ইনসাইড বাংলাদেশ

অতিকথন আর সমন্বয়হীনতায় সমালোচিত সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/08/2021


Thumbnail

১২ বছরের বেশি আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব পালন করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হচ্ছে তা অন্য কোনো সময় হয়নি। সাধারণ মানুষ সরকারের একের পর এক সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত এবং কিছু ব্যক্তির লাগামহীন কথাবার্তা বিরক্তি প্রকাশ করছে সরাসরি। লকডাউন এখন পরিণত হয়েছে একটি তামাশায়। লকডাউন নিয়ে একের পর এক সমন্বয়হীন লাগামছাড়া কথাবার্তা জনমনে কেবল বিরক্তির উদ্রেক করছে না বরং সরকারকে আরও সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এর ফলে সরকারের অনেক ভালো অর্জন এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী একের পর এক লকডাউন নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। সেই সমস্ত কথাবার্তা সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। এই সমস্ত কথাবার্তা এখন মানুষের কৌতুকের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ২৩ জুলাই থেকে চলছে কঠোর লকডাউন এবং সেই সময়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বললেন যে এবারের লকডাউন হবে অন্যসব লকডাউনের চেয়েও কঠিন, কঠোরতম লকডাউন এবং শিল্প-কলকারখানা খোলা হবে না। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর এই কথার ব্যত্যয় ঘটতে বেশি সময় লাগল না। ৪৮ ঘণ্টা পরে দেখা গেল যে লোকজন যে যেভাবে পারছে বেরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করে ঢাকায় ফিরতে শুরু করলো।

তাহলে সরকারের মধ্যে কি কোনো সমন্বয় ছিলো না? এ ধরনের লকডাউন দেওয়ার আগে বাস্তবতাগুলো বিবেচনা করার কোন উদ্যোগ কি নেয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নগুলো এখন জনমনে। বিভিন্ন মহল এ নিয়ে প্রশ্ন করছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর অতিকথনের শেষ এখানেই নয়। তিনি বললেন যে, কোন অবস্থাতে পোশাকশিল্প, কলকারখানা এখন খোলা হবে না। কিন্তু তার পরপরই দেখা গেল যে, ১ আগস্ট পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলো। কারা খুললো পোশাক কারখানা, জনপ্রশাসন মন্ত্রীর এ নিয়ে ব্যাখ্যাও নেই। তিনি একটি টকশোতে এসে বললেন যে, তিনি বিজেএমএ`র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে শুধুমাত্র ঢাকায় যে সমস্ত শ্রমিকরা আছেন তাদেরকে দিয়ে কলকারখানা খোলা হবে। কিন্তু জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর এই কথার বরখেলাপ হতেও সময় লাগলো না। কলকারখানা ১ আগস্ট থেকে খুলবে, এটা শোনার পরপরই সারাদেশ থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা পড়িমরি করে ঢাকার পথে ছুটলো এবং স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই দেখা গেল না। এর ফলে যে করোনার সংক্রমণ বাড়বে তা অনুমান করতে বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বললেন যে, শুধুমাত্র ঢাকার শ্রমিক দিয়ে গার্মেন্টস কারখানাগুলো চলবে। সন্ধ্যায় আবার এই সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় আনার জন্য লঞ্চ এবং গণপরিবহন খুলে দেওয়া হলো। তাহলে সরকার একের পর এক সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, একের পর এক সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে, এটি কি সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে? এখানেই শেষ নয়। বলা হলো যে আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলবে কিন্তু জনগণের গার্মেন্টস শ্রমিকদের চাপে এটি আবার বাড়ানো হলো সন্ধ্যা পর্যন্ত। তাহলে সরকারের কাছে কি এই ধরনের কোনো তথ্য ও পরিসংখ্যান নেই যে কত শ্রমিক বাইরে গেছেন এবং কত গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকায় ফিরবেন। এ সমস্ত তথ্য পরিসংখ্যান না থেকে ঢালাওভাবে একটি করে মন্তব্য কিভাবে করা হয় সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার সরকারের সমন্বয়হীনতা এখন ক্রমশ প্রকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেদিন ঘোষণা করলো যে লকডাউন আরো দশ দিন বাড়াতে হবে সেদিনই গার্মেন্টস কলকারখানা খুলে দেওয়া হলো। তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো সমন্বয় নেই?

সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও। গত দেড় বছর ধরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যখাত নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। এখন দেখা গেল ঘটিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। করোনা টিকাদান নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানদের নিয়ে গঠিত কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের ওয়েবসাইটে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে যেমন জনসংখ্যার বিপরীতে দুই ডোজ টিকা পাওয়ার মানুষের হারের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে তেমনি ১ ডোজ টিকা পাওয়া মানুষের হারও দৈনিক টিকাদানের ক্ষেত্রে মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। এরমধ্যে বলা হচ্ছে যে ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এই গণটিকা নিয়ে একের পর এক কথার ঝঙ্কার দেখা যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবে আমাদের টিকার রোডম্যাপ কি সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট কথাবার্তা নেই। আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন যে, সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। কিন্তু আদৌ সেটি সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন যে, আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অতিকথন থেকে দূরে আসতে হবে এবং করোনা মোকাবেলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করাটা আজকে সবচেয়ে জরুরি। না হলে অন্যান্য সব কথাবার্তা এবং উদ্যোগগুলো তামাশায় পরিণত হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭