ইনসাইড থট

আঠারো কোটি জনগণের ভোগান্তি নিরসনে শেখ হাসিনাই শেষ ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/11/2021


Thumbnail

সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ভাড়া বাড়ানোর দাবীতে বাস-ট্রাক-লঞ্চ মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের রেশ না কাটতেই, সম্প্রতি দেশের বেসরকারি টেলিভিশন ওনার্স এসোসিয়েশন (অ্যাটাকো) বিদ্যমান বিজ্ঞাপনের মূল্য ৩০ ভাগ দর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাস-ট্রাক-লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ধর্মঘট ডেকেছিল। কিন্তু অ্যাটকো কোন্ কারনে কি যুক্তিতে বিজ্ঞাপনের ৩০ ভাগ দর বাড়ালো? পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে তেমন কোন কারন দেখানো হয়নি। বাস-ট্রাক-লঞ্চ মালিক সমিতি, অ্যাটকো সকলেই একই পর্যায়ের। ওনাদের কারও কোন দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যে সকল পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, ঐ সকল প্ণ্য প্রস্তুতকারক বা বিপননকারী প্রতিষ্ঠান এই ৩০ ভাগ বর্ধিত দরের পুরো খরচটা পণ্যের উপর ধার্য্য করবে। এই বর্ধিত খরচটা সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই যাবে। শেষ ভোগান্তি হবে জনগণের।

একটি স্থানীয় জনভোগান্তির বিবরণ দেই। একই সমস্যায় দেশের অন্যান্য স্থানের জনগণেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কিনা জানিনা। ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় (ঢাকার শ্যামপুর-কদমতলী) বুড়ীগঙ্গা নদীর উপরে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ অবস্থিত। ইদানিং এই সেতু পারাপারে টোল দ্বিগুণ করা হয়েছে। যদিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (ঢাকা-মাওয়া সড়ক) ধলেশ্বরী নদীর উপরে অবস্থিত জোড়া সেতু পারাপারে টোল পূর্বের অবস্থায়ই রয়েছে। এছাড়া বাবুবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উপরে অবস্থিত চীন-বাংলাদশ সেতু-২ পারাপারে কোন টোল আদায় করা হয় না। ইতিমধ্যে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ এ টোল আদায় করা নিয়ে সৃষ্ট মারামারিতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এক সময় এর টোল আদায় অল্প কয়েক দিন বন্ধ করা হয়ে ছিল। অযৌক্তিক টোল আদায়ের ফলে পোস্তগোলা থেকে মাওয়াগামী যাতায়াতকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা ছোট ছোট পরিবহনের শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছামত বর্ধিত ভাড়া আদায় করে। ভোগান্তির শিকার হয় জনগণ। শুনেছি ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য মহোদয় এব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও টোল আদায় বন্ধ করতে পারেন নাই। টোল আদায়কারী অত্যন্ত প্রভাবশালী (!),এ ছাড়া অন্য ব্যাপারও আছে।

সরকারের জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ, LPG, SAOCL, ECBL সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। তথ্যমতে বিপিসি গত সাত বছরে ৪৩,১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি না করে বিপিসির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান ব্যালেন্স করে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। সরকার তো ব্যবসায়ী না, সেবক।

প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতাদের মুখে শুনেছি, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম সাহেব একদা বঙ্গবন্ধুর কাছে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি ব্যবসায়ী। আপনি মুনাফা করবেন। ক্ষমতা পাইলে ১০ টাকা মূল্যের পণ্য বেশি মুনাফায় ১৫ টাকা বিক্রয় করবেন। আমার জনগণের কষ্ট হবে। আমি চাই ব্যবসায়ীরা সহনীয় মুনাফায় পণ্য বিক্রয় করবেন। জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। সুতরাং নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই। ব্যবসা করুন’।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিজেল চালিত বাস-ট্রাক-লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া বাড়ানোর দাবী জানিয়ে ধর্মঘট ডেকেছিল। ওনারা কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি না করার দাবি জানান নাই। জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় সরকার দ্রুত সময়ে দাবী মেনে নিল। যদিও ডিজেলের ২৩% মূল্যবৃদ্ধিতে বাস ও লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করলেন যথাক্রমে ২৭% ও ৩৫%। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সকল ধরনের পরিবহন মালিকরা আরও বেশি লাভবান হলো। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেশীরভাগ বাস CNG  চালিত। ডিজেল চালিত যানবাহনের পাশাপাশি CNG চালিত বাসগুলোতেও বর্ধিতহারে ভাড়া দিতে হবে। জনগণেরই ভোগান্তি বাড়লো। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আপাতদৃষ্টিতে সরকারের যে পরিমাণ লোকসান হতো, তারচেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা যাবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী মহোদয় CNG চালিত বাসে বর্ধিত হারে ভাড়া আদায়ে শাস্তি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের হুঁশিয়ারি বাস্তবায়নে বাসের ভিতরতো পুলিশ বসানো সম্ভব নয়। কে শোনে কার কথা।

কৃষি মন্ত্রনালয়ের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কৃষিসেচ কাজে ১৩ লক্ষ ৭২ হাজার ডিজেল চালিত পাম্প ব্যবহার করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে সেচ কাজ ছাড়াও চাষাবাদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে, কৃষিপণ্য পরিবহনেও ডিজেল চালিত যানবাহন ব্যবহার করা হয় বিধায় কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরনে মূল্যবৃদ্ধি হবে। ফলে বাজারে শাক-সবজি, মাছ-মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, জনগণের ভোগান্তি আরো বাড়বে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কিছু লোকের লাভ হলেও এতে জনগণের ক্ষতি হলো, আর পরোক্ষভাবে সরকারেরই বড় ক্ষতি হলো। এর খেসারত দিতে হবে সরকরীদলকে।

বিভিন্ন সময় নানা গোষ্ঠী ধর্মঘট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারকে চাপে ফেলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে, দাবী আদায় করছে। সরকার দাবী না মানলে ভোগান্তি হয়  জনগণের। দাবী মানলেও ভোগান্তি জনগণের। জনগণ বলির পাঁঠা। এ যেন তামাশা। কথা নেই, বার্তা নেই। সরকারের সঙ্গে আলোচনা নেই, যুক্তিতর্ক নেই। হঠাৎ করে ‘ধর্মঘট’ ঘোষণা করে দেয়। সরকারও বেকায়দায় পরে দাবী মানতে বাধ্য হয়। কিন্তু একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত বর্তমান সরকার। সারাদেশে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দলটির কমিটি রয়েছে, নেতাকর্মী রয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে পেশাজীবী, শ্রমজীবী সকল ক্ষেত্রেই এই দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দলের উপরের পর্যায়ের নেতাদের বিষয়ে জানিনা, তবে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাদের জনগণের মুখোমুখি হতে হয়, জবাবদিহি করতে হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের কাছে চাওয়ার আগে পাওয়া যায়। অথচ সেই সরকারের কাছে দাবি আদায়ের নামে ধর্মঘট ডেকে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টির পিছনে উদ্দেশ্য কি? ডিজেল চালিত বাস-ট্রাক-লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন। কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের ভোগান্তি হবে, এই যুক্তি দিয়ে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি না করার জন্য সরকারকে কেউ পরামর্শ দেন নাই। দাবী আদায়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ আপনারা কারা? আপনারা সকলেই জনগণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতা। আপনারা আওয়ামীলীগের পদবীধারী নেতারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, একইসাথে আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুতরাং উভয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। আপনাদের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর কোন সমস্যা থাকলে বিভিন্ন দাবি আদায়ে সাংগঠনিকভাবে নিজদলের পরিচালিত সরকারের সাথে দাবী-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা যেত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর আলোচনা করতে পারতেন। ধর্মঘট ডেকে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় আপনারা কার ক্ষতি করছেন, তা কী ভেবেছেন? ভোগান্তির সৃষ্টি করে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন, কার স্বার্থে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছেন? জনগণই মূল শক্তি। জনগণের ভোগান্তি নিরসনে কথা বলবে কে? ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি করার পূর্বে জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় রেখে জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন ছিল। গোষ্ঠীর স্বার্থ আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবী মানতে বাধ্যকারী গোষ্ঠী বিশেষের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার আগে জনগণের একমাত্র আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করা জরুরি ছিল। কারণ তিনিই জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কথা বলবেন। তিনিই ১৮ কোটি মানুষের একমাত্র জনদরদী নেতা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭