ইনসাইড থট

ভোট ছাড়া নির্বাচন, বেচারা জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০৪ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১


Thumbnail

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত একজন গুণী মানুষ। প্রথিতযশা চিকিৎসক। দুই দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। গরিবের জন্য অন্তঃপ্রাণ। বহু দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা বিনামূল্যে করেছেন। রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। ওয়ান-ইলেভেনের কঠিন সময়ে শেখ হাসিনার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। যখন কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলো তখন অনেকের মতো আমিও উল্লসিত হয়েছি। দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক চক্র ভাঙতে প্রাণ গোপাল দত্তের মতো মানুষের রাজনীতিতে আসা জরুরি। তার চেয়েও জরুরি, মনোনয়ন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় তাদের সুযোগ করে দেওয়া যাতে তারা রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারেন। কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয়েছিল সেখানকার সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুর কারণে। যেহেতু বিএনপি এখন কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করছে না তাই এ শূন্য আসনে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ প্রয়াত আলী আশরাফের আসনে তাঁর ছেলে মুনতাকিম আশরাফও মনোনয়ন-প্রত্যাশী ছিলেন। একজন জাতীয়ভাবে পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি মনোনয়ন পাবেন, না উত্তরাধিকারের রাজনীতি জয়ী হবে- এ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল সব মহলে। আওয়ামী লীগ এবং মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এ মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ রাখেন। ১১ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘নেতা-মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্যদের সন্তানরা রাজনীতিতে থাকতে চাইলে স্ট্রাগল করে আসুক।’ তাই প্রাণ গোপাল দত্তের মনোনয়ন লাভ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ ঘটনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী উত্তরাধিকারের রাজনীতি হটিয়ে যোগ্যতার রাজনীতি সামনে আনলেন। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমনিতেই এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। গত কয়েক বছর তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বেশ কাজ করেছেন। জনসংযোগ করেছেন, কাজেই খুব বড় অঘটন না ঘটলে এ উপনির্বাচনে তাঁর বিজয় ছিল মোটামুটি নিশ্চিত। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় দেখা গেল চারজন জমা দিয়েছেন। বাছাইয়ে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। কিছুদিন ধরেই সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনীহা দেখা যাচ্ছে। ভোটাররা ভোট দিতে যান না। এমনকি দলের কর্মী-সমর্থকরাও কেন্দ্র থেকে দূরে থাকেন। জনগণের এ উদাসীনতার কারণ নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু প্রাণ গোপাল দত্তের মতো সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা যখন নির্বাচনে দাঁড়ান তখন ভোটবিমুখ মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে আসার একটি উপলক্ষ তৈরি হয়। এ ভোট প্রাণ গোপাল দত্তকে জেতানোর জন্য নয়, তাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত সমর্থন জানানোর জন্য। আমি প্রত্যাশা করেছিলাম এ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোট উৎসবে আবার মানুষ ফিরে আসবে। কিন্তু আমি এবং আমার মতো কিছু মানুষ আশাহত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টি এবং ন্যাপ প্রার্থী। জাতীয় পার্টির প্রার্থী লুৎফর রেজা দলটির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জেলার আহ্বায়ক। তাঁকে নির্বাচন থেকে কেন সরে যেতে হবে? চাপের মুখে তিনি যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি তা নিশ্চিত। তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা যায়। জাতীয় পার্টিও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। জাতীয় পার্টি এবং ন্যাপ প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর পর অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বিনা ভোটে এমপি হলেন। বেচারা জনগণ। ভোট দিয়ে প্রাণ গোপালকে স্বাগত জানাতে পারল না। শুধু কুমিল্লা-৭ আসন নয়, ২০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। স্থানীয় পর্যায়ের এ নির্বাচনেও বিনা ভোটের রেকর্ড হয়েছে। ১৬০টির মধ্যে ৪৫টিতেই ভোট হয়নি চেয়ারম্যান পদে। ইউনিয়ন পরিষদ হলো বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় ক্ষুদ্রতম একক। এ নির্বাচনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হবেন এটা অকল্পনীয়। কারণ দলীয় পরিচয়ের বাইরে এ নির্বাচনে অনেকে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ নির্বাচনব্যবস্থায় সর্বশেষ ব্যাধির নাম ভোটবিহীন নির্বাচন। এখন ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলেই হলো। এরপর তাদের প্রধান লক্ষ্য হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া। এজন্য তিনি অন্য প্রার্থীদের ছলেবলে-কৌশলে নির্বাচন থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গোঁ ধরে থাকেন সেখানে নির্বাচন হয়। কিন্তু তত দিনে পরিস্থিতি এমন হয় যে মানুষ ভোট দেওয়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলে। ফলে ভোট উৎসব হয়ে গেছে বিবর্ণ। যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন, এটাই যেন এখন নিয়তি। কোথাও নামমাত্র ভোট হয়। কোথাও ভোটের আগেই প্রার্থী বিনা ভোটে বিজয়ী হন। এটা যে গণতন্ত্রের জন্য কত বড় সর্বনাশ তা কি বিনা ভোটে জয়ী জনপ্রতিনিধিরা বোঝেন? বাংলাদেশের সংবিধানের ১২২ (১) ধারায় বলা হয়েছে- ‘প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন হবে।’ কিন্তু ভোটই যদি না হয় তাহলে একজন সংসদ সদস্য কি বৈধ? এটি সাংবিধানিক বিতর্কের বিষয়। আমি সে বিতর্কে যেতে চাই না। কিন্তু আমার মনে একটি প্রশ্ন, জনগণের ভোট না পেয়েই যদি কেউ জনপ্রতিনিধি হন, তিনি কি মোটেও লজ্জিত হন না? ভোটার এবং প্রার্থীর সম্পর্ক হবে ফেভিকলের মতো। কিন্তু এখন যেন প্রার্থীরা ভোটারদের থেকে দূরে থাকতে চান। সামাজিক দূরত্ব রেখে জনগণের কাছে না গিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার এক ব্যাধি ক্রমে সংক্রমিত হচ্ছে দেশে। এ দেশের জনগণ ভোটের অধিকারের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বুকের রক্ত দিয়েছে। ভোট নিয়ে এ দেশের মানুষই সম্ভবত সবচেয়ে প্রতারিত হয়েছে। বিনা ভোট হলো জনপ্রতারণার সর্বশেষ নজির। অগণতান্ত্রিক, অবৈধ এবং স্বৈরাচাররা ভোটব্যবস্থা নষ্ট করেছে নিজেদের স্বার্থে। ’৭৫-এর পর জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের তামাশা করেছেন। জিয়াকে খুশি করতে ‘হ্যাঁ’র বক্সে এত জাল ভোট দেওয়া হয়েছিল যে হ্যাঁ ভোটের সংখ্যা ১০০ ভাগের ওপর চলে গিয়েছিল। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত হ্যাঁ-না ভোটের কৌতুকে জিয়ার পক্ষে ৯৮ দশমিক ৮০ ভাগ ভোট পড়ে। প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ : এ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’ গ্রন্থে সাইফুর রহমানের বরাতে বলা হয়েছিল- ‘এটি ছিল অবিশ্বাস্য এবং অতি উৎসাহীদের কান্ড’। (পৃষ্ঠ-৭১)। ১৯৭৯ সালে জিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি ভোট প্রহসন মঞ্চস্থ হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সাজানো এবং পরিকল্পিত নির্বাচনে সেনা পোশাক পরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন জিয়াউর রহমান। নির্বাচনী প্রচারণায় জিয়া ঘোষণা করেন, আওয়ামী লীগকে ৪০টির বেশি আসন দেওয়া হবে না। বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ তখন বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্বে ছিলেন মালেক উকিল, অন্য অংশের মিজানুর রহমান চৌধুরী। মালেক উকিলের আওয়ামী লীগই ছিল মূল আওয়ামী লীগ। এ আওয়ামী লীগই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ (মিজান) পায় মই প্রতীক। আওয়ামী লীগ (মালেক) ২৯৫ আসনে প্রার্থী দেয়। ৩৯ আসনে জয়ী হয়। আর আওয়ামী লীগ (মিজান) ১৮৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে দুটি আসনে জয়ী হয়। এ নির্বাচন ছিল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। জিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছিল জনগণের ভোটাধিকার হরণের আরেক দলিল। সে সময় আওয়ামী লীগের নবযাত্রার সূচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জিয়ার মৃত্যুর পর কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি। এ সময় কোন্দল এড়াতে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী তিনি (বিচারপতি সাত্তার) ছিলেন নির্বাচনের অযোগ্য। তাকে প্রার্থী করতে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় ড. কামাল হোসেনকে। এটি ছিল প্রকাশ্য জালিয়াতি এবং ভোট ডাকাতির এক লোমহর্ষক নির্বাচন। কেন্দ্রে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় প্রশাসনের লোকজন বিএনপি প্রার্থী সাত্তারের পক্ষে সিল দেয়। (সূত্র : দৈনিক সংবাদ, ১৬ নভেম্বর ১৯৮১)। ভোট ছিনতাই করেই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তবে ভোট ছিনতাই করে রাষ্ট্রপতি হওয়া সাত্তার সিংহাসনে বেশি দিন থাকতে পারেননি। মাত্র চার মাসের মাথায় মঞ্চে আসেন সেনাপ্রধান এরশাদ। আবার একই কায়দায় বেতার-টেলিভিশনে ভাষণ। জিয়ার মতো এরশাদও প্রথমে ছিলেন পেছনে। বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন কাগজ-কলমে রাষ্ট্রপতি। জিয়ার মতোই এরশাদ বলেন, ‘আমি সৈনিক, রাজনীতি আমার কাজ নয়, আমি ব্যারাকে ফিরে যাব।’ জিয়ার মতো জনগণকে প্রতারিত করে এরশাদ সামরিক পোশাকেই দল গঠন করেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে এরশাদ সংসদ নির্বাচন দেন। ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপি এবং ভোট প্রহসনের এক নতুন ফরমুলা আবিষ্কার হয়। এর নাম ‘মিডিয়া ক্যু’। ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সব বিরোধী দল ওই নির্বাচনে যাওয়ার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। জাসদসহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচন বয়কট ও প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। ফলে ১৫ দল ভেঙে যায়। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আট দল নির্বাচনে এক গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিল। সহিংস এ নির্বাচন শেষে যখন বেতার ও টেলিভিশনে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় তখন দেখা যায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে। মধ্যরাতে হঠাৎ ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নিশ্চিত জয়ের পথে যাচ্ছে এমন তথ্যের পর ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করা হয়েছিল সেদিন। এরপর এক ভুতুড়ে পরিস্থিতি তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনে বসে বানোয়াট ফলাফল তৈরি হয়। ১১ দিন পর ১৯ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষিত হয়।

১৯৮৬-এর নির্বাচন আওয়ামী লীগকে সমালোচিত করেছে, বিএনপিকে লাভবান করেছে। তার চেয়েও বড় কথা, জনগণের আকাক্সক্ষা হরণ করা হয়েছে। জনগণের রায়কে মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে পাল্টে ফেলা হয়েছে। এরশাদের আরেক কৌতুক ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ১৯৮৬-এর ১৫ অক্টোবর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান প্রধান সব বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জন করে। তাতে কি, এরশাদ ১২ জন প্রার্থী জোগাড় করে ফেলেন। এরা যেন প্রার্থী নন, কৌতুক অভিনেতা অথবা ভাঁড়। এদের মধ্যে অলিউল ইসলাম চৌধুরী (ছক্কু মিয়া) কৌতুক অভিনেতা হিসেবে প্রশংসিত হন। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ ১৯৮৬-এর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। ১৯৮৮-এর ৩ মার্চ আবার নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আবারও জাতিকে কৌতুক উপহার দেন এরশাদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব বিরোধী দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে এরশাদের পৃষ্ঠপোষকাতায় গড়ে ওঠে সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। এ জোটে এমন সব দল ছিল যে তাদের খুঁজে বের করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আ স ম আবদুর রব ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের খেতাব পান। ১৯৮৮-এর নির্বাচনেও কোনো ভোট হয়নি। জনগণ ভোট দেয়নি। নির্বাচন কমিশন টেবিলে বসে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফলাফল তৈরি করেছে। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করেন। এরশাদের পতনের লক্ষ্যে এই এক দফা দাবিতে গড়ে ওঠে তীব্র গণআন্দোলন। এরশাদের পতন হয়। ১৯৯১-এ প্রথমবারের মতো দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের পর সবাই আশা করেছিল মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এ স্লেøাগান বাস্তবতা পাবে। কিন্তু বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসে আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের খেলায় মেতে ওঠেন। মাগুরা ও মিরপুর উপনির্বাচনে নির্লজ্জ কারচুপির ঘটনা ভোটব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করে। আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যায় এ দেশের মানুষ। এ আন্দোলনের মধ্যেই ক্ষমতায় থাকার মরিয়া চেষ্টা করে বিএনপি। ১৯৯৬-এএর ১৫ ফেব্রুয়ারি এক ভুতুড়ে নির্বাচন করে। স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বেগম জিয়া বানোয়াট ফলাফল ঘোষণা করেন। গোটা জাতি ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি কলঙ্কিত নির্বাচন অবশ্য বেগম জিয়াকে মাত্র কয়েক দিন ক্ষমতায় রাখতে পেরেছিল। বেগম জিয়া নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য হলেন। ১৯৯৬ ও ২০০১-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ নির্বাচনে প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, কারচুপি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষপাতও নজর এড়ায়নি। কিন্তু এতসব ত্রুটি-বিচ্যুতির পরও মানুষ ভোট দিতে পেরেছে এবং জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু ২০০১-এর অক্টোবর নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চায়। এখানেই আবার সংকটে পড়ে গণতন্ত্র এবং নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চায়। তবে তা রাজনৈতিকভাবে নয়, পাশবিক ও সন্ত্রাসী কায়দায়। ১ অক্টোবর ভোটের ফলাফলের পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শুরু হয় নির্মম পাশবিকতা। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চলে নির্বিচারে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নিঃশেষের এক মিশনে নামে বিএনপি-জামায়াত। এরপর শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করা শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ছিল এ মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন। কিন্তু ওই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একদিকে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিজেদের মতো করে সাজানোর পরিকল্পনা নেয় বিএনপি। সাবেক বিএনপি নেতা কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। বিচারপতি হাসান যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান থাকতে পারেন সেজন্য সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো হয়। নির্বাচন কমিশনে বসানো হয় একান্ত অনুগত ব্যক্তিদের। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয়। প্রশাসন বিএনপি-জামায়াত পন্থিদের নিয়ে সাজানো হয়। ১০ জনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান করা হয় বিশ্বস্ত জেনারেল মইন উ আহমেদকে। এত কিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি বিএনপির। ১/১১ ঝড়ে সব ল-ভ- হয়ে যায়। দুই বছর সেনাসমর্থিত অনির্বাচিত শাসনের পর জনতার জয় হয়। ২০০৮-এর ডিসেম্বর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক। আমি এ নির্বাচনকে অনেকটাই ১৯৭০-এর ভোট বিপ্লবের মতোই মনে করি। জনগণের রায়ের এক স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ২০০৮-এর নির্বাচন। আবার গণতন্ত্রের সড়কে চলা শুরু করে বাংলাদেশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির নোংরা ও কুৎসিত রাজনৈতিক খেলার কারণেই এ নির্দলীয় ব্যবস্থা বিতর্কিত হয়ে যায়। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলোপ হওয়াটা ছিল অনিবার্য পরিণতি। সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জটা আসে রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের ওপর। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সবকটিতে বিএনপি জয়ী হয়। ওই নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার, ‘সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের’ প্রস্তাব দিয়েছিল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এতসব কিছুর পরও বিএনপি ২০১৪-এর নির্বাচন বয়কট করে। কেন? বিএনপির অনেক নেতাই এ প্রশ্বের উত্তর জানেন না।

২০১৮-তে আবার সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপি তখন বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ছিল সুনিশ্চিত। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে কী হয়েছে দেশের জনগণ জানে। যারা অতি উৎসাহী হয়ে ওই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তারা কি আওয়ামী লীগের শুভাকাক্সক্ষী? ২০১৮-এর নির্বাচন আর এখন আমলাদের দৌরাত্ম্যের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা রাজনীতির জন্যই জরুরি। বিনা ভোটের মঞ্চ যেন গণতন্ত্রকে ফাঁসিতে ঝোলানোর মঞ্চ। ভোট জনগণের একটি অধিকার। জনগণ যত এ অধিকার প্রয়োগ করবে ততই গণতন্ত্র সংহত ও শক্তিশালী হবে। জনগণকে বাদ দিয়ে যদি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হন, তিনি তো আর জনপ্রতিনিধি থাকেন না। তাই গণতন্ত্র বাঁচাতে ভোটে ফেরাতে হবে জনগণকে। জনগণকে ‘বেচারা’ বানালে গণতন্ত্রই অচল হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ইমেইল : poriprekkhit@yahoo.com

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন