ইনসাইড থট

আমলাতন্ত্রের দৌরাত্মে কোণঠাসা দেশ ও জাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২১


Thumbnail

বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধান এদেশের জনগণকে দেশের মালিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। অনুচ্ছেদ ২১ এর (১) বলা আছে- সকল সময়ে জনগণের সেবা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। গণতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী সরকার ও তার প্রশাসন দেশের জনগণের সেবার উদ্দেশ্যেই তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবে। মানুষের জান ও মালের ওপর কর্তৃত্ব করা নয়, বরং জনসাধারণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করাই সরকার ও তার প্রশাসনের কাজ। কিন্তু বর্তমান অভিজ্ঞতার চিত্র পুরো উল্টো। মালিক আজ নেমে গেছে কর্মচারী-শ্রমিকের কাতারে। উপনিবেশিক রাজত্বের মতো যেন কর্মচারী বনে গেছে যেন দেশের মালিক। জনসাধারণের ওপর কর্তৃত্বপরায়ণ প্রভুর মতোই ছড়ি ঘোরাচ্ছে তারা সব সময়। জনগণ শুধু নয়, খোদ সরকারও অনেকটা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে তাদের কাছে।

বলছি, দেশে চলমান আমলাতন্ত্রের আগ্রাসী অবস্থার কথা। আমলাদের সীমাহীন দৌরাত্মে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে যেন সবাই। সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ে আমলাতন্ত্রের দাপটে চারদিকে তৈরি হয়েছে চরম হতাশা। শোনা যায়, অনেক সচিবই মন্ত্রীদের গুরুত্ব দেন না (!)। সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের মতো করে। এমন একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন তারা যে, মন্ত্রী যাবেন, মন্ত্রী আসবেন, কিন্তু তাদের ক্ষমতার কোনো কমতি হবে না তারা চিরস্থায়ী জমিদার সরকারী কর্মচারী। বরং দিনকে দিন পদ-পদবী আরো বাড়বে তাদের। বাড়বে আরো কর্তৃত্ব। উপেক্ষিত মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধি দুঃখ করেন রাজনৈতিক মহলে। সচিবদের দৌরাত্মের কাছে যেন এক প্রকার অসহায় তারা। তাদের ক্ষমতা শুধুমাত্র সরকারী কর্মচারীদের কাছে তদবির করার মধ্যে সীমিত।

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের মতো মাঠ পর্যায়েও কর্মরত অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের তোয়াক্কা করেন না। সরকারের ভেতর তারা যেন সেজে বসেছে আরেক সরকার। তাদের ইচ্ছে ও অনুগ্রহ ছাড়া যেন কিছুই হয় না। জনপ্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে কেউ কেউ অতি উৎসাহ নিয়ে যোগ দেন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে। অনেক কর্মকর্তাই নিজের অতীত রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রশাসনিক ক্ষমতার সাথে সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রদর্শন করে নিজের কর্তৃত্ব আরো বাড়িয়ে নিতে চান। তারা আচরণে, কার্যক্রমে চলেন রাজনীতিবিদদের মতো করে। আমলাদের সীমাহীন ক্ষমতা প্রদর্শন করার কারণে মন্ত্রী, এমপি, সিটি মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা অনেক সময় নিজের কর্মীদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। অথচ এদেশের সংবিধান সেই ক্ষমতা বা অধিকার কোনটাই দেয়নি আমলাদের।

বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য (২) দফায় বলা হয়েছে: ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমলারা জনগণের সেবা করার পরিবর্তে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় মরিয়া সব সময়। নিজেদেরকে তারা সব সময়ই সাধারণ মানুষের তুলনায় সুপেরিয়র মনে করে। সাধারণ জনগণকে বাধ্য করে তাদেরকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে। অথচ দেশের মালিক সাধারণ এ জনগণের পকেটের টাকাতেই তাদের বেতন হয়, স্ত্রীর শাড়ি-গয়না হয়, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ হয়। কর্মচারী হিসেবে দেশের মালিক জনগণকে যেখানে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করার কথা তাদের, সেখানে নিজেরাই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ববলে স্যার সেজে বসে থাকে। শুধু বসেই থাকে না, চারপাশ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাপকভাবে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে একজন ইউএনও’র কার্যক্রমে দেশবাসী হতবাক হয়েছে। মাহামরি করোনার এ চলমান সংকটকালে অভাবে পড়ে ফরিদ আহমেদ নামের একজন লোক সরকারি তথ্যসেবা নাম্বার ৩৩৩ এ কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন। ইউএনও সাহেব খাদ্য নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছেও ছিল। কিন্তু লোকমুখে উক্ত ব্যক্তির একটি বাড়ি আছে, এমন কথা শোনার সাথে সাথে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন ইউএনও সাহেব। খাদ্য সহায়তা তো তাকে করলেনই না, উল্টো ১০০ জনকে তার খাদ্য সহায়তা দিতে হবে মর্মে জরিমানা ঘোষণা করলেন কোনোরকম যাচাই বাছাই ছাড়াই! খাদ্যের অভাবে পড়া লোকটি বাধ্য হয়ে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে সুদের ওপর টাকা তুলে ষাট হাজার টাকা খরচ করে চোখের পানি মুছতে মুছতে সেই জরিমানা পরিশোধ করলেন। হ্যাঁ, বাড়ি তার একটি রয়েছে বটে। তবে সে বাড়ির মালিক তিনি একা নন। ভাইবোনদের সাথে এজমালি মালিকানা রয়েছে তার বাড়িটির ওপর। মাত্র তিনটি কক্ষের ওপর মালিকানা তার। তিনি একটি হোসিয়ারী ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে চোখ খারাপ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগের কারণে এখন ঠিকমত কাজ করতে পারেন না। এখন প্রায় মাসে ৫ হাজার টাকা আয় করেন। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলমান করোনা সংকটের কারণে ব্যবসাপত্র বন্ধ থাকা কাজ হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বসেছিলেন তিনি। নিতান্ত অনন্যোপায় হয়েই সরকারি সহায়তা নম্বরে কল দিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার মতো এত সময় ও ধৈর্য ইউএনও মহোদয়ের কোথায়! বাড়িওয়ালা শুনেই তিনি জরিমানা করে বসলেন! অথচ এভাবে ১০০ জনকে খাদ্য বিতরণের নির্দেশ দেওয়ার মতো অধিকার দেশের আইন তাকে দেয়ই না। বিষয়টা নিয়ে সারা দেশে যখন নানারকম আলোচনা সমালোচনার জন্ম হলো, তখন করা হলো একটি তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসনের করা সেই কমিটি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরাকে দায়মুক্তি দিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আইয়ুব আলীকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিলো। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে কাকে বলে আর। অন্যায় জরিমানাটা করলেন ইউএনও সাহেব আর এর জন্য দায়ী করা হলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্যকে!তাকে অভিযুক্ত করা হলো, তিনি নাকি সময়মতো প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেননি। কী অদ্ভুত এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন।

নারায়ণগঞ্জের এ ঘটনা শুধু ছোট্ট একটি উদাহরণ। সারা দেশে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাঠ প্রশাসনের সামনে অসহায়। কী মেম্বার, কী চেয়ারম্যান, কী এমপি। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা কাউকেই সমীহ করে না। শুধু সচিব নয়, যুগ্ম সচিব, মুখ্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব, কারো প্রতাপের সমানেই যেন দাঁড়ানো যায় না। তাদের ভাবখানা এমন যেন, জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিবিদরা নয়, সরকারে টিকিয়ে রেখেছে তারাই। রাজনীতিবিদদের চেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই যেন সর্বেসর্বা।প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাথে সচিবালয়ে ঘটা ঘটনাটা সাম্প্রতিক সময়ে সচিবদের দৌরাত্মের অন্যতম বাজে উদাহরণ। নিয়মিত সংবাদ অনুসন্ধান করতে গেলে নজিরবিহীনভাবে সচিবালয়ে ৬ ঘন্টাব্যাপী রোজিনাকে আটকে রাখেন একজন অতিরিক্ত সচিব সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। তার সাথে কী দুর্ব্যবহার যে তারা করেছেন সে সময়ে, তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। একজন নারী কর্মকর্তাকে দেখা গেছে, তিনি টুটি চেপে ধরছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের। শুধু সাংবাদিক রোজিনার টুটি নয়, সেদিন তিনি যেন গোটা দেশের সব গণমাধ্যমের, সব মানুষের টুটিই চেপে ধরেছিলেন আদতে। শুধু টুটি চেপে ধরে তাকে নির্যাতন করেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা। শেষপর্যন্ত অফিশিয়াল সিক্রেট এ্যাক্ট নামের এক ব্রিটিশ আইনে যারা শুধুমাত্র সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেই আইনে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাকে। অথচ ব্রিটিশদের বানানো এ আইন খোদ ব্রিটিশরাও বাতিল করেছে বহু আগেই। কিন্তু এদেশের আমলারা সেই আইন ইতিহাসের আস্তাকূড় থেকে টেনে তুলে এনে তার জালেই আটকে দিলেন সাংবাদিক রোজিনাকে। কী এমন তথ্য নিয়ে পেয়েছিলেন রোজিনা! যে তথ্যের জন্য এমন মারমুখী হয়ে উঠলো আমলারা? হাজার রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায় জনমনে। কিন্তু এসব প্রশ্নের কে চাইবে কার কাছে। প্রজাতন্ত্রের দেশ হয়ে উঠেছে আজ আমলাতন্ত্রের দেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঐ অতিরিক্ত সচিব যিনি নাটের গুরু যার কানাডার ৩ টি বাড়ি, লন্ডনে ১ টি, ঢাকায় ৪ টি ফ্লাট রয়েছে আর রয়েছে ৮০ কোটি টাকার সঞ্চয়, কিন্তু তার কোনো শাস্তি হয়নি। শুধু বদলি হয়েছেন মাত্র অন্য মন্ত্রণালয়কে ধ্বংস করার জন্যে কোটি টাকা লুটপাটের জন্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের ড্রাইভারের শাস্তি হয় তবে তার কর্তা ব্যক্তি যেন তুলসী পাতা।

আমলাতন্ত্র এখানে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, আমলাদের ছাড়া না হয় কোনো সিদ্ধান্ত, না হয় কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কমিটি। করোনার এ সংকটকালে মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে জেলা পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে সচিবদের নিয়ে। সচিবরাই যদি সব করবে, তবে মন্ত্রী, এমপি বা জনপ্রতিনিধিরা রয়েছে কী জন্য? প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এত ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দিলে জনপ্রতিনিধিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ থেকে। লোকজন যখন বুঝবে, এমপি মন্ত্রীর আসলে কোনো কাজ নেই। কাজকর্ম, ক্ষমতা যা আছে, তা সব ওই প্রশাসনিক ব্যক্তিদের হাতে। তখন তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধিদের কাছে ছুটে যাওয়ার অভ্যাস বাদ দেবে। আবার আমলা-প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছেও ভিড়তে পারবে না সহজে। উভয়দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। মধ্য থেকে আরো ফুলেফেঁপে উঠবে আমলাতন্ত্র। আর জনগণ সরকারের প্রতি আস্তা হারাবে জনরোষ পুনরুজ্জীবিত হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সব সময়ই আমলাতন্ত্রের ঘোর বিরোধী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখো, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। যে লোককে দেখবে, তার চেহারাটা তোমার বাবার মত, তোমার ভাইয়ের মতো। ওরই পরিশ্রমের পয়সায় তুমি মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ ওরা নিজেরা কামাই করে খায়।’ বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে দেশের মালিক মনে করতেন। আর আমলাদের মনে করতেন মালিকদের সেবার উদ্দেশ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী। কর্মচারীর কাজ সব সময় সেবা দিয়ে মালিককে সন্তুষ্ট রাখা।বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশিক দমনমুলক আইন-কানুন পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের রূপ দিতে। আমলাতন্ত্রের মূল দর্শন পরিবর্তন করে, স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জনমুখী আমলাতন্ত্র তৈরি করতে, যার মূল চেতনাই হবে জনগণের সেবা করা। দমন বা শাসন করা নয়। সেই লক্ষ্যে, বঙ্গবন্ধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের গুরুত্ব কম দিয়ে জনসম্পৃক্ত মানুষদেরকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন, যাতে সাধারণ মানুষ সরকারের সেবা পায়। বঙ্গবন্ধু তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য- তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা কমিশন’ গঠন করেছিলেন। এ কমিশনই বাংলাদেশের প্রথম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সেই কমিটিতে আমলাদের আধিক্য দেখা যায়নি। ছিলেন চার বা তারও অধিক অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধু অনেক রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষককে সে সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যেমন অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ডা: টি রহমানকে স্বাস্থ্য সচিবের দায়িত্ব দেন। ১৯৭২ সালে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয় সেগুলো পরিচালনা করার জন্যে অনেক ব্যবসায়ী ও দলীয় কর্মীকে নিয়োজিত করেছিলেন - যারা ইতোপূর্বে কখনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন না কিন্তু, জনগণের কাছের মানুষ ছিলেন। অথচ আজকের কর্মচারীরা এমনভাবে মালিকের আসনে চেপে বসেছে যে, চারপাশের সবাই রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তাদের দৌরাত্মের কাছে। বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় ” জেলা গভর্নর” নিয়োগ করেন যার অধিকাংশই ছিলেন জন প্রতিনিধি। বড় বড় দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন জনপ্রতিনিধিদের। যেমন লন্ডনে এডভোকেট সৈয়দ সুলতান, ওয়াশিংটন জনপ্রতিনিধি এম আর সিদ্দিকী, নয়াদিল্লীতে অধ্যাপক ড. এ আর মল্লিক প্রমুখ।

করোনা মহামারির এ সময়ে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন ডাক্তারগণ। পরিবার-পরিজন, ছেলে-মেয়ে সবার কথা ভুলে দিন রাত মানুষের সেবায় পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। এমন একটি সময়ে মুভমেন্ট পাশ থাকার পরও একজন ডাক্তারকে পথে যেভাবে হেনস্তা করলেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব, যেভাবে তার পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে বলেন, তা কোনোভাবেই আইনের আওতার মধ্যে পড়ে না। সিনিয়র উক্ত ডাক্তার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে পরিচয় দেওয়ার পরও প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তার সাথে যেভাবে আর্গুমেন্ট করলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তা তাদের ক্ষমতার দৌরাত্ম্যকে আরো একবার স্পষ্ট করে তোলে। কোন ক্ষমতার বলে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা? তাকে হেয় করার জন্যে রাজাকারের ছেলে হয়েও জোর গলায় দাবী করেন তিনিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার জন্যে তার গুরুতর শাস্তি হওয়া উচিত। তবে তার শাস্তি হয়নি, তিনি শুধুমাত্র বর্তমান পদ থেকে বদলি হয়েছেন।

সরকার যখন লড়াই করছে করোনা মহামারি মোকাবেলায়, ডাক্তার ও অন্যান্য পেশাজীবীগণ আপ্রাণ চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি মোকাবেলায়, তখনও থেমে নেই স্বাস্থ্যখাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও দৌরাত্ম্য। আমলাতন্ত্রের মারপ্যাঁচে স্থবির হয়ে পড়েছে আজ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আমলাদের অতিরিক্ত খবরদারির কারণে দেশের করোনা চিকিৎসা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এমনকি জনপ্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাপিয়ে দেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে করোনা চিকিৎসাও ব্যাহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটিসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল কমিটিকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়ায় আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে বারবার। এ কাজগুলো করেছে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা। তারা এতই দাপুটে যে মন্ত্রীকেও পাশ কাটিয়ে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যাতে মন্ত্রীকে হতে হয়েছে বিব্রত। বলতে হয়েছে তিনি এসব সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এমন বক্তব্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিডিয়াতে বারবার দিয়েছেন। মন্ত্রী-সচিব দ্বন্দ্বে স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সমন্বয়হীনতা এখন গোটা স্বাস্থ্যখাত জুড়ে। সচিবদের দৌরাত্বে এ সমন্বয়হীনতা যেন আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল নাম বাদ পড়েছে যা কোনো মন্ত্রী মিনিস্টার জানেন না, বাদ দিয়েছেন আমলাকুল।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো এসব আমলা-প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য যতই বাড়ুক, কিছুই হয় না তাদের। সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান তারা। নারায়ণগঞ্জের জরুরি খাদ্য সহায়তা কেলেঙ্কারিতে ইউএনওকে বাদ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রনিধিকে অভিযুক্ত করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ দূর্নীতির দায়ে মামলা হয় ঠিকাদারের নামে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলারা ছাড়া কারো বাপেরও সাধ্য নেই এসব প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি করে। প্রকল্প পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া কারো পক্ষে কোনো প্রকল্প থেকে একটি সুতোও অন্যায়ভাবে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। যদি নেয়ও, তা দেখার দায়িত্ব কিন্তু ওইসব কর্মকর্তাদের ওপরই বর্তায়। যেকোনো প্রকল্পে দুর্নীতির দায় প্রকল্পের পরিচালক কখনোই এড়াতে পারেন না। কিন্তু দেখা যায়, যখনই এমন কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা সামনে আসে, তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আড়াল কেউ তৃতীয়পক্ষ বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল পক্ষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এর দায়ভার।

করোনা ভাইরাসের এ মহামারির সময়ে দেশের জনগণের পাশে সবচেয়ে বেশি থাকার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিগণের। কিন্তু দেখা গেল, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাহায্য প্রদান কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত না করে জেলা পর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঠিক কীসের ভিত্তিতে এ দায়িত্ব পেলেন সচিবগণ? না তারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, না আছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের প্রকৃত অবস্থা কী সরকারি অফিসে বসে থেকে সেটাও জানার কথা নয় তাদের। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদের হাতে ন্যস্ত করায় সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা প্রাপ্তী থেকে। এর ফলে জনপ্রতিনিধিরা অসহায় জনগণকে ঠিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেননি। সরকারের বরাদ্দ ঠিকই হয়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রকৃত অসহায়দের কাছে পৌঁছায়নি সহায়তা।

সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা, নানা মহতী উদ্যোগ সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে আমলাতন্ত্রের এ লাগামহীন ঘোড়া। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম মহতী উদ্যোগের একটি হলো গৃহহীনদের জন্যে একটি ঘর প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির ফলে পুরো উদ্যোগটিই সমালোচনার মুখে পড়েছে। জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ প্রকল্পে দায়িত্ব দেওয়ায় নজির বিহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে দুঃস্থ মানুষদের আশ্রয়ের নিমিত্তে নির্মাণ করা এসব ঘরে। বহু এলাকায় ঘর নির্মাণের পরপরই ধ্বসে পড়েছে, ভেঙে পড়েছে বহু ঘর। গৃহহীনদের ঘর প্রদানের এ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অথচ এর জন্য কখনো কোনো আমলা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। সরকারের মহতী উদ্যোগের সুফল খেয়ে যাচ্ছে আমলাতন্ত্রের বিষপিঁপড়ারা!

আমলা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অসংখ্য ফিরিস্তি হাজির করা যায়। বলতে গেলে আমলাদের অধীনে ছেড়ে দেওয়া সকল প্রকল্পই যেন একেকটি দুর্নীতি ও লুটপাটের আখড়া। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশে। ইউরোপে একেবারে নতুন চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের খরচ পড়ে কিলোমিটার প্রতি ২৮ কোটি টাকা। চীনে কিলোমিটার প্রতি খরচ পড়ে মাত্র ১৩ কোটি টাকা, ভারতে ১০ কোটি টাকা! বাংলাদেশে একইরকম একটা সড়ক নির্মাণ করতে খরচ করা হয় কিলোমিটার প্রতি ১০৮ কোটি টাকা! ইউরোপের চেয়ে প্রায় ৪গুণ বেশি। চীনের চেয়ে ৮গুণ বেশি। ভারতের চেয়ে ১১গুণ বেশি। পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে বেশি খরচ করে রাস্তা বানালে কী হবে, এসব রাস্তার স্থায়িত্ব যে সব দেশের চেয়ে কম, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক দিকে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই অন্যদিক থেকে ভাঙা শুরু হয় এসব রাস্তা! সড়ক নির্মাণের প্রতিটি প্রকল্পে কী পরিমাণ অর্থ নয়ছয় হয়, তা বিশ্বের অপরাপর দেশের নির্মাণ ব্যয়ের সাধারণ চিত্রের সাথে তুলনা করলে সহজেই বোঝা যায়। বছরের পর বছর ধরে একই কায়দায় সড়ক নির্মাণের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ আর তাদের পাপের ফল ভোগ করেন জনপ্রনিধিগণ। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের কারণে জনগণের মুখোমুখি হতে পারে না তারা।

কেন আমলারা থাকেন সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে, কেন কোনোভাবেই তাদেরকে অভিযুক্ত করা যায় না, বা করা হয় না? নানা সময়ে এক স্বাস্থ্যখাতের যেসব দুর্নীতি অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছে, তার কোনটির জন্যই কখনো কোনো আমলা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে দেখা যায়নি। সব মন্ত্রণালয়, সব অধিদপ্তর গুলোর অবস্থাও স্বাস্থ্যখাতের মতোই। সব কলকাঠি নাড়েন আমলারা, অথচ তারা থাকেন সব সময় যেন তুলসী গাছের তলায়! পুতঃপবিত্র ভাব ধরে বসে থাকলেও আদতে তারা একেকজন তুলসী তলার ভূত!

কী শিক্ষক, কী ডাক্তার, কী উকিল, কী মোক্তার, কী সাধারণ মানুষ সবার উপরেই পড়েছে আমলাতন্ত্রের ভূতের আছর। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যেন সব দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে বসেছেন।প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একজন ডাক্তারকে হেনস্তা করেন ম্যাজিস্ট্রেট! একবারও তার কর্তৃত্ব ও সীমার কথাটা মাথায় আসে না। একবারও তারা ভাবেন না, দেশের আইন তাদেরকে আদতেই এমন ব্যবহার করার অধিকার দেয় কি না। করোনার এ সংকটকালে কখনো ডাক্তারদেরকে ভয় দেখিয়ে নোটিশ দেয়া, কখনো টেলিভিশন মনিটরিংয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি করা, কখনো বয়স্ক নাগরিকদের কান ধরে উঠবস করানো, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পুকুর কেটে সেই পুকুর নিজের নামে করে নেওয়া, আবার এই বিষয়ে প্রশ্ন করার দায়ে সাংবাদিককে ক্রসফায়ার দিতে চাওয়ার সাথে সাথে তথ্যমন্ত্রণালয়ের DSA আইনে নামে প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে রাখা কিছুই বাদ নেই এখানে।

আমলাতন্ত্রের যে দৌরাত্ম চলছে দেশে, যেভাবে তারা দেশের সব কাজের কাজি হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপরে, এমনকি রাজনীতিবিদ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও বাদ দিচ্ছে না, দ্রুতই তাদের লাগাম টানতে না পারলে এ দেশের কপালে দুর্ভোগ আছে। সরকার যতই জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করুক, যত বাজেটই বরাদ্দ দিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে, আমলাতন্ত্রের কালো ছায়া সরাতে না পারলে কোনো সুবিধাই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না। ইঁদুর যেমন ঘরের মেঝের মাটি কেটে বাইরে নিয়ে ফেলে, দুর্নীতিবাজ আমলারাও তাই। ঘাড়ের ওপর বসে থেকে ভেতরটা শুষে খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত কিচ্ছু টের পাওয়া যায় না।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দেশ পরিচালনার জন্য সরকার ব্যবস্থার যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন আছে আমলাদেরও। কিন্তু কোনভাবেই প্রশাসনিক কাজের বাইরে অতিরিক্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা তাদের দেওয়া চলবে না। জনগণের সেবা করাই হবে তাদের একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য। বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও জনগণের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেখার জন্য দায়িত্ব পালন করবে সরকার ও তার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ কাজে তাদের দাপ্তরিক সহায়তা প্রদান করবে কেবল। রাষ্ট্রের অধীনে শ্রমিক হিসেবে অর্পিত দায়িত্বগুলোই কেবল পালন করবে তারা। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আগ্রাসী আমলাতন্ত্রের রাশ টেনে ধরার বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন