ইনসাইড থট

দৌড়ের ওপর জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ জুলাই, ২০২১


Thumbnail

এবার ঈদুল আজহাটা হলো উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ ও শঙ্কার। ১৫ জুলাই থেকে ঈদের জন্য সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ গরুর হাটে গেল। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যে যেভাবে পারল ছুটে গেল নাড়ির টানে। হাটে, মাঠে, ঘাটে মানুষ গিজগিজ। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মাস্ক পরতেও যেন রাজি নয় বেশির ভাগ মানুষ। আগামী কদিন দেশের করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ আশঙ্কায় হাত-পা ঠান্ড হয়ে আসে। গত আট-১০ দিনের ঘটনা আমাকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানুষ কথা শুনছে না কেন? জনগণকে বলা হচ্ছে ঘর থেকে বেরোলে যেন মাস্ক পরে। কিন্তু একটি বড় অংশ জনগণ মাস্ক পরাটাকেই যেন শাস্তি মনে করছে। স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হচ্ছে দেড় বছর ধরে। কিন্তু আমরা কজন মানছি স্বাস্থ্যবিধি? ঈদের আগে লক্ষ্য করলাম মানুষ কেমন যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাঙালি জাতি কি একটু আইন অমান্যে আগ্রহী? এমন প্রশ্ন করতেই নিজের ভিতর থেকে উত্তর এলো- না। এ বাঙালি জাতি একজন মহামানবের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। জাতির পিতা বলেছেন, দোকানপাট খুলবে না। জনগণ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, অফিস-আদালত বন্ধ। সবকিছু বন্ধ হয়েছে। ’৭১-এর মার্চে জাতির পিতা শেখ মুজিব যা বলেছেন মানুষ জীবন দিয়ে তা করেছে। কেউ বলেনি আমাদের প্রণোদনা লাগবে। কেউ বলেনি আমরা চলব কী করে। বঙ্গবন্ধুর কথায় নিরস্ত্র বাঙালি প্রতিরোধ করেছে। যুদ্ধ করে পরাজিত করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। কাজেই বাঙালি অবাধ্য, তারা কথা শোনে না এমনটি নয়। নব্বই দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে বেশির ভাগ মানুষ। জীবন দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য। সেই মানুষ এখন কথা শুনছে না কেন? আর এ কথাগুলো বলা হচ্ছে মানুষের মঙ্গলের জন্য। জনগণের ভালোর জন্য। কিন্তু মানুষ এসব কথা পাত্তাই দিল না। কেন?

একটু লক্ষ্য করবেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করে কোনো আদেশ দিতেন না। বঙ্গবন্ধু মানুষের পাশে থেকে নির্দেশনা দিতেন। জনগণ বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করত। বঙ্গবন্ধু মানুষকে সম্মানিত করতেন। মর্যাদা দিয়ে কথা বলতেন। ৭ মার্চের ভাষণের কথাই ধরা যাক। ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আজ দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ বঙ্গবন্ধু জনগণকে প্রথমেই ক্ষমতায়ন করলেন। ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন’ কথাটির মধ্য দিয়ে জনগণকে সম্মানিত করলেন। বঙ্গবন্ধু জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেননি। জনগণকে আগে জাগিয়েছেন। জনগণও বুঝেছে, বিশ্বাস করেছে বঙ্গবন্ধু যা বলছেন তা মানুষের জন্যই। বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ এখানে নিয়ে এলাম এজন্য যে সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে যে কোনো আদেশ দিতে হয়। এমনভাবে কোনো নির্দেশনা দিতে হয় যা মানুষ বিশ্বাস করে। এমন ব্যক্তিরই আদেশ বা নির্দেশনা দেওয়া উচিত যাকে মানুষ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ যখন শুরু হলো তখন প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। জনগণকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বললেন। আশ্বস্ত করলেন। সে সময় কিন্তু দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনেছিলেন। গত বছর মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ‘সাধারণ ছুটি’ মানুষ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা যখন শুরু হলো তখন এপ্রিলের ১৪ তারিখ থেকে লকডাউন জারি করা হলো অনেকটা ধমকের কায়দায়। লকডাউনের আগে থেকেই অবশ্য আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের জনগণকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফেলেন। জানুয়ারিতে তিনি করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছেন বলে দাবি করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টিকা ছাড়াই নাকি দেশ থেকে করোনা চলে যাবে। তার কথায় উৎসাহিত হয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে গেল। ওয়াজ মাহফিল, বিয়ের অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে গেল। করোনাও মুচকি হাসল। না, টিকা ছাড়া করোনামুক্ত হয়নি বাংলাদেশ। তরতর করে করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলো। সুর পাল্টালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দায়ী করলেন দেশের জনগণকে। জনগণই করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কথাবার্তার ধরন এমন যে পারলে জনগণকে পিটিয়ে চামড়া তুলে ফেলেন। এরপর আবিভর্‚ত হলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জারি করা হলো একের পর এক ফরমান। এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না। সীমিত আকারে অফিস চলবে, তবে গণপরিবহন চলবে না। তাহলে একটা ছোট চাকুরে, একজন পিয়ন কীভাবে তার কর্মস্থলে যাবেন। গত ঈদে (ঈদুল ফিতর) তো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জগাখিচুড়ির বিস্ময়কর রেকর্ড করল। গণপরিবহন বন্ধ করে দিল। কিন্তু বাঙালি জাতি যদি সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করবে তাহলে তাকে ঠেকানোর সাধ্য কার? জনস্রোতে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখের চিত্র ফুটে উঠল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনগুলো কেউ যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখা যাবে এগুলো শুধু সমন্বয়হীন নয়, অমানবিক। এ যেন মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কেন জাতির সঙ্গে এমন তামাশা করছে? কেন সামরিক ফরমানের কায়দায় প্রজ্ঞাপন জারি করছে? উত্তরটা পেতে একটু গভীরে যেতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বড়কর্তা এখন দ্বিতীয় দফা চুক্তিতে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং ‘যেমন খুশি সাজ’ আমার কাছে একই মনে হয়। জবাবদিহি নেই, ক্যারিয়ারের চিন্তা নেই। কাজেই মন যা চায় তা করা যায়। তা ছাড়া ওই কর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন স্বৈরাচারের আমলে। ‘টিকচিহ্ন দেওয়া ব্যাচ’ বলে খ্যাত ওই ব্যাচকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। উপজেলা চালু করার পর তড়িঘড়ি তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। টিকচিহ্ন দিয়ে যারা বড়কর্তা তারা হয়তো প্রজ্ঞাপনও টিক দিয়েই অনুমোদন করেন। যাক সে প্রসঙ্গ। ১ জুলাই শুরু হলো কঠোর লকডাউন। নিরীহ দরিদ্র মানুষকে গ্রেফতার শুরু হলো। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষকে জরিমানা করা হলো। গাড়িওয়ালা বড়লোকেরা দাঁত কেলিয়ে গাড়িতে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এ যেন দারিদ্র্য নির্মূল কর্মসূচি। একপর্যায়ে এ লকডাউনও অচল হয়ে পড়ল। অবশেষে ঈদের আগে বাধ্য হয়ে আট দিন সবকিছু খুলে দেওয়া হলো। খুলে দেওয়ার পরপরই দেখলাম কর্তাব্যক্তিদের হুঙ্কার, ধমক আর কর্কশ কণ্ঠস্বর। একজন মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) বললেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী থেকে মেয়র হওয়া এক ভাগ্যবান নগরকর্তার মুখে যেন সারাক্ষণ খই ফুটছে। তিনি যেন সুন্দর, নম্র, ভদ্র ভাষায় কথাই বলতে পারেন না। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই মেয়রের প্রধান কাজ জনগণকে ধমক দেওয়া এবং ভয় দেখানো। কখনো তিনি ডেঙ্গু নিয়ে জরিমানার ভয় দেখান, কখনো ধমক দেন। তবে ঈদের আগের দিন এক মন্তব্য করে ওই মেয়র সবাইকে স্তম্ভিত করে দিলেন। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘কোথাও, কারও বাসার সামনে বর্জ্য পড়ে থাকলে তা পরিষ্কার করব না। উল্টো সেই বাসার সামনে ট্রাকে করে বর্জ্য ফেলে দিয়ে আসব।’ একজন জনপ্রতিনিধি এ ধরনের উসকানিমূলক, দায়িত্বহীন মন্তব্য করেন কীভাবে। তার এ ধমক ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আল কোরআনের সুরা লুকমানের একটি আয়াত মনে পড়ে। সুরা লুকমানের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বপেক্ষা অপ্রীতিকর।’

ঈদের সময় দেখলাম সর্বত্র যেমন যানজট, তেমনি ক্ষমতাবানদের শব্দজট। একেকজন যেন শব্দবোমা ফোটাচ্ছেন জনগণের উদ্দেশে। প্রশ্ন হলো, আমাদের কর্তাব্যক্তিরা কি জনগণের শাসক না সেবক। শাসক হলে জেল-জরিমানা, ভয়ভীতি ইত্যাদি দেখাতেই পারেন। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি শাসক হওয়া সম্ভব? গণতান্ত্রিক সরকার হলো জনগণের সেবক। সরকারের প্রধান কাজ জনগণের জীবনযাত্রা স্বস্তিকর, স্বাভাবিক ও সুন্দর রাখা। সেবকরা জনগণকে আস্থায় নিয়ে, তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে একেকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। আমাদের দেশে সরকারের কিছু ব্যক্তির মধ্যে সেবক ভাবটা নেই। তাদের মধ্যে একটা কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এখন বেশ দৃশ্যমান। মনে হয় একটি চাবুক নিয়ে ঘুরছেন। সুযোগ পেলেই জনগণকে চাবকিয়ে দেবেন। কেন এমনটা? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দুটি কারণ সামনে এলো। প্রথম কারণটা হলো দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা। আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছরের বেশি সরকারে। এ সময় সরকার বিনা চ্যালেঞ্জে দেশ চালাচ্ছে। বিরোধী দল না আছে রাজপথে না সংসদে। করোনার আগে ছোটখাটো যেসব চ্যালেঞ্জ এসেছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী একাই সামলেছেন। মন্ত্রী, কর্তাব্যক্তিরা ভাবনাহীন, কর্মহীন। এমন অনেক মন্ত্রী আছেন তারা জানেনই না দেশে কী হচ্ছে। ব্যাপারটা আমার মনে হয় এক ব্যক্তির উপার্জনের সংসারের মতো। যিনি উপার্জন করেন তিনি সারা দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করেন। তার ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক খোলে। কিছুটা হাওয়া খেতে যায় আর কাজের লোকজনকে কথায় কথায় ধমকায়। এরা চিন্তাও করে না সংসার কীভাবে চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থাও অনেকটা তেমনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা সব বিপদ সামলান। আর মন্ত্রী এবং পদস্থ কর্তারা হাওয়া খেয়ে ঘুরে বেড়ান। তাদের যেহেতু কাজ নেই তাই দেশের জনগণের ওপর মাঝেমধ্যে ক্ষমতার দাপট দেখান। আর টুকটাক দুর্নীতিতে জড়ান। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন মন্ত্রী ও চাটুকার আমলারা মনে করেন একটু ক্ষমতা না দেখালে কীসের মন্ত্রী, কীসের সচিব। ঈদের হুড়োহুড়ির মধ্যে দেখলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে নসিহত করেছেন। এটাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফরমানও বলা যেতে পারে। ওই বিজ্ঞাপনে জনগণকে কী কী করতে হবে তা আদেশ করেছেন (অনুরোধ নয়)। মন্ত্রীর ছবিসংবলিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পশুর হাটে কী কী করতে হবে।

কদিন আগেই (১২ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতিকে জানিয়ে দিলেন ‘করোনা ঠেকানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়’। তাই যদি সত্যি হবে তাহলে ‘কোরবানির পশুর হাটে সতর্কতা বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি মহোদয়ের আহ্‌বান’সংবলিত বিজ্ঞাপনটি কেন? এটা কি ‘মন্ত্রী মহোদয়ের’ ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য? স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় এবং টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে হাজির হন। কদিন আগে তার শালীনতাহানি-সংক্রান্ত এক বিজ্ঞাপনও ছাপা হয়েছিল। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। যখন একজন মানুষ কর্মহীন থাকেন তখন তিনি কিছু একটা করে দেখাতে চান। করে দেখানোর সহজ উপায় হলো কাউকে গালি দেওয়া, ধমক দেওয়া, ভয় দেখানো। এটা দীর্ঘদিন আলস্যজনিত রোগের লক্ষণ। কিছু মন্ত্রী এবং অধিকাংশ আমলার মধ্যে এটি দৃশ্যমান। কদিন আগে এক সচিবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি একটি জেলার দায়িত্বে। সংসদে জেলার দায়িত্ব সচিবদের দেওয়া নিয়ে কিছুদিন আগে হুলুস্থুল হলো। এরপর আমি ওই আমলাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার দায়িত্ব যে জেলায় সেখানে কি যান? উনি উত্তরে বললেন ‘এ ডিজিটাল যুগে কি যাওয়া লাগে! টেলিফোনেই খবর নিই। ডিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করি।’ আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘টেলিফোনে বলা নির্দেশ ডিসি মানেন?’ এ প্রশ্নে যেন আমলা খুব খুশি হলেন। দুলে উঠলেন চেয়ারে। বললেন ‘শোনে মানে! দৌড়ের ওপর থাকে।’ সচিব ডিসিকে দৌড়ের ওপর রাখেন। ডিসি অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘দৌড়ের ওপর রাখেন’। আর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনগণকে দৌড়ের ওপর রাখেন। আমলাতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির সবচেয়ে মূল্যবান ওষুধ হলো ‘ভয় ছড়িয়ে দাও’। ভয় ছড়িয়ে জয় কর- এ সংস্কৃতি এখন জনগণের ওপর প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। আর এজন্যই বলা হয় ‘লকডাউন না মানলে কঠোর শাস্তি’। ‘হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর শাস্তি।’ ইত্যাদি বাক্যে রীতিমতো দূষণ সৃষ্টি হয়েছে।

ধমক ও ভীতি সংস্কৃতির বিস্তারের দ্বিতীয় কারণ পেলাম বন্ধু নঈম নিজামের বাংলাদেশ প্রতিদিনের গত রবিবারের (১৮ জুলাই) লেখায়। ‘আমলাদের যুদ্ধটা কি রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে লেখায় নঈম লিখেছেন, ‘সর্বনাশটা হয়েছে ২০১৮ সালের ভোটের কারণে। লাউ ডাল সব এক হয়ে গেছে।’ এ দুটি বাক্য আমার চিন্তার জট খুলে দিল। ভোটের জন্য একজন প্রার্থীকে জনগণের কাছে যেতে হয়। তাকে সম্মানিত করতে হয়। তার সঙ্গে নরম সুরে কথা বলতে হয়। ভোটারদের সমস্যাগুলো শুনতে হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হয়। মাথায় সব সময় ভোটারদের মন রক্ষার চিন্তা থাকে। ভোটাররা একটু অসন্তুষ্ট হলেই সর্বনাশ। ২০১৮-এর নির্বাচনের পর আর এসবের বালাই নেই। জনগণ ভোট দিল কি দিল না সে খবর নেওয়ার দরকার নেই। কেন্দ্রে কেউ গেল কি গেল না তা-ও গুরুত্বপূর্ণ নয়। মনোনয়ন পেলেই বিজয় নিশ্চিত। এ বিজয়ের জন্য জনগণের কাছে কোনো কৃতজ্ঞতা নেই, দায়বদ্ধতাও নেই। কাজেই জনগণকে দৌড়ের ওপর রাখ। ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে যে ভোটগুলো হয়েছে তাতে জনগণ দর্শকমাত্র। ফলে ভোটবিহীন জনপ্রতিনিধি আর যোগ্যতাবিহীন আমলাদের এক যৌথ কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে। আগের লকডাউনের বিজ্ঞাপনের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। গতকাল (২৩ জুলাই) যে লকডাউন শুরু হয়েছে তা নিয়ে একটি কথা শুধু বলতে চাই। ২১ জুলাই ঈদ হলো। অনেক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেল ঈদ করতে। তাদের যদি ঢাকায় ফিরতে হয় তাহলে ২২ জুলাইর মধ্যেই ফিরতে হয়েছে। তারা কি খুশি হয়ে ফিরছেন? এ সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন ফেরার পথে তাদের কি শাপ-শাপান্ত করেনি ভুক্তভোগী মানুষ? জনগণের ভোট পাওয়ার বিবেচনা মাথায় থাকলে এ রকম প্রজ্ঞাপন কোনো দিনই দেওয়া যেত না। ঈদের কেনাকাটার জন্য যদি আট দিন লকডাউন শিথিল করা যায় তাহলে ঢাকা বা কর্মস্থলে ফেরার জন্য শৈথিল্যের মেয়াদ এক দিন বা দুই দিন বাড়ালে কি মহাভারত অশুদ্ধ হতো। এসব আমলা করছেন জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন থাকার কারণে। জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আমলাদের হাঁকডাক দেখে বিনা ভোটে কিংবা ৪-৫ শতাংশ ভোট পেয়ে (তা-ও কি সঠিক?) জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চুপ থাকেন কীভাবে, তারাও জনগণকে ক্ষমতা দেখানোর জন্য হুঁশিয়ার, সাবধান বলছেন। কিন্তু বাঙালি অদ্ভুত জাতি। এ জাতিকে আদর করে ভালোবেসে একটা অনুরোধ করলে সে অনুরোধ রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে দেয়। আবার এ জাতিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি নির্দেশ দিলে তা অমান্য করার জন্যও রক্ত দেয়। জনগণকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মাস্ক পরা নিয়ে ঝামেলা শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো দেশগুলো এ সমস্যা মোকাবিলা করছে। জার্মানিতে কদিন আগেও বিভিন্ন স্থানে ভলান্টিয়াররা মাস্কহীন মানুষকে একটা ফুল দিয়ে মাস্কটা পরিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে একটা সরকারি বিজ্ঞাপন দেখলাম, একজন দোকানদার ক্রেতাকে মাস্ক না পরার জন্য ধমক দিচ্ছেন। ধমক দিয়ে, জরিমানা করে মাস্ক পরানো যাবে না। ভয় দেখিয়ে লকডাউনও কার্যকর করা যাবে না। এসব কার্যকর করতে হলে জনগণের হৃদস্পন্দন শুনতে হবে। জনগণকে আপন করে নিতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনগণকে দৌড়ের ওপর রেখে এ সমস্যার সমাধান হবে না। বাস্তবতা হলো, ১৪ এপ্রিল থেকে নানা প্রজ্ঞাপনে আর হুমিক-ধমকিতে জনগণ দৌড়ের ওপর। জনভোগান্তি আর বাড়াবেন না। বিএনপির যাত্রাবাড়ী এলাকার এক নেতা ২০০১-০৬ সালে জনগণকে দৌড়ের ওপর রাখত। কথায় কথায় জমি দখল, মামলা, জেল, অত্যাচার, ধমক, ভয় দেখানোই ছিল তার কাজ। প্রকাশ্যে ওই নেতা বলতেন ‘জনগণকে টাইটে রাখছি’। কিন্তু একদিন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই নেতাকেই ধাওয়া করল। এবার তিনিই দৌড়ে পালালেন। এরপর তার নামের আগেই ‘দৌড়’ শব্দটা যুক্ত হলো। ঘটনাটি সবাই জানে। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কজন বোঝে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
ইমেইল : poriprekkhit@yahoo.com
সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন