কবির বিন আনোয়ার মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার খবরে আমি উল্লসিত হয়েছিলাম। ’৭৫-এর পর
এই প্রথম সরাসরি ছাত্রলীগ রাজনীতি করা কোনো কর্মকর্তা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্ব পেলেন। ১১ ডিসেম্বর অপু
ভাইয়ের (কবির বিন আনোয়ারের ডাকনাম) নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এ সময় আমি
বিদেশ সফরের প্রস্তুতি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ভাবলাম দেশে ফিরে অপু ভাইয়ের অফিসে যাব। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রুমে তার সঙ্গে আড্ডা দেব। কিন্তু দেশে ফিরতে ফিরতেই দেখলাম নতুন প্রজ্ঞাপন। কবির বিন আনোয়ারকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি
তার বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ
হয়। বিগত মন্ত্রিপরিষদ সচিব দুই দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও কবির বিন আনোয়ারের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। মাত্র ১৯ দিনের জন্য
তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে দায়িত্ব পালনের নতুন রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে
কম সময় ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড ছিল চৈনিক বাম ড. কামাল সিদ্দিকীর।
তিনি এক মাস চার
দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কবির বিন আনোয়ারের আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি তার চাকরি জীবনের শেষপ্রান্তে এই দায়িত্ব পান।
এরপর দুবার তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পুরস্কার পেয়েছিলেন। কবির বিন আনোয়ারকে যখন এই দায়িত্ব দেওয়া
হয়, তখন সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন। অন্তত আগামী নির্বাচনে তিনিই প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা থাকবেন। কিন্তু আচমকাই তিনিই বিদায় নিলেন। কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী পরিবারের সদস্য। সিরাজগঞ্জের রাজনীতির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সেখান থেকে ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন, এমন ইচ্ছার কথা তিনি প্রায়ই বলেন। কিন্তু এখন গণপ্রতিনিধি আদেশের যে বিধান, তাতে
তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। এক-এগারোর সময়
ওই বিধান সংশোধন করা হয়। নতুন বিধান অনুযায়ী, অবসরে যাওয়ার দুই বছর অতিবাহিত না হলে কোনো
সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। অনেক সরকারি কর্মকর্তাই এখন এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ
করতে চাইছেন। অপু ভাই তার প্রিয় দল আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন পাবেন কি না ভিন্ন
প্রশ্ন। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না সেটি
আইনগত বিষয়। অবশ্য তাকে অবসর দেওয়ার পর পরই নতুন
দায়িত্ব দেওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কবির
বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ
টি ইমামের কক্ষে তার চেয়ারে তিনি বসেছিলেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে গুঞ্জন আছে, এইচ টি ইমামের শূন্যপদের
দায়িত্ব কবির বিন আনোয়ারকে দেওয়া হতে পারে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হতে পারেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কবির বিন আনোয়ার কি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
পেতে পারতেন না? তাকে কি ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ হিসেবেই ক্যাবিনেট সচিব করা হয়েছিল? এমন নয় যে, সরকার
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় না। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এখন ডাল-ভাতের মতো। আবার অনেক সরকারি কর্মকর্তা অবসরের পর নানা কমিশনে
নানা পদে চাকরি জুটিয়ে ফেলেন। অনেকটা পুনর্জন্মের মতো। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিবের কথাই ধরা যাক। মুখ্য সচিবের দায়িত্ব যখন শেষ তখন তিনি দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন। দুই বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই তিনি পেলেন বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব। সেটিও তিন বছরের জন্য। মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায়। এমন সৌভাগ্যবান সরকারি কর্মকর্তা কজন আছেন? নিশ্চয়ই তিনি অসাধারণ মেধাবী। তিনি অবসরে গেলে এই রাষ্ট্রের অপূরণীয়
ক্ষতি হয়ে যাবে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নন, বহু সরকারি কর্মকর্তা যাদের অতীত জীবন ধোঁয়াশাচ্ছন্ন, তারাও প্রশাসনে নিজেদের অপরিহার্য প্রমাণ করে চুক্তিতে ঝুলে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং পাচ্ছেন। তাহলে কবির বিন আনোয়ারের অযোগ্যতা কোথায়? তিনি ছাত্রলীগ করতেন, এটাই কি তার অযোগ্যতা?
শুধু কবির বিন আনোয়ার নন, শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন, এমন সরকারি কর্মকর্তাকে কেন যেন অযোগ্য মনে করা হয়। ধরেই নেওয়া হয়, তারা কম মেধাবী। আবদুল
মালেক ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে বদলি করা হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার বিভাগে। কিন্তু সেখানে টিকতে পারেননি তিনি। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তার চাকরিজীবন শেষ করেন। নুরুল ইসলাম তো ধর্ম সচিব
থেকেই চাকরি শেষ করলেন। মেসবাহ উদ্দিন যুব ও ক্রীড়া সচিব
হয়েছিলেন, এটাই যেন বিরাট অপরাধ। তার সচিব হওয়ার পর অনেক আমলা
নাক সিটকে বলেছিলেন, ‘সচিব পদের আর মর্যাদা থাকল
না।’ প্রশাসনে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা কর্মকর্তারা কোণঠাসা কেন? তাও আবার আওয়ামী লীগ যখন টানা ১৪ বছর ক্ষমতায়।
শুধু ছাত্রলীগ থেকে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন, দুঃসময়ে কষ্ট করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য নিজের চাকরি ঝুঁকিতে ফেলেছেন-এমন কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সুসময়ে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যান। এ তালিকা এত
দীর্ঘ যে, এই লেখার জন্য
সম্পাদক আমাকে যে জায়গা বরাদ্দ
দিয়েছেন তাতে সব নাম লেখা
যাবে না। আমি দু-একটি উদাহরণ
দিতে চাই। ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। আমার দেখা সিভিল প্রশাসনে অন্যতম সৎ, মেধাবী, পরিচ্ছন্ন এবং যোগ্য কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের সব কঠিন সময়ে
তিনি পাশে থেকেছেন। আবার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি কোণঠাসা হয়েই বিদায় নিলেন। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়নি। অবসরের পর তিনি ‘আকর্ষণীয়’
কোনো চেয়ারও পাননি। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। প্রশ্ন হলো কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থাকা কি অযোগ্যতা? সরকারি
চাকরিতেই শুধু নয়, সর্বত্র ছাত্রলীগের প্রতি এক ধরনের উপেক্ষা
এবং নাক সিটকানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কবির বিন আনোয়ার ভাগ্যিস বিসিএস দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়েছিলেন। সে কারণেই হয়তো
তিনি ‘আমলা কোটায়’ আওয়ামী লীগের পদ-পদবি পেতে
পারেন। কিন্তু তিনি যদি রাজনীতিতে থাকতেন তাহলে তার কপালে কী জুটত, তা
ভেবে দেখার বিষয় বটে। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’। এই সংগঠনটি
আওয়ামী লীগের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য সরকারি চাকরি নেননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেননি। রাজনীতিতে কি তাদের যথাযথ
মূল্যায়ন হয়েছে? ১৯৮১-৮৩ সালে ছাত্রলীগ
কমিটির সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন অনেক কসরত করে এবার প্রেসিডিয়ামে জায়গা পেয়েছেন। পরের কমিটির (১৯৮৩-৮৫) আবদুল মান্নান অনাদরে-অবহেলায় চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন। ওই কমিটির জাহাঙ্গীর
কবির নানক বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে কোনোমতে টিকে আছেন। আবদুর রহমান প্রেসিডিয়াম সদস্য বটে; কিন্তু গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত।
১৯৮৮-৯২ সালের ছাত্রলীগ
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাও এমপি। এর পরের অবস্থা
কী? ১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন মঈনুদ্দিন হাসান
চৌধুরী। শিক্ষিত, মেধাবী। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর বেশ আলোচিত
হয়েছিলেন। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরাও তাহলে ছাত্রলীগ করে। তিনি এখন কোথায়? রাজনীতিতে মূলধারায় তিনি কি অযোগ্য? ’৯৪-৯৮ সালে ছাত্রলীগ
সভাপতি হন এনামুল হক
শামীম। সেই কঠিন সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শামীম। চমৎকার সংগঠক। কর্মিবান্ধব। উপমন্ত্রী করে যেন তাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই যেন তার জন্য যথেষ্ট। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই, এমপিও নন ওই কমিটির
সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন কোথায়?
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার কি কোনো যোগ্যতাই
এদের নেই। এভাবে আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখার প্রত্যাশায় যারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তারা এখন হতাশায় ডুকরে কাঁদেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি থেকে সযত্নে দূরে থেকে যারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়েছেন। মাখন-রুটি খেয়ে বড় হয়েছেন। ছাত্ররাজনীতির
চেয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকছেন। তারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগে এবং রাজনীতিতে। রাজনীতিতেও এখন ‘ছাত্রলীগ’ যেন এক অপরাধ। অযোগ্যতা।
’৭৫-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে এক সর্বব্যাপী প্রচারণা শুরু হয়। ছাত্ররাজনীতি দূষিত। ছাত্ররাজনীতি নষ্ট। পচা-দুর্গন্ধময় এমন একটি নীরব বার্তা শিক্ষার্থীদের কানে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এটি এখনো চলমান। আগে তাও ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা বাম ছাত্র সংগঠন যারা করে, তাদের মেধাবী বলা হতো। এখন সেই রেওয়াজও উঠে গেছে। তুমি ভালো ছাত্র। বেশ, ছাত্ররাজনীতি থেকে নক্ষত্র দূরত্বে থাক। ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। এমন একটি বার্তা সারাক্ষণ শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতিতে যে পঙ্কিলতা, সুবিধাবাদ আর আখের গোছানোর প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়েনি, তা নয়। ছাত্ররাজনীতিকে কুৎসিত করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর। জিয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘হিজবুল বাহার’ প্রমোদতরীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অস্ত্র। বিএনপিকে এবং তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে অস্ত্র, টাকা আর পেশিশক্তির আমদানি ঘটিয়েছিলেন ছাত্ররাজনীতিতে। জিয়া যে কৌশলে শিক্ষাঙ্গন দখলে রাখতে চেয়েছিলেন, ঠিক একই কৌশলের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন আরেক সামরিক একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ছাত্রদল আর নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ একই প্রক্রিয়ায় গঠিত। একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই সৃষ্টি। ’৭৫-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতিতে যে দূষিত রক্তপ্রবাহ শুরু হয়, তা ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও সঞ্চালিত হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, ছাত্ররাজনীতিকে ধ্বংস করার এক পরিকল্পিত নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে এখনো। এখন বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি টিকে আছে কেবল জাতির পিতার আদর্শে গড়া ছাত্রলীগের জন্যই। নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি সমালোচনার পর ছাত্রলীগই এখনো ছাত্ররাজনীতির বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। তাই ছাত্রলীগকে যদি ধ্বংস করা যায় কিংবা এরকম একটি পরিস্থিতি যদি তৈরি করা যায়, ক্ষমতাসীন দলই ‘ছাত্রলীগ’কে উটকো ঝামেলা বা আপদ মনে করবে। ছাত্রলীগকে বিলুপ্ত করবে। তাহলে ষড়যন্ত্রের ষোলকলা পূর্ণ হয়। তাহলেই ‘ছাত্ররাজনীতি মুক্ত’ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। আর এটি করা গেলেই বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে। ইতোমধ্যে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই পথটা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলেই সুশীল রাজত্ব কায়েমের পথ পরিষ্কার হবে। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও সুশীলদের উজ্জ্বল উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। শেখ হাসিনা-বিহীন আওয়ামী লীগ যে সুশীলদের দখলে চলে যাবে তার এক বার্তাও পাওয়া গেছে। ছাত্ররাজনীতিকে পুরোপুরি বস্তাবন্দি করতে না পারলে বিরাজনীতিকরণ ফর্মুলা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর ‘ছাত্রলীগ’কে নষ্ট না করতে পারলে ছাত্ররাজনীতিকে পুরোপুরি বাতিল করা অসম্ভব। তাই এখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী প্রচারণা ও তৎপরতা চলছে। ছাত্রলীগ মানেই চাঁদাবাজ। ছাত্রলীগ মানেই ধর্ষক। ছাত্রলীগ মানেই অশিক্ষিত। এমন একটি প্রচারণা ’৭৫-পরবর্তী সময় থেকেই চলে আসছিল। এখন এই প্রচারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগে নাম লিখিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। এখন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগ নেতা বানিয়ে লেখা হচ্ছে ‘ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণ’। ছাত্রলীগে ঢুকে কেউ টেন্ডারবাজি করছে। তাকে ছাত্রলীগের নেতা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ভালো কাজগুলোকে আড়াল করা হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, ছাত্রলীগ দূষিত হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগে জামায়াত-বিএনপি ঢুকে নানা অপকর্ম করছে।’ আর এই অপকর্মগুলোকেই এখন সাইনবোর্ড হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। ছাত্রলীগ পরিচয়কে অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে সর্বত্র। ছাত্রলীগের কোনো ছেলেমেয়ে যদি মেধার জোরে সরকারি চাকরি পায়, তাহলে বলা হয় তদবিরে চাকরি পেয়েছে। প্রশাসন ছাত্রলীগে ভরে গেছে। ছাত্রলীগ সরকারি চাকরি কেন করবে? ছাত্রলীগের কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান, তাহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। শিক্ষার মান নেমে যাচ্ছে। ছাত্রলীগও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়-এমন আর্তনাদ শোনা যায়। ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করে কেউ যদি ব্যবসা করে, তাহলে তো রীতিমতো ভূমিকম্প হয়। টেন্ডার বাণিজ্য করে ছাত্রলীগ লুটপাট করছে। আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতিতে ছাত্রলীগ ঠাঁই পেলেও সমালোচনা হয়। রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার এমন চিন্তিত মন্তব্য করেন সুশীলরা। তাহলে ছাত্রলীগ করা একটি ছেলে বা মেয়ে কী করবে? কোথায় যাবে? এটি অবশ্য দীর্ঘদিনের প্রবণতা। ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী যত বড় চক্ষু বিশেষজ্ঞ হন না কেন, তিনি পণ্ডিত নন। কেন? তিনি তো ছাত্রলীগ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সভাপতি ছিলেন। এ জন্য সারা জীবনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি স্বাধীনতা পদক বা একুশে পদক পাওয়ার যোগ্য নন। জাহাঙ্গীর কবির নানক যত ত্যাগ স্বীকার করুন না কেন, প্রতিমন্ত্রী হওয়াটাই তার বিরাট অর্জন। লেখাপড়া নেই। আর কত? ড. মিজান যত ভালো শিক্ষক হোন না কেন, তাকে শিক্ষকের মতো লাগে না। কেন? তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। সুভাষ সিংহ রায় কোনো দিনই বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। কারণ ছাত্রলীগ। ফার্মাসিস্টরা তাকে বলে সাংবাদিক। আর সাংবাদিকরা বলে বহিরাগত। সদ্য ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েছেন আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র সাদ্দাম হোসেন। এই তরুণ যে উদ্দীপ্ত বক্তৃতা দেয়, তা যদি কোনো বাম-ঘরানার ছাত্রনেতা দিত, তাহলে দেশে হইচই পড়ে যেত। বলা হতো, মাহমুদুর রহমান মান্নার পর আরেকজন তুখোড় ছাত্রনেতার আবির্ভাব ঘটেছে ছাত্ররাজনীতিতে। সাদ্দাম ছাত্রলীগের নেতা। তার ওপর বাড়ি উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত জেলায়। কাজেই তার বক্তব্য জ্ঞানশূন্য। গভীরতাহীন। ছাত্রলীগ করা শাবান মাহমুদ যখন দিল্লিতে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে সফল হন, তখন ভ্রু কুঁচকে কেউ বলে, ‘ও বিদেশে মিশনে চাকরি পায় কীভাবে। ও কি ইংরেজি জানে।’ ছাত্রলীগ করাটা কি এখন তাহলে অপরাধ হয়ে গেল? আওয়ামী লীগ নেতারাও ইদানীং ছাত্রলীগকে ইচ্ছামতো গালমন্দ করে মজা পান। আড়ালে-আবডালে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মন্ত্রী হতাশার সুরে বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের সব ধ্বংস করে দিল’। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, কিছু ছাত্রলীগ দুর্নীতি করে, ঠিকাদারিতে মাস্তানি করে। তাদের সব অন্যায় এক পাল্লায় দিলেও একজন মন্ত্রীর দুর্নীতির তুলনায় তুচ্ছ। একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই ছাত্রলীগের পক্ষে না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউই ছাত্রলীগ থাকুক চায় না। ‘ছাত্রলীগ’কে আঁস্তাকুড়ে পাঠাতে যেন এক জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই জাতীয় ঐকমত্য আসলে বিরাজনীতিকরণের এক প্রকল্প। ছাত্রলীগ না থাকলে রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হবে। তাহলেই রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। যে কারণেই ছাত্রলীগ এখন সবার টার্গেট। এ কারণেই ছাত্রলীগ পরিচয় এখন অযোগ্যতা।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
আরও পড়ুন: কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভক্ত, কোন্দলে
জর্জরিত আওয়ামী লীগ দল গোছাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল উপজেলা নির্বাচনে
দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি মন্ত্রী-এমপির
স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী না করার আহ্বান জানায়; কিন্তু দলের ওই নির্দেশনা মানেননি
অনেকেই। যেসব মন্ত্রী, এমপির স্বজনরা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা
ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সারা দেশে আওয়ামী
লীগের তৃণমূলের দৃষ্টি সেদিন ছিল গণভবনে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণভবনে
বৈঠকে উপজেলা প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কোনো আলোচনা হয়নি। বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। একজন সংবাদকর্মী
প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার
মর্মার্থ হলো, এখনই চটজলদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী
লীগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্তই চটজলদি নেয় না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তা অনুমোদন করে
না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কোনো নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে
প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে
সবকিছু পর্যালোচনা করে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু বিএনপিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবে, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কয়েক বছর ধরেই বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপজেলা নির্বাচনেও প্রথম দফায় ৭৩ জন, পরবর্তী সময়ে আরও ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের একটি প্রক্রিয়া থাকা দরকার। সবার সামনে খুন করলেও, পুলিশ যদি অপরাধী ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গুলি করে, সেটা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এটাকে অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকে বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার।
আরও পড়ুন: আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার
কিন্তু দলেই প্রতিনিয়ত বিচারহীনতার
সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ
করা উচিত। কিন্তু বিএনপি কিছুদিন ধরে যে গণবহিষ্কারের উৎসব করছে, তা কি আইনি প্রক্রিয়া
অনুসরণ করে? যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের কি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল? তারা
কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন? কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে কি গোটা বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা হয়েছে? উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের কাউকে ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ দেওয়া হয়নি। দপ্তর থেকে সেসব হতভাগাকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি
একটি গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেমন গর্হিত, অনাকাঙ্ক্ষিত,
ঠিক তেমনি এই বহিষ্কার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ দলের ভেতর চলছে অগণতান্ত্রিক
কার্যক্রম। বিএনপির জন্য অবশ্য ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভ্যাস জন্মগত।
ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। তিনি
অবৈধ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর যারা তার জন্য ন্যূনতম
হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের বিচার ছাড়াই জিয়া নির্মমভাবে হত্যা করতেন। কেন্দ্রীয়
কারাগারে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ সৈনিককে। যুদ্ধাহত
মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে এরকম বিচারের নামে প্রহসন করেই হত্যা করা হয়েছিল।
কাজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। জিয়ার মৃত্যুর পর
বেগম জিয়া এবং এখন তারেক জিয়াও সেই চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
গণতান্ত্রিক চিন্তা থেকে দেখলে, বিএনপির গণবহিষ্কার সমর্থন যোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এটি করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে একজন নেতা বা কর্মীকে শাস্তি দেয়; সেটিই সঠিক। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যবস্থা বেশি কার্যকর, দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পারে; সে তর্ক হতেই পারে। বিএনপির এক নেতা বলেছিলেন, দলে শৃঙ্খলা রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে অন্যরা শিক্ষা পাবে। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস পাবে না। এ কঠোর অবস্থান নাকি দলকে শক্তিশালী করবে। সত্যি কি তাই? এর জবাব পাওয়া যায় ১ মে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালবেলায়’। ‘বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে।’ কী তাজ্জব কথা! রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শুনেছি, কমিটি ও পদ-বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপি এখন রাজনীতিতে ‘বহিষ্কার বাণিজ্য’ শুরু করল। নেতাদের অভিনব উপার্জনের এই পথ আবিষ্কারের জন্য দলটির শীর্ষ নেতাকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। অতীতে এরকম অনেক নেতাকে দেখা গেছে, যারা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাদের দলে মহাসমারোহে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি কখন বিএনপিতে থাকেন আর কখন বহিষ্কৃত হন, সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কথাই ধরা যাক। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারালেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন।
আরও পড়ুন: আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়
কিন্তু ২০০১ সালে আবার বীরদর্পে ফিরে
আসেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নানা বাণিজ্যে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এক-এগারোর
সময় বিএনপিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত আবদুল মান্নান
ছাড়া সবাই বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। দুষ্ট লোকেরা বলে, মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকলে তিনিও
আবার বিএনপিতে ফেরত আসতেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা অলি আহমদদের মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন
নেতারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে বিএনপিতে ফেরত যাননি; কিন্তু তাদের দলে ফেরাতে কম চেষ্টা
হয়নি। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপিতে ‘বহিষ্কার’ আর ‘সাধারণ ক্ষমা’র লুকোচুরি খেলা চলছে।
এ যেন শুধু যাওয়া-আসার খেলা। কে কখন দল থেকে ছাঁটাই হচ্ছেন, কে দলে ফিরছেন, কেউ জানেন
না। একই অপরাধের জন্য একজনকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। দলের
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যখন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির স্থানীয় নেতাদের
বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন একই অপরাধে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া হচ্ছে
পুরস্কার। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে দল।
যার ফলে সংগঠনে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং হতাশা দানা বেঁধেছে। চরম পন্থা যে একটি রাজনৈতিক
দলের সাংগঠনিক শক্তিকে ক্ষয় করে বিএনপি তার প্রমাণ। বিএনপিতে মৃত্যুদণ্ড তাই ক্রমেই
অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বহিষ্কার’ অস্ত্র ব্যবহার করে কদাচিৎ। লতিফ সিদ্দিকীর মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অপরাধ না করলে, আওয়ামী লীগ এই চরম শাস্তি প্রয়োগ করে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কাপুরুষতা করে অথবা লোভে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে এসে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি। দলে তাদের ধীরে ধীরে অপাঙক্তেয় করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আবদুল মান্নান কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। এক-এগারোতে যারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিল, তাদের বিএনপি স্টাইলে গণবহিষ্কার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট যে চার নেতা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের ২০০৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জাঁদরেল নেতারা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আলংকারিক পদে জায়গা পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। প্রয়াত মুকুল বোস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো তারকা নেতাদের বহিষ্কার না করে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। দলে থেকেও তারা গুরুত্বহীন, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হন। কর্মীদের উপেক্ষা আর টিপ্পনী সহ্য করে তাদের দল করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে তারা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিল তিল করে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এই শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মান্না, সুলতান মনসুর, আবু সাইয়িদের মতো নেতারা দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগের পর তারা রীতিমতো রাজনৈতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের প্রায়শ্চিত্ত নানা মেয়াদে। অপরাধের গুরুত্ব এবং মাত্রা বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের সময় নির্ধারণ করা হয়। অনেককে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন প্রয়াত মুকুল বোসের প্রায়শ্চিত্তকালীন সময় শেষ হলে, তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। লঘু অপরাধে অনুশোচনার শাস্তি ভোগ করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আবার সাবের হোসেন চৌধুরী প্রায়শ্চিত্ত শেষ করে এখন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
২০০৯ সালে মনোনয়ন না পাওয়া প্রয়াত খ
ম জাহাঙ্গীর পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্তির
কয়েকটি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, এই শাস্তির ফলে নেতাদের আত্মোপলব্ধির সুযোগ বটে। তারা
তাদের ভুল এবং বিভ্রান্তি উপলব্ধির সুযোগ পান। ফলে তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের
শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, এর ফলে দলের অন্য নেতারা একটি সতর্ক সংকেত পান।
চূড়ান্ত সুবিধাবাদ এবং আদর্শহীনতা একজন রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার কীভাবে গিলে খায়,
তার উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা হয়। অন্য কেউ দলের এবং নেতৃত্বের
বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের পরিণাম উপলব্ধি করেন। তৃতীয়ত, এর ফলে দলের প্রধান নেতার প্রতি
নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাজার কৌশলের পার্থক্য দল
দুটির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, আতঙ্ক নেই।
দলে দ্বন্দ্ব, বিভক্তি আছে, কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই।
সুবিধাবাদী আছে, আদর্শহীনতা আছে; কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি নেই। প্রতিপক্ষ
হীন রাজনীতির মাঠে ‘কোন্দল’ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপর রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির
চরম শাস্তির কৌশল নেতাকর্মীদের আতঙ্কের ঘরে বন্দি করেছে। সারা জীবন দলের জন্য অবদান
একটি ভুলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো। দলে সবাই
কুণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। গণতন্ত্র চর্চার বদলে ষড়যন্ত্র
ডালপালা মেলেছে। যোগ্যতার বদলে চাটুকারিতা, তোষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে
বিএনপি সংগঠনটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।
শুধু রাজনীতি নয়, কোনো ক্ষেত্রেই চরম শাস্তি সমাধান নয়। আর সেই শাস্তি যদি উপযুক্ত বিচার ছাড়াই হয়; তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, ঠিক একই কারণে, একটি ভুলেই দল থেকে বহিষ্কার মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল। গণতান্ত্রিক ধারা বিশ্বাস করলে চরম অপরাধীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে। একটি গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা আসলে দলের নির্দেশনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এই নির্দেশনা মানছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান ওবায়দুল কাদেরের নয়, এই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর তার বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেল যে, একমাত্র প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছেন। অন্য কেউই ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি। ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করছেন।