নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮
জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার কথা কারও অজানা নয়। পুলিশের ওপর যে দলের প্রভাব থাকে সেই দল নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পায় তা রাজনীতি সচেতন সবারই জানা। সম্প্রতি এই পুলিশের সর্বোচ্চ পদ পুলিশের মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) রদবদল হলো। আওয়ামী লীগের মতাদর্শী, নিবেদিত, পরীক্ষিতদের এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে নিয়োগ দিলেন দলমতের উর্ধ্বে পুলিশ কর্মকর্তা জাবেদ পাটোয়ারীকে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন নির্বাচনের এই বছরে এমন সুযোগেও কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন প্রধানমন্ত্রী?
পুলিশের আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনা বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। আইজিপি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনজনই প্রত্যেকেরই অতীত রেকর্ড ছিল আওয়ামী লীগের জন্য আশাজাগানিয়া। এই তিনজনের বাইরে ছিলেন পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের আতিরিক্ত আইজি গ্রেড-১ পদে থাকা কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী। তিনি জ্যেষ্ঠতার বিচারে আইজিপি পদের দাবিদার ছিলেন।
তবে পুলিশের সর্বোচ্চ পদ আইজিপিতে নিয়োগ জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী খুব কমই হয়েছে। বিএনপি আমলে ১২ জনকে ডিঙ্গিয়ে আইজিপি করারও রেকর্ড আছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী যখন জাবেদ পাটোয়ারীকে আইজিপি করার বিষয়ে মনোভাব পোষণ করেন তখন পুলিশের আওয়ামী লীগ মনা একাধিক কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে দলীয় কাউকে বেছে নেওয়ার অনুরোধ করেন। বাববার এমন অনুরোধ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থেকে জাবেদ পাটোয়ারীকে আইজিপি করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাবেদ পাটেয়ারীকে আইজিপি করার ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের পুলিশকে চৌকিশ ও যোগ্য নেতৃত্ব দিতে জাবেদ পাটোয়ারীকেই উপযুক্ত মনে করেছেন তিনি। আর তাঁকে নিয়োগ দেওয়ায় পদক্রমের জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতাও রক্ষা হয়েছে, যে কারণে চেইন অব কমান্ডও অক্ষুন্ন থাকল। এছাড়া জাবেদ পাটোয়ারী সৎ, মেধাবী হিসেবে সুপরিচিত। যে কারণে দুর্নীতি অনিময় ও বিভিন্ন ঘটনায় বিতর্কিত হওয়া পুলিশ বাহিনীর সুনাম তিনি ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর সৎ ও মেধাবী হিসেবে পরীক্ষিত জাবেদ পাটোয়ারী কারও অন্যায় আবদার না মেনে নিরপেক্ষভাবে জনগণের সেবায় পুলিশকে চালিত করতে পারবেন আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাবেদ পাটোয়ারীকে নিয়োগ দেওয়ায় হয়তো দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হলো তবে এর মাধ্যমেই আরেকবার প্রমাণ হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য দলমতের উর্ধ্বে। দলীয় স্বার্থের চেয়েও তিনি দেশের স্বার্থকে অনেক বড় করে দেখেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন দেশপ্রেম ও মহানুভবতার প্রকাশ এই প্রথম নয়।
বিএনপি আমলে যেখানে ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করা হয়েছে, ৫ জনকে ডিঙ্গিয়ে বিচারপতি করা হয়েছে আর ১২ জনকে ডিঙ্গিয়ে পুলিশ প্রধান করা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বরাবরই জ্যেষ্ঠতার ক্রম মানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেশ, জনগণের জন্য কোনটি ভালো সেটি যেমন চিন্তা করেন, তেমনি যোগ্যতা ও মেধাকেও গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী বারবার নিজের এই প্রচেষ্টার পরিচয় দিয়েছেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ক্ষেত্রেও মেধা ও যোগ্যতাকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছিল। সিনহার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেকের আশঙ্কা প্রকাশের পরও তাঁকে প্রধান বিচারপতি করা হয়। এই সিনহাই পরে প্রধানমন্ত্রীকে ষোড়শ সংশোধনীর পর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিলেন। সরকারকে বাববার বিতর্কে ফেলার চেষ্টা করেছেন।
ওই ঘটনার পরও প্রধানমন্ত্রী পদোন্নতির বিষয়ে যোগ্যতা ও দেশের স্বার্থের বিষয়ে অটল। সুশাশনের জন্য, দলবাজি বন্ধের জন্য, রাজনীতিকরণের দূর করতে প্রধানমন্ত্রী বরবারই প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদগুলোতে যোগ্যতা ও দেশের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। এক্ষেত্রে তিনি সাহসী পদক্ষেপ নিতে পিছপা হননা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব পদে নজিবুর রহমানের নিয়োগও এমন মনোভাবের আরেক উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস যোগ্যতার বিচারে পদোন্নতি হলে তবেই চেইন অব কমান্ড বজায় থাকবে এবং দেশের উন্নয়নের গতিও পথ হারাবে না। আর দল, মত, ব্যক্তি, দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে দেশের উন্নয়ন গতিশীল করাই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বর্হিপ্রকাশ।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।