নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মে, ২০২১
করোনা ভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীতে প্রত্যেকটি দেশের জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মার্চ ১১, ২০২০ তারিখে এ বৈশ্বিক মহামারীর ব্যাপকতা সম্পর্কে ঘোষণা দেয়। এর মাত্র ১২ মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার এবং বাস্তব প্রয়োগ শুরু হয়। এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশাল অগ্রগতির এক অনন্য নজির। বিশ্বের অনেক দেশ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবন ও পরীক্ষামূলক কাজে লিপ্ত। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির ফাইজার-বায়োএনটেক, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুটনিক, চীনের সিনোভ্যাক্স, সিনোফার্ম (বেইজিং), সিনোফার্ম (উহান) এবং ভারতের কোভ্যাকসিন এ আটটি টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু টিকার এ প্রয়োগের মধ্যেও দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষের কাছে এ মহাপ্রতিষেধক থেকে যাচ্ছে প্রায় অধরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর ৭০% মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য ১১০০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। এর মধ্যে ৮৬০ কোটি ডোজ উৎপাদন ও ক্রমান্বয়ে সরবরাহের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হচ্ছে এর ৬০০ কোটি ডোজ যাবে উন্নত ও উচ্চ আয়ের দেশে। দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের দেশের মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রায় নেই, যেখানে পৃথিবীর ৮০% লোক বাস করে।
টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগ চলছে এ আশার মধ্যেও তাই হতাশার সুর ও মৃত্যুর আশঙ্কা। আশঙ্কার কারণ হচ্ছে মেধাস্বত্ব ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা, আর তাই উন্নয়নশীল দেশের কাছে টিকা না পৌঁছানো। যাকে বলে Vaccine Divide বা টিকা বৈষম্য। কোন আবিস্কারের জন্য উদ্ভাবকের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রয়োজনে মেধাস্বত্বের সৃষ্টি। ইতালিতে ১৪২১ সালে সর্বপ্রথম প্যাটেন্ট সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব প্রদানের ব্যবস্থা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে TRIPS (Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights) এর প্রয়োগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত মেধাস্বত্বের আন্তর্জাতিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুব একটা বাধ্যবাধকতা ছিল না। এ সময় সকল উন্নত দেশ একে অন্যের প্রযু্িক্ত ও উদ্ভাবন আয়ত্ব করেছে মেধাসত্বের বাধা ছাড়াই। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের অর্থনৈতিক বিপর্যয় উত্তরণে বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় শুল্ক ও অশুল্ক বাধাসহ অন্যান্য বাধা দূরীকরণের জন্য ১৯৪৮ সালে GATT (General Agreement on Tariffs and Trade) প্রতিষ্ঠা করা হয়। GATT নামক চুক্তি থেকে জাতিসংঘের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) নামক একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৫ সালে জন্মলাভ করে। সে সময় কঠিন শর্তাবলী সম্বলিত মেধাস্বত্বের TRIPS চুক্তি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও উন্নত দেশসমূহের প্রভাবে প্রণীত ও স্বাক্ষরিত হয়। মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত TRIPS-এর কঠিন শর্তাবলীর কারণেই তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোতে টিকা উৎপাদন ও প্রাপ্তিতে আছে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা।
এ কারণে অক্টোবর ০১, ২০২০ তারিখে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে টিকা না দেয়া পর্যন্ত কোভিড টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিকট আবেদন করে। বিশ্বের শতাধিক দেশ এ আবেদনে সমর্থন করে। নোবেল পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীসহ বিশ্বের ১৭০ জন বিজ্ঞানী টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িক স্থগিতকরণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একইভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আবেদন করে। `The People’s Vaccine Alliance’ মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রস্তাবে সমর্থন দেয় এবং সমর্থন আদায়ে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অনেক দেশকে অনুরোধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল ১০ জন সিনেটর এ টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িকভাবে স্থগিতকরণের প্রস্তাবে সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মাননীয় প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ডিসেম্বর ০৩, ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে বৈশ্বিক করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ০৩টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং তা হচ্ছে মানসম্পন্ন টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত সক্ষমতা তৈরি, টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তর (TRIPS-এর ৬৬.২ ধারা) এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত এপ্রিল ২০, ২০২০ তারিখে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে একইভাবে করোনা ভাইরাসের টিকাকে মেধাস্বত্ববিহীন ‘Global Public Goods’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া এবং এ বৈশ্বিক মহামারী উত্তরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।
করোনা ভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্ব সম্পূর্ণ বা স্বল্পকালীন সময়ে কার্যকর না করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবল দাবি ও প্রস্তাব উঠলেও কোন নেই। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তাব বিগত ০৬ মাসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জেনারেল কাউন্সিলে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপিত হয়নি। বিশ্বের কিছু ধনী দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং এমনকি করোনা বিপর্যস্ত ব্রাজিল মেধাস্বত্বের প্রয়োগ স্থগিত রাখার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। সাথে আছে বিশেষ নামকরা ওষুধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সংগঠন International Federation of Pharmaceutical Manufactures Associations (IFPMA), আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ও কিছু মেধাস্বত্বের আইনজীবী। তাদের যুক্তি হচ্ছে মেধাস্বত্বের কারণে গবেষক ও বিনিয়োগকারী গবেষণা ও বিনিয়োগে উৎসাহিত হন এবং এ ধারাবাহিকতা প্রজন্মান্তরে গবেষণায় ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহ ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে। মেধাস্বত্ব এখানে সাময়িকভাবে স্থগিত হলে ভবিষ্যতে এরূপ বৈশ্বিক মহামারীর টিকা, ওষুধ বা প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আগ্রহ কমবে, যা খুবই মারাত্মক ও আত্মঘাতী হবে।
কি অকাট্য ও অমানবিক যুক্তি! মনে হয় এরূপ মহামারী প্রতি দশকে আসে। চতুর্দশ শতকে বিউবোনিক প্লেগ রোগে (১৩৪৬-১৩৫৩) ০৮ বছরে ইউরোপের প্রায় ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছিল, যার কারণে একে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এর টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে ৫৩০ বছর পরে ১৮৯০ সালে। দ্বিতীয় বৈশ্বিক মহামারী স্প্যানিশ-ফ্লু হানা দিয়েছে ১৯১৮-১৯২০ সময়কালে। বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোককে (প্রায় ৫০ কোটি) আক্রান্তকারী এ বৈশ্বিক মহামারীতে প্রায় ০৫ কোটি লোক প্রাণ হারিয়েছে। আর এ স্প্যানিশ-ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে ১৯৪০ সালে। উভয় ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন, মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের প্রয়োগ ও কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে এ রোগের মহামারী কমেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসাধারণ উন্নতির কারণে মাত্র ১২ মাসের মধ্যে টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগ হচ্ছে। অথচ মেধাস্বত্ব ও প্রযুক্তির অভাবে তা সকলের কাছে যাচ্ছেনা, বাড়ছে বৈষম্য ও মৃত্যু। বিপন্ন মানবতার চেয়ে মেধাস্বত্বের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফার মূল্য কি অনেক বেশি?
TRIPS-এর শর্তাবলী কঠিন হলেও চুক্তির ৩০ ও ৩১ ধারায় কিছু সুযোগ রাখা হয়েছে, যদিও তা বাস্তবায়নে বিঘœ অনেক। যেমন স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য ওষুধ প্রস্তুতে জানুয়ারি ০১, ২০৩৩ তারিখ পর্যন্ত মেধাস্বত্বের প্রয়োগ হবে না। একই সঙ্গে চুক্তির ৬৬.২ ধারায় স্বল্পোন্নত দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তর করার বিধান আছে। বাংলাদেশ চাহিদার প্রায় ৯৭ ভাগ ওষুধ উৎপাদন করে এবং ১৫০টির বেশি দেশে রপ্তাণি করে। প্রযুক্তি পাওয়া গেলে এদেশেই এ টিকা উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু প্রযুক্তি সহজে কেউ দেয়না, কারণ ঐ মেধাস্বত্ব ও মুনাফা। TRIPS চুক্তির ৩১ (এফ) ধারায় কোন দেশে জরুরি প্রয়োজনে Compulsory License প্রদান করে মেধাস্বত্বের প্রয়োগ ছাড়াই ওষুধ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু ভারত ২০১২ সালে Bayer-কর্তৃক উদ্ভাবিত ক্যান্সারের ওষুধ এ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের সম্মুখীন হয়েছিল। TRIPS চুক্তিতে Voluntary License-এর আওতায় পারস্পারিক সম্মতিতে উৎপাদনের সুযোগ আছে। এরূপ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে উদ্ভাবকের শর্তাবলী মেনে চলতে হয় এবং এরূপ চুক্তিতে স্বার্থ বা মুনাফার প্রশ্ন বেশি থাকে, মানবতা নয়। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেরাম এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি বা বাংলাদেশসহ যেসব দেশে টিকা সরবরাহের চুক্তি করেছিল তাদের কাউকে টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। বরং নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে রাষ্ট্রীয় খরচে সেরামের টিকা উৎপাদন ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করে ভারতে ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে তাদের টিকা সরবরাহের মহাসুযোগ ছিল। যাহোক, মেধাস্বত্বের প্রয়োগের পাশাপাশি এরূপ নিষেধাজ্ঞাও এখন টিকা সরবরাহে হুমকি। ইতালি কর্তৃক অস্ট্রেলিয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতে টিকার প্রয়োজনীয় উপাদান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বা সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা সবই বিপন্ন মানবতাকে আরও বিপন্ন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইমিউনাইজেশন ও কয়েকটি উদ্যোগী সংস্থার সাথে সৃষ্ট উদ্যোগ “কোভ্যাক্স” ২০০ কোটি ডোজ টিকা ২০২১ সালের মধ্যে সংগ্রহের প্রচেষ্টা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ কোটি ডোজের নিশ্চয়তা পেয়েছে। ইতোমধ্যে ফাইজার কোভিড রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ তৈরি করেছে, যা এ বছরের শেষে বাজারে আসবে। তবে সে ক্ষেত্রেও সংকট থাকবে- কারণ ওই মেধাস্বত্ব। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ দেশে টিকা সংকট শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী এ সংকট চলতে থাকলে বিশ্বের ৭৫টি দেশ টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে, আর ১১৫টি দেশের জনগণকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডাইরেক্টর জেনারেল জরুরি ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশে টিকা দ্রুত উৎপাদনের প্রস্তাব করেছেন। এজন্য প্রয়োজন মেধাস্বত্বের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিতকরণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর। দুটোরই বিধান আছে TRIPS-এ, কিন্তু প্রয়োগ নেই। সেজন্য কোভিড টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের সক্ষম দেশে টিকা উৎপাদনে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
ড. মিহির কান্তি মজুমদার, সাবেক সচিব।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।