কালার ইনসাইড

আগামী বছর হয়তো সিনেমার ঘোষণা দিবো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2017


Thumbnail

ছোট পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা শাফায়াত মনসুর রানা। খুব শীঘ্রই সিনেমার কাজে হাত দিবেন। নাটকের বর্তমান ধারা, সমস্যা, পরিবর্তন নিয়েও কথা বললেন।তাঁর সমসাময়িক আরও অনেক ভাবনা নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের

বাংলা ইনসাইডার: গেল ঈদের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছে নাটকে মধ্যবিত্তদের গল্প ফিরে আসুক, আসা উচিত। আপনার মত কী?

শাফায়াত মনসুর রানা: আসলে এটা নির্ভর করে পরিচালক কিংবা দর্শকের রুচির উপর। মধ্যবিত্তদের গল্প ফিরে আসুক ফর্মূলাতে আমি একমত নই। আমি বিশ্বাস করি, ভালো কিছু হলে দর্শক গ্রহন করবে। সেটা যে বৃত্তেরই হোক। দর্শকের সঙ্গে কানেক্টেড থাকতে হবে। ভাল কিছু করার প্রয়াস থাকলে দর্শক অবশ্যই দেখবে।

‘আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ’,‘ছবিয়াল রি ইউনিয়ন’, এরকম প্রজেক্টগুলো এসময়ে কতটা জরুরি,কেন ?

এ ধরনের সিরিজে যেটা দেখতে পাই, অনেকগুলো প্রডাকশন একসঙ্গে হয়। সেই ছয় কিংবা সাতটা প্রডাকশনের মধ্যে যদি ভালোর সংখ্যা বেশি না হয়। সেটা খুবই হতাশার সৃষ্টি করে।

দর্শকদের একটা এক্সপেকটেশন থাকবে যে এরকম ডাক দিয়ে একটা কিছু হচ্ছে, সেখানে ভালো কিছু পাব। ‘আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ’ যেটা হয়েছে সেটা আমার মতে হতাশার মতোই। ‘ছবিয়াল রি ইউনিয়ন’ নিয়েও একই কথা। এখানে বলা হয়েছিল প্রত্যেকটা ভিন্ন স্বাদের হবে। প্রত্যেক পরিচালক তাঁর ধারা থেকে বের হয়ে এসে নতুন কিছু করবেন। সেটা হয়নি বলে মনে করি। সেভাবেও সাতটি প্রডাকশনের মধ্যে গর্ব করার মতো কমপক্ষে ৪ টি তো থাকবে, সেটা পাওয়া যায়নি।

ওই জায়গাটা থেকে চিন্তা করলে এখন পর্যন্ত ভালো কিছু হয়েছে বলব না। তবে এরকম প্রজেক্ট হওয়া উচিত। আজ না হচ্ছে কাল হয়তো ভালো কিছু হবে। সেটা নতুন মেকারদের জন্যও একটা ভাল প্লাটফর্ম হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পাস মার্ক কমপক্ষে পেতে হবে। এখানে আসলে মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই। অনেক টাকা খরচ করে অনেক প্রচার প্রচারণা করে যদি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে, সেটা না করলেও মন্দ কিছু হবে না। তবে করলে সেভাবে পারফেক্টলি কিছু করা উচিত। 

আপনি তো ‘স্যাটায়ার’ ধর্মী নাটক নির্মাণ করে থাকেন, কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?

আমরা হয়তো এখনো এই টাইপের কাজগুলো নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারিনি। আমরা অল্পতেই অনেক বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেলি। ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ যখন বানালাম , বিশেষ কিছু মানুষ এ নিয়ে অনেক কথা বলছে। আমার সাহস, যোগ্যতা আরও অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই যেমন অমিতাভ রেজা ভাইকে নিয়ে একটা চরিত্র ছিল। সেটা অনেকেই নেগেটিভলি নিয়েছে। অনেকেই মনে করছে হয়তো অমিতাভ ভাইয়ের সঙ্গে আমরা ঝগড়া বা অন্য কিছু। নানা জনে নানা রকম কথা বলছে। স্ট্যাটাস দিয়েছে তার নখের যোগ্যতার মতও হতে পারব না, আরও কত কি! আমি কিন্তু অমিতাভ ভাইকে আগেই জানিয়েছি এইরকম একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করছি। সে বলছে করো সমস্যা কি! তার একরকম পারমিশন নিয়েই করেছি। লোকজন না বুঝে না জেনে অনেক কথা বলে ফেলে। আমি কিন্তু তখন অমিতাভ ভাইকেও বলতে পারতাম যে আমাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিন । কিন্তু এগুলো নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। যে যা ভাবার ভাবুক। আমরা জানি আমাদের মধ্যে কি। অনেকে পজিটিভলিও বলেছেন যে সাহসী উদ্যোগ। এরকমটা দরকার।

ছোটপর্দা থেকে এসময়ে অনেকে সিনেমায় আসছে, আপনার কোনো প্ল্যানিং?

এইটা তো অনেকটা বিয়ের মতো (হাসি)। প্রতিদিনই সিনেমা বানাতে ইচ্ছে করে। অনেকদিন ধরেই জোরেশোরে তোড়জোর চলছে। আশা করি আগামী বছর ফাইনাল কিছু বলতে পারবো। অনেক গল্পই তো মাথায় আসে। ঠিক কোন গল্পটা নিয়ে ফাইনালি মাঠে নামবো সেটা ঠিক করতে যতটা সময় লাগে। কিন্তু আমার একটা হতাশার জায়গা আছে, অনেক গল্প ছোট পর্দায় বলে ফেলছি যেটা আসলে বড় পর্দার উপযোগী ছিল।

অভিনেতা ‘শাফায়াত’র যদি সমলোচনা করতে বলা হয়…

আগে যথেষ্ট বাজে অভিনয় করতাম। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিজের পরিচালনায় সুবিধা আছে আবার অসুবিধাও আছে।অনেক সময় পারফেক্ট রোলটা প্লে করা যায়, আবার দুটো কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে মনোসংযোগেরও ব্যাঘাত ঘটে। অন্য কারও ডিরেকশনে কাজ করলে আসলে বুঝতে পারবো কতটা কি পারলাম।

নির্মাণ ও শিক্ষকতা একই সঙ্গে চলছে, সামঞ্জস্য রাখা সম্ভব হয় কীভাবে?

শিক্ষকতাই আসলে নির্মাণে আমাকে উৎসাহিত করে। প্রতি সেমিষ্টারে নতুন নতুন স্টুডেন্ট আসে। ওদের সঙ্গে কথা বললে নতুন ভাবনা চলে আসে। দিনকে দিন তো আমরা বুড়া হচ্ছি। সেখানে ওদের সঙ্গে থাকলে ইয়ং থাকা যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম বাধ্যবকতা নেই যে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। টাইমলি ক্লাস নিতে হয়। আর ওভারঅল মিডিয়ার অবস্থাটাও এমন হয়নি যে সারাবছর চাইলেই আমার মনের মতো বাজেট নিয়ে ভাল কাজ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে তো সারাবছর আমার নাটক নির্মাণ করিও না। এভাবেই আসলে দুটি বিষয় সামঞ্জস্য করি।

সামগ্রিকভাবে নাটকের অবস্থা কেমন দেখছেন?

আমরা এখনো অগোছালোভাবে চলছি। যার যেখানে থাকা উচিত। আমরা এখনো সেই জায়গাটা এতবছরে ঠিক করতে পারিনি। আমি একজন পরিচালক। আমার কাজ হচ্ছে পরিচালনা করা। আমি পরিচালক হয়ে কিনা কাজ করি প্রডাকশন ম্যানেজারের, আমি কাজ করি প্রডিউসারের, মার্কেটিংয়েরও কাজ করেতে হচ্ছে। তেমনি একজন অভিনেতাও শুধু অভিনয়টা নিয়ে থাকতে পারে না। প্রডিউসার আর ফাইন্যান্সারের পার্থক্যটা এখনো আমাদের এখানে তৈরী হয়নি। একজন ডিওপি তার কাজটা ঠিকমতো করতে পারে না। চ্যানেলে প্রগ্রামিং এর লোকেরা করে মার্কেটিং এর কাজ। কিনা মার্কেটিং এর লোকেরা প্রগ্রামের জ্ঞান দিচ্ছে। সবমিলিয়ে একটা হিজিবিজি অবস্থা চলছে। যা এত বছরেও ঠিক হয়নি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটাই সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা।

মিডিয়ার মানুষ হিসেবে যদি আত্নসমলোচনা করতে বলা হয়….

আমরা চারপাচজন মিডিয়ার মানুষ একসঙ্গে আড্ডা দিলে সাধারণত কি হওয়া উচিত? আড্ডাতে গল্প হওয়া উচিত কোন প্রডাকশনটা ভালো হচ্ছে। কোনো প্রডাকশনের পিছনের গল্প কি। অমুক সিনেমাটা কেমন হয়েছে। শর্টগুলো কেমন হয়েছে। কোন প্রডাকশনের গল্প কেমন হলো। এইটা না করে আমরা সারাক্ষন এর ওর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকি। সেলিব্রেটিদের প্রত্যেকটা মেকাপরুমে যদি একটা করে অডিও ডিভাইস রেখে রেকর্ড করে মানুষদের শোনানো যেত। তাহলে মিডিয়ায় রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যেত।



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭