ইনসাইড বাংলাদেশ

বিইআরসি চেয়ারম্যানের কর্মকান্ড: বিরোধ নিস্পত্তি কার্যক্রম অকার্যকর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৬ পিএম, ১৬ জুন, ২০২১


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা লংঘন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) জ্বালানী খাতের বিরোধ নিস্পত্তি কার্যক্রম অকার্যকর করে দিচ্ছে।  এর ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রের প্রধান নিবাহী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করার ফলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তাঁর সরকারের একটি সাফল্যকে ভণ্ডুল করে দিয়ে সরকারকে মিথ্যাবাদী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো কয়েকশ মামলা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে বিইআরসি আইনের আওতায় প্রণীত বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধানমালার অধীনে নিস্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু বিরোধ (মামলা) আরবিট্রেশনের মাধ্যমে নিস্পত্তির পর রীট মামলার প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে । আরবিট্রেশন শেষ হওয়ার পর এই রকম  কয়েকশ মামলা উচ্চতর আদালত থেকে নিস্পত্তি করা হয়। বিইআরসি`র সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলে ২০১৪ সাল থেকে নিস্পত্তিকৃত সকল আরবিট্রেশন মামলা নিয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে অসংখ্য মামলা রয়েছে যেগুলোর  রায়ের ফলে সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানি অথবা ভোক্তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছে। আবার এই প্রবিধানমালার আওতায় আরবিট্রেশনের মাধ্যমে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধ নিস্পত্তি করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রবিধানমালাটি বাতিল হলে অনেকেই মামলা করবে তাদের উপর আরোপিত অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য। কারণ বিইআরসি একদিকে বর্তমান প্রবিধানমালাটি বাতিল ও হেফাজত না করেই নিজেদের মতো করে একটি প্রবিধানমালা জারী করতে যাচ্ছে, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রবিধানমালাটিকে এবং তার অধীনে প্রণীত কার্যক্রমকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছেন, বিইআরসি সাম্প্রতিক কয়েকটি আদেশে ২০১৪ সালে প্রণীত উক্ত প্রবিধানমালাকে অবৈধ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে । অথচ ২০১৬ সালে প্রবিধানমালাটির প্রথম সংশোধনের সময় আইন মন্ত্রণালয় প্রবিধানমালাটির উপর বিশদ মতামত দেয় । আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই প্রবিধানমালাটি সংশোধিত হয় । ২০১৪ সাল থেকে এই প্রবিধানমালার আওতায়ই আরবিট্রেশনের মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য অসংখ্য মামলা সুপ্রিম কোর্ট বিইআরসি তে প্রেরণ করেছে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল যে কার্যক্রমকে তার সরকারের সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেটিই বিইআরসি`র চেয়ারম্যান গত বছরের মে/জুন মাসে লক ডাউনের মধ্যে গোপনে প্রাক প্রকাশনা করে বাতিল করতে চাচ্ছে। এটি বর্তমানে বিজি প্রেসে আছে গেজেট নোটিফিকেশনের জন্য । বিইআরসি চেয়ারম্যান সহ কয়েকজন ব্যক্তি সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য এটি তড়িঘড়ি করে গেজেট করতে চাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই । 

বিইআরসি যে অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যমান প্রবিধানমালাটি বাতিল করতে চাচ্ছে, সেটি অযৌক্তিক ও বেআইনী। বিইআরসি বলছে, প্রবিধানমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হয়নি। প্রবিধানমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছিল । আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ তাদের ২৪/১/২০১৬ তারিখের  ১০۔০০۔০০০০۔১২৯۔০৪۔৫৫৫۔১৫۔ -৪৯৪ নং পত্রের মাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে ২৫/৪/২০১৭ তারিখের ১০۔০০۔০০০০۔১২৯۔০৪۔৩২۔১৭ নং পত্রের মাধ্যমে রুলস অফ বিজনেস ১৯৯৬ এর সংশ্লিষ্ট বিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় যে, প্রবিধানমালাটি চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে তাদের (আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ) মতামত নেয়ার আইনগত বাধ্যবাদকতা রয়েছে । প্রবিধানমালাটি সে মোতাবেক আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হয়েছিল। উপরন্তু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রবিধানমালা এবং এর অধীনে গৃহীত কার্যক্রমকে সরকারের সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে যারা নস্যাৎ করতে চায়, তাদের এই কর্মকান্ডকে `ঔদ্ধত্যপূর্ণ` হিসেবে মন্তব্য করেছেন একজন জ্বালানি  বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, যারা এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত, তারা নিঃসন্দেহে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভেতরে ভাপটি মেরে থাকা অশুভ চক্র এবং তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করতে চায়। এই সরকারের শুরু থেকে অর্থাৎ ২০০৯ সাল এই প্রবিধানমালা প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আইন বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে পাঁচ বছরের মাথায় প্রবিধানমালাটি প্রণয়ন করা হয় । তারপর দীর্ঘ সাত বছর এর আওতায় সফলভাবে বিরোধ নিস্পত্তি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চতর আদালত প্রবিধানমালার সংশ্লিষ্ট ক্লজ উদ্ধৃত করে মামলা গুলো আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য কমিশনে প্রেরণ করেছে। এই চক্রটি সরকারের ১২ বছরের একটি সাফল্যকে বাতিল করে দিয়ে সেটি আবার ভিন্ন নামে ২০২১ সাল থেকে শুরু করতে চায়। আর যেটি করতে চাচ্ছে, সেটি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল দেশে প্রচলিত আরবিট্রেশন ব্যবস্থার পরিপন্থী এবং ২০১৬ সালে আইন মন্ত্রণালয় আরবিট্রেশন সম্পর্কিত যে শর্ত বিইআরসি কে দিয়েছিলো, তার সম্পূর্ণ লংঘন। পৃথিবীর কোথাও আইনজ্ঞ ছাড়া আরবিট্রেশন কার্যক্রম পরিচালিত হয় না । বর্তমানে বিইআরসি`র চেয়ারম্যান কোন আইনজ্ঞ ছাড়াই শুধুমাত্র বিইআরসি`র চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে আরবিট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় ।

বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ধারা ৪০ অনুযায়ী জ্বালানী খাতে লাইসেন্সিদের মধ্যে অথবা লাইসেন্সি এবং ভোক্তাদের মধ্যে কোন বিরোধ হলে সেই বিরোধ কোন আদালতে যাবে না। এই ধরণের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিইআরসি তে প্রেরণ করতে হবে। বিইআরসি এই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য আরবিট্রেটর বা সালিসকারী নিযুক্ত করতে পারবে অথবা নিজেই আরবিট্রেটর হিসেবে এই বিরোধ নিস্পত্তি করতে পারবে। এই ধারায় বলা আছে, এই বিরোধ নিস্পত্তির নিয়ম ও পদ্ধতি প্রবিধানমালার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। ৪০ ধারায় আরও বলা আছে, আরবিট্রেটর কর্তৃক প্রদত্ত রোয়েদাদ কমিশন (বিইআরসি) বরাবর উপস্থাপন করা হবে এবং কমিশন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে । আরও বলা আছে, এই বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে । আইন মন্ত্রণালয় (আইন ও বিচার বিভাগ) ২৪/১/২০১৬ তারিখের  ১০۔০০۔০০০০۔১২৯۔০৪۔৫৫৫۔১৫۔ -৪৯৪ নং পত্রের মাধ্যমে মতামত দেয় যে, যেহেতু এই আইনের আওতায় কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নেই, ফলে ভুক্তভোগী, বিচারপ্রার্থীগণের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । সেজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ মতামত দেয় যে, প্রথম পর্যায়ে আইন ও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তি করা হবে। তারপর দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে কমিশন সিদ্ধান্ত দিবে এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আইন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে অমান্য  করে মূলত বিইআরসি`র চেয়ারম্যান এই বিরোধ নিস্পত্তি প্রক্রিয়া শুধু মাত্র বিইআরসি পর্যায়ে রাখতে চায় l এর ফলে বিইআরসি`র সিদ্ধান্ত সংশোধনের জন্য উর্ধতন কোন ফোরাম থাকছে না যেটি যেকোনো বিচারিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত জরুরী, অন্যদিকে বিইআরসি`র চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণের মধ্যে কোন আইন বিশেষজ্ঞ না থাকায় তাদের মাধ্যমে কোন কার্যকরী আরবিট্রেশন সম্পন্ন সম্ভব নয় ।কারণ আরবিট্রেশন কার্যক্রম একটি উচ্চমানের বিশেষায়িত কার্যক্রম। আইনজীবী হওয়া ছাড়াও আরবিট্রেশনের বিচারককে আরবিট্রেশন বিষয়ক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হয় । বিইআরসি`র চেয়ারম্যান সহ প্রতিষ্ঠানটির কোন সদস্যই আইনজ্ঞ নন । তাই শুধু মাত্র বিইআরসি`র মাধ্যমে আরবিট্রেশন সম্পন্ন হলে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সেটি ২০১৬ সালে প্রদত্ত আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী ন্যায় বিচারের প্রশ্নে ঝুঁকি পূর্ণ হবে ।

২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল লিগ্যাল এইড দিবস উপলক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গৃহীত আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন সাফল্যজনক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জ্বালানী সেক্টরে তাঁর সরকারের সময় গৃহীত বিরোধ নিস্পত্তি কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি তাঁর লিখিত বক্তৃতায় বলেন, " যেমন আমাদের জ্বালানী সেক্টরে একজন জেলা জজ সহ সাত সদস্যের ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে। জ্বালানী সেক্টরের সকল বিরোধ প্রচলিত আদালতের পরিবর্তে এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিস্পত্তি করা হচ্ছে। মামলার জট নিরসনের জন্য এবং সময় বাঁচানোর জন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা নিয়েছি ।"  

বিইআরসি`র  কর্মকান্ডকে দুরভিসন্দিমূলক মনে হয়। এই বিষয়ে বিইআরসি`র বর্তমান চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য সফল হলে সাত বছরের বেশী সময় ধরে চলমান বর্তমান সরকারের একটি সাফল্যজনক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।

একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিটি বিনিয়োগ চুক্তিতে বিরোধ নিস্পত্তির ক্লজ রয়েছে যাতে বলা আছে, আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তি করা হবে l কিন্তু বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ধারা ৪০ এর বিধানের কারণে এই সকল বিরোধ কেবলমাত্র বিইআরসি`র আওতায় আরবিট্রেশনের মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে হবে । কিন্তু বিইআরসি পেশাদার আরবিট্রেটর ছাড়া অর্থাৎ কোন আইনজ্ঞ ছাড়া শুধুমাত্র বিআরসি`র  চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দিয়ে আরবিট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করলে বিনিয়োগকারীরা একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে । এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বিরোধ নিস্পত্তির বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিনিয়োগ সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে ।

বিইআরসি`র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিইআরসি আইন ২০০৩ এর  ৭ ধারা অনুযায়ী এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রয়েছে । এই ধারায় যে কয়েকটি বিষয়ে ডিগ্রী থাকার বাধ্যবাদকতা রয়েছে, তার মধ্যে অর্থনীতিও রয়েছে ।  আইনের ধারা ৭(১ক) এ বলা আছে, "খনি ও খনিজ সম্পদ, কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল অথবা পেট্রোলিয়াম বিষয় হইতে একজন এবং বিদ্যুৎ বিষয় হইতে একজন সদস্য নিয়োগ করিতে হইবে এবং অবশিষ্ট তিনজন সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) তে উল্লিখিত বিষয়সমূহের যে কোনটি হইতে একজন করিয়া সদস্য নিয়োগ করিতে হইবে।" অর্থাৎ চেয়ারম্যান ও সদস্য সহ পাঁচ জনের মধ্যে একই বিষয়ে ডিগ্রী প্রাপ্ত একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারবে না । কমিশনের একজন সদস্য আবু ফারুক অর্থনীতি বিষয়ে ডিগ্রীধারী। কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মিয়াও অর্থনীতি বিষয়ে ডিগ্রীধারী। আইন অনুযায়ী অর্থনীতিতে ডিগ্রীধারী একজন নিয়োগ পাওয়ার বিধান রয়েছে । জানা যায়, আবদুল জলিল মিয়া এই তথ্য গোপন রেখে মন্ত্রণালয়ে নিজের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন । বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ধারা ৭ (১ক) অনুযায়ী তাঁর এই নিয়োগ বেআইনি ও অবৈধ। আদালত কর্তৃক এই নিয়োগ বাতিল হওয়ার আগেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির এই নিয়োগ বাতিল করা সমীচীন হবে।

জানা যায়, আবদুল জলিল মিয়া বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ১০ ধারা লঙ্ঘন  করে এবং সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নিজেই নিজের জন্য বিভিন্ন নামে ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি নিচ্ছেন। ধারা ১০ এ বলা আছে,  "চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের বেতন, ভাতা, পদমর্যাদা, জ্যেষ্ঠতা ও চাকুরীর অন্যান্য শর্তাদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের বেতন, ভাতা ও চাকুরীর অন্যান্য শর্তাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে ।"  এই আইনের ধারা ১০ এর বিধান অনুযায়ী এ যাবৎ কোন বিধিমালা প্রণীত হয়নি। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিইআরসি নিজেই আদেশ দ্বারা এই ধরণের কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অথচ চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া আইন লংঘন করে নিজেই বিভিন্ন নামে ভাতা নিচ্ছেন । 

জানা যায়, বিইআরসি`র কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের এলপিজি খাত ঝুকির মধ্যে পড়েছে।  এলপিজি খাতের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এলপিজি`র মূল্য নির্ধারণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে মামলায়ও বিইআরসি`র কারও কারও নেতিবাচক ভুমিকা ছিল। 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ঘোষণা ফরিদপুর ডিসির

প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং সদস্য অজিত বিশ্বাসকে ধরিয়ে দিলে উপযুক্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনাপরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হলরুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন। পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় এ ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচ্যুয়াল অফেন্ডার অর্থাৎ স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কীভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে মাগুরায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। সেখানে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পালিয়ে যান। চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের দ্বৈত ভূমিকার কারণে তাকে প্রথমদিকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে যখন ভিডিও ফুটেজে তার সম্পৃক্ততা দেখা যায় তারপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক। জড়িতদের অবস্থান বা ধরিয়ে দিতে বা গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে।

কামরুল আহসান বলেন, চেয়ারম্যান তপন এবং দুই মেম্বারকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য এয়ারপোর্ট-বন্দর এবং বর্ডারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ইতিপূর্বে একাধিক অন্যায় করেছে। ইউএনও’র ওপর হামলা ও টিসিবি কার্ড আত্মসাতের দায়ে তাকে দুই বার বরখাস্তও করা হয়। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে পদে ফেরেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, এঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসিন কবির, রামানন্দ পাল প্রমুখ। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মন্দিরের প্রতিমায় আগুনের খবর পেয়ে জড়ো হন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে কাজ করা ৭ শ্রমিককে সন্দেহ করেন তারা। পরে স্কুলে গিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। এতে গুরুতর আহত হলেও শ্রেণিকক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রথমে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।

পরে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত আশরাফুল ও এরশাদুল মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে।

এদিকে ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও মেম্বার অজিত বিশ্বাস গা ঢাকা দিয়েছেন।

ফরিদপুর   মধুখালী   পঞ্চপল্লী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে তিন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাষ্ট্রের তিন এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বিপরীতে কারা নিয়োগ পাবেন- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা কল্পনা আলাপ আলোচনা চলছে।

যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২৪ জুন সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিন বছরের জন্য তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত সেনাপ্রধানের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নীতি খুবই কম। সেনাবাহিনীতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয় এবং নানা রকম বিষয় বিবেচনা করে নতুন সেনাপ্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন ব্যতিক্রম না হলে ২৪ জুনের মধ্যেই বাংলাদেশ নতুন একজন সেনাপ্রধান পাবেন।

বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধান বা আইজিপি যাকে বলা হয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ জুলাই। তিনি এখন দেড় বছরের চুক্তিতে আছেন। তার দেড় বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ১২ জুলাই। কাজেই ১১ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন একজন পুলিশ প্রধান নিয়োগ দিতে হবে সরকারকে।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি বর্তমান পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সরকার তাকে দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। পুলিশেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনা ব্যতিক্রমী ঘটনা। এক্ষেত্রে নির্বাচন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। নতুন করে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নতুন আইজিপি কে হবেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গ্রেড-১ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই এই পদে নিয়োগ দেবে। 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৪ জুলাই। তিনিও এক বছরের চুক্তিতে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার মেয়াদ শেষ হলে তাকে পুনরায় এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময়সীমা আগামী ৫ জুলাই শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। নতুন কোনো মুখ্যসচিব দেওয়া হবে কিনা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে- এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে যদি তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিতে নিয়োগ না দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতার নীতি অনুসরণ করা হতে পারে বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন। এক্ষেত্রে যে দুজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্যে একজন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল। অন্যজন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু জেষ্ঠ্যতম বিষয়টি অনুসরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী স্বীয় বিবেচনায় যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নিয়োগ করবেন। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসেন সেটির অপেক্ষায় আছে গোটা দেশবাসী।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ   সেনাপ্রধান   মুখ্যসচিব   তোফাজ্জল হোসেন মিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া: ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।

চীনের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে আগামী মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসবে। আর এই বিষয়ে গতকাল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন যে, প্রতিবেশী দেশ কিংবা উন্নত এই ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সবসময়ই দৃষ্টি রাখে।

গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে সহায়তা করার জন্য যেমন তারা আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও চীন আগ্রহ দেখাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ভারতের কৌশলগত বিরোধ রয়েছে। এমন এক সময়ে চীন বাংলাদেশে এই যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে যে সময় ভারতের নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এখন ভারতের নীতি নির্ধারক এবং সকলের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। আর একারণেই এখন চীনের এই সামরিক মহড়ার যৌক্তিকতা এবং এর প্রভাব এই উপমহাদেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় কীভাবে পড়বে তা নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মালদ্বীপ হারানোর পর ভারতের এই অঞ্চলে কৌশলগত একমাত্র মিত্র হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নানা বাস্তবতার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন এবং সেভেন সিস্টারে শান্তি ও অখণ্ডতা সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও বাংলাদেশকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। আর দুই দেশের সম্পর্ক ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যখন নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ হবে ভাবা হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, তিনি প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন ভারতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরেও ভারতে যাওয়ার কথা। নির্বাচনের পরপর এরকম একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। কিন্তু যখন দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা স্পর্শ করছে তখন ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের চীনপ্রীতি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি প্রধান দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।

বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর চীনকে অনেক আগ্রাসী কূটনীতিতে দেখা যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সমস্ত মন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত, তাদের সাথেও চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ নগদ অর্থ বা ঋণ এর দায় মেটানোর জন্য চীনের কাছে হাত পাততে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে এতদিন ধরে ভারসাম্যের কূটনীতি রক্ষা করেছিল সেটি কতটা রক্ষা করতে পারবে সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর চীনের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাও দেখার বিষয় বলে অনেকে মনে করছেন।


বাংলাদেশ   ভারত   চীন   ভূরাজনীতি   সামরিক মহড়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ: ০৫:২৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পর পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি ছাড়াও একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের। দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি।

এদিন বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান আয়তন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজিকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।

এদিন বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   থাইল্যান্ড   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রেমিকার আত্মহত্যার শোকে পৃথিবী থেকে বিদায় প্রেমিক

প্রকাশ: ০৩:৫৪ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

নরসিংদীর শিবপুরে প্রেমিকার আত্মহত্যার শোক সইতে না পেরে প্রেমিক সিফাত (১৯) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমিকার মৃত্যুর ১৯ দিন পর ফেসবুক‌ স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিক সিফাত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে গেল আমারে কতটা ভালোবাসে। আমিও প্রমাণ করে দিমু তানহারে আমি কতটা ভালোবাসি। কারও সঙ্গে ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর দেখা হবে না সবাই দোয়া কইরো শান্তিতে থাকি কিংবা অশান্তিতে দুজন যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমার শেষ ইচ্ছা তানহার কবরের পাশে আমাকে কবর দেওয়া হোক।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আর আমার কোনো কিছুর জন্য তানহার পরিবার বা আমার পরিবার দায়ী না, এমনকি আমার কোনো ভাই-ব্রাদার বা বন্ধুও দায়ী না। যা হবে আমার নিজের ইচ্ছেতে হবে। সত্যি বলতে আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। আমাকে যদি কেউ বাঁচিয়েও নেয় আমি পুনরায় আত্মহত্যার চেষ্টা করব। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচানোর চেষ্টা কইরো না। বেঁচে থেকে আর কি হবে, যার জন্য বাঁচার কথা ছিল সে তো আর নেই।’

সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আমারে কথা দিছিলো যদি বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচমু আর যদি মরতে হয় তো একসঙ্গে মরমু। আমি তানহারে এই কথাটাই দিছিলাম। কিন্তু একটা চরিত্রহীন জানোয়ার আমাদের সুখে থাকতে দিল না। ওদের অত্যাচারে তানহা আত্মহত্যা করল। এক প্রকার তারা তানহারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। জানোয়ারের পরিবারকেই আমি খুনি বলে দাবি করি। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে জানোয়ারের পরিবার স্বাধীনভাবে চলবে, ওদের কোনো সাজা হবে না। আর অন্যদিকে আমার তানহা শেষ, আমি অর্ধেক শেষ আমার পরিবারও শেষ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না (প্রমাণ হয়ে যাক দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসতাম) আর আমি চরিত্রহীন জানোয়ারের পরিবারের সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এমন সাজা দেওয়া হোক অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না হয়। আর যেন কারও প্রাণ না ঝরে। কেউ যেন ব্ল‍্যাকমেইলের শিকার না হয়। আমার শেষ একটাই ইচ্ছে- আমরা দুজনে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা হলো না। তাই আমার মৃত্যুর পর তানহার কবরের পাশে যেন আমার কবর দেওয়া হয়। আমি আঙ্গুররে মারছি শুধু একটা কারণে, হেয় তানহার হাতে ধরছিল। তানহারে খারাপ প্রস্তাব দিছিল। আমি সহ্য করতে পারি নাই। তাই হেরে কোবাইছি। আমরা প্রেম করছি এটাই কি অপরাধ ছিল। আমাদের জীবন শেষ করে দিল। ভালো থাকুক আঙ্গুর আর আঙ্গুরের পরিবার।

এদিকে সিফাতের বাবা ইব্রাহিম জানান, প্রতিবেশী চাচাতো বোন খলিলের মেয়ে তানহার (১৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার ছেলে সিফাতের। গত ৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার সময় তানহা ঘরের ভেতর থেকে আর সিফাত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় দেখে ফেলে একই এলাকার রাজুর ছেলে আঙ্গুর (২৫)।

এ সময় আঙ্গুর তানহাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিফাত এতে নিষেধ করে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আঙ্গুর সিফাতকে মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে সে উত্তেজিত হয়ে আঙ্গুরকে কুপিয়ে আহত করে। মারামারির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। লোকলজ্জায় গত ৬ এপ্রিল রাতে তানহা নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এসব বিষয়ে গ্রামীণ সালিস দরবার হওয়ার কথা ছিল। সালিস দরবারে আমাকে ও আমার ছেলেকে এটা করবে ওটা করবে বলে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। দরবারে গেলে জমির দলিল নিয়ে যেতে বলতো। এসব মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ছেলে সিফাত। আমি এর বিচার দাবি করছি।

শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।


আত্মহত্যা   প্রেমিক-প্রেমিকা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন