নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৫ নভেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে বহু ধর্মের মানুষ বাস করে। মুসলমানদের জন্য অবশ্যপালনীয় ৫টি ফরজের মধ্যে হজ্জ অন্যতম। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সৌদিআরব সরকারের স্বীকৃতি না পাওয়ায় হজ্জ পালন বাঁধাগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সমস্যা নিরসনে সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ধর্মীয় কাজে বঙ্গবন্ধুর এ উদ্যেগের ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধর্মের কল্যাণে ব্যাপক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা অব্যাহত রয়েছে।
পাঠকের স্মরনার্থে ১৯৭৩-এর ৫ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে চতুর্থ ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সৌদি বাদশাহ ফয়সালের মধ্যে অনুষ্ঠত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিবরণ দেয়া হলো- ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের পরহেজগার মুসলমানরা স্বাধীনতা পরবর্তীকালে একটা সময় পর্যন্ত পবিত্র কাবায় গিয়ে হজ্জ পালন করতে পারতেন না। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়টুকু সৌদিআরব সরকারের কাছে বাংলাদেশ নামক কোন দেশের অস্তিত্ব না থাকায় বাংলাদেশী মুসলমানরা হজ্জ করতে যেতে পারছিলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী একটি অর্ডিন্যান্স পাশ করেন, যেখানে বলা হয় বাংলাদেশীরা ভারত থেকে হজ্জ যাত্রা করতে পারবেন। কিছু মানুষ এভাবে হজ্জ করেছিলেন বলেও জানা যায়। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদর্শন ছাড়াও কিছু জটিলতা সৃষ্টি হলে এ ব্যবস্থা বেশিদিন টেকসই হয়ে ওঠেনি। অনেক কূটনৈতিক আলোচনা করেও সৌদি সরকারের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় ১৯৭৩-এর ৫ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে চতুর্থ ন্যাম সম্মেলনে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। বৈঠক চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৌদির বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঐ বৈঠকে বাদশা ফয়সাল এলেন, দুই নেতা পাশাপাশি সোফায় বসলেন, বাদশা ফয়সালের দোভাষী বসলেন মাঝখানে। পারস্পরিক স্বাস্থ্য ও কুশল বিনিময়ের পর কথোপকথন শুরু হলো। সেই কথোপকথনের মূল অংশ নিম্নরূপ:
বাদশা ফয়সাল: আমি শুনেছি যে, বাংলাদেশ আমাদের কাছে কিছু সাহায্য আশা করছে। আপনি আসলে কি ধরনের সাহায্য চাচ্ছেন। আর হ্যাঁ যেকোনো ধরনের সাহায্য দেয়ার আগে আমাদের কিছু পূর্বশর্ত আছে।
বঙ্গবন্ধু: ইউর এক্সিলেন্সি, আশা করি আমার দুর্বিনীত ব্যবহার ক্ষমা করবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ভিক্ষার জন্য আপনার কাছে হাত বাড়িয়েছে। ফয়সাল: তাহলে আপনি সৌদি আরবের কাছে কি আশা করছেন?
বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের পরহেজগার মুসলমানরা পবিত্র কাবায় গিয়ে ইবাদত পালনের অধিকার দাবি করছে। যদি ইবাদত পালনের জন্য আপনার কোনো পূর্বশর্ত থেকে থাকে তাহলে আপনি তা বলতে পারেন। আপনি পবিত্র কাবা শরীফের তত্ত্বাবধায়ক। বাঙালি মুসলানদের কাছে আপনার স্থান অনেক উঁচুতে। একথা নিশ্চয় স্বীকার করবেন, সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদেরই সেখানে ইবাদত করার অধিকার রয়েছে। সেখানে ইবাদত পালন করার কোনো প্রকার শর্ত আরোপ করা কি ন্যায়সঙ্গত? আমরা সমঅধিকারের ভিত্তিতে আপনার সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই।
ফয়সাল : কিন্তু এটা তো কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হলো না। দয়া করে আমাকে বলুন আপনি সৌদি আরবের কাছে আসলেই কি আশা করছেন? বঙ্গবন্ধু: ইউর এক্সেলেন্সি। আপনি জানেন যে, ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আমি জানতে চাই, কেন সৌদি আরব স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি? ফয়সাল: আমি অসীম ক্ষমতাবান আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে জবাবদিহি করি না। তবু আপনাকে বলছি, সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ‘Islamic Republic of Bangladesh` করতে হবে। বঙ্গবন্ধু: এই শর্ত বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশের জনগণের অধিকাংশ মুসলিম হলেও আমার প্রায় এক কোটি অমুসলিমও রয়েছে। সবাই একসঙ্গে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, ভোগান্তিতে পড়েছে, আর সর্বশক্তিমান আল্লাহ শুধু মুসলিমদের জন্যই নন, তিনি বিশ্বভ্রম্মান্ডের স্রষ্টা। ইউর এক্সেলেন্সি, ক্ষমা করবেন, তাছাড়া আপনার দেশের নামও তো ‘Islamic Republic of Saudi Arabia` নয়। বাদশা ইবনে সৌদের নামে নাম রাখা হয়েছে ‘Kingdom of Saudi Arabia’। আমরা কেউই এই নামে আপত্তি করিনি।
এ সময় অনাকাঙ্খিতভাবে শেষ হয় আলোচনা। উঠে পড়েন বাদশা ফয়সাল। দুনেতা বেরিয়ে যেতে থাকেন। যাওয়ার আগে সেই কালো ফ্রেমের চশমা পরা হিমালয়ের মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বিশাল হৃদয়ের অধিকারী মানুষ বঙ্গবন্ধু মুজিব উচ্চারণ করেছিলেন, "লা-কুম দ্বীনুকুম ওয়াল-ইয়া দ্বীন"।‘ ১৬ আগস্ট ১৯৭৫, সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সেদিন বঙ্গবন্ধুর জানাজা পড়া হচ্ছে এদেশে। (তথ্যসূত্র : মুজিবের রক্ত লাল, এম আর আখতার মুকুল) যাক সেকথা। বাংলাদেশের হজ্জ যাত্রীর সীমাহীন কষ্ট, রেজিষ্ট্রেশন, মেডিকেল চেকআপ, টিকিট প্রাপ্তি, ইমিগ্রেশন, লাগেজ পরিবহন, বাড়িভাড়া, খাওয়া-দাওয়া সর্বক্ষেত্রেই ভোগান্তি, হয়রানী ও অবহেলার অবসান করার জন্য গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং কার্যকর করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সার্বিক সহযোগিতার কারনেই হজ্জ পালনের সু-ব্যবস্থাপনা সম্ভবপর হয়েছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ২০১৯ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রাপ্য অতিরিক্ত ২০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অপেক্ষার সময় ও কষ্ট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সৌদি আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশেই প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা, হজের সময় মিনায় অবস্থানকালে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের দ্বিতল খাট ব্যবহারে বাধ্য না করা, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের উন্নত খাবার পরিবেশন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি এজেন্সির সর্বনিম্ন হজযাত্রীর সংখ্যা ১৫০ থেকে ১০০-তে কমিয়ে আনা এবং পবিত্র হজের দিনগুলোয় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য মক্কা, মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় যাতায়াতের সুবিধার্থে পুরনো বাসের পরিবর্তে উন্নতমানের নতুন ও পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সরবরাহের জন্য কুটনৈতিকভাবে অনুরোধ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি ছাড়া অন্য প্রায় সব দাবি মেনে নেয়। কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি আন্তরিকতা সহকারে রয়াল কেবিনেটে উপস্থাপন করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশি হাজীর সংখ্যা ১০ হাজার বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৭,৭৫০ জন হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম সফলতা হলো সৌদি কর্তৃপক্ষের ‘Makkah Route Initiative Framework’-এর আওতায় সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা হয়। সরকার সৌদি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, আইটি সহযোগিতা ও নিয়মিত সমন্বয় সাধন করে। প্রথম বছরেই ৬১ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রী এই সেবা পেয়েছেন। হজ্জের সফরে কষ্টকর বিষয় হলো লাগেজ পরিবহন করা। লাগেজ পরিবহনের কষ্ট লাঘবের জন্য ‘Makkah Route Initiative Framework’ কার্যক্রমের আওতায় United Agents Office-এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের লাগেজ ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হজ্জযাত্রীর মক্কার হোটেলের কক্ষে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
‘ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা’—এ স্লোগান সামনে রেখে পুরো হজ্জ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশের হজযাত্রীরা পবিত্র হজব্রত পালনের নিমিত্তে অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন এবং নিবন্ধনপ্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারেন। হজের প্রতিটি পর্যায়ে সব করণীয় বিষয় প্রত্যেক হাজিকে খুদে বার্তা, ফোন কল ইত্যাদির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। ইলেকট্রনিক টিকা প্রত্যয়নপত্র সিস্টেমে সংযোজন করার ফলে সব হজযাত্রীর মেডিক্যাল প্রফাইল হজযাত্রার আগেই সম্পন্ন করা হয়। শতভাগ হজযাত্রীর ভ্যাকসিন হেলথ প্রফাইল সিস্টেম চালু করার ফলে শতভাগ হজযাত্রীর ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভবপর হচ্ছে। পূর্বের ন্যায় হজযাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড় করিয়ে না রেখে, লক্ষাধিক হজযাত্রীর সুশৃঙ্খল চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিউ সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
হজযাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট শুরুর বেশ আগেই তারিখ নির্ধারণ করে সরাসরি হজ এজেন্সির কাছে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং টিকিট বিক্রির তথ্যপ্রাপ্তির জন্য সিস্টেমে পে-অর্ডার ব্যবস্থাপনা সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অব্যবস্থাপনা দূর করা সম্ভব হয়েছে। হাজীদের থাকার জন্য বাড়িভাড়ার আগাম তথ্য সংগ্রহের ফলে মনিটরিং সহজ হয়েছে। হজের আগেই মক্কা ও মদিনার বেসরকারি হজ এজেন্সি কর্তৃক ভাড়াকৃত শতভাগ হোটেল বা বাড়ি পরিদর্শন করা সম্ভব হয়। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সারা দেশে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে সকল হজযাত্রীর জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা অত্যন্ত সহজে হজের সকল ফরজ-ওয়াজেব আদায় করে হজ্জ কার্য যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন।
হজযাত্রীদের হজে গমনে যেকোনো প্রকার অনিশ্চয়তা পরিহার করার লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনা ইনফরমেশন সিস্টেম হতে রিপোর্ট ব্যবহার করে বেসরকারি হজ্জ এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম প্রতিনিয়ত মনিটর করা হয়। ফলে হজ অফিস ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সম্মানিত হজযাত্রীদের সঠিক নিয়মে হজ্জ পালন ও ধর্মীয় বিধি-বিধান বিষয়ে পরামর্শ, দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য সারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যবিশিষ্ট হজ ওলামা-মাশায়েখ টিম গঠন করে পবিত্র হজে পাঠানো হয়েছে। এত বৃহৎ পরিসরে সরকারিভাবে ওলামা-মাশায়েখদের হজব্রত পালনের উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। বিষয়টি সুধীমহলসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশ-বিদেশে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হজযাত্রীদের সুবিধার্থে হজ ক্যাম্পের ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, মসজিদ ও সম্মানিত নারী হজযাত্রীদের ডরমিটরিতে এসি স্থাপন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছে বর্তমান সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষার অংশ হিসেবে আইন পাশ করা হয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতো দেশে যে আলেম ওলামাদেরও প্রয়োজন সে ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি ভিত রচনা করেছেন। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদ দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দিয়ে এরই মধ্যে ২ হাজার ২০ জনকে সরকারি পর্যায়ে আরবি গণশিক্ষা মাদ্রাসায় চাকরি দিয়েছে সরকার। গঠন করা হয়েছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন ও ইমাম মোয়াজ্জিম কল্যাণ ট্রাস্ট। সারা দেশে ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণের প্রথম ধাপের কাজ চলছে। একই সাথে ১ হাজার ১০টি দারুল আকরাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান ও আইসিটি অন্তর্ভূক্ত করা বড় সাফল্য এই সরকারের।
শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, হিন্দু ধর্মের জন্য ও সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের অবসরপ্রাপ্ত পুরোহিত রতন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘আমাদের বাচ্চারা আগে গীতাশিক্ষা পেতো না, কিন্তু এখন তা আমরা সরকারের মাধ্যমে চালু করেছি। আগে যেমন মূর্তি ভাঙা, পুড়িয়ে দেয়া, মন্দির ভাঙ্গা এ ব্যাপারগুলো ছিলো, এখন সরকার এসব বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। এছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার‘।
ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম ছাড়াও বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যও নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সরকার। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্যাগোডাভিত্তিক শিক্ষার জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এভাবে সকল ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
(চলবে...পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে আগামীকাল এর বাংলাইনসাইডার এ)
আগের পর্ব: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য র্কীতিসমূহ-৩
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।