ইনসাইড থট

মন্ত্রী যখন সরকারের বোঝা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ জুন, ২০২১


Thumbnail

এ রকম চমৎকার অনুষ্ঠান আজকাল তেমন একটা হয় না। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, অনুষ্ঠানে কিছু কথা বলতে হবে। বক্তৃৃতা করা আমার কাজ না। এ কাজে আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করি। তারপরও মোদাচ্ছের স্যারের অনুরোধে অনুষ্ঠানে গেলাম। মাত্র কয়েকজন আলোচক।  আলোচনার বিষয়বস্তু ব্যতিক্রমী। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক : জাতির পিতার স্বপ্ন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাফল্য’ শিরোনামে আলোচনা। চমৎকার মূল প্রবন্ধ পাঠ করলেন কবি শাহানা পারভীন। অনুষ্ঠানের আলোচক প্রায় সবাই স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং আরও দুই-চারজন। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী নিজেই সভাপতি এবং সঞ্চালক। অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত। সভাপতির প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক চেয়ার’ চালুর ঘোষণা দিলেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নেই। আয়োজকদের জিজ্ঞাসা করলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি? আয়োজকদের একজন বললেন, প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। তাঁকে আমন্ত্রণও জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এ রকম একটি গোলটেবিলে প্রধান অতিথির প্রয়োজন নেই, তাই তাঁরা অনুষ্ঠান বিন্যাস পরিবর্তন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বাদ দেন। এর কারণ জানতে চাইলাম। একজন বললেন, মন্ত্রী এলেই করোনা, টিকা এসব নিয়ে কথা বলবেন। সাংবাদিকরা এসব বিষয় লুফে নেন। ফলে অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা আড়ালেই থেকে যাবে। আমরা অনুষ্ঠানটি বিতর্কহীন, একাডেমিক করতে চেয়েছিলাম। মানে কী? স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাহলে একটি ভালো অনুষ্ঠানের অন্তরায়? তিনি এখন জাতির দায়? আমার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হলো না। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে শোক ও স্মরণসভা। সেই অনুষ্ঠানেও দেখি স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা এবং টিকা নিয়ে কথা বললেন। বললেন, ‘ক্যামেরা নিয়ে হাসপাতাল দেখালেই করোনা যাবে না।’ এটা দেখার পর কমিউনিটি ক্লিনিকের আয়োজকদের বিচক্ষণতায় আমি মুগ্ধ। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আমার এখন আর কিছু লিখতে ভালো লাগে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে পুরো জাতিই হাল ছেড়ে দিয়েছে। জাতীয় সংসদে তাঁকে তুলাধোনা করা হলো। তিনি নির্বিকার। গণমাধ্যমে প্রতিদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা নিয়ে লেখা হয়। মন্ত্রী ভ্রুক্ষেপহীন। টিআইবি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বানোয়াট। আজকাল চায়ের আড্ডায়, রাজনৈতিক দলের অফিসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর খুঁটির জোর নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করতে করতে ক্লান্ত। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব পাত্তা দেন না। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, করোনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে’। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা নিয়ে সচেতন করতে হবে। এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রচার-প্রচারণার জন্য একটি বিশেষ বিভাগ আছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো নামে এই বিভাগটির কাজ হলো; স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করা। এই খাতে বেশ টাকাও বরাদ্দ থাকে। বাংলাদেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো। এই প্রতিষ্ঠানে একজন লাইন ডিরেক্টর হয়েছেন মন্ত্রীর পছন্দে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা আছে। তিনি প্রচারণা না করেই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন বলে গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সরকার, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বতন্ত্র, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গঠন করে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একক কর্তৃত্ব এখন খাদ্যের গুণগত মান তদারকি করা। এ সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যের মান নিয়ে নানা প্রচার-প্রচারণা করে থাকে। এসব প্রচার-প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো, কোনো ভুল তথ্য যেন না যায়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নীতি অনুযায়ী খাবারের মান এবং ঝুঁকি নিয়ে বক্তব্য দেবেন কেবল চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ বা উপযুক্ত ব্যক্তি। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী রিকশায় করে যাচ্ছেন। স্ত্রীর ফাস্টফুড খেতে ইচ্ছা হলো। স্বামী বলছেন এসব খাবার খেলে কলেরা, ক্যান্সার নানা রোগ হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, এই বিজ্ঞাপন অবৈজ্ঞানিক। নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে রুখবে কে? তাদের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা নিয়ে কথা তো কম হলো না। অর্থমন্ত্রী বললেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলেন করোনা নিয়ে প্রচারণা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী করছেন ফাস্টফুডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কী চমৎকার। দেখতে দেখতে গত আড়াই বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রণালয় জাতির জন্য এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই বোঝা বইতে গিয়ে সরকারই যেন ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। এ সরকারের এ রকম কয়েকজন মন্ত্রী আবিষ্কৃত হয়েছেন, যাদের একমাত্র কাজ সরকারকে বিব্রত করা। সরকারের ভালো কাজগুলো আড়াল করা। গত ১৭ মার্চ ছিল জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হলো। এ দিনটি শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে পালিত হয়। করোনা মহামারীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ প্রায় দেড় বছর। তাই ওই অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরকে আশ্বাস দিলেন, উজ্জীবিত করলেন। তাদের দুঃখ এবং উৎকণ্ঠার সঙ্গে একাত্ম হলেন। তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন। মনে হলো মমতাময়ী মা সন্তানকে স্বাভাবিক রাখার এক অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রকাশ। আর সেদিন দেখলাম শিক্ষামন্ত্রীর কথার ঝঙ্কার। এক বছর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হলে নাকি তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কী আশ্চর্য কথা! শিক্ষামন্ত্রী গত দেড় বছরে মূলধারার শিক্ষাজীবন চালু করতে কী করেছেন? সেদিন একজন শিক্ষক বলছিলেন, সপ্তাহে এক দিন একটি শ্রেণিকক্ষে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে এনে শিক্ষাদান করা যেতে পারে। এসব শিক্ষকের পরামর্শ শোনার মতো সময় আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর আছে কি? শিক্ষামন্ত্রী একাই দেশের শিক্ষার্থীকে এবং তাদের অভিভাবকদের সরকারের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছেন। গত সপ্তাহের লেখায় পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্য নিয়ে লিখেছিলাম। এই লেখার পর প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার এবং আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন নাসিম আমাকে একটি খুদে বার্তা পাঠান। আমার লেখার একটি ভুল তথ্য শুধরে দেওয়ার জন্যই এ খুদে বার্তা। পাঠকদের জন্য খুদে বার্তাটি তুলে ধরছি- “মান্নান সাহেব ১৯৭৩ সালের বিসিএসে যোগ দেননি। তিনি ছিলেন সিএসপি ১৯৭১ এর ব্যাচ। সারা দেশ যখন যুদ্ধে তখন এই সিএসপি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং পাস করেন। জয়েন করতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এই পরীক্ষাকে মেনে নেননি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭৭ সালে তাদের সিনিয়রিটি দিয়ে ক্যাডারে যোগদান করিয়েছিলেন। এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডার চারজন ছিলেন এম এ মান্নান, আহমেদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরী, জানিবুল হক এবং শফিকুল ইসলাম। আর বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন পেয়েছিলেন সচিবালয় ক্যাডার। তিনিও ১৯৭৭ সালে একইভাবে জয়েন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরীক্ষা দিয়েছিলেন বলে প্রশাসনে ওনাদের ‘রাজাকার ব্যাচ’ বা রাজাকার সিএসপি বলে কৌতুক করা হতো।” তাহলে, বর্তমান মন্ত্রিসভায় দুজন রাজাকার ব্যাচের মন্ত্রীও আছেন। এরা কাজ না করে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবেন- এটাই তো স্বাভাবিক। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে, মন্ত্রীদের কাজ কী? সংসদে দেখলাম কয়েকজন সংসদ সদস্য বলার চেষ্টা করছেন মন্ত্রীদের ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আমলাদের হাতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বলে, ‘ক্ষমতা কেউ কাউকে দেয় না, ক্ষমতা অর্জন করতে হয়।’ মন্ত্রী যদি যোগ্য হন, তাহলে কখনো আমলারা ছড়ি ঘোরাতে পারে না। আর মন্ত্রী যদি তাঁর কাজটা না জানেন, তাঁর যদি অন্য কোনো মতলব থাকে, মন্ত্রীর গদিতে বসে আড়াই শ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ শোধ করার তাগিদ থাকে, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। একজন মন্ত্রী যদি মনে করেন, মন্ত্রিত্বটা কেবল একটা চাকরি কিংবা পুরস্কার তাহলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তিনি যদি মনে করেন, এটা দেশসেবার দায়িত্ব তাহলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের উদাহরণ। আশির দশকে তাঁকে বলা হতো বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী। অথচ তিনি অর্থশাস্ত্রে পড়াশোনাই করেননি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাসে মাস্টার্স করেছিলেন। ১৯৮২ সালে প্রয়াত শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন, ভারতের অর্থনীতির নবযাত্রার সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। বাংলাদেশেও এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। মন্ত্রী হয়ে যারা অনবদ্য অবদান রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা জীবনই রাজনীতির পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনীতিকে চালকের আসনে বসাতে তিনিই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি ‘রুলস অব বিজনেস’ পরিবর্তন করেন। সচিবদের বদলে মন্ত্রীদের দেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব। এই পরিবর্তনের ফলে, মন্ত্রীরা এখন মন্ত্রণালয়ের মূল ব্যক্তি। মূল ব্যক্তি হিসেবে অনেক মন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে গিয়ে তাঁদের মেধা ও মনন উজাড় করে দিয়েছেন। বেশি উদাহরণ দরকার নেই। এক সময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, কৃষিবিদ ড. আওলাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল কদিন আগে। ড. আওলাদ বলছিলেন, মতিয়া আপা কৃষি মন্ত্রণালয়ে যে শৃঙ্খলা এবং উন্নতি করেছেন, তাতে ওই মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রীকে কিছুই করতে হবে না, শুধু রুটিনওয়ার্ক করলেই হবে।’ বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাটা ধারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালন করেছেন, মন্ত্রণালয় দুর্নীতিমুক্ত রেখেছেন। নেতা হিসেবে একটা চমৎকার টিমওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তোফায়েল আহমেদ দুই মেয়াদে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতিপক্ষ বানাননি, তাদের ধমক দিয়ে বলেননি, সিন্ডিকেট করা যাবে না, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো যাবে না। তোফায়েল আহমেদ অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। সব পক্ষকে আস্থায় নিয়েছেন। তাঁর দুই দফা মন্ত্রিত্বে চিনি কেলেঙ্কারি হয়নি। লবণ কেলেঙ্কারি হয়নি। পিঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, রোজায় তিনি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সফল মন্ত্রী। এই মেয়াদেও আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী ভালো কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। বাংলাদেশ যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে, তার পেছনে কিছু মন্ত্রীরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দুই-একটা উদাহরণ দিতে চাই। গত বছর যখন করোনা মহামারী শুরু হলো, তখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব ছিল অপ্রস্তুত। কী করতে হবে না হবে আমরা জানতাম না। নানা ভয়, কুসংস্কার, গুজব ছিল চারপাশে। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, ডিম ও দুধ খেলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ব্যস, মানুষ ডিম-দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিল। ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল খামারিরা। খামারিরা রাস্তায় দুধ ঢেলে দিচ্ছেন এমন সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এ সংকট উত্তরণে উদ্ভাবনী, দায়িত্বশীল এবং চমৎকার কয়েকটি পদক্ষেপ নিলেন। তখন কঠোর লকডাউন। এর মধ্যে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ আর পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীকে দিয়ে ডিম, দুধের উপকারিতা এবং ডিম-দুধ খেলে করোনা হয় না এ রকম বার্তা রেকর্ড করালেন। বিভিন্ন টেলিভিশনে এবং পত্রিকায় এটা প্রচার করার ব্যবস্থা করলেন। মন্ত্রণালয় খামারিদের কাছ থেকে ডিম-দুধ কিনে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মাধ্যমে তা বিক্রির উদ্যোগ নিল। খামারিদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করল। করোনায়ও আমাদের যে পুষ্টি ও প্রাণিজ আমিষের অভাব হয়নি, (যেখানে ইউরোপ, আমেরিকায়ও প্রাণিজ আমিষের সংকট হয়েছিল) তা শ ম রেজাউল করিমের অবদান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়নে তিনি আমলাদের ওপর নির্ভর করেননি, নিজ উদ্যোগে করেছেন।

ড. আবদুর রাজ্জাক কৃষিমন্ত্রী। করোনার প্রথম ধাক্কায় বোরো ধান কাটা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ল সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ড. রাজ্জাক ধান কাটার জন্য জাতীয় উদ্যোগ নিলেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী- সবাইকে জাগ্রত করলেন। ধান কাটায় এক জাগরণ তৈরি হলো। যতদূর জানি, তৎকালীন সচিব এ রকম উদ্যোগে সায় দেননি। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী তাঁর নেতৃত্বগুণে একটি অসাধারণ জাগরণের পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন দেশে। তরুণ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। করোনায় দেখিয়ে দিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতা।

এক সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানেই ছিল বিতর্ক। ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে’। ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’। ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনির হত্যাকারী গ্রেফতার হবে’ কিংবা ‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা পিলার ধরে ধাক্কাধাক্কি করেছে এ জন্যই রানা প্লাজা ধসে গেছে’।- এমন সব চিরঞ্জীব কৌতুকময় উক্তি হলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। এক্ষেত্রে আশ্চর্য ব্যতিক্রম বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন বিতর্কহীনভাবে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এ করম অনেকেই আছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। এ জন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যেও মাথা উঁচু করে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু সব অর্জন ম্লান হয়ে যায় কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্য এবং কাজে। কেউ কেউ বলবেন, হাতের পাঁচ আঙুল তো সমান হয় না। মন্ত্রিসভা ভালো-মন্দ মিলিয়েই। সবাই তো আর সমান দক্ষ হয় না। কিন্তু এ রকম চিন্তার সঙ্গে আমি মোটেও একমত হতে পারি না। এক গ্লাস দুধ নষ্ট করতে এক ফোঁটা চুনই যথেষ্ট। একটি ঝকঝকে সফেদ শার্ট পরার অযোগ্য হয়ে পড়ে, একটি কালির দাগে। তেমনি, একজন বা গুটিকয় মন্ত্রী সরকারকে ডোবাতে পারেন। জনগণকে খেপিয়ে তুলতে একটি অপকর্মই যথেষ্ট। বিতর্কিত, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ একজন মন্ত্রীও রাষ্ট্র, দেশ এবং জনগণের জন্য বিপজ্জনক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মন্ত্রিত্ব দিচ্ছেন। একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর জন্য মন্ত্রিত্ব একটা বিরাট সুযোগ। এই সুযোগ যারা কাজে লাগাতে পারেন না, এটা তাঁদের ব্যর্থতা। কিন্তু তাঁদের ব্যর্থতার মূল্য দিতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে, এ দেশের জনগণকে। মন্ত্রী যখন সরকারের বোঝা হন, আপদে পরিণত হন তখন সেই আপদ দ্রুত বিদায় করাই উত্তম। আমরা এমন মন্ত্রী চাই না, একটি সুন্দর অনুষ্ঠান সফল করতে যাকে প্রধান অতিথি করতে আয়োজকরা বিব্রত হন।  আমরা এমন মন্ত্রী চাই, যাকে প্রধান অতিথি না করলে অনুষ্ঠানই অপূর্ণ থেকে যায়।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ই-মেইল : poriprekkhit@yahoo.com

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন