ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুলকে নিয়েই বিএনপিতে ধুম্রজাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/06/2021


Thumbnail

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাই কথা বলছেন। তিনি যেন একাই এখন বিএনপিকে সামাল দিচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাকে সরব দেখা যাচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাই বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকরা এই মতের সঙ্গে সহমত নয়। তাঁরা মনে করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সব বিতর্কিত কথাবার্তা বলছেন যে বিতর্কিত কথাবার্তাগুলো বিএনপির অস্তিত্ব ধরে টান দিচ্ছে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসলে সরকারের এজেন্ট হিসেবে বিএনপিতে কাজ করছেন।

আজ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, জিয়াউর রহমানকে সরকার ভিলেন বানানোর চেষ্টা করছেন। এই বক্তব্য বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু করেছে। হঠাৎ করে কেন উনি জিয়াউর রহমান নিয়ে বক্তব্য রাখলেন এ নিয়ে বিএনপি`র মধ্যে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করতেই কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের মন্তব্য করেছেন কিনা এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলেছে। উল্লেখ্য যে, গত ৩০ মে ছিল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। সেই মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির অনুষ্ঠানেও জিয়াউর রহমানকে এখন রাজাকার বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ এই সময়ের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কথাবার্তা বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের কোন নেতৃবৃন্দও জিয়াউর রহমানের বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বরং তারা বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে মন্তব্য করেছেন এবং বিএনপিকে আক্রমণ করেই বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী। এরকম একটি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াকে নিয়ে কেন মাতম তুললেন এই প্রশ্ন উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সন্দেহের চোখে দেখে বিএনপির নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে যখন বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের নাটকীয় ভাবে গেল তখন থেকেই মির্জা ফখরুল বিএনপিতে একজন বিতর্কিত রহস্যময় চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত। ওই নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিল বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এমন তথ্য বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে আছে। শুধু বৈঠক করেননি, বিএনপির আদর্শিক ধারার বিরুদ্ধে গিয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে একমাত্র রাজনৈতিক দল ছিল বিএনপি। অথচ এর নেতৃত্ব তুলে দেন ড. কামাল হোসেনের হাতে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি প্রকারান্তে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে নেন। কারণ ড. কামাল হোসেন একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালিত হবে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। তাঁর পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেননি বরং টিকে আছেন। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছিলেন যে বিএনপির কোন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে যাবেন না। কিন্তু সে কথাও রাখেননি ফখরুল। রাতের অন্ধকারে বিএনপির এমপিরা সংসদে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন করে জানেন যে এটি দলীয় ভাইস চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের আলোকে তারা শপথ গ্রহণ করেছেন। এই শপথ অনুষ্ঠানের কথা তিনি জানতেন। যদিও নির্বাচিত হলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। এরকম দৈত্য মনোভাব এবং নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্য বিএনপিকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে বলে বিএনপি অনেকে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সব কথাবার্তা বলছেন যে কথাবার্তাগুলো এক দিক দিয়ে খুবই মুখরোচক মনে হল প্রকারান্তে তা সরকারকেই সহযোগিতা করছে এবং তিনি কার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন সেটি এখন বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭