নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫১ এএম, ২৩ জুলাই, ২০১৮
কোরবানির মাত্র ১ মাস বাকি। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই কোরবানি ব্যবস্থাপনায় যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য দুটি বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ-উল-আযহায় ইসলামের বিধান অনুযায়ী ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পশু কোরবানি করেন। কোরবানির সাথে যেসব বিষয় জড়িত সেগুলো হচ্ছে-পশু পালন, পশু পরিবহণ, পশুর হাট, পশু জবাই, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংগ্রহ এবং পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
গত কয়েক বছরের হিসাব অনুযায়ী পশু কোরবানি প্রতি বছর প্রায় ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর ঈদের কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বিধায় এই হার আরও বেশি হবে। এবছর প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্যে ৫৫-৫৮ লাখ গরু-মহিষ এবং ৭০-৭৩ লাখ ছাগল-ভেড়া। দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ হলেও বিপুল সংখ্যক ঘাটতি পূরণে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে অনতিবিলম্বে এ বছরের কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে গো-খামারিরা এবং জনগণ কেউই ক্ষতির সম্মুখীন না হন। দেশে উৎপাদিত পশু কোরবানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলে আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। একইভাবে পশুর চাহিদা থাকলে শুধুমাত্র চাহিদা মোতাবেক বৈধভাবে আমদানি করা।
২০১৭ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৬ লাখ। জুলাই ও আগস্ট মাসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে ২ লাখ পশু আমদানি করা হয় (এনবিআর)। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির আগের দিন পশুর সংকট দেখা দেয়ায় কৃষক তার গৃহপালিত পশু বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। ২০১৭ সালে সব মিলিয়ে ১ কোটি ১৯ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে।
পশু পালন করতে গিয়ে অতি মুনাফালোভী খামারিরা পশু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার করে থাকেন। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিষিদ্ধ স্টেরয়েড ও হরমোনসহ পশু মোটাতাজাকরণের বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ঔষধ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এসব পশুর মাংস খেয়ে স্বাস্থ্যহানি, স্থূলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, অনাকাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি, হরমোন সমস্যা, কিডনি, লিভারসহ মারাত্মক রোগের শিকার হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। এমনকি খামারিরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। স্টেরয়েড, হরমোন এবং বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে মোটাতাজাকৃত পশু যাতে বিদেশ থেকে আসতে না পারে সেদিকেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।
ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে কোরবানির পশু মোটাতাজা করা হয়েছে কিনা তা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা-উপজেলাসহ সারা দেশের পশুর হাটগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকায় একমাত্র স্থায়ী পশুরহাট গাবতলী ছাড়াও ২২টি স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট। এসব হাট যাতে যানজট আরও বাড়িয়ে না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়াও ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সড়ক-মহাসড়কে কোরবানির পশুর হাট যাতে না বসে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
পরিবেশসম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০১৫ সাল থেকে কোরবানির জন্য ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে স্থান নির্ধারিত করে দিলেও জনগণ এ উদ্যোগে তেমন সাড়া দেয়নি। এসব স্থানে প্রশিক্ষিত ইমাম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কসাইয়ের অভাব, পানির অভাব এবং কোরবানির পর মাংস নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় জনগণ সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়াও অনেকেই নির্ধারিত স্থান সম্পর্কে অবহিত নন। এসব বাস্তব সমস্যা নিরসনে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এবিষয়ে জনগণকে অবহিত করার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
জবাইকৃত পশুর বর্জ্য-রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, গোবর, হাড়, খুর, শিং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতার অভাবে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পরিবেশসম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা হলে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা, অন্যদিকে জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্ঠাংশসমূহ সম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।
পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম ধর্মে অতীব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নি:সন্দেহে পরিচ্ছন্নতার প্রসঙ্গটি কোরবানির ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রযোজ্য। অথচ আমরা প্রতি বছর দেখছি যত্রতত্র পশু জবাই করা হচ্ছে। পশুর রক্ত ও আবর্জনায় রাস্তাঘাট সয়লাব হচ্ছে। ড্রেনে পানির প্রবাহ আটকে যাচ্ছে, উপচে পড়া নোংরা পানি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে কোরবানির বর্জ্য খোলা স্থান, ঝোপঝাড়ের পাশে, খালে-বিলে বা নদীতে ফেলা হয়। সব মিলিয়ে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয় এবং বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটে।
আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হাড় থেকে শুরু করে শিং, অণ্ডকোষ, নাড়ি-ভুঁড়ি, মূত্রথলি, চর্বি বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হাড় বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, জবাইয়ের পর গরুর আকার ভেদে ১৫ থেকে ২৫ কেজি হাড় ফেলে দেয়া হয়। এই হাড় সংগ্রহ করে প্রতিদিন ব্যবসা হয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার। হাড় দিয়ে ওষুধ, সিরামিক পণ্যসামগ্রী, বোতাম ও ঘর সাজানোর উপকরণ তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় নাড়ি-ভুঁড়ি। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় আকারের পশুর এসব হাড় রফতানি করে শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। চীন ও থাইল্যান্ডে এসব হাড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। শুধু অসচেতনতা আর অবহেলার কারণে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে হাড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শুধু কোরবানির গরুর হাড়ের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কোরবানিসহ সারা বছর জবাইকৃত গরুর হাড়ের মূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
পশু হাটের গোবর ও উচ্ছিষ্ট গোখাদ্য সার্বক্ষণিক সংগ্রহ এবং কোরবানির পর পশুর গোবর ও পাকস্থলীর অহজমকৃত বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। এসব বর্জ্য আলাদাভাবে পরিবহণ ও সংরক্ষণ করা। সংগৃহীত এসব বর্জ্য জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা এবং এ সারের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি কেজি সারের মূল্য ৫০ টাকা হিসেবে মোট মূল্য দাঁড়াবে ২ হাজার ২ শত ৭৫ কোটি টাকা। কোরবানির চামড়া যাতে কোনভাবেই বিদেশে পাচার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা। চামড়া প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণের জন্য সুলভ মূল্যে পর্যাপ্ত লবণের ব্যবস্থা করা। উন্মুক্ত আমদানির মাধ্যমে লবণের প্রয়োজনীয় মজুদ গড়ে তোলা।
করণীয়:
* নিষিদ্ধ স্টেরয়েড, হরমোন এবং বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ঔষধ বিক্রি এবং পশু মোটাতাজাকরণে এগুলোর ব্যবহার বন্ধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এখনই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
* সারা দেশের পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর এবং বিদেশ থেকে আসা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
* ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে এবং সুস্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং পশু জবাইয়ের প্রতিটি নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কসাই, পানির সুব্যবস্থা ও যানবাহনের ব্যবস্থা রাখা।
* নির্ধারিত স্থানে কোরবানি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা।
* যেখানেই সুযোগ আছে বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে গর্ত খুঁড়ে কোরবানির পশুর রক্ত পুঁতে ফেলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা।
* পশুর হাড় থেকে শুরু করে শিং, অণ্ডকোষ, নাড়ি-ভুঁড়ি, মূত্রথলি, চর্বি ইত্যাদি সংগ্রহের লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা।
* পশুর হাটের গোবর ও উচ্ছিষ্ট গোখাদ্য এবং কোরবানির পশুর গোবর ও পাকস্থলীর অহজমকৃত বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা। সংগৃহীত বর্জ্য জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা।
* যানজটের এ শহরে পশুর হাট সৃষ্ট যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সড়ক-মহাসড়কে কোরবানির পশুর হাট বসতে না দেয়া।
* অস্থায়ী পশুর হাটের আবর্জনা পরিষ্কার ও গর্ত ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে ঈদের এক সপ্তাহের মধ্যে ঐ স্থানকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
* সরকারি সংস্থা, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা।
* পরিবেশসম্মত আধুনিক কসাইখানায় পশু জবাই করা এবং কসাইখানায় বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, পবা এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।