প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটালেন। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করলেন। স্বতঃস্ফূর্ত, খোলামেলা এবং অকপটে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিলেন ‘রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এ সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।’ কিছুদিন ধরেই নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির আড়মোড়া ভাঙছে। মাঠে রাজনীতি শুরু না হলেও কথার লড়াই ইতিমধ্যে জমে উঠেছে। সার্চ কমিটি-সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে একে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলেনি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তাদের ভূমিকা কী। কিন্তু সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এজন্য সংবিধানের আওতায় নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। বিএনপি এখন নির্বাচন কমিশন নয় বরং নতুন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে। দলটির মহাসচিবসহ একাধিক নেতা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে আন্দোলনে রূপ দিতে পারবে কি না তা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এ নিয়ে রাজনীতির জল কোথায় গড়ায় দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। কিন্তু এ মুহুর্তে আমাদের সামনে প্রধান রাজনৈতিক দুটি প্রশ্ন হলো- নতুন নির্বাচন কমিশন কেমন হবে। দ্বিতীয় প্রশ্ন, কেবল নির্বাচন কমিশনই কি পারে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে?
আমরা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এ পর্যন্ত ১২ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে ১২টি নির্বাচন কমিশন পেয়েছি। সব নির্বাচন কমিশনই কম-বেশি বিতর্কিত। ‘নির্বাচন কমিশন’ নামের এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে কেউ কেউ কম বিতর্কিত ছিলেন। কেউ ব্যক্তিত্বহীনের মতো আচরণ করে নির্বাচন কমিশনকেই তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এবং ১২ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘মেরুদণ্ড’ সমস্যাই নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য একটি বড় সমস্যা। মেরুদণ্ড ছাড়া একজন মানুষ যেমন শিরদাঁড়া সোজা করে হাঁটতে-চলতে পারে না, তেমনি আমাদের প্রায় সব নির্বাচন কমিশনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বা চায়নি। এ কারণে নির্বাচন কমিশনই কেবল বিতর্কিত হয়নি, নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডহীন আচরণই এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা টি এন সেশানের মতো একজন মেরুদণ্ডসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব পাইনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে। সুজন নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। এ সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তাঁর অধিকাংশ মতের সঙ্গে আমি একমত নই। বিশেষ করে তাঁর অনেক কথাবার্তাই বিরাজনীতিকরণ চিন্তাকে উসকে দেয়। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বিরামহীনভাবে কাজ করছে এ সংগঠনটি। নির্বাচনসংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে তাদের মতামত, গবেষণা এবং তথ্য-উপাত্ত আছে। কদিন আগে ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আমাদের নির্বাচন কমিশন কতটা ক্ষমতাবান। উত্তরে তিনি যে কথা বললেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড. মজুমদারের মতে ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন ছেলেকে মেয়ে বানানো এবং মেয়েকে ছেলে বানানো ছাড়া সব পারে। নির্বাচন আইন তাকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়েছে। এমনকি কমিশন যে কোনো নির্বাচন বাতিল করে দিতে পারে।’ তাহলে সমস্যা কোথায়? এত ক্ষমতা থাকার পরও আমাদের নির্বাচন কমিশনগুলো কেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে? কেন সরকারের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের বিবেক বন্ধক দেয়? কেন তারা জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়?
বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল ৭ জুলাই ১৯৭২। এম ইদ্রিস ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। জাতির পিতার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশসম। নির্বাচন নিয়ে কোনো নয়ছয় দরকার ছিল না। তার পরও ১৯৭৩-এর নির্বাচনে কিছু কিছু আসনে অযাচিত ঘটনা ঘটেছিল। খুনি মোশতাক কুমিল্লার একটি আসনে হারতে বসেছিলেন। তাকে একরকম জোর করেই জয়ী করা হয়েছিল। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নৃশংস নারকীয়তার পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম ইদ্রিস সপদে বহাল ছিলেন। খুনি মোশতাককে জয়ে সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবেই তাকে দায়িত্বে রাখা হয়েছিল? দেশে দ্বিতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন এ কে এম নূরুল ইসলাম। তিনি বিচারপতি ছিলেন। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সবচেয়ে কলঙ্কিত হয়েছিল এই সরীসৃপ সিইসির হাতে। নূরুল ইসলামই বাংলাদেশে ভোটবিহীন গণভোটের ভৌতিক ফল প্রকাশ করেন। একনায়ক জিয়া ছিলেন এ গণভোটের আয়োজক। জিয়ার জন্য এ গণভোটে প্রথমে ভোট দেখানো হয়েছিল ১০০ ভাগের ওপর। পরে নূরুল ইসলাম কমিশন হ্যাঁ ভোট কিছু কমিয়ে ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ দেখিয়েছিল। স্বৈরাচাররা সব সময় মেরুদণ্ডহীন মোসাহেবদের পছন্দ করে। জিয়ার হ্যাঁ-না ভোট, সাত্তারের প্রহসনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নূরুল ইসলামের আনুগত্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন এরশাদ। এজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে বিদায় নেওয়ার পর এরশাদ তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। নূরুল ইসলামের পর এ সাংবিধানিক পদে আনা হয় আরেক মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিকে। তাঁর নাম চৌধুরী এ টি এম মাসুদ। ’৮৬-এর সংসদ নির্বাচনে মিডিয়া ক্যু করে মাসুদ চমক দেখান। এরশাদের প্রশংসায় ধন্য হন। বিচারপতি মাসুদের পর এরশাদ আরেকজন একান্ত অনুগত ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। কিন্তু তাঁর আয়ু ছিল এক বছরের কম। ১৯৯০-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর ২৪ ডিসেম্বর বিদায় নেন বিচারপতি সুলতান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন বিচারপতি আবদুর রউফকে। বিচারপতি রউফ দায়িত্ব নিয়ে বেশ হুলুস্থূল করেন। ’৯১-এর নির্বাচনে ত্রুটি ছিল। তার পরও আগের তুলনায় মানুষের মতামত নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়। বিএনপির নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়, যারা ’৭৫-এর পর প্রথমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, কিন্তু ’৯১-এর নির্বাচনে যে বিচারপতি রউফের কোনো কৃতিত্ব নেই তা বোঝা গেল কদিন পরই। প্রথমে মাগুরা এবং তারপর মিরপুর নির্বাচনের তামাশা দেখল দেশের জনগণ। মাগুরা নির্বাচন দেখতে গিয়ে পালিয়ে এসে বললেন, ‘আমি অসহায়!’ বোঝা গেল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লাঠিতে ভর করেই তিনি সব সাহস আর ক্ষমতা দেখাতেন। পরে অবশ্য বিচারপতি রউফের আসল পরিচয় জাতির কাছে উন্মোচিত হয়েছিল। ’৯১-এর বাহ্যিক সুষ্ঠু নির্বাচনে জামায়াত কীভাবে ১৮ আসনে জয়ী হয়েছিল তা-ও বুঝতে পেরেছিলেন দেশের ভোটাররা। নির্বাচন কমিশনে মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তি বসানোর রেওয়াজ চালু করেছিল জিয়া এবং এরশাদ। তবে এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কৌতুকাভিনেতা বা জোকার বসানোর প্রথা চালু করেন বেগম জিয়া। ১৯৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল বেগম জিয়া এ কে এম সাদেককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন। সঙ্গে একগুচ্ছ ক্লাউন। এদের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬। ’৯৬-এর মার্চে বেগম জিয়ার পতন হলে সাদেক যুগের অবসান হয়। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন মোহাম্মদ আবু হেনাকে। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং মেরুদণ্ডসহ সিইসি ছিলেন আবু হেনা। এ নির্বাচন কমিশনের পর আওয়ামী লীগ আবার সিইসি হিসেবে সাবেক আমলাকে বেছে নেয়। এম এ সাঈদের অধীনে ২০০১-এর ১ অক্টোবরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এম এ সাঈদও আবু হেনার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তবে তাঁর মধ্যে একটি দলকে হারানোর আক্রোশ-উল্লাস চোখে পড়েছিল। নির্বাচন কমিশনে বেগম জিয়ার সব সময় পছন্দ কৌতুকাভিনেতা। পরপর দুটি অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের পর বেগম জিয়া আবার ভাঁড়ের সন্ধানে নামেন। এম এ আজিজকে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে রসে টইটম্বুর সিইসি ছিলেন এম এ আজিজ। এজন্য হয়তো তিনি ইতিহাসে অমরত্ব পেতে পারেন। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে এ টি এম শামসুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগান্তকারী সংস্কার হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন আচরণবিধি কঠোর করাসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত সাহসের সঙ্গে নিয়েছিল শামসুল হুদা কমিশন। এরপর আরেক সিএসপি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেন। তিনি অবশ্য পরীক্ষা দেওয়ারই সুযোগ পাননি। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত বর্জন করলে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার ছিল না। তবে সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন নির্বাচন কমিশন চাইলে দলীয় সরকারের অধীন ভালো নির্বাচন সম্ভব। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব বর্তায় রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর। নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন সে দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮-তে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ নূরুল হুদা কমিশন পেয়েছিল তা কাজে লাগাতে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। লাগামহীন খেলো কথাবার্তার জন্য এ কমিশনকে অনেকে আজিজ কমিশনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচন কমিশনাররা দলীয় নেতাদের মতো আচরণ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছেন।
এ ১২ জনের নেতৃত্বে ১২টি নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন সরকারের অভিপ্রায় নির্বাচনের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। যেমন চারটি নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যেহেতু কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক আকাঙ্খা ছিল না, তাই নির্বাচন কমিশন মোটামুটি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। আবার রাজনৈতিক সরকারের আওতায় যখন নির্বাচন হয়েছে তখন নির্বাচন কমিশনের মধ্যে রাজনৈতিক সরকারকে খুশি করার একটি সুস্পষ্ট প্রবণতা দেখা গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনই হলো ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ। যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বৈধ সব কৌশল অবলম্বন করবেই। বৈধ কৌশলে যেন কোনো অবৈধ পন্থার অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্যই নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন হলো রেফারির মতো। একটি খেলায় যেমন নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ রেফারি দুই পক্ষকে ‘রুলস অব দ্য গেম’ মানতে বাধ্য করে নির্বাচন কমিশনের ঠিক সে কাজটিই করার কথা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, খেলার মাঠে একজন রেফারি বা আম্পায়ারের যে ক্ষমতা থাকে নির্বাচন কমিশনের কি সে ক্ষমতা আছে? ২০০৮ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন, আচরণবিধি এবং অন্যান্য বিধিবিধান কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনেই যে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব ২০১৩-এর সিটি নির্বাচনগুলো তার প্রমাণ। ওই নির্বাচন প্রমাণ করেছে নির্বাচন কমিশন চাইলেই পারে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কেন সরকার বা ক্ষমতাসীন দলকে খুশি রাখার এক প্রাণান্ত চেষ্টা করে? এ প্রশ্নের উত্তরে এক কথায় বলা যায় নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডের অভাব। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর অনির্বাচিত কিছু ব্যক্তি (প্রয়াত বিএনপি নেতা সাইফুর রহমানের ভাষায় ১০ জন ফেরেশতা) দেশের গণতন্ত্রের ভাগ্যবিধাতা হবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। নির্বাচন কমিশন কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লাঠি দিয়ে চলবে? কেন নিজের পায়ে দাঁড়াবে না?
বাংলাদেশের সংবিধানে এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনই হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। নির্বাচনকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনের অধীনে থাকবে। তাহলে ১০ জন সফেদ ভদ্রলোক কী করবেন? রাজনীতিবিদদের ব্যর্থ প্রমাণ করবেন? রাজনীতিবিদরা একটি নির্বাচন করতে পারেন না, এটি বলে রাজনীতির দৈন্য নিয়ে উপহাস করবেন? নিরপেক্ষ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সৎ, শিক্ষিত মানুষই যদি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেন তাহলে তাদের নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। তারা শুধু আইন অনুসরণ করবেন। কাউকে খুশি করার চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশে কি এ রকম মানুষ পাওয়া দুষ্কর? অবশ্যই না। খুব শিগগিরই হয়তো সার্চ কমিটি গঠিত হবে। সার্চ কমিটির প্রধান কাজ হবে মেরুদণ্ডসম্পন্ন কয়েকজন মানুষকে খুঁজে বের করা।
তার অতীতের পদপদবির চেয়ে তার ব্যক্তিত্ব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহসটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ রকম ব্যক্তিত্ববান মানুষ খুঁজে পাওয়া মোটেও কঠিন হবে না। বিএনপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখা। সবাই মিলে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। কিন্তু সার্চ কমিটি যদি বাবুরাম সাপুড়ের মতো সাপ খোঁজে তাহলে নির্বাচন নিয়ে মানুষের হতাশা আরও বাড়বে। মানুষ আরও নির্বাচনবিমুখ হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এমন একজন মানুষকে বেছে নেওয়া হোক যাকে দেখলেই মানুষ উৎসাহী হবে। ভোট খরা কাটাতে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। সার্চ কমিটির কাছে দেশের জনগণ নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি মেরুদণ্ড চায়। আর কিছু না।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
মন্তব্য করুন
ভিসা নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ভিসা নীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ভিসা নীতি প্রাক পর্যবেক্ষণ দল
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউইয়র্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন বিএনপি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সরকার শওকত মাহমুদ
মন্তব্য করুন
প্রথম পর্যায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মধ্যে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল টেলিফোনে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন যে, কারা কিভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ব্যক্তি ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এক ধরনের ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কতটুকু আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর যৌথভাবে স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে। নানা কারণে এই প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান বারবার পুনরুক্ত করছে।
বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছে—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপির ভিতর। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতারা নন, বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী নেতারা এমনকি বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের একটি বিরাট অংশ তৃণমূল বিএনপিতে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন।