করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসায় মহামারি-উত্তর বাস্তবতা চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে সমঝোতা ও ব্যবস্থাপনার একটি ক্রমঅগ্রসরমান রূপ ফুটে উঠেছে, যা কি না বিকাশমান বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি।
অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, মন্দার পর আসে চাঙ্গাভাব। ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, অর্থনৈতিক উৎপাদন ও কার্যক্রম চাঙ্গা হচ্ছে ক্রমশ। নজিরবিহীন মাত্রা ও জটিলতার এক টিকাদান কর্মসূচি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। রেকর্ড কম সময়ে তা বিপন্নতার মাত্রা কমিয়েছে। বলা যায়, স্বাভাবিকতায় ফিরে এসে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চটা এখন তৈরি।
এ কারণে এটি ভারতের জন্য এক সুযোগের মুহূর্ত। এই ক্রান্তিলগ্নে ভারত যেসব সিদ্ধান্ত নেবে তা থেকেই ইঙ্গিত মিলবে, অধিকতর সুন্দর এক ভবিষ্যৎ কোথায় নিহিত বলে মনে করছে দেশটি।
করোনাভাইরাস মহামারি দেখিয়েছে, বর্তমানের চেয়ে কম তো নয়ই, বরং আমাদের দরকার আরো আন্ত সংযুক্ত একটি বিশ্ব। অভিন্ন সমস্যাগুলোর অবশ্যই অভিন্ন সমাধান থাকা দরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক মাস ধরে জি-৭, জি-২০, কপ-২৬, প্রথম কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি, ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন কাউন্সিলে মহামারি-পরবর্তী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার রূপকল্প তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চের মাধ্যমে একগুচ্ছ কৌশল এবং লক্ষ্য তুলে ধরেছেন, যা ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে সবার জন্য ভালো এক আগামীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করবে। ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় ধরনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা প্রদানে ভূমিকা রেখেছে। উন্নয়নমূলক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছি।
সাম্প্রতিকতম ঘটনায় গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘পঞ্চামৃতের’ মাধ্যমে ভারতের জলবায়ু ভাবনার রূপরেখা দিয়েছেন। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অজীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করা এবং নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করার পথ ত্বরান্বিত করবে। পাশাপাশি ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ এক বিলিয়ন টন হ্রাস ও কার্বনের তীব্রতা ৪৫ শতাংশের নিচে আনা হবে। আর কার্বন নিঃসরণ ২০৭০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’তে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়ন এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়েও তাদের তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের সূচনা করা দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজন প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থাগুলোর অধীন বৈশ্বিক পর্যায়ে আন্ত সংযুক্ত সৌরশক্তি অবকাঠামোর জন্য ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ প্রতিরোধী অবকাঠামোর জন্য ‘ঘাতসহ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য অবকাঠামো’ কর্মসূচি চালু করেছেন।
ভারত জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের অধীনে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন ও রপ্তানির এক বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ারও চেষ্টা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে টেকসই জীবনাচরণের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি যে বক্তব্য দিয়েছেন, রোমে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে তা প্রশংসিত হয়। তিনি ‘লাইফ’ (Life) নামে এক শব্দের এক বিশ্ব আন্দোলনেরও প্রস্তাব করেছেন। এর মূল বিষয় হচ্ছে, পরিবেশ অনুকূল জীবনধারা। টেকসই জীবনধারার ব্যাপারে ভারতের নিজস্ব উদাহরণ বৈশ্বিকভাবে গ্রহণ করা গেলে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইকে আমূল বদলে দেবে।
করোনা মহামারি সরবরাহ চেইনকে ঝুঁকিমুক্ত ও আরো স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তুলে ধরেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সরবরাহ চেইন উন্নত করার জন্য তিনটি মূল বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন : বিশ্বস্ত উৎস, স্বচ্ছতা ও নির্ধারিত সময়সীমা।
‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ কর্মসূচি স্থিতিস্থাপকতা এবং নির্ভরযোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে। এটি ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ চেইন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।
এটি আর্থিক সহায়তা, তারল্য সরবরাহ, শিল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা, ব্যবসা করার পদ্ধতি আরো সহজ করা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর বৃহত্তর নীতি কাঠামোরই একটি অংশ।
একটি উৎপাদনসংক্রান্ত বিশেষ প্রণোদনা স্কিম বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। এটি দেশীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় সক্ষম ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। মহাকাশ, প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক শক্তির মতো এত দিনের নিয়ন্ত্রিত খাতগুলোতে বেসরকারি অংশগ্রহণের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় একুশ শতকের উপযোগী কর্মশক্তি গড়ে তোলা ও ভারতকে বৈশ্বিক শিক্ষা ও দক্ষতা তৈরির কেন্দ্রে পরিণত করার কাঠামো তৈরি হচ্ছে।
ভারত তার অবকাঠামোর উন্নতিতেও বিশাল সরকারি বিনিয়োগ করছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘গতি শক্তি’ কর্মসূচি (মাল্টিমোডাল সংযোগ বিষয়ক জাতীয় মাস্টারপ্ল্যান) সারা দেশকে সংযুক্ত করবে। এটি সংযোগের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি আনার পাশাপাশি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে এক ছাতার নিচে আনবে।
ভৌত অবকাঠামোর উন্নতির পাশাপাশি থাকবে ডিজিটাল সংযুক্তি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ইমিউনাইজেশনের মতো উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি ‘জন ধন’ ও আধারের মতো বিশ্বেও বৃহত্তম বায়োমেট্রিক কর্মসূচি সরাসরি সহায়তার অর্থ সরবরাহকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিয়েছে। এটি এখন অর্থ-প্রযুক্তিগত বিপ্লবে গতি সঞ্চার করছে। জয় জীবন ও আয়ুষ্মান ভারত সবাইকে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মাধ্যমে জীবনকে বদলে দিচ্ছে।
এসডিজি-৩-এর আওতায় আমাদের ওপর সব বয়সের সবার স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের জন্য ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য’ বিষয়ে সামগ্রিক রূপকল্প তুলে ধরেন।
করোনাভাইরাস মহামারি আন্তর্জাতিক কর্মপ্রক্রিয়াকে ডিজিটাল পরিসরে নিয়ে গেছে। দক্ষ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচির পোর্টাল কোউইন থেকে শুরু করে ডিজিটাল ভারত উদ্যোগ, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রমাণ করছে ভারত নিজেকে অনেকটাই ডিজিটাল করে নিয়েছে।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভারত অনেক উন্নয়নমূলক সমস্যার জন্য উপযুক্ত সমাধানগুলো তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এ দেশ উন্নয়নের এক প্রমাণস্থল। ভারতের সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতার বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে তারা অনেক ধারণা দিয়ে সহায়তা দিতে পারবে। এর আগে জি-৭ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের তৈরি ওপেন সোর্স ডিজিটাল সলিউশনগুলো সবাইকে উপকৃত করবে।
করোনা মহামারির অন্ধকারতম দিনগুলোতেও ভারত ভুলে যায়নি যে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ। সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে ভারত দেড় শতাধিক দেশে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এর বিনিময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সবার সমর্থনও পেয়েছে ভারত।
নিজ দেশে সফল টিকাকরণ অভিযান চলমান অবস্থায় ভারত তার প্রতিবেশী এবং অংশীদারদের কাছে আবার টিকা রপ্তানি শুরু করেছে। এগুলোসহ আরো অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরিতে অন্যতম এবং গঠনমূলক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সে হবে এমন এক বিশ্বব্যবস্থা, যা নিছক অর্থনীতির সীমা ছাড়িয়ে মানুষ ও তার মঙ্গলকেই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হিসেবে দেখবে।
লেখক : ভারতের পররাষ্ট্রসচিব
মন্তব্য করুন
‘ব্ল্যাক
অক্টোবর’ একটি সাড়া জাগানো
কানাডীয় প্রামাণ্যচিত্র। সিবিসি ২০০০ সালে এই
প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করে। ১৯৭০ সালে
ব্রিটিশ ট্রেড কমিশনার এবং একজন প্রাদেশিক
মন্ত্রীর অপহরণ নিয়ে নির্মিত এ
প্রামাণ্য চিত্রে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সাক্ষাৎকারও রয়েছে। ৭০-এ এই
অপহরণ ঘটনায় কানাডার রাজনীতি টালমাটাল হয়েছিল। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের শেষপ্রান্তে
রাশিয়ার (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ক্ষমতার টানাপোড়েন নিয়েও ‘ব্ল্যাক অক্টোবর’ শিরোনামে একটি আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র
রয়েছে। ১৯৯৩ সালে নির্মিত
ওই প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, রাশিয়ার
প্রেসিডেন্ট বরিস ইলিয়েৎসিনের সঙ্গে
রুশ পার্লামেন্টের প্রকাশ্য বিরোধের ঘটনা। একপর্যায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট
আক্রমণের জন্য সেনাবাহিনী তলব
করেন। রুশ পার্লামেন্টের সব
সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। এক ডিক্রি জারি
করে পার্লামেন্ট (সুপ্রিম সোভিয়েত) ভেঙে দেন। প্রেসিডেন্ট
হিসেবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে রাশিয়া
সোভিয়েত প্রথা বিলোপ হয়। রাশিয়ার জন্য
১৯৯৩-এর অক্টোবর ছিল
এক দুর্যোগপূর্ণ সময়। এরকম বিশ্বের
দেশে দেশে অক্টোবর নিয়ে
এরকম নানা আতঙ্ক এবং
ভয়াল গল্প আছে। বাংলাদেশে
এবারের অক্টোবর কেমন হবে? তা
নিয়ে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, শোরগোল
শুরু হয়েছে। বিএনপি বলছে, অক্টোবরেই সরকারের পতন হবে। বিএনপি
মহাসচিব বলেছেন, ‘আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ।’ অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘এই অক্টোবরেই আছি,
আগামী অক্টোবরেও থাকব।’ অক্টোবর নিয়ে এ পাল্টাপাল্টি
অবস্থানের পর প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশে কি আবার এক
অন্ধকারাচ্ছন্ন অক্টোবর আসছে? কী হবে এ
অক্টোবরে?
বাংলাদেশে
অক্টোবর মাসটা একটু অন্যরকম। আকাশে
সাদা মেঘের ভেলা। হালকা বাতাসে দোল খায় কাশবনের
শ্বেতশুভ্র ফুল। শারদীয় উৎসবের
এক মোহনীয় মাস অক্টোবর। কিন্তু
বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই এ অক্টোবর মাস
ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ২০০১
সালের বিভীষিকাময় অক্টোবরের কথা ভুলি কী
করে। ২০০১ সালের ১
অক্টোবর দেশে জাতীয় সংসদ
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ
তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে। এর আগে জুলাইয়ে
দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার
হাতবদল হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের কাছে। লতিফুর রহমান দায়িত্ব নিয়েই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শপথ নেওয়ার ১০
মিনিটের মধ্যেই ১৩ জন সচিবকে
বদলি করে তিনি জাতিকে
হতবাক করে দেন। সাফ
বুঝিয়ে দেন আওয়ামী লীগকে
হারিয়ে দেওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য।
তার চেয়ে আরেক কাঠি
সরস ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ সাঈদ। আওয়ামী
লীগের প্রার্থীদের শায়েস্তা করাই যেন তার
কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র পূর্বশর্ত। অল্প সময়ের মধ্যেই
আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচন করা
প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। তবুও
আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে।
গণতন্ত্রের স্বার্থে। ১ অক্টোবরের নির্বাচনে
প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ছিল নির্লজ্জ পক্ষপাতপূর্ণ।
আওয়ামী লীগকে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে হটিয়ে দেওয়ার
নির্দেশনা নিপুণ দক্ষতায় পালন করেন তারা।
সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণায় কোনো চমক ছিল
না। নিরঙ্কুশ বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়
চারদলীয় জোট। বিএনপি-জামায়াতের
অতি-উৎসাহী কর্মীদের আর তর সয়নি।
সারা দেশে তারা শুরু
করে তাণ্ডব। সারা দেশে আওয়ামী
লীগের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে আক্রমণ শুরু হয়। বাড়িঘর
জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট শুরু
হয় নির্বিচারে। সারা দেশে মুহূর্তেই
শুরু হয় সন্ত্রাসের রাজত্ব।
সংখ্যালঘুরা আওয়ামী ভোটার। এ কারণে তাদেরও
নির্মূল করা শুরু হয়।
হত্যা, ধর্ষণের এক নারকীয় উৎসব
চলে টানা ১০ দিন।
বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ
সাধারণ জনগণ। পূর্ণিমা, ফাহিমা, শেফালীর মতো শত শত
নারী ধর্ষিতা হন। সেই ভয়াল
অক্টোবরের স্মৃতি ভুলি কী করে?
সেই সময় দেশে কোনো
আইন ছিল না, বিচার
ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার
নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দাঁড়িয়ে শুধু তামাশা দেখেছে।
২০০১-এর অক্টোবরে মানবতার
বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার হয়নি আজও।
২০০৬
সালের অক্টোবরও ছিল বাংলাদেশের জন্য
আতঙ্কের। অগ্নিগর্ভ ওই অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা ছাড়ার
আগে শেষ তাণ্ডব চালায়।
২৯ অক্টোবর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পল্টন, বিজয়নগর,
বায়তুল মোকাররম এলাকা। জামায়াত-শিবিরের হিংস্ররূপ জাতি সেদিন দেখে
ভয়ে শিউরে উঠেছে। অক্টোবর এলেই তাই অজানা
আতঙ্ক মনে বাসা বাঁধে।
এবার আতঙ্ক আরও বেশি। কান
পাতলেই ফিসফাস আওয়াজ শুনি। কী হচ্ছে, কী
হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৭ সেপ্টেম্বর
‘কিছু একটা ঘটার’ নাটকীয়
ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিএনপির প্রয়াত নেতা হান্নান শাহর
সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি
মহাসচিব বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এক ভয়াবহ অবস্থার
মধ্যে আছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি না, গণতান্ত্রিক
অধিকার থাকবে কি না, জনগণ
তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে কি
না—সবকিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েক
দিনের ওপর।’ মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্য বিচ্ছিন্ন
কোনো কথা নয়। বিএনপি
ভালো করেই জানে অক্টোবরেই
বিএনপিকে কিছু করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল
ঘোষণা করবে। একবার তপশিল ঘোষণা হলে দেশের রাজনীতি
নির্বাচনমুখী হবে। তখন বিএনপি
আন্দোলন জমিয়ে তুলতে পারবে না। তা ছাড়া
বিএনপি যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে, সেই
দাবি একমাত্র সংসদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্য
কোনোভাবেই নয়। বিএনপি নেতারাও
তা-ই বলছেন। তারা
দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের যেহেতু দুই-তৃতীয়াংশের বেশি
সংসদ সদস্য আছে, কাজেই তাদেরই
সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃস্থাপন করতে হবে। তীব্র
গণআন্দোলনে তারা এটা করতে
বাধ্য হবে।’ বিএনপির দাবি হলো, ২০১১
সালের আগে সংবিধানে ‘নির্বাচনকালীন
সরকারে’র যে ব্যবস্থা
ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে
হবে। সেটি সংসদ ছাড়া
অসম্ভব। এই অক্টোবরে সংসদের
শেষ অধিবেশন বসবে। তাই বিএনপি এবং
তার মিত্রদের আন্দোলন এমন একটা জায়গায়
নিয়ে যেতে হবে, যেখান
থেকে সরকার বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য
হয়। এ কয়েক দিনের
মধ্যে যদি তারা ‘গণবিস্ফোরণ’
ঘটাতে না পারে, তাহলে
তাদের জন্য আরেকটি বড়
বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এ কথা ঠিক,
সম্প্রতি বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। তাদের হতাশা কিছুটা হলেও কেটেছে। এক
ধরনের চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যায়
কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের মূল সমস্যা অন্য
জায়গায়। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ এখনো সম্পৃক্ত
নয়। জনগণ এখন আর
আগের মতো নেই। রাজনৈতিক
দল ডাকল আর জনগণ
রাস্তায় নামল—সেই দিন
এখন শুধুই স্মৃতি। জনগণ সংবাদপত্র পড়ে,
টেলিভিশনে টকশো শোনে, সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিস্ফোরক সব ব্রেকিং নিউজ’
এবং ‘অবিশ্রান্ত ধারার মিথ্যাচার’ উপভোগ করে। তারপর আকাশের
ঠিকানায় গালি দিয়ে, বাতি
নিভিয়ে ঘুমুতে যায়। আন্দোলনে জনগণ
সম্পৃক্ত হয় না, এ
আক্ষেপ মির্জা ফখরুলেরও। তিনি ইদানীং বারবার
বলছেন, জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে। জনগণ যদি
রাস্তায় বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম না হয়, তাহলে
আর যাই হোক, গণআন্দোলন
হবে না। যেমনটি হয়েছিল
৯০ ও ৯৬ সালে।
বিএনপির সময় দ্রুত ফুরিয়ে
আসছে। এখন ১৭ বছর
ক্ষমতায় বাইরে থাকা দলটি কী
করবে? জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুরের পথে হাঁটবে? হরতাল,
অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে
দেশ অচল করে দেবে,
এই অক্টোবরে?
যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশ নিয়ে বেশ মনোযোগী।
প্রায় প্রতিদিন ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও কম
যান কীসে? প্রতিদিনই শুনি এই অক্টোবরে
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর আরও চাপ
দেবে। অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরবে। সরকার
নাকি মার্কিন চাপে পদত্যাগে বাধ্য
হবে। এমন বক্তব্য আজকাল
প্রকাশ্যেই দিচ্ছেন মার্কিনপ্রেমী সুশীলরা। দেখা যাক অক্টোবরে
মার্কিন চাপ কতটুকু তীব্র
হয়। বিএনপির অনেক নেতাই বিশ্বাস
করেন, তাদের কিছুই করতে হবে না।
অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত
করবে। আগে বিএনপির নেতারা
এসব কথা আড়ালে-আবডালে
বলতেন। এখন বলেন প্রকাশ্যে।
শুধু নেতা নয়, বিএনপির
পাতিনেতা, এমনকি কর্মীরাও এখন পকেটে ভিসা
স্যাংশনের তালিকা নিয়ে ঘোরে। কে
কে স্যাংশন পাবে তারা হিসাব
করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। বিএনপির অনেকেই বিশ্বাস করে, অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্র
টর্নেডোর মতো বাংলাদেশে আঘাত
হানবে। তাতে সরকার তছনছ
হয়ে যাবে। অক্টোবর মাসটা সরকারের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। সরকার দেশকে কি একটি নির্বাচনের
দিকে নিয়ে যেতে পারবে
কি না, তা বোঝা
যাবে এ মাসেই। ৪
অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। অক্টোবর
জুড়ে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন
উৎসব করবে। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সমান্তরালভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এ
কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে
মোকাবিলা করতে চাইবে। দেশকে
নির্বাচনমুখী করাটাই অক্টোবরে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, অক্টোবরে কিছুই হবে না। কোনো
ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।
আওয়ামী লীগ কি পারবে
দেশ-বিদেশের চাপ সামাল দিতে?
২০১৪
বা ২০১৮ সালের মতো
নয়, সত্যিকারের একটা অবাধ, সুষ্ঠু
নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপায় সরকারকে বের
করতে হবে এ অক্টোবরেই।
যে নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য
হবে। আমার বিবেচনায় রাজনৈতিক
কারণে নয়, অর্থনৈতিক সংকটে
সরকারের জন্য অক্টোবর মাস
হতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও
চ্যালেঞ্জিং। প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। ২০ বিলিয়ন ডলারের
আশপাশে এখন রিজার্ভ। ডলার
সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
খোলা বাজারে ডলারের জন্য রীতিমতো হাহাকার।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বহু
আগেই। মানুষ হাঁসফাঁস করছে। মানুষের সীমাহীন কষ্ট আর আর্তনাদ
নিয়ে রীতিমতো তামাশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যাংকগুলোতে চলছে নৈরাজ্য। অর্থ
পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে
কোনো সুখবর নেই। তার চেয়েও
উদ্বেগের বিষয় হলো, সংকট
উত্তরণে কোনো দৃশ্যমান চেষ্টাও
নেই। বরং তথ্য ধামাচাপা
দিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তির
ভয়াবহ প্রবণতা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বাভাবিক সূত্র হলো, অর্থনীতি ঠিক
না থাকলে রাজনীতি পথ হারাতে বাধ্য।
অর্থনীতির চাপে আওয়ামী লীগ
সরকার অক্টোবরে কি পথ হারাবে?
রাজনীতি
গণিতের কোনো সূত্র নয়।
রাজনীতির অঙ্কের সব হিসাব সবসময়
মেলে না। অক্টোবরে কী
হবে, তা হয়তো সামনের
কয়টা দিনই বলে দেবে।
তবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, গণতন্ত্রের পথরেখা পরিষ্কার হবে এ অক্টোবরেই।
দেখার বিষয় কেমন হয়
অক্টোবর। শারদীয় শ্বেতশুভ্রতার উৎসবের অক্টোবর, নাকি সন্ত্রাস এবং
সহিংসতার উত্তাপে বাংলাদেশ দগ্ধ হবে এই
অক্টোবরে?
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল :
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মালদ্বীপের নির্বাচন ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন
মন্তব্য করুন
অক্টোবর নির্বাচন বিরোধী দলের আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
একজন
বিদেশীর সাথে কথা হচ্ছিল
কদিন আগে। ঢাকার এক্সপ্রেসওয়েতে
গাড়ী চালিয়ে তিনি মুগ্ধতার কথা
বলেছিলেন। কুড়ি বছর আগে
একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এই উন্নয়নকর্মী। কুড়ি
বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া দৃশ্যপট
দেখে তিনি উল্লাসিত, আপ্লুত।
একটি দেশ কিভাবে এতো
কম সময়ে এভাবে উন্নতি
করতে পারে? প্রশ্নটা করে নিজেই উত্তর
দিলেন। দুটি কারণ, এদেশের
জনগণের অদম্য প্রাণশক্তি আর অসাধারন নেতৃত্ব।
একজন যোগ্য এবং সঠিক নেতা
যে জনগণের শক্তিতে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন,
তার প্রমাণ বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা।
একটানা কথা গুলো বলে
থামলেন ভদ্রলোক। একটু দম নিয়ে,
আবার কথা শুরু করলেন।
আচমকা আমাকে প্রশ্ন করলেন শেখ হাসিনার পর
কে? নিজেই উত্তর দিলেন ‘আই ডোন্ট সি
এনি ওয়ান’ (আমি কাউকে দেখিনা)। তার এই
প্রশ্ন আমাকে কিছুটা হলেও ভাবনার সাগরে
নিয়ে গেল। শেখ হাসিনা
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৭৭
তম জন্মদিন পালন করলেন। শুধু
বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের
বিবেচনায় তিনি অন্যতম প্রবীন
রাজনীতিবিদ। এধরনের বয়সে অনেকে অবসর
জীবন যাপন করেন। নাতি-নাতনী নিয়ে চুটিয়ে সময়
কাটান। কারো কাটে নানা
রোগ শোকের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কিন্তু শেখ
হাসিনা তার আশ্চর্য ব্যতিক্রম।
এই বয়সেও তিনি প্রচন্ড ব্যস্ত।
কর্মচাঞ্চলে ভরপুর এক উজ্জীবিত মানুষ।
এখনও আমাদের চেয়ে তিনি বেশি
কাজ করেন। নিজ যোগ্যতা, দক্ষতায়
এবং মেধায় তিনি নিজেকে অনন্য
উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রনায়ক
থেকে হয়েছেন বিশ্বনেতা। দলে এবং দেশে
তার কোন বিকল্প নেই।
শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই।
বিএনপির
নেতৃত্বে বিরোধী দল গুলো এখন
এক দফা আন্দোলন করছে।
এক দফার মূল দাবী
হলো ‘শেখ হাসিনার অধীনে
কোন নির্বাচন নয়।‘ বিএনপি নেতারা
ইদানিং সারাক্ষণ শেখ হাসিনার সমালোচনায়
মুখর থাকেন। সব আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দুতেই
তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা বিদেশে বসে
বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারের দোকান খুলে বসে নিয়মিত
দূর্গন্ধযুক্ত কদর্য নর্দমার মতো বমি উগলাচ্ছেন,
তাদেরও প্রধান লক্ষ্য বস্তু এখন ‘শেখ হাসিনা’। শেখ হাসিনাকে
সরানোই তাদের জীবনের যেন একমাত্র আরাধ্য।
কিন্তু শেখ হাসিনাকে সরিয়ে
কাকে আনতে চান তারা?
নির্বাচিত না অনির্বাচিত সরকার
প্রধান? ধরা যাক, বিএনপির
কথাই ঠিক। তারা দেশে
একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা এটাও
বিশ্বাস করে, ‘নিরপেক্ষ এবং অবাধ’ নির্বাচন
হলে, বিএনপি জিতবেই জিতবে। খুব ভালো কথা।
বিএনপি যদি নির্বাচনে বিপুলভাবে
জয়ী হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী
কে হবেন? আমি না, বিভিন্ন
দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকরাও বিএনপি
নেতাদের হরহামেশাই এই প্রশ্ন করেন।
এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব এবং অন্যান্য নেতারা
যে জবাব দেন, তা
রীতিমতো কৌতুক। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর, কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারেও
এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি
ক্ষমতায় এলে বেগম জিয়াই
প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার অবর্তমানে তারেক
জিয়া হবেন সরকার প্রধান।‘
কি সাংঘাতিক কথা। বেগম জিয়া
দুটি মামলায় সাজা পেয়েছেন। একটি
মামলায় হাইকোর্টে তার সাজা বহাল
আছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী
হওয়া তো দুরের কথা,
সংসদ সদস্য হতে পারবেন না।
তাকে বিএনপি মহাসচিব কিভাবে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন বুঝলাম না। একই বাস্তবতা
লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বেলাতেও। এমনকি আইন ও সংবিধান
পাল্টালেও আগামী সরকার প্রধান হওয়া তাদের পক্ষে
সম্ভব না। মির্জা ফখরুল
এসব জানেন না, এমনটি নয়।
জেনে শুনেই এই অসত্য উচ্চারণ
তিনি করছেন। কারণ জনগণকে, বিশেষ
করে দলীয় নেতা কর্মীদের
উজ্জীবিত রাখা। কর্মীরা যেন হতাশ না
হয়ে যান, এজন্যই এধরনের
বক্তব্য। কারণ, বিএনপি মহাসচিব ভালো করেই জানেন,
শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে তিনি (মির্জা ফখরুল) জনগণের কাছে তো নয়ই,
তার নিজের দলেও কাছেও গ্রহণযোগ্য
নন। বেগম জিয়ার দন্ডের
কথা যদি বাদও দেই,
তারপর তিনি কি শেখ
হাসিনার বিকল্প? বিএনপি নেতারাই বলছেন, বেগম জিয়া গুরুতর
অসুস্থ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
তাহলে কোনটা সত্য? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এক কঠিন
দায়িত্ব। শেখ হাসিনা যেভাবে
দিনরাত একাকার করে এই দায়িত্ব
পালন করছেন। বেগম জিয়া কি
অসুস্থ শরীরে তার সিকি পরিমান
দায়িত্ব পালন করতে পারবেন?
বেগম জিয়া তাই কোন
ভাবেই শেখ হাসিনার বিকল্প
নন।
তারেক
জিয়াকে নিয়ে যে আবেগ,
উত্তাপ, তা শুধু বিএনপির
তরুণ কর্মীদের মধ্যে। সাধারণ মানুষ তারেক জিয়াকে রাজনীতিবীদ বলে মনে করে
না। একজন দূর্নীতিবাজ, দূর্বৃত্ত
মনে করে। তারেক জিয়া
যদি কোনদিন দূর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে দেশের
কি হাল হবে তা
সহজেই অনুমান করা যায়। ২০০১
থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত
সময়ে ছায়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে
তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, দূর্নীতি কাকে বলে, কত
প্রকার কি কি। সেই
সময়ে হাওয়া ভবনের লুণ্ঠন কাহিনী আরব্য রজনীকেও হার মানায়। কাজেই
তারেক জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প ভাবা এক ধরনের
গর্হিত অপরাধ।
বিএনপি
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকার চায়। বিএনপির অনেক
নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা
পরের বিষয়, আগে একজন তত্ত্বাধায়ক
সরকার প্রধানের কথা ভাবুন। চোখ
বন্ধ করে দেখুন তো
শেখ হাসিনার কোন বিকল্প খুঁজে
পান কি না? গত
১৫ বছরে শেখ হাসিনা
নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায়
নিয়ে গেছেন। একাই দেশ সামলাচ্ছেন।
আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার তিনি। সব কিছুর দিকে
তার দৃষ্টি। এদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি তিল তিল
করে। সব কিছু উপেক্ষা
করে। এই মুহুর্তে দেশে
তার কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশকে তিনি যে সম্ভাবনার
সোনালী বন্দরে নিয়ে গেছেন যেখান
থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি
কি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে
কেউ আছেন? গত ১৫ বছর
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক
ভালো কাজ যেমন আছে,
তেমনি এই সরকারের আছে
অনেক দূর্বলতা এবং সমালোচনাও। গত
৩/৪ বছরে এই
সমালোচনার ক্ষেত্রগুলো বেড়েছে। অর্থপাচার, খেলাপী ঋণ, দূর্নীতি সংক্রামক
ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পরেছে
সমাজের সর্বত্র। কিছু মন্ত্রী অযোগ্যতা
এবং ব্যর্থতায় মানুষ অসন্তুষ্ট হতাশ। সর্বত্র আমলাতন্ত্রে দৌরাত্মে মানুষ অস্থির। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষ আর সহ্য করতে
পারছে না। এতো কিছুর
পরও মানুষ যে আশা হারায়নি।
এর একটি কারণ হলো
শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ তার উপর আস্থাশীল।
জনগণ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস
করে। নিশ্চয়ই তিনি সংকট উত্তরণে
সাহসী পদক্ষেপ নেবেন, এমনটা মনে করেন দেশের
বেশির ভাগ মানুষ। দেশের
সিংহভাগ জনগণের কাছে শেখ হাসিনার
কোন বিকল্প নেই।
আওয়ামী
লীগ সরকারকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
অস্বস্তি এখন কোন নতুন
বিষয় নয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র,
সুশাসন, মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের রয়েছে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু
একটি বিষয়ে এসে তারা আটকে
যায়। শেখ হাসিনার বিকল্প
কে? শেখ হাসিনাকে বাদ
দিলে কে হাল ধরবে
এই দেশের। শেখ হাসিনা বিহীন
বাংলাদেশ কি আরেকটি আফগানিস্তান
হবে না? আমার তো
মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
যদি শেখ হাসিনার বিকল্প
কেউ থাকতো, তাহলে তারা এতোদিনে পাকিস্তানের
মতো কোন ঘটনা ঘটিয়ে
ফেলতো। তাই, দেশ পরিচালনা
শেখ হাসিনা অবিসংবিদিত নেতা। শেখ হাসিনার পর
কে? এই প্রশ্নের উত্তর
নেই কারো কাছে।
রাষ্ট্রে
সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প
যেমন কেউ নেই, তেমনি
আওয়ামী লীগেও শেখ হাসিনার বাইরে
কোন নেতা নেই। আওয়ামী
লীগ আরো বেশী শেখ
হাসিনা নির্ভর। কিংবা বলা যায় পুরোপুরি
শেখ হাসিনা নির্ভর। আমার তো মনে
হয় শেখ হাসিনা ছাড়া
আওয়ামী লীগ বিভ্রান্ত, মুমুর্ষ
এবং প্রায় বিকলাঙ্গ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা একমাত্র শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস
করেন, অন্য নেতাদের উপর
তাদের আস্থা নেই। অন্যান্য নেতারা,
প্রেসিডিয়াম সদস্য বলি আর কেন্দ্রীয়
নেতৃত্ব বলি, নিজেরা গৎবাঁধা
বক্তৃতা দেয়া ছাড়া আর
কোন কাজ করতে পারেন
না। একটি সিদ্ধান্তের জন্য
তারা তাকিয়ে থাকেন শেখ হাসিনার দিকে।
রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারনের যোগ্যতাও
নেই বেশির ভাগ নেতার। শেখ
হাসিনা যেন আওয়ামী লীগকে
এক সূত্রে গেঁথে রেখেছেন। তিনি না থাকলে
এই দলটি ৭৫ এর
পরবর্তী অবস্থায় মতো অবস্থায় চলে
যাবে। ইদানিং প্রায় আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার
নিয়ে আলোচনা শুনি। শেখ হাসিনার পর
দলের হাল কে ধরবেন,
তা এখনই ঠিক করা
উচিত এমন মত অনেকের।
শেখ হাসিনা ৭৭ বছরে পা
রাখলেন। আগামী কাউন্সিলে
হয়তো তিনি দলের দায়িত্ব
ছাড়ার ঘোষণা দেবেন, এমন শংকা অনেকের।
তখন কে হাল ধরবেন
আওয়ামী লীগের? শেখ রেহানা, সজীব
ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ
পুতুল নাকি রিদওয়ান মুজিব
সিদ্দিকী ববি? কে ভালো
হবে, এ নিয়ে প্রায়ই
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আড্ডায় নানা আলোচনা হয়।
শেখ হাসিনা কেন আওয়ামী লীগের
পরবর্তী নেতা এখনই নির্ধারণ
করছেন না, এনিয়ে কারো
কারো উৎকণ্ঠা কানে আসে। এই
সব প্রশ্নের উত্তর দুভাবে দেয়া যায়। প্রথমত,
বয়স প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা এখন
৭৭। এই বয়সে তিনি
যে পরিশ্রম করেন, তা কজন তরুণ-যুবক করতে পারেন?
এই নভেম্বরে জো বাইডেন ৮১
বছর পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন করার ঘোষণা মার্কিন
প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন। কোথায় তার অবসরের কথা
তো কেউ বলেন না।
৮২ বছর বয়সেও মন
মোহন সিংহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী
ছিলেন। তার ক্লান্তি কিংবা
বার্ধক্য নিয়ে তো কোন
প্রশ্ন তোলা হয়নি। কিছু
কিছু মানুষের জীবন হয় কর্মমুখরতায়
ভরপুর। আমৃত্যু তিনি কাজ করে
যান। শেখ হাসিনা তেমনি
একজন। তার রাজনীতি থেকে
কিংবা সরকার প্রধানের পদ থেকে তার
অবসরের ভাবনা অবান্তর। এ সিদ্ধান্তটা একান্তই
শেখ হাসিনার। তার প্রতিটি মুহুর্ত
জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। তাই এখনই তার
অবসরের চিন্তাটা না করাই শ্রেয়।
এবার
আসা যাক আওয়ামী লীগের
উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক
রাজনৈতিক দল। এই দলটির
নেতৃত্ব কর্মীদের অভিপ্রায় থেকে উৎসারিত। আওয়ামী
লীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক
ইতিহাসে উত্তরাধিকারের রাজনীতি করেনি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা
ভাসানী থেকে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে
এসেছেন নিজ যোগ্যতায়। কর্মীদের
উপর নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়নি। শেখ
হাসিনাও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছেন দলের অস্তীত্বের প্রয়োজনে।
দল বাঁচানোর আর কোন বিকল্প
ছিলো না জন্যই শেখ
হাসিনাকে দলের সভাপতি করা
হয়েছিল। একথা ঠিক, জাতির
পিতার কন্যা জন্যই তিনি কর্মীদের ভালোবাসা
পেয়েছেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে
পেরেছেন। কিন্তু গত ৪৩ বছরে
আওয়ামী লীগকে তিনি আজকের জায়গায়
নিয়ে এসেছেন নিজ যোগ্যতায়, পরিশ্রম
এবং প্রচন্ড ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে। যতো দিন তিনি
কর্মক্ষম আছেন, ততোদিন আওয়ামী লীগে তার বিকল্প
কেউ হবে না। শেখ
হাসিনার পর আওয়ামী লীগের
নেতৃত্ব আসবে কর্মীদের স্বত:ফূর্ত আকাঙ্খা থেকে। কর্মীরাই পছন্দ করবেন, কে হবে আওয়ামী
লীগের নেতা। উপর থেকে চাপিয়ে
দেয়া নেতৃত্ব যে গ্রহণযোগ্য হয়না,
ভারতের কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী তার সবচেয়ে বড়
প্রমাণ। তাই শেখ হাসিনার
পর কে? এই প্রশ্নটা
এখন বড্ড অসময়ের প্রশ্ন।
এই রাষ্ট্র এবং জনগণকে শেখ
হাসিনার এখনও অনেক কিছুই
দেয়ার বাকী আছে।
সৈয়দ
বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
সচিবালয় প্রশাসন নির্বাচন ভিসা নিষেধাজ্ঞা জনপ্রতিনিধি সরকার
মন্তব্য করুন
মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থীদের জয় হয়েছে। সেখানে ভারতের অনুগত প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। এর ফলে এই উপমহাদেশে আরও একলা হয়ে পড়লো ভারত। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা চীনের দখলে চলে গেছে। পাকিস্তান ভারতের জন্মগত শত্রু। নেপালেও এখন ভারত বিরোধীতা আগের চেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়েছে। আর সর্বশেষ মালদ্বীপও ভারতের হাত ছাড়া হয়ে গেল। এরকম অবস্থায় এই উপমহাদেশে বন্ধুহীন ভারত তার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য বাংলাদেশের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। মালদ্বীপের এই নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং বাংলাদেশে ভারত তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আরও বেশি মরিয়া হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অক্টোবর মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে অনেক কিছু ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিও বলছেন, এই মাসে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অক্টোবরেই সরকারের পতন ঘটবে।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘এই অক্টোবরেও আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো।’ অক্টোবর নিয়ে পাল্টাপার্টি ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে কি হতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবরে।
একজন বিদেশীর সাথে কথা হচ্ছিল কদিন আগে। ঢাকার এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ী চালিয়ে তিনি মুগ্ধতার কথা বলেছিলেন। কুড়ি বছর আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এই উন্নয়নকর্মী। কুড়ি বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া দৃশ্যপট দেখে তিনি উল্লাসিত, আপ্লুত। একটি দেশ কিভাবে এতো কম সময়ে এভাবে উন্নতি করতে পারে? প্রশ্নটা করে নিজেই উত্তর দিলেন।
বুধবার সচিবালয়।। একজন গুরুত্বপূর্ণ সচিবের কাছে গেলেন একজন জনপ্রতিনিধি। সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার একটি কাজ সংক্রান্ত ফাইল সচিবের টেবিলে আটকে আছে বলে জানালেন এবং দ্রুত ফাইলটা নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ জানালেন। সচিব তার পূর্ব পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠও বটে। কিন্তু এবার তিনি ভিন্ন অবয়বে দেখা দিলেন। সচিব জনপ্রতিনিধিকে বললেন, ‘ফাইল তার নিয়মেই যাবে। এটার জন্য আমাকে তদবির করে লাভ নেই। এখন অনেক ঝামেলায় আছি। দেশে কি হচ্ছে আমরা বুঝি না। এ ধরনের তদবির এখন আর গ্রহণ করতে পারছি না। দুঃখিত।’