ইনসাইড বাংলাদেশ

হেভিওয়েট প্রার্থীর লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

‘রাজনীতি’ শব্দটি আমাদের নিত্য জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে চাইলেই এ শব্দটি আলাদা করা যায় না। রাজনৈতিক দোলাচালে উত্তপ্ত আজকের বিশ্ব। সেই উত্তাপে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই শান্ত নিবিড় শীতলতার সবুজ প্রিয় আমাদের বাংলাদেশও। রাজনীতিকে ঘিরে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা, জল্পনা-কল্পনা কত কি? রাজনীতির মাধ্যমেই দেশ পরিচালিত হয়। এজন্য গঠিত হয় একটি প্রতিনিধি দল। যা মানুষের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই গঠিত হয়। এ দলটিই হলো সরকার। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জনপ্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠিত হয়। যে সরকার দেশের নীতি নির্ধারণ করে, মানুষের ভাগ্যকে আমানত হিসেবে নিয়ে কাজ করে।

আজ সেই মোক্ষম সময়। কি হবে আজ? আজ বাংলাদেশে ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। আজ দেশবাসী এক উৎসবে মত্ত হয়ে উজ্জ্বল হৃদয়ে অপেক্ষা করছে, আজই তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে পূর্বাহৃ, মধ্যাহৃ পরে অপরাহেৃ। আজ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট গ্রহনের দিন। এ ভোটের ফলাফলই আগামী পাঁচ বছরে দেশের পাঞ্জেরীকে নির্ধারণ করবে। কে বসবে বাংলার মসনদে, কারা হবেন দেশের নীতি নির্ধারক। আজকে জনগণ (ভোটার) দেশের সর্বোচ্চ আইন সভা ‘জাতীয় সংসদ’র সদস্যদের নির্বাচন করবে। যে সংসদের ৩০০ জন সদস্য প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আইন প্রনয়ন কাজে নিয়োজিত থাকেন।

মূলত দেশের দুই রাজনৈতিক দলের কারনেই মাঠ উত্তাপ রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ দুই দলকে নিয়ে রাজনীতি দুই অংশে বিভক্ত। যতই সমালোচনা থাকুক না কেন এ দু’দলই বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার সরকার গঠন করেছে। দুই দলেই রয়েছেন কালজয়ী নেতৃবৃন্দ। যাদের নেতৃত্বেই দু’টি দল এগিয়েছে নিজস্ব ধারায়। বর্তমান সরকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বহু দিনের ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এ পর্যন্ত যথাক্রমে ৪ বার করে সরকার গঠন করেছে। দু’দলেই রয়েছে কিছু হেভিওয়েট প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা হচ্ছেন:

শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের জাতির পিতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় তার দল সরকার গঠন করলে টানা দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু কন্যা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে তার বিপক্ষে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির এস এম জিলানী। অতীতের রেকর্ড বলে বড় ব্যবধানেই শেখ হাসিনাই জয় পেতে যাচ্ছেন।

আমির হোসেন আমু: তিনি আওয়ামী লীগের একজন বর্ষিয়ান নেতা এবং বর্তমান সরকারের শিল্পমন্ত্রী। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এ নেতা ১৯৭০ সালের প্রাদশিক পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৭২ সালে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে মনোনীত হন আমু। ১৯৭৮-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। ২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা যখন বন্দী ছিলেন তখন যে কয়জন নেতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন আমু তাদের মধ্যে একজন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং  সরকারের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ঝালকাঠি-২ (সদর ও নলছিটি) সংসদীয় আসন থেকে নৌকা প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন এই নেতা। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন ধানের শীষের জীবা আমিনা খান।

মোহাম্মদ নাসিম: আওয়ামী লীগের এ বর্ষিয়ান নেতা দলটির সর্বোচ্চ সাংগঠনিক স্তর প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার পিতা জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। যমুনা নদীর উভয় পাড় ঘেষা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও কাজিপুর পৌরসভা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থী নাসিম। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে তার জন্য অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা যায়। তার বিপক্ষে লড়ছেন প্রথমবারের মত মনোয়ন পাওয়া বিএনপির কন্ঠশিল্পী কঁনকচাপ। 

তোফায়েল আহমেদ: স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঁচ দফা জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত এ নেতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদের একজন সদস্য। তিনি  ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় লাভ করেন। তোফায়েল আহমেদকে মাত্র ২৬ বছর বয়সে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালে প্রথম মনোনয়ন দিয়েছিলন জাতির পিতা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন তোফায়েল।

ভোলা-১ (ভোলা সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী থাকলেও তার জয় ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। তার বিপক্ষে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে লড়ছেন বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর।

মতিয়া চৌধুরী: এক সময়ে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। রাজপথে দলের আন্দোলনকে টিকিয়ে রেখেছিলেন এ নেত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রির দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানেও এই মন্ত্রলায়ের দায়িত্বে আছেন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতির অঙ্গনে জ্বালাময়ী অবস্থান দখলকারী এ নেত্রী বর্তমানে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) সংসদীয় আসনে দলীয় প্রতিক নৌকার প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তার বিপক্ষে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী লড়ছেন বিএনপির ফাহিম চৌধুরী।

ওবায়দুল কাদের: ওবায়দুল কাদের প্রথম ১৯৯৬ এর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ২০০১ সাল দায়িত্ব পালন করেন।  ২০০২ সালের থেকে ২০০৯-এর আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন।

ওয়ান ইলেভেনে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। ২০০৮ নবম জাতীয় সংসদে দ্বিতীয়বারের মত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ২০ তম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে এখনও বহাল রয়েছেন।

২০১৪ তে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা ওবায়দুল কাদের ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভুত্থান এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজ এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ফিরে গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

নোয়াখালী-৫ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন এ নেতা। তার বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচনী মাঠে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ আসনে।

ডা. দিপু মনি: বাংলাদেশে প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদে ডা: দীপু মনি চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর- হাইমচর) থেকে আওয়ামী লীগের নবম ও দশম সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারেও ভূষিত হন তিনি। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীণ সময়ে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ’র প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিএনপি থেকে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে লড়ছেন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।

রমেশ চন্দ্র সেন: রমেশ চন্দ্র সেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনে সরকার দলের সংসদ সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী এ নেতা রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কাজী জাফরুল্লাহ: ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এ নেতা। এ আসনে তাঁর বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে সরব রয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে ২০১৩ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ দলীয় এ সংসদ সদস্য। ৪৬ বছর বয়সে তিনি সর্বকনিষ্ঠ স্পিকাররূপে সাবেক স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন। এর পূর্বে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) এ জাতীয় সংসদের স্পীকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন বিএনপির সাইফুল ইসলাম।

বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা হচ্ছেন:

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেছেন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও-১ থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। এই আসনে নৌকা ও ধানের শীষের লড়াইটা বেশ ভালোই জমবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মির্জা ফখরুল ১৯৯১ সালে পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচন করে যথাক্রমে ৩৬,৪০৬ ও ৫৮,৩৬৯ ভোট পান এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। আবার, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে প্রতিযোগীতা করে ১,৩৪,৯১০ পেয়ে জয়লাভ করেন ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবার, মির্জা ফখরুল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন। আসনটির জন্মলগ্ন থেকে জয়-পরাজয়ের হিসেব বলছে, এটা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।

অপরদিকে, বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ বাদে বিগত সংসদ নির্বাচগুলোতে এই আসন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনের আগে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এজন্য বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি এই আসন থেকে মহাজোট প্রার্থী কতটুক লড়াই করবে তা আজ দেখা যাবে।

মওদুদ আহমেদ: ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট-সদর আংশিক) আসনটি থেকে মওদুদ এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় এ আসনটি ভিআইপি হিসেবে পরিচিত। এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি ১৯৭৯ সালে এ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এক বছর পর তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতিও করেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নোয়াখালী-৫ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তখনকার সময় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এখানে তারও ব্যক্তি ইমেজ ও দলীয় শক্ত অবস্থান রয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মদ এ আসনে ব্যাপক ভাবে পরিচিত।

মির্জা আব্বাস: মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালযয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির (সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি) সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এবার ঢাকা-৮ আসন থেকে অংশগ্রহণ করছেন।  ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাস করে শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর থানা ও রমনা থানার একাংশ নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা-৮। এর আগে এই আসন বর্তমান ঢাকা-৯-এর সঙ্গে ছিল। এখন ভোটার ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩। মির্জা আব্বাস ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অবিভক্ত ঢাকা-৯ থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি জয়লাভ করেন। আর ১৯৯৬ সালে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী। আসন বিন্যাস হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মির্জা আব্বাস অংশ নেননি। তখন এই আসন থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেন হাবিব-উন-নবী খান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনে সাংসদ হন রাশেদ খান মেনন। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে  ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান রাশেদ খান মেনন যতটা সরব আছেন ঠিক ততটাই নীরব বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৯৭৮ সালে যুবদলে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত গয়েশ্বর ঢাকা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে ধানের শীষে লড়ছেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন:  কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ কখনো জয় লাভ করতে পারেনি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০১-২০০৬ সময়কালে পূর্ববর্তী চার দলীয় জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। কুমিল্লা-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নবীন রাজনৈতিক কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিমা আহমাদ মেরী। ভোটের মাঠে প্রবীণ-নবীনের মধ্যে কে বিজয়ীর হাসি হাসে তাই এখন দেখার বিষয়।

মাহমুদুর রহমান মান্না: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭২ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে চাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মান্না। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না। এই আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার লাঙ্গল প্রতীকে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে ২০০২ মাহমুদুর জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে তিনি বগুড়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। 

আন্দালিব রহমান পার্থ: ২০০০ সাল থেকে আন্দালিব রহমান পার্থ তার বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জুর সাথে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বাবার মৃত্যু হলে আন্দালিব বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার দল বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচন বয়কট করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৭ আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে লড়বেন নায়ক ফারুক।

বরকত উল্লাহ বুলু: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালী-৩ আসন (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী) থেকে জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ এ এমপি হয়েছেন বুলু। এই আসনে এবার তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মামুনুর রশীদ কিরন।

আ.স.ম. আবদুর রব: আ.স.ম আব্দুর রব বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) এর নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয়া হলে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাসদ, ২০০৮ সালে জেএসডি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন। শুধুমাত্র ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবারও লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। এই আসনে তাঁর শক্ত প্রতিপক্ষ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল মান্নান।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ: একসময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের আলোচিত ছাত্র সংগঠন ডাকসু এর ভিপি ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি লাঙ্গলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রতীক বদলে হয়েছে ধানের শীষ। গণফোরামে যোগ দিয়ে তিনি ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। মৌলভীবাজার-২ আসনে কোন দলেরই এ আসনে একক আধিপত্য না থাকলেও নব্বই পরবর্তী ছয়টি সংসদ নির্বাচনে দুই বার লাঙ্গল, দুইবার স্বতন্ত্র একবার করে নৌকা ও ধানের শীষ জয়লাভ করে। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি কিংবা মনোনয়ন পননি। ২০০১ সালে বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীন, ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাস খান এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মতিন এমপি নির্বাচিত হন। অর্থাৎ দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করলেও আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কোনো প্রার্থী এ তিনটি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। তবে এবারের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের শক্ত প্রতিপক্ষ হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এম এম শাহীন।

বাংলা ইনসাইডার/বিকে/এমএস



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ঘোষণা ফরিদপুর ডিসির

প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং সদস্য অজিত বিশ্বাসকে ধরিয়ে দিলে উপযুক্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনাপরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হলরুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন। পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় এ ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচ্যুয়াল অফেন্ডার অর্থাৎ স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কীভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে মাগুরায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। সেখানে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পালিয়ে যান। চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের দ্বৈত ভূমিকার কারণে তাকে প্রথমদিকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে যখন ভিডিও ফুটেজে তার সম্পৃক্ততা দেখা যায় তারপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক। জড়িতদের অবস্থান বা ধরিয়ে দিতে বা গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে।

কামরুল আহসান বলেন, চেয়ারম্যান তপন এবং দুই মেম্বারকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য এয়ারপোর্ট-বন্দর এবং বর্ডারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ইতিপূর্বে একাধিক অন্যায় করেছে। ইউএনও’র ওপর হামলা ও টিসিবি কার্ড আত্মসাতের দায়ে তাকে দুই বার বরখাস্তও করা হয়। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে পদে ফেরেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, এঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসিন কবির, রামানন্দ পাল প্রমুখ। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মন্দিরের প্রতিমায় আগুনের খবর পেয়ে জড়ো হন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে কাজ করা ৭ শ্রমিককে সন্দেহ করেন তারা। পরে স্কুলে গিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। এতে গুরুতর আহত হলেও শ্রেণিকক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রথমে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।

পরে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত আশরাফুল ও এরশাদুল মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে।

এদিকে ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও মেম্বার অজিত বিশ্বাস গা ঢাকা দিয়েছেন।

ফরিদপুর   মধুখালী   পঞ্চপল্লী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে তিন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাষ্ট্রের তিন এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বিপরীতে কারা নিয়োগ পাবেন- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা কল্পনা আলাপ আলোচনা চলছে।

যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২৪ জুন সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিন বছরের জন্য তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত সেনাপ্রধানের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নীতি খুবই কম। সেনাবাহিনীতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয় এবং নানা রকম বিষয় বিবেচনা করে নতুন সেনাপ্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন ব্যতিক্রম না হলে ২৪ জুনের মধ্যেই বাংলাদেশ নতুন একজন সেনাপ্রধান পাবেন।

বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধান বা আইজিপি যাকে বলা হয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ জুলাই। তিনি এখন দেড় বছরের চুক্তিতে আছেন। তার দেড় বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ১২ জুলাই। কাজেই ১১ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন একজন পুলিশ প্রধান নিয়োগ দিতে হবে সরকারকে।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি বর্তমান পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সরকার তাকে দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। পুলিশেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনা ব্যতিক্রমী ঘটনা। এক্ষেত্রে নির্বাচন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। নতুন করে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নতুন আইজিপি কে হবেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গ্রেড-১ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই এই পদে নিয়োগ দেবে। 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৪ জুলাই। তিনিও এক বছরের চুক্তিতে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার মেয়াদ শেষ হলে তাকে পুনরায় এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময়সীমা আগামী ৫ জুলাই শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। নতুন কোনো মুখ্যসচিব দেওয়া হবে কিনা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে- এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে যদি তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিতে নিয়োগ না দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতার নীতি অনুসরণ করা হতে পারে বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন। এক্ষেত্রে যে দুজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্যে একজন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল। অন্যজন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু জেষ্ঠ্যতম বিষয়টি অনুসরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী স্বীয় বিবেচনায় যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নিয়োগ করবেন। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসেন সেটির অপেক্ষায় আছে গোটা দেশবাসী।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ   সেনাপ্রধান   মুখ্যসচিব   তোফাজ্জল হোসেন মিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া: ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।

চীনের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে আগামী মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসবে। আর এই বিষয়ে গতকাল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন যে, প্রতিবেশী দেশ কিংবা উন্নত এই ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সবসময়ই দৃষ্টি রাখে।

গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে সহায়তা করার জন্য যেমন তারা আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও চীন আগ্রহ দেখাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ভারতের কৌশলগত বিরোধ রয়েছে। এমন এক সময়ে চীন বাংলাদেশে এই যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে যে সময় ভারতের নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এখন ভারতের নীতি নির্ধারক এবং সকলের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। আর একারণেই এখন চীনের এই সামরিক মহড়ার যৌক্তিকতা এবং এর প্রভাব এই উপমহাদেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় কীভাবে পড়বে তা নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মালদ্বীপ হারানোর পর ভারতের এই অঞ্চলে কৌশলগত একমাত্র মিত্র হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নানা বাস্তবতার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন এবং সেভেন সিস্টারে শান্তি ও অখণ্ডতা সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও বাংলাদেশকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। আর দুই দেশের সম্পর্ক ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যখন নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ হবে ভাবা হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, তিনি প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন ভারতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরেও ভারতে যাওয়ার কথা। নির্বাচনের পরপর এরকম একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। কিন্তু যখন দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা স্পর্শ করছে তখন ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের চীনপ্রীতি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি প্রধান দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।

বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর চীনকে অনেক আগ্রাসী কূটনীতিতে দেখা যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সমস্ত মন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত, তাদের সাথেও চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ নগদ অর্থ বা ঋণ এর দায় মেটানোর জন্য চীনের কাছে হাত পাততে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে এতদিন ধরে ভারসাম্যের কূটনীতি রক্ষা করেছিল সেটি কতটা রক্ষা করতে পারবে সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর চীনের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাও দেখার বিষয় বলে অনেকে মনে করছেন।


বাংলাদেশ   ভারত   চীন   ভূরাজনীতি   সামরিক মহড়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ: ০৫:২৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পর পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি ছাড়াও একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের। দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি।

এদিন বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান আয়তন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজিকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।

এদিন বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   থাইল্যান্ড   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রেমিকার আত্মহত্যার শোকে পৃথিবী থেকে বিদায় প্রেমিক

প্রকাশ: ০৩:৫৪ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

নরসিংদীর শিবপুরে প্রেমিকার আত্মহত্যার শোক সইতে না পেরে প্রেমিক সিফাত (১৯) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমিকার মৃত্যুর ১৯ দিন পর ফেসবুক‌ স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিক সিফাত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে গেল আমারে কতটা ভালোবাসে। আমিও প্রমাণ করে দিমু তানহারে আমি কতটা ভালোবাসি। কারও সঙ্গে ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর দেখা হবে না সবাই দোয়া কইরো শান্তিতে থাকি কিংবা অশান্তিতে দুজন যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমার শেষ ইচ্ছা তানহার কবরের পাশে আমাকে কবর দেওয়া হোক।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আর আমার কোনো কিছুর জন্য তানহার পরিবার বা আমার পরিবার দায়ী না, এমনকি আমার কোনো ভাই-ব্রাদার বা বন্ধুও দায়ী না। যা হবে আমার নিজের ইচ্ছেতে হবে। সত্যি বলতে আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। আমাকে যদি কেউ বাঁচিয়েও নেয় আমি পুনরায় আত্মহত্যার চেষ্টা করব। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচানোর চেষ্টা কইরো না। বেঁচে থেকে আর কি হবে, যার জন্য বাঁচার কথা ছিল সে তো আর নেই।’

সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আমারে কথা দিছিলো যদি বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচমু আর যদি মরতে হয় তো একসঙ্গে মরমু। আমি তানহারে এই কথাটাই দিছিলাম। কিন্তু একটা চরিত্রহীন জানোয়ার আমাদের সুখে থাকতে দিল না। ওদের অত্যাচারে তানহা আত্মহত্যা করল। এক প্রকার তারা তানহারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। জানোয়ারের পরিবারকেই আমি খুনি বলে দাবি করি। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে জানোয়ারের পরিবার স্বাধীনভাবে চলবে, ওদের কোনো সাজা হবে না। আর অন্যদিকে আমার তানহা শেষ, আমি অর্ধেক শেষ আমার পরিবারও শেষ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না (প্রমাণ হয়ে যাক দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসতাম) আর আমি চরিত্রহীন জানোয়ারের পরিবারের সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এমন সাজা দেওয়া হোক অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না হয়। আর যেন কারও প্রাণ না ঝরে। কেউ যেন ব্ল‍্যাকমেইলের শিকার না হয়। আমার শেষ একটাই ইচ্ছে- আমরা দুজনে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা হলো না। তাই আমার মৃত্যুর পর তানহার কবরের পাশে যেন আমার কবর দেওয়া হয়। আমি আঙ্গুররে মারছি শুধু একটা কারণে, হেয় তানহার হাতে ধরছিল। তানহারে খারাপ প্রস্তাব দিছিল। আমি সহ্য করতে পারি নাই। তাই হেরে কোবাইছি। আমরা প্রেম করছি এটাই কি অপরাধ ছিল। আমাদের জীবন শেষ করে দিল। ভালো থাকুক আঙ্গুর আর আঙ্গুরের পরিবার।

এদিকে সিফাতের বাবা ইব্রাহিম জানান, প্রতিবেশী চাচাতো বোন খলিলের মেয়ে তানহার (১৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার ছেলে সিফাতের। গত ৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার সময় তানহা ঘরের ভেতর থেকে আর সিফাত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় দেখে ফেলে একই এলাকার রাজুর ছেলে আঙ্গুর (২৫)।

এ সময় আঙ্গুর তানহাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিফাত এতে নিষেধ করে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আঙ্গুর সিফাতকে মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে সে উত্তেজিত হয়ে আঙ্গুরকে কুপিয়ে আহত করে। মারামারির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। লোকলজ্জায় গত ৬ এপ্রিল রাতে তানহা নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এসব বিষয়ে গ্রামীণ সালিস দরবার হওয়ার কথা ছিল। সালিস দরবারে আমাকে ও আমার ছেলেকে এটা করবে ওটা করবে বলে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। দরবারে গেলে জমির দলিল নিয়ে যেতে বলতো। এসব মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ছেলে সিফাত। আমি এর বিচার দাবি করছি।

শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।


আত্মহত্যা   প্রেমিক-প্রেমিকা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন