নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৬ জুন, ২০২১
বুধবার গত ২৪ ঘন্টায় ৪৮ জন কোভিড-১৯ রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে বর্তমানে ৩৪৪ জন রোগীর যত্ন নেওয়া হচ্ছে, তবে সেখানে কেবল ৩০৫ জনের শয্যা রয়েছে। একই সময়ে আরও ১৩ জন মারা গেছেন। এক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালের বেশিরভাগ রোগী শহুরে অঞ্চল থেকে এসেছিলেন, তবে এখন আরও রোগী গ্রামীণ অঞ্চল থেকে আসছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি। কোভিড রোগের এটি গ্রামীণ উত্থান নির্দেশ করে এবং এটি উদ্বেগের কারণ। এই রোগটি কেবল এর আগে বয়স্কদের মধ্যে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণ ছিল, কিন্তু ভারতীয় বৈকল্পিক কারণে এই রোগের সংক্রমণ দ্রুত সংক্রমণের ফলে এখন আরও কম বয়সীদের মধ্যেও বিস্তার হচ্ছে, এবং তারা সংক্রামিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সক্রিয় তরুণদের দরকার।
আমার পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলিতে, যথেষ্ট কারণসহ আমি দেশব্যাপী লকডাউন না করার এবং ভারতের সাথে সিমান্তের তাত্ক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। এর কারণে গ্রামে কোভিড রোগ ছড়িয়ে পরতে পারে। ভাগ্যক্রমে গ্রামগুলো এখনও অবধি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। উন্মুক্ত সীমানা সহ, এবং কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া ভারতীয় / ডেল্টা ভেরিয়েন্ট, যা আরও বেশি সংক্রামক এবং মারাত্মক, দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং ধ্বংসস্তূপের কারণ হতে পারে তার আভাস দেওয়া হয়েছিল। গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলে ঘন ঘন চলাচল করা বাংলাদেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে যদি আমরা তাড়াতাড়ি এবং তাত্ক্ষণিক প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ না নেই তাহলে কোভিড আবার বড় আকারের শহরগুলিতে ছরিয়ে পরতে পারে বলেও ধারণা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ ঢাকায় আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ এবং জরুরি ও সুরক্ষার সামগ্রিক দায়িত্বে থাকা প্রধান, যিনি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের নিচতলায় থাকেন, সে বেশিরভাগ সময় তার ঢাকা আর গ্রামের বাড়ির মধ্যে ভ্রমণ করেন। তিনি শীঘ্রই তাঁর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন কারণ এটি ধান কাটার মৌসুম। আমরা চেষ্টা করতে পারি তবে থামাতে পারব না কারণ এটি পরিবার, জীবন এবং জীবিকার প্রশ্ন। উন্নত এবং সমৃদ্ধ জাতির কদর্য ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ এবং ভ্যাকসিন কূটনীতি সহ, এটিও উন্নয়নশীল বিশ্বের নির্মম বাস্তবতা।
সময়মত উপযুক্ত কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমরা সংক্রমণটির গতি ধীর করতে এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধ করতে পারি। যদি তা আমরা না করি, যখন সঞ্চালন দ্রুত হয়ে যায়, প্রচুর সংখ্যার সংক্রমিত লোক হওয়ার কারনে কাজগুলো অসম্ভব হয়ে যায়। প্রথমদিকে যুক্তরাজ্য একই ভুল করেছিল।
এখন যা ঘটার তা ইতিমধ্যে ঘটেছে। আর দেরি না করে বা কেন্দ্রের আদেশের জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের অবশ্যই স্থানীয়ভাবে সমন্বিত এবং সমন্বিত তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমি জেনে খুশি যে রাজশাহী জেলা প্রশাসন (স্থানীয় সংসদ সদস্য বা সম্প্রদায়ের নেতারা কোথায় আছেন?) এই সমস্যা নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন কারণ তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বর্তমানের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এবং গ্রামাঞ্চলে করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ। আমি আশা করি স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সম্প্রদায় নেতা এবং যুব সংগঠনগুলি এই আলোচনার সদস্য হবেন এবং অংশ নেবেন। কেন্দ্র, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তাত্ক্ষণিকভাবে সেখানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং ব্যক্তিদের প্রেরণ করা উচিত। দয়া করে আবার স্মরণ করিয়ে দিই, শুরুতে স্থানীয়ভাবে শুরু হওয়া প্রাদুর্ভাবের সময় আরও বেশি লোকের পরীক্ষা করা সম্ভব এবং অনেক সহজ; সহজভাবে সংক্রমিত লোকদের পৃথকীকরণকে/আলাদা করে দেওয়া যায়; সংক্রামিত ব্যক্তিদের যোগাযোগগুলি শনাক্ত করা এবং তাদের পরীক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্ন করাও সহজ এবং সম্ভব। চীন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং তাইওয়ানে সাম্প্রতিক সময় কোভিডের স্থানীয় প্রাদুর্ভাবের কারণে (চীনের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান / ডেল্টা রূপান্তরিত কোভিডের উত্থান) কারণে, কয়েক হাজার বা চীনের ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ স্থানীয় লোককে অল্প সময়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং পরিক্ষায় অল্প সংখ্যক ইতিবাচক লোকদের পাশাপাশি তাদের পরিচিতিগুলি সনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং বিচ্ছিন্ন করা হয়। মহামারী শুরুতে প্রয়োজনীয় পরিষেবাদি সরবরাহ করাও সহজ। তাই আমি অনুরোধ করতে পারি:
১। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং/অথবা প্রশাসনিক প্রধানের নেতৃত্বে প্রাসঙ্গিক লোকের অংশগ্রহণে রাজশাহীর এবং অন্য অঞ্চলে যেখানে অনেক সংক্রামিত মানুষের উত্থান হয়েছে সেখানের পাশাপাশি তার গ্রামগুলিতে জরুরি দল গঠন করুন। মানুষকে অবহিত করুন। সংসদ সদস্যের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিবিদদেরও সক্রিয় থাকতে হবে। আর অপচয় করার মতো সময় নেই।
২। স্থানীয় মহামারীর বর্তমান এবং চলমান পরিস্থিতি একটানা বিশ্লেষণ করুন এবং সে অনুযায়ী স্থানীয় লকডাউন চাপিয়ে দিন এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন। যদি লোকদেরও পরিস্তিতি সম্পর্কে সময়মত এবং নিয়মিত অবগত রাখা হয় এবং তাদের জড়িত করা হয়, তবে তারা পরিস্থিতি বুঝতে এবং স্বাস্থ্য পরামর্শগুলি অনুসরণ করতে আরও আগ্রহী হবে।
৩। পরীক্ষার সুবিধাগুলি বৃদ্ধি করা। লক্ষণীয় এবং তাদের পরিচিতি উভয়কেই আরও বেশি লোকদের কোভিড পরীক্ষা করা। আমাদের যতাযত আরও ব্যয় করতে দ্বিধা না করা কারণ সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করা হলে এটি পরবর্তী পর্যায়ে অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা আনবে।
৪। কোভিড পরীক্ষায় ইতিবাচক সংক্রামিত সকল লোকদের (লক্ষণ এবং লক্ষণ ছাড়া) বিচ্ছিন্ন করে পৃথকীকরণ করুন, যতক্ষণ না তারা নেতিবাচক হয়ে ওঠে।
৫। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমস্ত পরিচিতির সন্ধান করুন, পরীক্ষা করুন এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করুন।
৬। সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকদের অনুরোধ করুন, যদিও তারা কোভিড পরীক্ষায় নেতিবাচক এবং তাদের কোনও লক্ষণ নাও থাকতে পারে, নূন্যতম ১০ দিনের জন্য নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরিক্ষা করা। দয়া করে তাদের বুঝতে সাহায্য করুন, এটি তাদের এবং তাদের বৃদ্ধ পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যথায়, কিছু লোক যারা আপনার অনুরোধ সত্ত্বেও তা অনুসরণ করবে না, অনেক দেশের মত তাদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা বা ভারী জরিমানা আরোপ করা করুন। নাগরিক নজরদারি দল এই কাজে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে পারে। সুইজারল্যান্ডে, যারা পৃথকীকরণ লঙ্ঘন করে তাদের ১০,০০০ সুইস ফ্র্যাঙ্ক (১০ লক্ষ টাকা) জরিমানা করা হয়। আমার জ্ঞান অনুযায়ী অনেক লঙ্ঘনকারীকে ইতিমধ্যে এই পরিমাণে জরিমানা করা হয়েছে।
৭। অভ্যন্তরীণ ও বাইরে থেকে লোক পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করুন। যারা আম পরিবহনের মতো অর্থনৈতিক কাজে জড়িত তাদের মঞ্জুরি দিন। পরিবহন চালক এবং সহায়তাকারীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
৮। বাড়িতে বা হাসপাতালে চিকিত্সা সুবিধা সংগঠিত করুন।
৯। প্রতিদিনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা অব্যাহত রাখুন (আপনার জন্য রোগের নজরদারি দলের প্রয়োজন হবে এবং সমস্ত সুবিধা থেকে তথ্যের প্রাপ্তের জন্য সমর্থন দরকার) দলের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করুন এবং প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
প্রধানমন্ত্রী সকল জেলাকে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি এবং আদেশ দিয়েছেন। এখন অনেক কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মৌসুম: যেমন ধান কাটা, আম এবং অন্যান্য মৌসুমী ফলের ব্যবসা এবং শীঘ্রই শুরু হবে ইলিশ মাছের মৌসুম। সংক্রমণটি নিয়ন্ত্রণ করতে, এখন অনেক কর্মকান্ড তুলনামূলকভাবে সহজ তবে আমরা জরুরী স্থানীয়কৃত কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আমাদের দেশ জুড়ে আরও বড় সমস্যা হতে পারে। এখন সমালোচনা যেমন “ আমি আপনাকে তা আগেই বলেছি" “আরো অনেক আগে এমন প্রচেষ্টা কেন নেয়া হল না” ইত্যাদি ইত্যাদি বলে একে অপরকে দোষারোপ করা বা টেলিভিশন টক শোতে এটি নিয়ে বিতর্ক করে ঘূর্ণিঝড় তৈরি করার সময় নয়। জাতীয়ভাবে চিন্তা করে কিন্তু স্থানীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময়। সরকার সব কিছু করতে পারে না, এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কোনও ভয় নেই, আমরা এই বর্তমান পরিস্থিতিটি কাটিয়ে উঠতে পারি এবং সবার সহযোগিতায় আমরা ন্যূনতম ক্ষতিসহ এটি কাটিয়ে উঠব।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।