নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৪ নভেম্বর, ২০১৮
শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়ার আর অনলাইন নিউজ পোর্টালের কল্যাণে তথ্য সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা কথা আর গোপন থাকে না, তাই সত্যের জয় হয়, মিথ্যা কোণঠাসা হয়ে পড়ে, এটি বাংলাদেশের সংলাপ রাজনীতিতেও প্রমাণিত হলো; প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনা এক ভিন্ন মাত্রার সফল কূটনীতিক এবং সৎ, দেশ অন্ত:প্রাণ প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। প্রমাণিত হলো যে, অন্ধকার যত কালোই হউক না কেন আলোর কাছে তা টিকে থাকতে পারে না, স্বরূপ উন্মোচিত হয়।
প্রথমেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের কিছু বিবরণ তুলে ধরি বিশ্ব মিডিয়া থেকে। বাংলাদেশে২০০৭-২০০৯ সালে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। হাইকমিশনার থাকাকালীন সময়ে পিনাক রঞ্জন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া ‘সাউথ এশিয়ান মনিটর’ একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করেছিলেন পিনাক রঞ্জন। একই পত্রিকায় গত শনিবার তিনি বলছেন, ‘হাসিনা সম্প্রতি সৌদি আরবে সরকারি সফর থেকে ফিরেছেন। সেখানে তিনি সৌদি নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন – যার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও রয়েছে। হাসিনা ২৩টি দেশের সামরিক কন্টিনজেন্টের যৌথ প্যারেডেও উপস্থিত ছিলেন, যেখানে মুসলিম দেশগুলোর সামরিক জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়, যেটার উদ্যোক্তা হলো সৌদি আরব। সৌদি আরবে সরকারি সফরে দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডা ছাড়াও সাধারণত মক্কায় ওমরাহ পালনের বিষয় যুক্ত থাকে। সৌদি আরবে সরকারি সফর এবং বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়গুলো সাধারণত ভোটারদের কাছে বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। কিছু বাংলাদেশি ভোটার এ ধরনের সফরকে হাসিনা এবং তার নিজের ধার্মিকতার প্রতি সৌদি সমর্থন হিসেবে দেখে থাকে, যদিও অধিকাংশ ভোটারের কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর’। ‘হাসিনা সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে। তার সরকার বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারকে ভারতের চেয়েও উপরে নিয়ে গেছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে তিনগুণ গতিতে বাড়ছে। বাংলাদেশ তাদের এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে পারলে তাদের মাথাপিছু আয় আগামী দুই দশকে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে। ... সামাজিক সূচকে, বাংলাদেশ ভারতসহ বহু দেশের চেয়ে ভালো করছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশনায় দেওয়া আন্তর্জাতিক সূচক অনুযায়ী এই অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের’ বলে তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘গত এক দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দারুণ শক্তিশালী হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্বেও হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে দেশের নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ভারত নিশ্চিতভাবেই আরও পাঁচ বছর শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে’।
‘হাসিনা সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে’। এডিবি নিয়ন্ত্রণ করে জাপান সরকার, তাই পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর এই কথা অর্থ বুঝতে কারও বাকী থাকার কথা নয় যে, জাপান সরকার শেখ হাসিনার সরকারকে পছন্দ করে।
ডি ডব্লিউ এর খবরে বলা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যজোটের মধ্যে সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি৷ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফাহরেনহোলজ দেখা করে জানান, ‘‘সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷`` তিনি আশা করেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত ভালো হবে এবং সবাই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷``
একটি জনপ্রিয় পোর্টালে খবর বেরিয়েছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ড. কামাল হোসেনকে দায়িত্ব দিলেন কূটনীতিকরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে ড. কামাল হোসেনকে বলেন, ‘সংবিধানের আলোকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একটা নির্বাচন করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন যেন শক্তিশালী হয়, নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে যেন নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসন চলে আসে। সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, সে অঙ্গীকারের ওপর আস্থা রেখেই সব বিরোধী দলের উচিত নির্বাচনে যাওয়া।’
শনিবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ভারতীয় বিদায়ী হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে সময় গণফোরামের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও ড. কামালের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় হাইকমিশনার ভারতের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। শ্রিংলা মনে করেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক হবে, কারচুপি করা সহজসাধ্য হবে না এবং গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে।
বার্নিকাট ও শ্রিংলা দুজনকেই ৪টি ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন আশ্বস্ত করেছেন। এগুলো হলো:
১. তিনি নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কখনোই সহিংস আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেবে না। ২. সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি কখনোই শেষ হবে না। বরং তিনি একটি ‘মিনি টিম’ গঠন করে সরকারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সংলাপ চালিয়ে যাবেন। ৩. কাউকে হটানো বা কারও অধীনে নির্বাচন যাওয়া এমন মনোভাব তিনি কখনোই পোষণ করেননি। ঐক্যফ্রন্ট থেকেও এমন মনোভাব পোষণ করতে দেওয়া হবে না। ৪. গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চেষ্টা করবে।
ড. কামাল হোসেন দুই বিদায়ী কূটনীতিককেই আশ্বস্ত করেছেন, ‘বিএনপির একটি বড় অংশ নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। তাঁরা বলেছে, তাঁরা যা কিছু করেছে, সব কিছু নির্বাচনের জন্যই করছে।’
কয়েকদিন আগে জাতিসংঘ সফরকালে প্রায় সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ প্রায় সোজা সাপটা শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়ে দেন।
এবার আসি সংলাপের প্রসঙ্গে। সংলাপ চলছে, চলবে হয়তো আরও কয়েকদিন। এ নিয়ে নানামুখী ও বিস্তর চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। যিনি যা বুঝেছেন বা বুঝতে চেয়েছেন সেভাবেই তিনি বা তাঁরা তাঁদের মতামত দিচ্ছেন বিভিন্ন মিডিয়ায়। মনে হচ্ছে যে, সত্যের জয় হয়েছে কারণ অসত্য, আংশিক সত্য বা সিকি সত্য আসল সত্যকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। বিরোধীরা যে যে দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। সে সব কথা তাঁরা বা তাঁদের দলের নেতা কর্মীগণ ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁর পক্ষের বা বিপক্ষের প্রায় সব নিউজ নিয়মিত পড়েন, প্রয়োজনে নিজেকে শুধরে নেন, না হলে জবাব রেডি রাখেন অন্তরের গভীরে। তাই সংলাপ উপলক্ষ্যে উনার কোন হোম ওয়ার্ক করা লাগেনি। কিন্তু যারা সিকি সত্য, অর্ধ সত্য আর অসত্যের মিশেল দিয়ে দাবিনামা তৈরি করে সংলাপে গেছেন, উত্থাপনের পরে দাবিনামায় থাকা অসত্য পুরো সত্যের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্নের কোন জবাব তাঁরা দিতে পারেন নি। তাই বাইরে এসে তাঁরা কেউ কেউ বলছেন সন্তুষ্ট নন, কেউ মোটামুটি খুশি, কেউ হতাশ হয়ে ‘আশার মুকুল ঝরে যাবার’ শঙ্কা করছেন, কেউবা সরকারকে “ছোটলোক” আখ্যা দিচ্ছে। এসব যে সংলাপে নিজেদের অদক্ষতা বা অক্ষমতা ঢাকার অপকৌশল তা দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন, হয়তো অভদ্র নন তাই মুখের উপর কিছু বলেন না, মনে মনে ঠিকই তা বলছেন। তাই জনগণের আই ওয়াশ করতে বা ভুল শুধরে নিতে ছোট্ট পরিসরে আবার সংলাপ চাচ্ছেন। আবার ঐক্যফ্রন্টের বড় দল বিএনপি’র একটা বড় অংশ বলছে তাঁরা নির্বাচনে নমিনেশন পেপার জমা দেবেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এছাড়া তাঁদের উপায় নেই কারণ অনেক ছোট দলের বড় নেতা, যারা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, বি. চৌধুরী সাহেব ছোট ছোট দল নিয়ে জোট করে নির্বাচনে আসছেন। নির্বাচনে আসছেন জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বে কিছু ছোট ছোট দল।
অন্যদিকে ‘ভাইবার মান্না’ যিনি ছাত্রলীগ হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকারদের পক্ষে চট্টগ্রাম রেডিওতে নিয়মিত দালালি করতেন, দেশ স্বাধীন হবার পরে জাসদ, বাসদ, মীর্জা সুলতান রাজার দল হয়ে আবার আওয়ামী লীগ হয়ে এখন নাগরিক ঐক্য হয়ে জামায়াত হওয়ার আশায় ছিলেন। আদালত তাঁর আশার গুলে বালি দিয়েছে। তাই আদালত অবমাননার ভয়ে মান্না সাহেব সরকারকে গালাগালি করে মনের ঝাল মিটাচ্ছেন। ‘বহুগামী’ মান্না বলেছেন সরকার ‘ছোটলোক’, সংলাপে খাওয়ানোর পরে তার ছবি মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে। বেজায় ক্ষ্যাপা মান্না সাহেবদের ইচ্ছা ছিল, ‘ডুব সাঁতারে গোছল করবেন কিন্তু ভেজা চুল কাউকে দেখাবেন না’। তাঁর কথা শুনে তাই একটা গল্প মনে পড়ে যায়। সেটি এমন- নিজে টাকা খরচ করে না গ্রামের এমন একজন ‘বড়ই উদার’ লোকের হঠাৎ করেই আখ খাওয়ার সখ হলো। গ্রামের রাস্তার পাশে সারি সারি আখের ক্ষেত, কিন্তু সে সেদিকে যেতে চায় না। কারণ এর আগে চুরি করে আখ খেয়েছে যত, ধরা পড়ে মাইর খেয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় রাস্তায় পড়ে থাকা আখের ছিবড়া কুড়িয়ে কুড়িয়ে চিবিয়ে অনেক কষ্টে রস বের করে খাচ্ছিল। এক সময় তার চোয়াল ব্যথা হয়ে গেলো। পাশ দিয়ে একজন কৃষক হেঁটে যাচ্ছিলেন, ‘বড়ই উদার’ লোক তাঁকে বললেন, গ্রামের যে লোক রাস্তা দিয়ে আখ খেতে খেতে গেছে সে বড়ই ‘ছোটলোক’ একটুও রস রাখেনি আখের ছোবড়ায়, পুরোটা চেটেপুটে খেয়েছে! কৃষক ঘুরে তাকিয়ে বললেন, ‘কে ছোটলোক’, বুঝলাম না তো!
লেখক: উন্নয়নকর্মী
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।