নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৫ এএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮
বাংলাদেশের অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের একসময়ের সহযোগীরা ক্ষমতা হারিয়ে ইদানীং অনেকেই তাদের চিন্তার বা মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়েছেন। নতুন আঙ্গিকে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে, ইনিয়ে বিনিয়ে, নিজে দেশপ্রেমিক সেজে সরকারের দোষ ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটা পুলিশী রাষ্ট্র, সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন দেখছেন তারা। আবার বলছেন সরকার চরম আপোষকামী, ক্ষমতায় থাকার জন্য চরম আপোষ করছে সরকার। এই গোষ্ঠীর কাজই হচ্ছে উপদেশ দেয়া, অবিবেচনাপ্রসূত সমালোচনা করা, যার শিকার হচ্ছেন বর্তমান সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। সরকারের কোন কাজ পছন্দ না হলে সমালোচনা করতেই পারেন, আমিও করি মাঝে মধ্যে। কিন্তু বাচ্চামী করি না, না জেনে, না বুঝে, নিজেদের সক্ষমতা আর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা না বিবেচনায় এনে। এরা ১৯৭১ সালের আগে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণা না দেওয়ার সমালোচনা করেছে, আবার ৭ মার্চে বলেছেন, ‘কিছুই পরিষ্কার করলেন না বঙ্গবন্ধু’। তাঁরাই আবার ২৫শে মার্চের পরে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্র বাঙ্গালীর জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করলেন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে।’ আবার স্বাধীনতার পরে তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমা করার জন্য চাপ দিয়েছেন, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের সময় বলেছেন, মাফ যখন করলেন, তখন সবাইকে নয় কেন? এমন সব কথা যার দালিলিক প্রমাণ আছে।
একটি সার্বভৗম রাষ্ট্রের অধিকার বা ক্ষমতাকে তিনভাগে ভাগ করা হয় তা হলো- আইন প্রণয়ন ক্ষমতা, বিচারিক ক্ষমতা ও নির্বাহী ক্ষমতা। এই তিন ক্ষমতার মধ্যে কোনো একটি বিভাগ অতিরিক্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে। আবার একটা দেশের অভ্যন্তরে যেমন ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার তেমনি তা বিশ্ব রাজনীতি থেকে সেই দেশকে রক্ষায়ও খুব জরুরী। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের যে কোন একটি তার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করলে শুধু দেশেই না আন্তর্জাতিক ভাবেও একটি দেশ চরম বিপদে পড়ে যেতে পারে। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ প্রতি মাসেই আমরা দেখছি, আমাদের আশেপাশের দেশে।
ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে দেশে বিদেশে যারা অনেকে কাজ করেছেন তাঁরা এটাকে ‘বাজেভাবে পিচ্ছিল, অস্পষ্ট, নিজের আকার আকৃতি পরিবর্তনে পারদর্শী, চরম বিতর্কিত’, ইত্যাদি নানাভাবে সংজ্ঞায়িত একটা বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের মত দেশে ক্ষমতার ভারসাম্যটা অনেক বেশী বাজে ভাবে পিচ্ছিল, অস্পষ্ট আর অ্যামিবার মত নিজের আকার আকৃতি পরিবর্তনে খুব পারদর্শী। নিজেরটা ১৬ আনা বুঝে নেন, পরেরটা যা হবার তাই হবে এমন ভাব। কথার প্যাঁচে সব ঠান্ডা। যা হউক, বিষয়টিকে একেবারে ছোট করে না আনলে এটি আর অস্পষ্ট থাকবে আমাদের কাছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ আর ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশে গণতন্ত্র চর্চায় বারংবার সামরিক হস্তক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য এমন করে নষ্ট করেছে যে, তার থেকে বেরিয়ে আসা খুব দুষ্কর। যারা সরকারের সাথে কাজ করেন বা সরকারের কাজ গভীরভাবে অবলোকন করেন তাঁরা এই কথার অর্থ বুঝতে পারবেন। তবুও বলি এই দীর্ঘ সময়ে আসলে আমাদের দেশের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে নির্বাহী বিভাগ, যার মূলে আছেন আমলারা, হয়ে উঠেছে মহা পরাক্রমশালী। প্রশাসনে আমলাদের সাথে আছেন রাজনীতিকগণ কিন্তু সেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী সবাই নখদন্তহীন বাঘ। কারণ হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইনের ফাঁক, আর আমাদের আইন বিভাগের বিপুল সংখ্যক আইন প্রণেতা শিক্ষা ও জ্ঞানে ঐ রকম দক্ষ নন, যেমনটি থাকে উন্নত বিশ্বের দেশে। অল্পশিক্ষিত মানুষের দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের এটাই সবচেয়ে খারাপ দিক, ভোটের সময় স্রোতের টানে গা ভাসান, যোগ্যতা না দেখে দেখেন মার্কা বা প্রতীক।
এটা ওপেন সিক্রেট যে, নির্বাহী বিভাগে আমলা ও তাঁদের সহযোগীগণ সবাই খুব একতাবদ্ধ, তাদে বিস্তার গ্রাম পর্যন্ত। সেই তুলনায় রাষ্ট্রের অন্য দুটি বিভাগে নিজেদের মধ্যে বিভেদ অনেক বেশী বলে অনুমিত হয়। আইন বিভাগ আইন করলেও সেই আইনের প্রয়োগ করেন নির্বাহী বিভাগ। বিচার বিভাগ বিচারে কাউকে দোষী সাব্যস্থ করে রায় দিলে সেই রায়ের বাস্তবায়ন করে নির্বাহী বিভাগ বা তার অংশবিশেষ। নিকট অতীতে দেখেছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারী পরোয়ানা পুরাতন ঢাকা থেকে গুলশানে আসতে কয়েকদিন সময় লেগেছে। আবার আসার পরে উনাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি, তাই পলাতক দেখানো হয়েছে সেই সময় যখন উনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আসলে এখানেও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে বলে অভিজ্ঞরা দাবী করছেন। নির্বাহী বিভাগের অংশ পুলিশ প্রশাসন বলছে, যে দেশে একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীকে ফাঁসির হুকুমের পরে সারা দেশ জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে গণমানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে একশ্রেণীর মানুষ। যে দেশের মানুষের একটা অংশ বিশ্বাস করে যে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি চাঁদের বুড়ির সাথে বসে গল্প বা রোমান্স করছে, সেই দেশে আইন প্রয়োগ কি এত সহজ? সে সময় সমালোচকরা তাঁদের স্বর এক ডিগ্রী চড়িয়ে বলেছেন পুলিশ তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, খালেদা জিয়ার ২০ দলীয় জোটের একজন এমপি ফাঁসির আদেশ দিলে যদি দেশে এই অবস্থা হয় তাহলে ২০ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে যে অবস্থা আর ভয়াবহ হবে না সে গ্যারান্টি তো সমালোচকরা কেউ দেবেন না। উল্টা বলবেন প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। এ কথায় বিচার বিভাগ আঁতকে ওঠে, সতর্ক হয় আইন বিভাগ তথা সরকার গঠনকারী রাজনৈতিক দল। কিন্তু এই ভারসাম্য রক্ষার ফলে সময় অনেকটা বদলে গেছে, ইচ্ছে করলেই আর কেউ চাঁদের বুড়ির সাথে পরকীয়া করতে পারছেন না, চেষ্টা আছে অনেক, তবুও।
অনেকে বলেন জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশকে কেন নিষিদ্ধ করছে না সরকার! আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, জামায়াত কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা। জামায়াতের আন্তর্জাতিক কানেকশন কূটনৈতিক ভাবে নষ্ট না করে নিষিদ্ধে কতটুকু লাভ হবে? অন্যভাবে বলা যায় যে, নিষিদ্ধ করা না করা মধ্যে পার্থক্য খুব কম। নিষিদ্ধ করলে কিছু ভালো মানুষ যারা ধর্মের নামে বিভ্রান্ত হয়ে শিবির হয়ে জামায়াতে গেছে, তা সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে না, স্থায়ীভাবে নষ্ট হবে। হিজবুত তাহরিরসহ অনেক চরমপন্থি ইসলামী দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারা কী তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে? না বরং অন্য রাজনৈতিক দলের ব্যানারে তারা আর বেশী জিঘাংসা নিয়ে কাজ করছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারাও তাই করবে, বরং না করে আস্তে আস্তে সাংগঠনিক ভাবে নিঃশেষ করা, আন্তর্জাতিক কানেকশন নষ্ট করা অনেক ভালো কৌশল বলে অনেকেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। এর জন্য লাগে সময় তাই এর পক্ষে বিপক্ষে মত থাকতেই পারে। মফস্বল থেকে ঢাকায় আসার পথ অনেক, সড়ক, নৌ, আকাশ, ইত্যাদি। মূল লক্ষ্য ঢাকায় পৌঁছানো। তাই মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে তার মানে এটা ভাবা ঠিক হবে না যে কেউ লক্ষ্যচ্যুত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয়, সামরিক, রাজনৈতিক তথা সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গেলে সমাজের কী অবস্থা দাড়াই তা আমরা ইদানীং দুইজন প্রখ্যাত (মনে হয় এখন আর নেই) ব্যক্তির আচরণ দেখলে অনুমান করতে পারবো। রাষ্ট্রে বা সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে হয় নানা কারণে তাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মত লোককে দেশের সেনাবাহিনী তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার পরেও ১৪ শিকে ঢুকানো হয়নি তাঁর অতীত অবদানের কথা ভেবে; যদিও তার অপকর্মের তালিকা অবদানের চেয়ে ঢের ঢের লম্বা। তিনি তড়িঘড়ি মাফ চাইলেন নুক্তা লাগিয়ে। মামলা হলো, দোষী হলে এবারেই সাইজ হয়ে যাবেন উনি। আবার ধরুন ইত্তেফাকের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে, ব্যারিস্টার মঈনুল, যিনি হালে শিবিরের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছেন বা জামায়াতের বন্ধু হয়েছেন, তার মতো করে টেলিভিশনের অন এয়ারে কোন নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলার পরে ঢাকার নারীসমাজ মনোভাব বুঝেই তড়িঘড়ি মাফ চেয়েছেন তিনি। কী অবাক যার সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির করা মামলায় খালেদা জিয়া এখন জেলে, তিনিই এখন খালেদা ভক্ত, তার জোটের নেতা! তাই খালেদা জিয়ার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে এসব কী ভারসাম্যহীন আচরণ নয় কি ! তাই সামাজ তথা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য অনেক সময় যা করা হয় তা অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে, যিনি করেন তিনি বুঝে শুনেই করেন, ভালো হলে আখেরে সবাই তার ফল ভোগ করেন। খারাপ হলে সেই খারাপের ভাগ কিন্তু কেউ নেন না, একা সরকার প্রধান ও তাঁর দলের উপর বর্তায়।
লেখক: উন্নয়নকর্মী
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।