নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০২ পিএম, ০৭ এপ্রিল, ২০২১
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে যে ধর্মনিরেপেক্ষ সংবিধান এবং আইনি ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিলেন, তার কারণেই মামুনুল হক ইসলামিক শারিয়া আইন অনুযায়ী ব্যাভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পাচ্ছে। হেফাজত সহ কিছু উগ্রপন্থি ধর্মভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত করে ইসলামিক শারিয়া আইন ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার ঘোষণা দিয়ে আসছে। ইসলামিক শারিয়া আইন বহাল থাকলে আজ ব্যাভিচারের অপরাধে মামুনুল হকের মৃত্যুদণ্ড হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু বাস্তবিক কারণেই একটি ধর্মনিরপেক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় আইনি ব্যবস্থার (লিগ্যাল সিস্টেম) শ্রেণীকরণ/ক্লাসিফিকেশন কয়েক রকমের। একটি মৌলিক শ্রেণীকরণ হচ্ছে, ধর্মভিত্তিক বা প্রাকৃতিক আইন ব্যবস্থা ( Divine Law or Natural Law) এবং মানব সৃষ্ট আইন (Positive Law) বা ধর্মনিরপেক্ষ আইন ব্যবস্থা। ভারতীয় উপমহাদেশের কয়েকশ বছরের আইন ব্যবস্থা সমুহ পর্যালোচনা ক্রমে বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জাতির পিতা মানব সৃষ্ট আইন বা পজিটিভ ল` ভিত্তিক আইন ব্যবস্থাকে (যা ধর্ম নিরপেক্ষ আইন ব্যবস্থা হিসেবেও পরিচিত) স্বাধীন বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেন। জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের কল্যাণই এই আইন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি।
জাতির পিতা উপলব্ধি করেছিলেন, পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়েই আমাদের উপর তাদের অন্যায়- অত্যাচার চাপিয়ে দিয়েছিল। ধর্মকেই তারা তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া, ব্রিটিশ শাসন পূর্ববর্তী সময়ে মুঘল শাসনামলে ভারত বর্ষে যতটুকু ইসলামিক শারিয়া আইন চালু ছিল, সেটি নানা দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তাতে ইসলামের অনুশাসন বাস্তবায়িত হয়নি। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মভিত্তিক যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল, সেটিও মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণেই ব্যবহুত হয়েছে। আমাদের মতো আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দেশ গুলোতে ইসলামিক অপরাধ আইন বা `ইসলামিক ক্রিমিনাল জাস্টিস` বাস্তবিক অবস্থার কারণেই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। এই সকল কারণে জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদ ইসলামিক আইনকে বাংলাদেশে পার্সোনাল আইন ( Personal Law) হিসেবে গ্রহণ করেন। এই আইনের মাধ্যমে সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, ভরণপোষণ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দেন-মোহর, শিশুর অভিভাবকত্ব, দান, ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট সম্পত্তি, ওয়াকফ সম্পর্কিত এবং অপরাপর ব্যক্তিগত বিষয় সমুহ ইসলামিক শারিয়া আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে এই ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। জাতির পিতা এদেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক যে শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, সেটি ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হেফাজত সহ কিছু উগ্রপন্থি সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে শারিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা এদেশে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত করতে চায়। মামুনুল হক সহ এই সকল মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড ব্যক্তিবর্গের মুখোশ উম্মোচিত হচ্ছে । নিজেরা ব্যক্তি জীবনে সকল ধরণের অনৈতিক, অপরাধমূলক ও ইসলাম পরিপন্থি কাজ করছে, অথচ তারা ইসলাম ধর্মের নামে এদেশের ধর্মভীরু মানুষ ও কোমলমতি শিশুদের প্রতিনিয়ত ধর্মের ভয় দেখিয়ে প্রতারিত করছে। তারা সমাজে নিজেদেরকে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করছে। কথায় কথায় তারা ধর্মকে বিক্রি করছে; শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে তারা সমাজে ধর্মান্ধতার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে। মামুনুল হক যে কাজটি করেছে, এটি ইসলামিক শারিয়া আইন অনুযায়ী ব্যাভিচার, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশেই এই ইসলামিক শারিয়া আইন চালু রয়েছে। অধিকাংশ দেশেই পাথর নিক্ষেপ করে ব্যাভিচারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জাতির পিতা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে যদি Positive Law (জুরিসপ্রুডেন্সের ভাষায়) বা ধর্মনিরপেক্ষ আইন ব্যবস্থা চালু না করে ইসলামিক আইন চালু করতেন, তাহলে মামুনুল হককে ব্যভিচারের অপরাধে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। আবার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না করতেন অর্থাৎ বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের অংশ হিসেবে থাকতো, যেটি মামুনুল হকের বাবা সহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী কিছু ব্যক্তি চেয়েছিল, তাহলে পাকিস্তানে পরবর্তীকালে জারীকৃত ও বর্তমানে প্রচলিত শারিয়া ভিত্তিক আইন Hudood Ordinances বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতো। এই Hudood প্যাকেজ আইনের আওতায় ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানে The Offence of Zina (Enforcement Of Hudood) Ordinance (যা `জিনা অর্ডিন্যান্স` হিসেবে বহুল পরিচিত) জারী করা হয়। এই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী কোন বিবাহিত মুসলিম ব্যাভিচারের অপরাধ করলে তাকে জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে। অপরাধী অমুসলিম হলে তাকে জনসম্মুখে একশো বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি না করলে আজ এই আইনেই জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে মামুনুল হকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। এই মামুনুলরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী; এরা এখনও পাকিস্তানের জন্য মায়াকান্না করে।
মামুনুল হকের ব্যভিচার প্রমাণিত। কারণ সে নিজেই ব্যভিচারের কথা স্বীকার করেছে। প্রথমত, তার সাথে সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে থাকা নারীর পরিচয় হিসেবে লিখেছে তার নিজের স্ত্রীর নাম। ঐ নারী তার স্ত্রী হলে ঐ নারীর নামই রেজিস্টার খাতায় লিখতো। দ্বিতীয়ত, মামুনুল তার নিজের স্ত্রীকে টেলিফোনে বলেছিল, ঐ নারী জনৈক শহিদুলের স্ত্রী। স্ত্রীকে বলেছিল, কেবলমাত্র পরিস্থিতির কারণে সে ঐ নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলেছিল। সে তার স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিল, সে যেনো এই কথাই সবাইকে বলে। মামুনুল যদি তার সাথে হোটেলে থাকা ঐ নারীকে সত্যিই বিয়ে করতো, তাহলে ঐ বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই তার স্ত্রীকে আসল ঘটনা বলতো। তৃতীয়ত, মামুনুলের বোন টেলিফোনে মামুনুলের স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিল, সে যেন অন্য কাউকে তাদের শেখানো কথার বাইরে কথা না বলে। মামুনুলের স্ত্রীকে অনুরোধ করলো, সে যেন এটি বলে যে, মামুনুলের দ্বিতীয় বিয়ের কথা যে জানতো। তখন মামুনুলের স্ত্রী তার স্বামীর বোনকে জিজ্ঞেস করেছিল, মামুনুল আসলে বিয়ে করেছে কিনা। তার বোন তখন বলেছিল, বিয়ের কথা সত্যি নয়। মামুনুল কে বাঁচানোর জন্যই তারা এ কথা বলছেো; মামুনুলের স্ত্রী যেন এই নিয়ে কোন চিন্তা না করে। মামুনুলের স্ত্রীর কথোপকথন শুনে মনে হয়নি যে মামুনুল বা তার ভাইবোনেরা তার স্ত্রীর ভয়ে কোন কিছু লুকিয়ে রাখছে। বরং মনে হয়েছে, মামুনুলের স্ত্রী নিরীহ প্রকৃতির এক সহজ সরল নারী যার উপর যেকোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যায়। তাই মামুনুলের স্ত্রীকে মিথ্যা বলার কোন কারণ নেই। চতুর্থত, সাংবাদিক গণের জেরার মুখে মামুনুল বলেছিল, তার সাথে থাকা নারী তার বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী। কিন্তু আজও ঐ কথিত বিয়ের কাবিননামা দেখাতে পারেনি। পঞ্চমত, ঘটনার পরবর্তী সময়ে ঐ নারী টেলিফোনে মামুনুল হকের এক লোকের কাছে বার বার জিজ্ঞেস করছিল, বিয়ের স্থান ও তারিখ সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞেস করলে সে কী উত্তর দেবে। ঐ নারীকে মামুনুল বিয়ে করে থাকলে সে সহজেই এই তথ্য দিতে পারতো। এই তথ্য জানার জন্য তৃতীয় ব্যক্তিকে তার জিজ্ঞেস করতে হতো না। ষষ্ঠত, ঐ নারীর নিজের ছেলে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে মামুনুলের ব্যভিচারের ঘটনা সমূহ প্রকাশ করে এবং রাষ্ট্রের কাছে মামুনুলের বিচার দাবি করে।
এটি লক্ষণীয়, ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল যা যা বলেছে এবং যা যা করেছে, তার প্রত্যেকটিই ইসলামিক আইন এবং এমনকি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ মুলক কাজ। কোন কর্তৃপক্ষ কারও কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য জানতে চাইলে সে সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে সেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাউকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য পরামর্শ দিলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তর্কের খাতিরে বলছি (যদিও এটি সত্য নয়), এই ব্যক্তি স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকলে সেটিও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই সম্পর্কিত আইন The Muslim Family Laws Ordinance, 1961 এর বিধান অনুযায়ী (ধারা ৬) শুধু স্ত্রীর সম্মতি থাকলেই চলবে না; এই আইনের অধীন গঠিত আরবিট্রেশন কাউন্সিলের লিখিত আদেশ ছাড়া বহুবিবাহ করা যায় না। এই আইন লঙ্ঘনের শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন, এই মামুনুল হক
ডিজিটাল মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার বিরুদ্ধে বিশোদগার করেছিলো। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া, এই ধরণের বক্তব্য বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮ এ সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত বিধানের লংঘন। এই ধরণের কর্মকাণ্ড আমাদের জাতীয় সংসদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার প্রতি অবমাননা যা দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় একটি অপরাধ।
মামুনুল হকের মতো কিছু ব্যক্তি এদেশে কিছু ধর্ম ভিত্তিক সংগঠন পরিচালনা করে আসছে। এই সকল সংগঠন বাংলাদেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায় । বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব, তাঁর নানামুখী সাহসী পদক্ষেপ এবং তাঁর কঠোর পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে এক আদর্শ রাষ্ট্র। এই মধ্যযুগীয় গোষ্ঠী বাংলাদেশের সকল অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। অনেকেই এই ধরণের ব্যক্তিদেরকে ধর্মান্ধ হিসেবে অবিহিত করে থাকে। আসলে এরা ধর্মান্ধ নয়। এরা ধর্মের লেবাস পরিহিত চিহ্নিত কিছু অপরাধী; প্রকৃত অর্থে এরা ধর্ম বিরোধী। কারণ তাদের প্রতিটি কথায় ও কাজে তারা ধর্মীয় অনুশাসন লংঘন করছে। ধর্মকে ব্যবহার করে এদেশের ধর্ম ভীরু মানুষকে বোকা বানিয়ে এই অপরাধী চক্র তাদের সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ আইন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন বলেই মামুনুলরা আজ ইসলামিক শারিয়া আইন অনুযায়ী ব্যাভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি না করলে আজ পাকিস্তানে প্রচলিত Hudood Ordinance (`জিনা অর্ডিন্যান্স`) বাংলাদেশে প্রযোজ্য হতো এবং এই শারিয়া আইনের আওতায় জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে মামুনুল হকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। এই কৃতঘ্ন গোষ্ঠী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আঘাত করেছে। প্রকৃত অর্থে এই আঘাত হানা হয়েছে বাংলাদেশের উপর। আজ প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জাতি এই মধ্যযুগীয় তাণ্ডবের উপযুক্ত জবাব দেবে ইনশাল্লাহ।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।