ইনসাইড বাংলাদেশ

গার্মেন্টস মালিকরা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/08/2021


Thumbnail

কঠোর লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প কারখানা খুলে দেওয়া, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য গণপরিবহন চালু করা ইত্যাদি ঘটনাবলীর পর প্রশ্ন উঠেছে যে গার্মেন্টস মালিকরাই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী? এমনকি তারা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? বাংলাদেশ গত কিছুদিন ধরেই গার্মেন্টস মালিকদের উত্থান লক্ষণীয়। তারা শুধু ব্যবসায়িক নেতৃত্বেই নেই, সরকারের মধ্যেও তারা শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। একাধিক মন্ত্রী রয়েছেন যারা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এমপিদের মধ্যেও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের আধিক্য রয়েছে। মেয়র হিসেবে অন্তত একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আছেন। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ছে। তারা সরকারের অনেক সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দিচ্ছেন। সংসদে যখন একটি নির্দিষ্ট পেশাজীবীদের আধিক্য হয় তখন তারা তাদের জন্য অন্যায্য সুবিধা আদায় করে নেন। এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একক পেশাজীবীদের আধিক্য যেন সংসদে না হয় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবেই হোক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা এখন অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়েছেন।

বাংলাদেশ করোনার যখন প্রথম সংক্রমণ শুরু হলো তখন যে প্রণোদনা দেওয়া হয় সেই প্রণোদনা সবার আগে দেওয়া হয়েছিল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদেরকে। অথচ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে আমাদের অভিবাসীরা। তাদের ব্যাপারে তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো সে সময় প্রণোদনার কোন অর্থই পায়নি। সেই সময় গার্মেন্টস মালিকরা বলছিল যে, তাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে, তারা খারাপ অবস্থায় পড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। সরকার তাদেরকে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে যে, গার্মেন্টস মালিকরা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই সরকার সবকিছু করছে। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এবারের লকডাউনে। ২৩ জুলাই থেকেই সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিলো এবং বলল কোন অবস্থাতেই গার্মেন্টস সহ কলকারখানা খোলা হবে না। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে অনেকে ২৭ জুলাই বিভিন্ন জায়গায় এসএমএস পাঠালেন যে গার্মেন্টস খুলছে, তোমরা ঢাকায় চলে আসো। এই গার্মেন্টস মালিকরা কিভাবে জানলেন যে গার্মেন্টস খুলবে। এরপর গার্মেন্টস মালিকরা দেখা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদেরকে সাফ জানিয়ে দিলেন যে, এখন তাদের দাবী মানা সম্ভব নয়। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা তাতেও দমে যাননি। তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এর পরপরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। যেদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষণা করল যে, করোনার প্রকোপ বাড়ছে এবং করোনার এই প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে আরও ১০ দিন লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো দরকার ঠিক সেইদিনই সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হলো। শুধু তাই নয় বলা হলো যে, রপ্তানিমুখী সব কলকারখানাই খোলা হবে।

তবে এরপর দেখা গেল যে, ক্ষমতার লড়াইয়ে যেন গার্মেন্টস মালিকরা বারবার জয়ী হচ্ছেন। প্রথমে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন যে, গার্মেন্টস খোলা হবে বটে কিন্তু যে সমস্ত শ্রমিকরা শুধু ঢাকায় কলকারখানায় এলাকায় আছেন, এলাকার আশেপাশে আছেন তাদেরকে দিয়েই গার্মেন্টস চালু করা হবে। এ ব্যাপারে নাকি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে গার্মেন্টস মালিকরা কথা দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মচারীদের কাছে মেসেজ যাচ্ছে, ফোন যাচ্ছে এবং তাদেরকে ঢাকা আসতে বলা হচ্ছে। এরপর সরকার আবার গার্মেন্টস মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করল। গতকাল রাতে লঞ্চ বাসসহ গণপরিবহন খুলে দেওয়া হলো। বলা হলো আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে গার্মেন্টস মালিকদের জন্য। এর আগে যেটি ঘটলো সেটি ভয়ঙ্কর। সারাদেশে করোনার এই তীব্র সংক্রমণের সময় গার্মেন্টস শ্রমিকরা যে যেভাবে পারলো স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঢাকায় আসার এক প্রাণান্ত চেষ্টা করলো। ফলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার এক ঝুঁকি সৃষ্টি হলো। এখন মিলেমিশে ঢাকায় আসা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় শুরু করেছে। এর ফলে করোনা সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে গার্মেন্টসই কি বাংলাদেশে একমাত্র শিল্প? বাংলাদেশের অর্থনীতি কি গার্মেন্টস ছাড়া আর কোন কিছুর অবদান নেই? শুধু গার্মেন্টস মালিকদের কথায় সবকিছু কেন করতে হবে? আর এই প্রশ্নের উত্তরটাই এখন আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭