এক নারকীয় অবস্থা। গগনবিদারী চিৎকারে চারদিকে ততক্ষণে এক ধ্বংস স্তূপ। বৃষ্টির জলে ৬৪ বছরের পুরনো চুণ-সুড়কীর ছাদ ভেঙ্গে যায়। ইট, টাইলস, লোহা ও কাঠের গরাদসহ চুন-সুড়কীর স্তূপে চাপা পড়ে অনেকে। ৩৯ জন ছাত্র এবং কর্মচারীকে এখানে প্রাণ হারাতে হয়। সেই সঙ্গে আহত হয় আরও ৩০০ জন।

মুহূর্তের মধ্যে জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় জগন্নাথ হলে কোন ছাত্র সংসদ না থাকলেও দ্রুতই উদ্ধার কর্মে এগিয়ে আসেন তদানীন্তন ডাকসু-র ভিপি আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সহায়তা করেন দমকল বাহিনী, পথচারী মানুষ, রিকশাওয়ালা, প্রতিবেশী ঢাকা মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা সেসময় শুধু উৎসাহ নিয়েই ছুটে আসেনি, বরং এসেছিল নিজেদের রক্ত দিয়ে অন্যের জীবন বাঁচাতে।

জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার জন্যে সেসময় দেশে তিন দিনব্যাপী শোক প্রকাশ করা হয় । খবরের কাগজ ভরে যায় নিহত ও আহতদের ছবি দিয়ে, রেডিওর মাধ্যমে গোটা বিশ্বে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। টেলিভিশনে প্রচার করা হয় হৃদয় বিদারক ঘটনার নানা চিত্র। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর নিহতদের স্মরনে টিভি রুমের স্থানেই গড়ে তোলা হয় অক্টোবর স্মৃতি ভবন।

জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির ৩২ বছর পরে আজও জগন্নাথ হলের প্রতি প্রান্তে বাজে বেদনার সুর। জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি সংঘটিত হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনাই দায়ী। এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। জগ্ননাথ হল ট্র্যাজেডির মতো যেন আর কোন ট্র্যাজেডি না ঘটতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএম/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭