ইনসাইড থট

কোভিড- ১৯: বাংলাদেশ এবং এর গবেষণা উদ্যোগসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০


Thumbnail

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বসে প্রতিদিন আমি কয়েকটি বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদপত্র পড়ি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিভিন্নজনের মধ্যে অস্বস্তি, অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এবং কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি লক্ষ্য করেছি। কর্মকর্তারা যে ভীতসন্ত্রস্ত তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। অতীতের ব্যর্থতা, বোঝার ও দক্ষতার অভাব থাকায় তারা ভীতসন্ত্রস্ত, নাকি গ্রহনযোগ্যতা ও চাকরি হারানো এবং ভবিষ্যতে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এই ভেবে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন ?

ভারতে অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েকটি রাজ্যে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে এই রিপোর্ট প্রকাশের সময় বাংলাদেশের মত এত শোরগোল হয়নি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং ভারতীয় অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও আমার এরকম কোনো বিতর্ক চোঁখে পড়েনি! এটিকে সরকারের ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হয়নি! আমাদের জেনে রাখা দরকার অ্যান্টিবডি টেস্ট বিশ্বের অনেক দেশেই করা হয়েছে এবং এখনো করা হচ্ছে। আমার আগের লেখাগুলো পড়লে আপনি দেখবেন যে,  আমি বাংলাদেশে কোভিড- ১৯ পরিস্থিতির ব্যাপকতা জানতে বারবার অ্যান্টিবডি টেস্ট করার জন্য বলেছি।

গবেষণাটির কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা তর্ক-বিতর্ক ও ইতিবাচক আলোচনা করতে পারি। ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা আরও ভাল গবেষণা চালাতে পারি সেটাই এই বিতর্ক এবং আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তবে সর্বাগ্রে প্রত্যেকেরই বিজ্ঞানীদের আন্তরিক উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তাদের উৎসাহিত করা এবং এই সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় গবেষণায় বিনিয়োগ করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। বিভিন্ন ব্যক্তি বা মিডিয়া ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণাটি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমরা এটা বন্ধ করতে পারব না। কিন্তু অযথা একে অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে।

অ্যান্টিবডি কি এবং অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজন কেন সে প্রসঙ্গে শুরুতে কিছু কথা বলে নেই

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বা অন্য কোনো সংক্রমণের পরে প্রায় সমস্ত সুস্থ-সবল ব্যক্তির শরীরে ঐ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি সশস্ত্র বাহিনীর মত আক্রমণকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাকে মেরে ফেলে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। কিছু মানুষের অ্যান্টিবডি তাদের অসুস্থতা শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বেলায় আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি অসুস্থতা শুরুর ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সিরামের মধ্যে প্রায় একসাথে তৈরি হতে পারে। সংক্রমণের পরে আমাদের দেহে কতক্ষণ আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্তযোগ্য থাকে তা জানা যায়নি।

সংক্রমণের পর কিছু মানুষের শরীরে আইজিজি এবং আইজিএম এর উপস্থিতি নাও সনাক্ত করা যেতে পারে। সুতরাং, নেগেটিভ রিপোর্ট এবং সনাক্তযোগ্য আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডির অনুপস্থিতি তাদের পূর্বে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাতিল করে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে রক্তে আইজিএ এবং অন্যান্য অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা কমই জানি। কারো শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিও তৈরি হতে পারে। তবে অ্যান্টিবডি সনাক্তকরণের জন্য দেশে অবশ্যই একটি ৪ স্তরের (সর্বোচ্চ স্তর) বায়োসফটি পরীক্ষাগার থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট রিএজেন্ট এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার সাহায্যে আমরা আমাদের দেহে আইজিজি, আইজিএম এবং আইজিএর মত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারি। যদিও বিজ্ঞানীরা জানেন না যে, কোভিড-১৯ এর বেলায় কত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা যায়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য আইজিএম সবচেয়ে কার্যকর এবং এটি সাধারণত সংক্রমণের পরে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়। আইজিজি কয়েক মাস বা বছর পর্যন্ত সনাক্তযোগ্য হতে পারে। আইজিএ শ্লেষ্মা প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং রক্ত ছাড়াও লালা জাতীয় শ্লেষ্মা নিঃসরণ থেকে এটি সনাক্ত করা যেতে পারে, যদিও কোভিড-১৯ সংক্রমণে এর ভূমিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ পরীক্ষাগুলো মাঠপর্যায়ে বা পরীক্ষাগারে দ্রুত (৩০ মিনিটেরও কম সময়ে) করা যায়।

সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার বুঝতে এবং সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলো চিহ্নিত করতে অ্যান্টিবডি টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারো মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ না থাকলেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সাহায্যে সনাক্ত করা যায় সে পুর্বে সংক্রমিত হয়েছিল কিনা। অন্যদিকে পিসিআর বা অ্যান্টিজেন সনাক্তকরণ পরীক্ষা দ্বারা তীব্রভাবে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশকৃত ভাইরাসের বিরুদ্ধে জীবদেহের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা যায়। এটি পূর্বে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত বা সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী সনাক্ত করতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।  

কোভিড- ১৯ মহামারী পর্যবেক্ষণ এবং এটি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্বে সংক্রমিত জনসংখ্যার অনুপাত নিরূপণ করতে এবং নিরাপদ ও সম্ভাব্য সুরক্ষিত জনসংখ্যা সম্পর্কে তথ্য পেতে এ পরীক্ষাগুলো সহায়তা করে। কোন কমিউনিটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে এবং সাময়িকভাবে কাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম তা অ্যান্টিবডি টেস্টের জনতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক ফলাফলের চিত্র দেখে বের করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবডি টেস্টের ফলাফল সম্ভাব্য কোভিড- ১৯ এ সংক্রমিতদের সনাক্ত করতে এবং কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্লাজমা কারা দিতে পারবে তাদের খুঁজে পেরে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট সমীক্ষা প্রসঙ্গে ফিরে আসি

২১ মিলিয়ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় করোনার বিস্তার সম্পর্কে জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হয় হয়। সমীক্ষাটি সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। ইউএসএআইডি-এর সহযোগিতায় আইসিডিডিআর,বি ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষায় রাজধানীর ৩,২২৭ টি পরিবারের ৫৫৩ জন উপসর্গযুক্ত এবং ৮১৭ জন উপসর্গবিহীন মানুষের আইজিজি এবং আইজিএম পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া বস্তিতে থাকা ৯৬০ পরিবারের ৯৬ জন উপসর্গযুক্ত ও ৩১৪ জন উপসর্গবিহীন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের  অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে এবং বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে এই হার ৭৪.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তাদের অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড -১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা শতকরা ২৪ ভাগ এবং ১৫-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা শতকরা ১৬ ভাগ। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, করোনা টেস্টে পজিটিভ আসা লোকদের মধ্যে শতকরা ৮২ জনের কোনো উপসসর্গ ছিল না এবং তারা সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্কও ছিল না। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ বাংলাদেশে আসে এবং মার্চের মধ্যে এই ভাইরাসটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জিনোমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,  ভারত, সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড- ১৯ সংক্রমিতরা বাংলাদেশে এসেছে।

হ্যাঁ, আমরা গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার আকার, এর বাছাই প্রক্রিয়া, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং প্রাপ্ত ফলাফলের সরলীকরণ নিয়ে বিতর্ক করতে পারি। আমরা এটিও বলতে পারি যে, সমীক্ষাটি এখনো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি। অথবা ফলাফল ঘোষণার আগে সরকারি সব রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়নি। কোভিড-১৯ একটি জরুরি অবস্থা। এ রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন। তাই, সর্বদা এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমালোচনা করা উচিৎ নয়। বরং আমাদের গর্ব করা উচিৎ এই কথা ভেবে যে অনেক সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি সমীক্ষা চালিয়েছি।

গবেষণাটি আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে এবং আরো ভালোভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করবে। হ্যাঁ, গবেষণালব্ধ ফলাফলকে পরিবর্তন করতে নয়, বরং সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তি এড়াতে ভবিষ্যতে আমাদেরকে গবেষণার সমস্ত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। পরীক্ষিত মানুষের সংক্রমণের হার (২৩ শতাংশ থেকে কমে এখন ১০-১২ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে) লক্ষ্য করে আমাদের সকলকে অবশ্যই একমত হতে হবে, এখনো বাংলাদেশে ব্যাপকহারে সংক্রমণ চলছে। ঢাকায় আক্রান্ত জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ যদি তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে অবগত না থাকে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুসরণ না করে, তবে এটা কল্পনা করা খুবই সহজ যে, এই রোগের ব্যাপক সংক্রমণ কেন হয়।

এ গবেষণাটি এপ্রিল-জুলাই মাসে করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে অনেকে সংক্রমিত হলেও তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি বা সনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে সংক্রমিতের হার অনেক বেশি ছিল এবং এখন এ সংখ্যা আরো বেড়েছে এবং দিন দিন বাড়তেই আছে। এতক্ষণে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা সম্ভবত হার্ড ইমিউনিটির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভাগ্যক্রমে, এ পর্যায়ে আসতে সংক্রমিত ও মৃত্যুবরণ করা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সংক্রমিতদের মধ্যে কেবল শতকরা ১ ভাগ লোককে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর মতে, কোভিড -১৯ এর কারণে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সৃষ্ট মারত্মক অর্থনৈতিক মন্দার তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল পর্যায়ে আছে এবং ইতিবাচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জীবন রক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েও শক্ত হাতে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে হয়তো একদিন গবেষক এবং ঐতিহাসিকরা গবেষণা করে লিখবেন। গবেষকরা হয়তো কম মৃত্যু এবং দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কারণগুলোও অনুসন্ধান করবেন। ধনী দেশগুলোসহ অনেক দেশই বিশাল সমস্যার সম্মুখীন এবং কেউই এখনো জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে পারেনি। এই গবেষণা অনেক দেশকে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও কর্মপন্থা ঠিক করতে  সহায়তা করবে। তবুও, আমি জোর দিয়ে বলব যে, আসুন আমরা আত্মতুষ্টিতে না ভুগে গণজমায়েত এড়িয়ে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করি এবং সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুই। এটি এখনকার জন্য এবং ভবিষ্যতে একটি নতুন নিয়ম হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রাথমিক সনাক্তকরণ, কন্টাক্ট ট্রেসিং, এবং আইসোলেশন সুবিধা প্রস্তুত রাখতে হবে এবং সুপরিকল্পিত জরুরি চিকিৎসা সেবা সুবিধা তৈরি করতে হবে।

অন্য যে বিষয়টি এই গবেষণাকে বিতর্কিত করেছে তা হল, ভাইরাসটির বাংলাদেশে আসা এবং কমিউনিটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সরকার কোনো মিথ্যাচার করেছে কিনা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এটি বাংলাদেশে মার্চে নয়, ফেব্রুয়ারির দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কেউ কেউ এই তথ্যের নেতিবাক ব্যাখ্যা করেছেন। আমি তা দেখে হতবাক।  ফ্রান্সের সরকার গত ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ সালে প্রথম সেদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেখানকার একটি হাসপাতালে এক নিউমোনিয়া রোগীর পুরনো নমুনা জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ঐ লোক ফ্রান্সের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেয়ারও এক মাস আগে ২৭ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হন।

ফ্রান্সের জনগণ কি মিথ্যাচারের জন্য সে দেশের সরকারকে দোষ দিয়েছে? না, তারা তা করেনি। বরং এটিকে বাস্তবতা এবং সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। কোভিড- ১৯ নতুন একটি রোগ। শুরুতে এটি সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানতাম না। আমরা এখন এটি সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক কিছু জানি, তারপরও এখনো বেশিরভাগ তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। যেমন একবার সংক্রমিত হওয়ার পর কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে তা কতদিন টিকে থাকে? কেউ কি পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে? আমরা এখনও পর্যন্ত বিশ্বে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার তিনটি ঘটনা সম্পর্কে জানি- একটি হংকং- এ, একটি নেদারল্যান্ডসে এবং একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের আরও জানতে, সজাগ থাকতে, আরো ভালো কর্মপন্থা প্রণয়ন করতে এবং অতীতের ভুলগুলো থেকে শিখে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে গবেষণা ও বিজ্ঞান সহায়তা করবে।

গবেষণা এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলি

মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) থেকে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত তিন দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে চীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে ছাড়িয়ে তৃতীয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির পাশাপাশি বিজ্ঞানকে বর্তমান সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এই অগ্রগতি হয়েছে। চীন সরকার বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি হলো জার্নালে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করা বিজ্ঞানীদের অর্থ প্রদান। এটি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাগুলোর সংখ্যা ৩০০০% বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। কেন চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং শীঘ্রই প্রথম হয়ে উঠতে পারে তা ভেবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গবেষণা ও প্রকাশনায় আমরা কোথায় আছি তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। জেনেভাতে আমাদের প্রতিবেশীর নাতি ঘরে বসে পড়াশুনা করে এবং মানূষের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলঝেইমার রোগ এবং এ রোগাক্রান্তদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি অসাধারণ লেখা লিখেছিল তার মাধ্যমিক পড়াশুনার অংশ হিসেবে। এটি দেখে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।  দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য গবেষণা প্রয়োজনীয় এবং জরুরী হওয়ায় অনেক দেশেই তা স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে সন্নিবেশ করা হয়েছে। অনেক দিন আগে, যখন আমি স্কুলে বা মেডিকেল কলেজে ছিলাম, তখন আমাদের গবেষণার সুযোগ ছিল না। আমরা বেশিরভাগই আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে গবেষণার সক্ষমতা অর্জন করি।

নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়ে আমি জানতে চাই, আজ বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের মধ্যে গবেষণার স্থান কোথায়? বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এফিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আমরা যদি আরো দ্রুততার সাথে এগিয়ে যেতে চাই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একেবারে শুরুতে গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করে এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। আমাদের গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। আমাদের গবেষণার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা উচিত এবং গবেষণার ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে দেখে বিজ্ঞানকে ভয় পাওয়া উচিত না। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শিখতে হবে, সততার সাথে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সত্যকে সাহসিকতার সাথে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আজ বাংলাদেশের তরুণদের জন্য গবেষণার দ্বার অনেকটাই উন্মুক্ত। আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে থাকতে হবে, তাদেরকে গবেষণার মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক অবস্থা আরো ভালভাবে বুঝতে এবং তাদের মাঝে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার এবং দেশ গড়ার সাহস গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীদের সীমাবদ্ধতার জন্য তাদের নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়, বরং তাদের ছোট ছোট সাফল্যেও আমাদের গর্ব করা উচিৎ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন