ইনসাইড পলিটিক্স

কেন নানক বরিশালে


প্রকাশ: 21/11/2023


Thumbnail

বরিশালের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল তখনই যখন সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন না দিয়ে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাদিক আবদুল্লাহর এই মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তার পিতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। সেই সময় তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন না করা, এমনকি রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনী বোর্ডের সভা থেকে তিনি সরে চলে যেতে চেয়েছিলেন রাগ অভিমান করে, নিজেকে অসুস্থ দাবি করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ডাক্তার দেখে তার প্রেসার মাপান এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ইচ্ছারই জয় হয়েছে। খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে এবং এখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ওই নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জাহাঙ্গীর কবির নানককে। 


জাহাঙ্গীর কবির নানকের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, যে ইঙ্গিতের ভাষা অনেকে হয়তো বোঝেননি। কিন্তু সেই সময় বাংলা ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলেছিল যে বরিশালের রাজনীতিতে একক নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীর কবির নানক। বরিশালের রাজনীতিতে একক নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীর কবির নানক। কারণ বরিশালের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিন তারকা রাজনীতিবিদ। এদের মধ্যে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এরা তিনজনই বয়োবৃদ্ধ। সম্ভবত এই নির্বাচনই তাদের শেষ নির্বাচন। আর এর ফলে বরিশালের রাজনীতিতে একটি শুন্যতা তৈরি হত। 

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক বাস্তবতা হলো যারা জনপ্রিয় জাতীয় নেতায় পরিণত হন তারা স্থানীয় পর্যায়ে কোন ছোটখাটো নেতা রাখেন না। বরং নেতৃত্বশূন্য করে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করার প্রবণতা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাদের মধ্যে দেখা যায়। সেই প্রবণতা ছিল এই তিন নেতার মধ্যেও। 

বৃহত্তর বরিশালে তোফায়েল আহমেদের কোন বিকল্প তৈরি হয়নি। বিকল্প তৈরি হয়নি আমির হোসেন আমু বা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি রাজনৈতিক শূন্যতা হতো বরিশালের বৃহত্তর অঞ্চলে, যেটি ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের এলাকা হিসাবে পরিচিত ছিল। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিচক্ষণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন। খোকন সেরনিয়াবাতকে মেয়র করার মধ্য দিয়ে এবং সেখানেই তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের অভ্যুদয়ের বীজ রোপন করেন। এবার জাহাঙ্গীর কবির নানক বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 


গতকাল তার পক্ষ থেকে বরিশাল-৫ আসন অর্থাৎ সদর আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। আর এটি করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সবুজ সঙ্কেত বা সম্মতি ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। আর সেটা যদি হয়, তাহলে বরিশালের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে আগামী নির্বাচনের পর সেই শূন্যতা পূরণের জন্য জাহাঙ্গীর কবির নানকই উপযুক্ত ব্যক্তি। বরিশালে বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষাজীবনে বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জাহাঙ্গীর কবির নানক একজন ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা। তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। যেভাবে তোফায়েল আহমেদ বা আমির হোসেন আমুদের রাজনৈতিক ধারা বিকশিত হয়েছিল, ছাত্রলীগের রাজনীতি, যুবলীগের রাজনীতি এবং তারপর কেন্দ্রীয় রাজনীতি ঠিক তেমনিভাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক আস্তে আস্তে বিকশিত হয়েছেন বরিশালের রাজনীতিতে। 

বরিশালের রাজনীতিতে এই তিন নেতা সরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ত, সেটি যেন না হয় সে কারণেই জাহাঙ্গীর কবির নানককে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেই অনেকে মনে করেন। কারণ বৃহত্তর বরিশালে এখন আর সে রকম কোন নেতা নেই, যাদের জাতীয় ইমেজ রয়েছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে। বৃহত্তর বরিশালে আরও যে সমস্ত এমপি রয়েছেন তারা এলাকাতেই টলটলয়মান। জাতীয় ইমেজ তাদের নেই। এক্ষেত্রে এই কারণেই জাহাঙ্গীর কবির নানককে বরিশালে টেনে আনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭