ইনসাইড থট

ফেরাউনেরও কি মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০১ এএম, ১২ জুন, ২০২১


Thumbnail

লকডাউনের ঢাকায় তীব্র যানজট। মন্ত্রী আয়েশে কথা বলছেন মোবাইলে। সারা দিন সুনসান কক্ষে নিয়মনীতির জীবন থেকে একটু নস্টালজিক হতে চাইলেন মন্ত্রী। গাড়ির জানালাটা খুলে দিলেন। আচমকা ফোন নিয়ে দৌড় দিল এক দুষ্ট। মন্ত্রীর গাড়িতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তিনি কী করলেন জাতি জানে না। ঘটনা ৩০ মের। এক সপ্তাহ পর মন্ত্রী নিজেই একনেকের বৈঠক শেষে জানালেন, এখনো তিনি তাঁর মোবাইল ফোন ফেরত পাননি। মন্ত্রীর মোবাইল অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বস্তু। মন্ত্রীর হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এভাবে প্রকাশ্যে যদি মন্ত্রীর ফোন ছিনতাই হয় তাহলে তো মন্ত্রীও অরক্ষিত। ভাগ্যিস স্বয়ং মন্ত্রীকেই ছিনতাই করা হয়নি। এই মন্ত্রী অবশ্যই ভাগ্যবান। ১৯৭৩ সালে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তিনি নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। যে সময় জাতির পিতার হত্যার বদলা নিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যখন জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শিষ্য তোফায়েল আহমেদ সামরিক স্বৈরাচারের নির্মম নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কারাপ্রকোষ্ঠে। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে তাঁকে পিটিয়ে মুমূর্ষু করার সেই সময় এই মন্ত্রী অসাংবিধানিক সরকারের একান্ত অনুগত চাকুরে। তাঁর দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন নিপুণ দক্ষতায়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার যুগ্মসচিবসহ নানা আকর্ষণীয় পদে তিনি তরতর করে উন্নতি করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ওই সময় একজন পাগলও জানত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত যে দুঃশাসন চালিয়েছে, তা প্রতিরোধ করতে মানুষ মুখিয়ে। বাংলাদেশের আমলারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দূরদর্শী চিন্তা করতে না পারলেও নিজেদের আয়-উন্নতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত। বারবার এটি প্রমাণিত। এরশাদের আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত আমলা প্রয়াত এম কে আনোয়ার ও কেরামত আলী যেমন বিএনপিতে যোগ দিয়ে নিজেদের অবসর-উত্তর জীবনের জন্য অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দোসর হয়েও তারা বিএনপির ‘গণতান্ত্রিক’ জমানায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়েছিলেন। তেমনি আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে পাকা। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হন। ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রী। ২০১৯ সালে পূর্ণমন্ত্রী। আমলাতন্ত্রে পদোন্নতি প্রক্রিয়া তাঁর অবসর জীবনেও অব্যাহত থাকে। তাই তিনি সদা হাস্যময়, সর্বতো বিরাজমান। বাজেটের দিন বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সব টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গেল পরিকল্পনামন্ত্রীর সরব উপস্থিতি। ভাগ্যিস মন্ত্রীর সেদিন মোবাইলটাই ছিনতাই হয়েছিল। উনি নিজে যদি অপহৃত হতেন তাহলে বাজেট-পরবর্তী এত কথা কে বলতেন?

বাংলাদেশের আমলারা বিভিন্নকালে কিম্ভূত সব আবিষ্কার করেন। জিয়ার আমলে এক আমলা জিয়াকে খুশি করতে ‘জাতীয় পোশাক’ আবিষ্কার করেছিলেন। সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের স্যুট-টাইয়ের বদলে জিয়ার পোশাকের আদলে সাফারি পরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরশাদের আমলে আমলাদের বাড়বাড়ন্ত ছিল চোখে পড়ার মতো। বেগম জিয়ার আমলে একদা চৈনিক বাম আমলা বিভিন্ন সেক্টর করপোরেশনে বিশেষায়িত পদে আমলার অনুপ্রবেশ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ২১ পর বছর আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় ১৯৯৬ সালে। গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় বেগম জিয়ার। এক ভুতুড়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কয়েক দিনের এক নৈশ সংসদে বেগম জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলটি পাস করে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। জনতার আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলেন গুটিকয় আমলা। জনতার মঞ্চে এসেই তারা বাজিমাত করেন। এই দলের শিরোমণি আমলাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্রুত তিনি আমলার পোশাক ছেড়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। প্রতিমন্ত্রী হন। এই আমলা এখনো প্রবহমান নদীর মধ্যেই বহতা। তিনিও এক আবিষ্কারের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা রানা প্লাজার পিলার ধরে টানাহেঁচড়া করেছিল। এজন্যই রানা প্লাজা নাকি ধসে পড়েছিল। আমলারা পারেনও বটে। ২০০১ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে আমলাদের ব্যাপক ক্ষমতায়ন হয়। এ সময় রাজনৈতিক কর্মীদের ভূমিকায় দেখা যায় আমলাদের। এ ধারা এখনো অব্যাহত। শুধু পার্থক্য হলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চুল পরিমাণ সম্পর্ক থাকে, চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ আওয়ামী লীগ করে এমন সবাইকে হয় চাকরি থেকে বিদায় অথবা নীলডাউন করার মতো ওএসডি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এসব ব্যাপারে উদার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আমলারাও ঝটপট দ্রুত পদোন্নতি পান। আওয়ামীপন্থি আমলার আত্মীয়ও (বেয়াই) সচিব হন। আওয়ামীপন্থি আমলার বিশ্ববিদ্যালয়ের দোস্ত, তাই ছাত্রদল করেও কেউ সচিব হন। আওয়ামী লীগ আমলে বরং ছাত্রলীগ করে সরকারি চাকরিতে এসেছেন এমন অনেকেই অবিচার এবং অবমূল্যায়নের শিকার হন। সে অন্য প্রসঙ্গ। আমি বলতে চাইছিলাম আমলাদের কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার ধারাবাহিকতা। সব সরকারের আমলেই আমলারা নিজেদের বলয়, প্রভাব এবং কর্তৃত্ব অব্যাহত রেখেছে। এখন তা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আমলারা যেন গোটা সরকারকে গিলে ফেলেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নাকি আমলা লীগ ক্ষমতায় সে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে যখন চারদিকে কথাবার্তা ঠিক তখন মন্ত্রিসভায় আমলাদের অন্যতম প্রতিনিধি বললেন, ‘আমলাতন্ত্র আমাদের মধ্যে আছে এবং থাকবে। ফেরাউনও আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেনি।’ ৮ জুন একনেকের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমিও ছোটখাটো আমলা ছিলাম, এখন বড় আমলা।’

ফেরাউন নিকৃষ্ট স্বৈরাচার, জঘন্য, পাপিষ্ঠ একনায়ক। আল কোরআনে বিভিন্ন স্থানে ৬৭ বার ফেরাউন প্রসঙ্গ এসেছে। সুরা ইউনুসের ৮৩ নম্বর আয়াতে ফেরাউনকে ‘ন্যায় লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরাউনের উদাহরণ মন্ত্রী কেন দিলেন? এটি অজ্ঞতা নাকি সুপ্ত ষড়যন্ত্রের অসতর্ক প্রকাশ? পৃথিবীর নিকৃষ্ট স্বৈরাচার কেন ‘আমলাতন্ত্র’ উৎখাত করবে? বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায়, যখনই অনির্বাচিত একনায়করা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে, তখন তারা আমলানির্ভর হয়েছে। আমলা বা সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রের অনিবার্য অনুষঙ্গ। কেউ আমলাদের বিলোপ চায়নি। কিন্তু আমলাদের সর্বগ্রাসী রূপ গণতন্ত্র এবং জনঅধিকারের জন্য ক্ষতিকর, হুমকি। একটি দেশে গণতন্ত্র যত বেশি বিকশিত, আমলাতন্ত্র ততটাই নিয়ন্ত্রিত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলো একটি ভারসাম্যমূলক শাসনব্যবস্থা। এখানে ক্রিয়াশীল প্রত্যেকের নিজস্ব বৃত্ত থাকে। একে অন্যকে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এর মাধ্যমেই গণতন্ত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটে। আমলারা যখন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে যান, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হন তখন তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ান। বাংলাদেশে আমার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, আমলারা ক্রমে তাদের গন্ডি অতিক্রম করেছেন। একটি রাজনৈতিক সরকার যখন আমলাদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে যায় তখন গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্বল হয়ে যায়। এটিই আমাদের আশঙ্কার জায়গা।

ফেরাউনের মতো অত্যাচারী, ঘৃণিত, সীমা লঙ্ঘনকারীরা তো চাটুকার, স্তাবক আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হবেই। একটি জনগণের সরকার কখনো তা হবে না। যেমন হননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমলাদের জনগণের সেবক করতে চেয়েছিলেন। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ আমরা যারা এখানে আছি, তারা সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারী। পুলিশ, সামরিক বাহিনী, বর্ডার গার্ড, রক্ষীবাহিনী বা আনসার যা-ই আমরা হই না কেন, সবাই এই বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই চলি এবং সবাইকে রাখা হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য।’ বঙ্গবন্ধু এটাই বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করবেন তা তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে হলেও আদায় করতেন। আজকের এই বাংলাদেশ তার প্রমাণ। আমলাদের ‘জনগণের সেবক’ বানাতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা। ফেরাউনের মতো ঘৃণিতরা আমলাতন্ত্রকে ক্ষমতাবান করে আর বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানবরা আমলাতন্ত্রের ‘চেতনা’ পাল্টে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। বাকশাল যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলে আমলারা আজকের মতো ফুলে ফেঁপে উঠতেন না। চতুর্থ সংশোধনী পাসের দিন জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা সে রূপরেখাও দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মেন্টালিটি চেঞ্জ করতে হবে। সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট- আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই।’ এজন্যই জেলা গভর্নরের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদদের দিয়েছিলেন, আমলাদের দেননি। জাতির পিতা যদি আর কিছুদিন দেশটা গোছাতে পারতেন, যদি তিনি তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে পারতেন তাহলে হয়তো মন্ত্রী এ রকম দম্ভভরে আমলাদের জয়গান করতে পারতেন না। তাহলে হয়তো আমলারা মাস্টার থাকতেন না, সেবকই হতেন। ’৭৫-এর পর আমলারা পরগাছার মতো রাষ্ট্রব্যবস্থায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। আমলাতন্ত্রকে কেউ অস্বীকার করে না। মৌর্য সাম্রাজ্যেও আমলাতন্ত্র ছিল। কিন্তু এ রকম একচ্ছত্র আমলানির্ভর ছিল? ড. আকবর আলি খান ‘অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্থে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু কথা লিখেছেন। ‘বর্তমানে আইনত বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের সদস্যরা পাকিস্তানের সিএসপিদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন।’ (পৃষ্ঠা : ২৪৬)। সরকারি আমলারা ক্ষমতাবান হচ্ছেন প্রতিদিন। এ নিয়ে কথাবার্তাও কম হচ্ছে না। তার পরও আমলারাই সবকিছু দখল করে নিচ্ছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর নানাভাবে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। এখন সরকারের শীর্ষ আমলাদের প্রায় সবাই চুক্তিতে। এখন চুক্তিভিত্তিক আমলাতন্ত্র চলছে দেশে। আর যারা চুক্তিতে থাকতে পারছেন না তাদের জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বর্তমানে দেশের সব সাংবিধানিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ আমলাদের দখলে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন থেকে তথ্য অধিকার কমিশন- সর্বত্র আমলারা চেয়ার দখল করে রেখেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা ঠুঁটো জগন্নাথ, ক্ষমতা সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে। জেলার রাজা ডিসি। এখন আবার পৌরসভাও আমলাদের কর্তৃত্বে চলে যাচ্ছে। পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী বলবেন কি এমন সর্বগ্রাসী আমলাতন্ত্র বিশ্বে কোন দেশে আছে? আচ্ছা ধরে নিলাম আমাদের রাজনীতিবিদরা মূর্খ, লেখাপড়া জানেন না। এজন্যই চালকের আসনে আমলাদের বসানো হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু আমলারা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে যান কীভাবে? আমলারা দুর্নীতি করলে তার বিচার করা যাবে না। আইন করে বিচার বন্ধ করা হয়েছে। আমলারা যৌন কেলেঙ্কারি করবেন, তাদের বিভাগীয় তদন্ত হবে। ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। জামালপুরের এক ডিসির নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হলো। কিন্তু শাস্তি হলো পদাবনতি। কি আশ্চর্য! বাগেরহাটের আরেক জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগের পর তাকে শুধু বদলি করা হলো। দুর্নীতি দমন কমিশনে যেতে হয় না দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত আমলাকে। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমলারা কি সবকিছুর ঊর্ধ্বে? ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এ রকম আমলাতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ফেরাউনের উদাহরণ দেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। অবশ্য ফোন হারিয়ে এত দিনে তা উদ্ধার করতে না পেরে মন্ত্রীর মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে কি না ভাবতেই হয়। আমরা বরং মন্ত্রীর ফেরাউন-তত্ত্বকে আমলাদের যা খুশি তাই বক্তব্য হিসেবে উপেক্ষা করি। কিন্তু মন্ত্রীর ফোন উদ্ধারে আমরা একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই পারি। বাংলাদেশে সব সংকট সমাধানে আমলাতান্ত্রিক ফরমুলা অনুসরণ করা হয়। আসুন আমরা একটু কল্পনার জগতে যাই। মন্ত্রীর ফোন উদ্ধারে আমলারা কী করতে পারেন অনুমানের চেষ্টা করি।

মন্ত্রীর ফোন হারানোর ঘটনা তদন্তের জন্য একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপদস্থ কমিটি গঠিত হলো। তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলো। তদন্তকাজের সুবিধার জন্য তদন্ত কমিটির সদস্যদের পৃথক পরিবহন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলো। তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের সংখ্যা কত তা জানার জন্য বিটিআরসিকে চিঠি দিল। বিটিআরসি এটি সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে জানাল। এটি করতে করতে এক সপ্তাহ শেষ হলো। তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হলো আরও সাত দিন। এবার তদন্ত কর্মকর্তারা আইফোন (যেহেতু মন্ত্রীর ফোনটি আইফোন) কার কার আছে সে তালিকা চাইলেন। এভাবে সপ্তাহ যায়, সময় বাড়ানো হয়, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে যায়। তদন্ত দল বলল, তারা তদন্ত করছে, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

একপর্যায়ে তদন্ত দল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য ‘অ্যাপেল’-এ সরেজমিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আইফোন হারানোর তদন্ত হবে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপেলের অফিসে যাওয়া হবে না তা কী করে হয়! তদন্ত দল ছুটল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এভাবে এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি ঘোষণা করল তারা তদন্ত শেষ করেছে। পাঁচ তারকা হোটেলে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠান। ২ হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট। তদন্ত দলের প্রধান যিনি তদন্তের সময় সচিব ছিলেন, এখন সিনিয়র সচিব। অনেক কথা বললেন। শেষ কথা হলো এটাকে ছিনতাই বলা যায় না। কারণ মোবাইল ফোনটি ভয়ভীতি কিংবা অস্ত্র দেখিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়নি। যেহেতু এটি ‘ছিনতাই’ নয় চুরি তাই এটি এ কমিটির এখতিয়ারাধীন বিষয় নয়। কীভাবে চুরি হলো তা নিয়ে আরেকটি কমিটি হতে পারে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটি ১০১টি সুপারিশ করল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মন্ত্রীরা গাড়িতে থাকা অবস্থায় জানালার কাচ নামাবেন না। মুঠোফোন মুঠোয় শক্ত করে ধরবেন। সিটবেল্ট পরবেন, ইত্যাদি।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে ছুটলেন তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্য। মন্ত্রী বললেন ‘খুব ভালো রিপোর্ট, ইনডেপথ। তারা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন।’ ভাগ্যিস ফেরাউনের আমলে মোবাইল ফোন ছিল না। ফেরাউনের যদি মোবাইল থাকত তাহলে মন্ত্রী অবধারিতভাবে বলতেন, ‘ফেরাউনেরও মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল। ছিনতাই ছিল, আছে, থাকবে।’

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
ইমেইল : poriprekkhit@yahoo.com
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন