ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

রামুতে হামলার ৯ বছর, বিচার কি হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/09/2021


Thumbnail

কোরআন অবমাননা করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার অভিযোগ তুলে নয় বছর আগে আজকের দিনে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লিতে হামলা করে ১২টি বৌদ্ধমন্দিরে আগুন দেয়া হয়৷ পাশাপাশি হামলা করা হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরেও৷ এ ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও কোনটিরই এখনও মীমাংসা হয়নি৷ হামলার ঘটনায় বিচারাধীন ১৮ মামলায় মোট আসামি ৯৯৫ জন। তাদের সবাই এখন জামিনে।

হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বৌদ্ধবিহারগুলো গড়ে তোলা হয়েছে নতুন করে। তুলনামূলক স্বাভাবিক হয়েছে সেখানকার পরিবেশও। কিন্তু সেই নিকৃষ্টতার দাগ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় বৌদ্ধরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হামলার সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম নেই পুলিশের অভিযোগপত্রে। তারা বীরদর্পে এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। আবার হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এমন অনেককে মামলার আসামি করা হয়েছে।

হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, মধ্যরাতে বৌদ্ধপল্লিগুলোতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সে সময় ১২টি শতবর্ষী বৌদ্ধবিহার ধ্বংস করা হয়েছিল। যারা এ কাজ করেছিলেন, তাদের অনেকের নাম পুলিশের অভিযোগপত্রে নেই। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের অনেকেই জড়িত ছিলেন না হামলার সঙ্গে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আবার রোষানলে পড়বেন সংখ্যালঘুরা। এ কারণে আমরা সাক্ষ্য দেব না, বিচারও চাই না।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তম কুমার বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজ থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার কয়েকটি ছবি প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন সন্ধ্যায় দিকে চৌমুহনী স্টেশন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শত শত মানুষ। মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে ধ্বংস করে রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধদের ৩৪টি বসতবাড়ি। পরের দিন অগ্নিসংযোগ করা হয় উখিয়া ও টেকনাফের আরও ৭টি বৌদ্ধবিহার ও হিন্দু মন্দিরে। এ ঘটনায় ১৯টি পৃথক মামলা করা হয়। একটি মামলা আপসে নিষ্পত্তি হলেও বাকি ১৮টি মামলার কোনোটির বিচার শুরু হয়নি। বর্তমানে মামলাগুলো কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন ১৮ মামলায় আসামি ৯৯৫ জন। আসামি সবাই জামিনে আছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি শাহজালাল চৌধুরী প্রমুখ।

কক্সবাজার আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেন, ১৮ মামলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ব্যক্তি সাক্ষী। একাধিকবার নোটিশ ও তাগাদা দেওয়ার পরও কেউ সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেননি। সবাই নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাসও দিচ্ছি। কিন্তু সাড়া মিলছে না। করোনার মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় আদালতের বিচারকার্য বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সাক্ষীদের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

তবে উত্তম কুমার বড়ুয়ার স্ত্রী রিতা বড়ুয়া জানিয়েছেন, হামলার রাতে লোকজন স্লোগান দিয়ে তাদের বাড়ির দিকে আসছিলেন। তখন তার স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর তার খোজ নেই। উত্তম বড়ুয়ার নামে যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবি প্রকাশ হয়েছিল, সেটি ভুয়া আইডি বলে দাবি করেন রিতা বড়ুয়া।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭