নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৫ পিএম, ১০ মার্চ, ২০১৯
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এরপরই দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল ১১ মার্চ। গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী ডাকসুর সভাপতি হিসেবে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গত ২৩ জানুয়ারি নির্বাচনের এই তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেন। নির্বাচনের ঘোষণার পরপরই জানা যায় ডাকসু নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন সময়ের বহুল আলোচিত-সমালোচিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আগামীকাল ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ-নুর-ফারুক সহ আরও অনেকে। মুখ্য নেতাদের মধ্যে ভিপি পদের জন্য নুরুল হক নুর, জিএস পদের জন্য রাশেদ খাঁন এবং এজিএস পদের জন্য জন্য ফারুক হোসেন লড়াই করবেন।
প্রথমত, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এমনকি কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর এ কথাও বলেছিলেন যে, কোটা সংস্কার বিষয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ দাবিদাওয়া পূরণ হলে এই পরিষদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনা পরিক্রমা শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে যে কোটা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে সেও অনেকদিন আগের কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোটা আন্দোলনের নেতাদের পূর্ব ঘোষণামতো কিন্তু সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিলুপ্ত হয়নি। বরং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে দিনে দিনে কোটা আন্দোলনের নেতাদের রাজনৈতিক রূপটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যার ধারাবাহিকতায় কোটা আন্দোলনের নেতারা এবার ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যারা মূলত ডাকসু নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবিরেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন।
কোটা আন্দোলন যে জামাত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি আন্দোলন এ কথা আর নতুন করে বলবার কিছু নেই। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আন্দোলন মুলত জামাতেরই রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল। জামায়াতে ইসলামী ২০০১ সালে যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় তখন নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বপ্রথম সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করার দাবি করে এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার দাবি উত্থাপন করে যার লিগ্যাসি বহন করছেন রাশেদ-নুর আর ফারুকরা।
শিবিরের পদধারী নেতাদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের দহরম-মহরমের ছবি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। রাশেদ, নুর, দ্বীন মোহাম্মদরা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে শিবিরের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন সে কথাও প্রমাণিত। বুকে-পিঠে আমি রাজাকার লিখে আন্দোলন করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর বা ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার গুজব ছড়ানো কিংবা ভিসির বাংলো ভাংচুরের মত ঘটনাগুলো কোটা আন্দোলনের নেতাদের মূল উদ্দেশ্য পরিস্কার করে দেয়। এই উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা, তারপর ঢাবিতে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানো যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের ফলে সম্ভব হয়নি।
আসলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরেরই নতুন রূপ। যেহেতু একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কারণে জামায়াতে ইসলামী এখন অনেকটাই কোণঠাসা, শিবিরকে আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে; তাই জামাত-শিবিরের নেতারা নতুনভাবে, নতুন পরিচয়ে সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। অপপ্রচার ও বিভিন্ন কূট কৌশলে দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চাপা দিয়ে রাখা স্বাধীনতা বিরোধী ইমেজটা আবার প্রকাশ্যে চলে আসায় শিবিরের পরিচয়টি পুরোপুরি ধামাচাপা দিয়ে তারা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন যার ফলে নতুন নাম ধারণ করে হয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। অবশ্য এই নাম বদলের রাজনীতি শিবিরের পুরনো কৌশল।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাতের ছাত্র সংঘটনটির নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। এই নামেই তারা বীভৎস সব অপকর্ম করেছিল। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী ছাত্র সংঘসহ সব ধর্মব্যবসায়ী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ১৯৭৬ সালের ৪ মে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। তবু পূর্ববর্তী স্বাধীনতা বিরোধী ইমেজ ভবিষ্যতে সমস্যা করতে পারে এমন চিন্তাভাবনা থেকে ১৯৭৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জামাতের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ নাম বদল করে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামে যাত্রা শুরু করে। তবে নাম বদলালেও স্বাধীনতা বিরোধী আদর্শ থেকে কখনো একচুলও বিচ্যুত হয়নি সংগঠনটি। এবার নাম বদলের সেই পুরনো ঐতিহ্য অনুসরণ করেই আবার অস্তিত্ব সংকটে পড়ার পর ছাত্রশিবির হয়ে গেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ঐতিহ্য অনুযায়ীই ধারণ করছে স্বাধীনতা বিরোধী আদর্শ।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা বরাবরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে আসছেন। এই অস্বীকার কৌশলটিও কিন্তু নতুন কিছু নয়, ঠিক নাম বদলের চর্চার মতোই। অতীতেও ছাত্রশিবিরের নেতারা ছাত্রসংঘের সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক থাকার কথা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন নির্লজ্জভাবে যে অস্বীকার প্রবণতা এখন আমরা লক্ষ্য করছি রাশেদ, নুরদের মধ্যে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও ডাকসু নির্বাচনে জিতলে স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপার অবস্থান কী হবে তাদের, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেননি কোটা আন্দোলনের নেতারা।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীতাঙ্গনের তারকা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলন গ্রুপের সদস্যদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। জামায়াতে ইসলামী ও গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে অভিসম্পাত করা হয়েছে এবং গ্রুপের এডমিন প্যানেলের পক্ষ থেকে এসব পোস্ট বা কমেন্টের বিরুদ্ধে যথারীতি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া বুনো উল্লাস দেখা গেছে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতেও। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির কারো মৃত্যু ঘটলে কোটা আন্দোলনকারীদের আনন্দযজ্ঞ বারবার প্রমাণ করে দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলন কোনো সাধারন ছাত্র আন্দোলন ছিল না, ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি আন্দোলন। এই আন্দোলন যদি সাধারণ ছাত্র আন্দোলন হত তবে আন্দোলনের যে মূল দাবি কোটা সংস্কার, তা আদায় হয়ে যাওয়ার পর এই আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ও এর নেতাদের এখনো এত রমরমা থাকতো না।
কোটা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর রাশেদ, নুর, ফারুকরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতেন। কিন্তু তা না করে ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের আপাদমস্তক রাজনৈতিক চরিত্র ও দূরভিসন্ধিরই প্রকাশ ঘটায়। রাশেদ-নুর-ফারুকরা ডাকসু নির্বাচনে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন ও নিরাপদ পরিচয়ে শিবিরের বিষবাষ্প গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই তাদের পরিকল্পনা।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার পর শিবির একবারই ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পেরেছিল যার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। ছাত্রশিবির নাম ধারণ করে পুনরায় রাজনীতি শুরু করার এক বছরের মধ্যেই তারা নিজেদের আসল রূপে আবির্ভূত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সে বছর শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনন্য উদাহরণ হয় দাঁড়িয়ে থাকা ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভেঙে ফেলার জন্য স্বাক্ষর গ্রহণ করতে শুরু করে। কিন্তু প্রগতিশীল ছাত্রসমাজের এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে রাতের অন্ধকারে শিবির অপরাজেয় বাংলা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সচেতন ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের ফলে তাদের সে দুরভিসন্ধিও সফল হয়নি। এরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই প্রকাশ্যে আসতে পারেনি স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। প্রায় তিন দশক পর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আবেগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক অসচেতনতাকে পুঁজি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পেরেছেন শিবিরের নেতারা। তার ওপর আগামীকাল কোটা আন্দোলনের নেতারা যদি ডাকসু নির্বাচনে জিতে যান, জিতে যান হল সংসদগুলোর নির্বাচনে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির উত্থান ঘটবে শক্তিশালী রূপে যার স্বরূপ কেমন হতে পারে তা অতীতেই শিবির দেখিয়েছে।
অপরাজনীতির চর্চা, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম কিংবা স্বজনপ্রীতির মতো বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ও গবেষণার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে এখনো অসংখ্য জায়গায় উন্নতি ঘটাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। কিন্তু দিনশেষে এটাই সত্যি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিকল্প বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি থাকবে সেটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, বরং পুরো দেশের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। । কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা হয় তার প্রভাব পড়ে গোটা দেশের ওপর। ঢাবির ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিন থেকে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুবাস ছড়ায় তাহলে তা ক্যাম্পাসের গন্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় দেশের সকল তরুণ-যুবার মধ্যে যা অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে মূলধন হিসেবে কাজ করে। আর যদি মধুর ক্যান্টিন পরিণত হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের আড্ডায় তাহলে পুরো দেশেই হুমকির মুখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এসব বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করবেন নাকি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে নিজেদের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ দেবেন।
অতীতে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিবিরকে রাজত্ব কায়েম করতে দেখেছি যা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত এই দেশের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কখনোই ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। আজ যদি শুধু একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার হিসাব-নিকাশ মেলাতে গিয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীরা শিবিরকে ক্যাম্পাসে জাকিয়ে বসার সুযোগ করে দেয় তবে তা সামনের দিনগুলোতে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই নয়, পুরো জাতিকে রাজনৈতিক ও আদর্শিক সংকটের মুখে ঠেলে দেবে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।