নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ১৯ জুন, ২০২১
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাই কথা বলছেন। তিনি যেন একাই এখন বিএনপিকে সামাল দিচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাকে সরব দেখা যাচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাই বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকরা এই মতের সঙ্গে সহমত নয়। তাঁরা মনে করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সব বিতর্কিত কথাবার্তা বলছেন যে বিতর্কিত কথাবার্তাগুলো বিএনপির অস্তিত্ব ধরে টান দিচ্ছে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসলে সরকারের এজেন্ট হিসেবে বিএনপিতে কাজ করছেন।
আজ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, জিয়াউর রহমানকে সরকার ভিলেন বানানোর চেষ্টা করছেন। এই বক্তব্য বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু করেছে। হঠাৎ করে কেন উনি জিয়াউর রহমান নিয়ে বক্তব্য রাখলেন এ নিয়ে বিএনপি`র মধ্যে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করতেই কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের মন্তব্য করেছেন কিনা এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলেছে। উল্লেখ্য যে, গত ৩০ মে ছিল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। সেই মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির অনুষ্ঠানেও জিয়াউর রহমানকে এখন রাজাকার বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ এই সময়ের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কথাবার্তা বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের কোন নেতৃবৃন্দও জিয়াউর রহমানের বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বরং তারা বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে মন্তব্য করেছেন এবং বিএনপিকে আক্রমণ করেই বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী। এরকম একটি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াকে নিয়ে কেন মাতম তুললেন এই প্রশ্ন উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সন্দেহের চোখে দেখে বিএনপির নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে যখন বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের নাটকীয় ভাবে গেল তখন থেকেই মির্জা ফখরুল বিএনপিতে একজন বিতর্কিত রহস্যময় চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত। ওই নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিল বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এমন তথ্য বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে আছে। শুধু বৈঠক করেননি, বিএনপির আদর্শিক ধারার বিরুদ্ধে গিয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে একমাত্র রাজনৈতিক দল ছিল বিএনপি। অথচ এর নেতৃত্ব তুলে দেন ড. কামাল হোসেনের হাতে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি প্রকারান্তে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে নেন। কারণ ড. কামাল হোসেন একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালিত হবে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। তাঁর পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেননি বরং টিকে আছেন। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছিলেন যে বিএনপির কোন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে যাবেন না। কিন্তু সে কথাও রাখেননি ফখরুল। রাতের অন্ধকারে বিএনপির এমপিরা সংসদে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন করে জানেন যে এটি দলীয় ভাইস চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের আলোকে তারা শপথ গ্রহণ করেছেন। এই শপথ অনুষ্ঠানের কথা তিনি জানতেন। যদিও নির্বাচিত হলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। এরকম দৈত্য মনোভাব এবং নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্য বিএনপিকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে বলে বিএনপি অনেকে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সব কথাবার্তা বলছেন যে কথাবার্তাগুলো এক দিক দিয়ে খুবই মুখরোচক মনে হল প্রকারান্তে তা সরকারকেই সহযোগিতা করছে এবং তিনি কার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন সেটি এখন বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।