নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০২ পিএম, ১৯ জুলাই, ২০১৯
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই মারা যান বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে দশ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
দেশ থেকে দূরে জীবনের শেষের দিনগুলো কীভাবে কেটেছে সেটা ভক্তদের জানতে মন চায়। আজ তার প্রয়াণ দিবসে আমরা একটু জানবো তার সম্পর্কে-
ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে রুটিন চেকাপে হঠাৎই হুমায়ূন আহমেদের কোলনে (বৃহদান্ত্রে) চতুর্থ পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসাপ্রক্রিয়া কাছ থেকে শেষদিন পর্যন্ত নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছিলেন বিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক পূরবী বসু্। ‘নিউইয়র্কে হুমায়ুন আহমেদের ক্যান্সার চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘স্টেজ ফোর ক্যান্সার মানে সবচেয়ে পরিণত বা Advanced Stage ক্যান্সার। স্টেজ ফোর-এ কর্কট কোষগুলো মূল জায়গা ছাড়াও শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। কোলন ক্যান্সারে চার নম্বর স্টেজ থেকে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা খুবই কম, (শতকরা ৭% এর মতো)। সিঙ্গাপুরের ডাক্তাররাই দুঃসংবাদটি দিয়ে হুমায়ূনকে জানিয়েছিলেন কোলন থেকে তার ক্যান্সার লিভারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সম্ভবপর চিকিৎসার মধ্যে ছিল কেমোথেরাপি অথবা কিছু কেমোথেরাপি আর সার্জারি। কিন্তু অসুখের নামটা শুনেই হুমায়ূন মনে মনে স্থির করে ফেলেছেন ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো জায়গায় যাবেন এবং সেটা সিঙ্গাপুর নয়। আমেরিকা।’
কেমোথেরাপির যাত্রা
নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে ডাক্তার দেখাবার জন্যে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থাও করেছিলেন পূরবী বসু। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বপরিবারে হুমায়ূন নিউইয়র্কে পৌঁছান, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ দুপুর একটায় তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক হয় স্লোন ক্যাটারিংয়ে। সেদিন সব কাগজপত্র, প্লেট দেখে, কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার স্থির করেন প্রথম কিস্তিতে ছয়টি কেমো নিতে হবে। হুমায়ূনের ক্যান্সারের তখন যে অবস্থা (স্টেজ চতুর্থ), তাতে তখন আর সার্জারি করা সম্ভব ছিল না।’
প্রথম চারটি কেমো নেওয়ার পর রিভিউতে যখন দেখা গেল টিউমারের সাইজ একটুও কমেনি তখন তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়েছিলেন। তবে খুব একটা তার মধ্যে প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আটটি কেমো নেওয়ার পর আবার রিভিউ হল এবং তখন তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন।
বেড়িয়েছেন সে সময়েও
বেড়াতে পছন্দ করতেন হুমায়ুন আহমেদ। ভ্রমণ করেছেন বিভিন্ন দেশে। আমেরিকায় চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও তিনি বেড়িয়েছেন। একটা করে কেমোর পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শও ছিল যে তোমরা ঘোরাঘুরি করো মানসিকভাবে সে যেন সুস্থ থাকে।
লেখালেখি, বেড়ানো আর ছবি আঁকা
চিকিৎসাকালীন সময়ে সেখানে লেখালেখি করছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেসময় তার লেখা কলাম ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ ছাপা হয় বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে। পরে সংকলিত গ্রন্থ হিসেবে ছাপা হয় কলামগুলো। হুমায়ূন আহমেদ তার সে গ্রন্থের উৎসর্গ পাতায় লেখেন, কেমোথেরাপি হল একটি দীর্ঘ বেদনাদায়ক নি:সঙ্গ ভ্রমণ। জানা যায়, আমেরিকায় পৌঁছানোর ঠিক পরেরদিন থকেই লেখালেখি শুরু করেন। উনার শেষ উপন্যাসটি ‘দেয়াল’ এর অল্প কয়টি পর্ব অন্যদিন পত্রিকায় ধারাবাহিক লিখেছিলেন। তো যাওয়ার সময় এর জন্য, কম্পিউটার কম্পোজ কপি, ৪০/৫০টি বই নেয়া হলো যেগুলো পরে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং পত্রিকার কপিসহ আলাদা একটি সুটকেস-ই নেয়া হল, যেখানে শুধু লেখালেখির সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো।
যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা সেগুলো প্রথম দিকে ছিল না। ১২ নম্বর কেমো শেষে এমনকি সার্জারির তিনদিন আগেও তিনি লিখেছেন। নিউইয়র্কেও তার জন্য নীচু টেবিল কেনা হয়েছিল কারণ তিনি মেঝেতে বসে লিখতেন সবসময়।
মৃত্যুর আগে ছিল শেষ তিনটি ইচ্ছা
সার্জারির চার/পাঁচদিন আগে তিনি সবাইকে ডেকে বললেন, আমার এত বড় সার্জারি হবে বাঁচবো কিনা ঠিক নেই। তো ফাঁসির আসামিদের যেমন মৃত্যুর আগে ২টা-তিনটা ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ দেয়া হয় সেরকম আমিও তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে চাই সার্জারির আগে। এরপর তিনি বললেন- প্রথম ইচ্ছা অ্যাস্টোরিয়াতে একটা সি-ফুড রেস্তোরায় সবাইকে নিয়ে লাঞ্চ করবেন। আরেকটি হল- পিআর সেভেন্টিন বলে একটা ওপেন ফুডকোর্ট আছে যেখানে তিনি বাচ্চাদের নিয়ে যেতে খুব পছন্দ করতেন- সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে যাবেন তিনি। আর তৃতীয় ইচ্ছা- তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবেন এবং সেখানে থাকবেন কেবল তারা দুজন।
তিন নম্বর ইচ্ছেটি পূরণ করার কথা ছিল সার্জারির দুদিন আগে। শেষপর্যন্ত তিনি সেদিন বাচ্চাদের রেখে আর বের হতে চাইলেন না।
অপারেশন সফল হয়েছে
১২ই জুন ২০১২। সকাল ৬টায় সার্জারি। পূরবী বসু লেখেন, দৃঢ় মনোবল নিয়ে সার্জারির জন্য অপারেশন থিয়েটারে যান লেখক। স্ট্রেচারে নয়, পায়ে হেঁটে।
ভোর ৬টার দিকে কয়েকজন রোগীকে স্ট্রেচারে করে নার্স নিয়ে গেল সার্জারিতে আমাদের সামনে দিয়ে। কিন্তু হুমায়ূন কোথায়? একটু পরে দেখি গাউন পরা হুমায়ূন আমাদের সামনে দিয়ে, স্ট্রেচারে করে নয়, পায়ে হেঁটে দিব্যি নার্সের সঙ্গে হাসিমুখে চলে গেল অপারেশন থিয়েটারের দিকে।
পূরবী বসুর বইয়ের তথ্যানুসারে, ‘সাড়ে ৬ ঘণ্টা পরে দেখা গেল তার সার্জারি শেষ। আরও কিছুক্ষণ পরে রিকভারি রুমে জ্ঞান ফিরল তার। ততক্ষণে হুমায়ূনের সার্জিকেল টিম এসে জানায় যে অপারেশন সফল হয়েছে।’
সার্জন বললেন, `যতদূর আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার শরীরে এখন আর কোন ক্যানসার নেই।’ যদি কোন টিউমার ইতোমধ্যেই অন্য কোথাও তৈরি হতে শুরু করে থাকে যা এখনো চোখে দেখা যাচ্ছে না, অথবা আবার পরে যদি নতুন করে কোন টিউমার হয়, সেটার কথা অবশ্য বলা যাবে না এই মুহূর্তে। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না যেহেতু স্টেজ ফোরে হুমায়ূনের ক্যান্সারের অবস্থান।
পাঁচদিন সার্জিকেল বিভাগের আইসিইউ-তে থাকার পর সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় লেখককে। তারও দুদিন পর রিলিজ করে দেয় হাসপাতাল।
কুইন্সে ভাড়া করা একটি দোতলা বাড়িতে ফিরে যান লেখক। কিন্তু অপারেশন সফল হলেও শারীরিক অস্বস্তি কমছিল না মোটেই।
পূরবী বসু বলেন-
‘হুমায়ূনের খোঁজ নিই প্রতিদিন। শুনি পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি। সেটা প্রত্যাশিত, ডাক্তারও বলেছিলেন। আর সেতো হবেই! একই সঙ্গে পেটের দুই জায়গায় এত বড় সার্জারি হয়েছে। ২১শে জুন দুপুরে মাজহার আমাদের রকল্যান্ডের বাড়িতে ফোন করে জানায় হুমায়ূনের কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে। পেটে ব্যথা তো আছেই এবং সামান্য জ্বর ৯৯.৭ ডিগ্রি। আমি তাকে বললাম হুমায়ূনের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে। আমার সঙ্গে কথা বলার পর ওরা হাসপাতালে ফোন করে। কিন্তু ডাক্তার মিলার ছিলেন না। তবে তার সহকারীর সঙ্গে কথা হয়। সহকারী সার্জন জ্যোতি পরামর্শ দেন জ্বর ১০১ ডিগ্রি হলে টাইলেনল দিতে। আর ব্যথা খুব বেড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসতে। এরপর খুব ভোরে মাজহারের ফোনে ঘুম ভেঙে গেল। বলল হুমায়ূনের পেটের ব্যথা বেড়ে গেছে, অস্বস্তি হচ্ছে খুব।’
এরপর হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তার পরিবার ও বন্ধুরা রওনা হন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। পথেই তার এত বেশি খারাপ লাগা শুরু হয় যে সে আর বসে থাকতে পারছিল না। ফলে তারা ৯১১ কল করলে তখনই অ্যাম্বুলেন্স আসে। অ্যাম্বুলেন্স তাদের নিকটবর্তী জামাইকা হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়। কারণ আমেরিকায় ৯১১ কল করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে ওরা সবসময়েই সবচেয়ে কাছের হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায় রোগীকে। আর জামাইকা হাসপাতাল ছিল হুমায়ূনের বাসা থেকে কাছে।’
জামাইকা হাসপাতালের attending সার্জন বললেন, যদিও স্ক্যানে সুনির্দিষ্ট কোন `লিক` দেখা যাছে না অন্ত্রে, কিন্তু পেটে (abdominal cavity তে) যথেষ্ট গ্যাস ও তরল পদার্থ জমা হয়েছে। তার মানে লিক আছে কোথাও। এর মাত্র কিছুক্ষণ আগেই জানা যায়, আগেরদিন হুমায়ূন তার শোবার ঘরের একটি প্লাস্টিক চেয়ারে বসে ছিল। হঠাৎ ওই প্লাস্টিকের চেয়ারটির পা গুলো বেঁকে গিয়ে মেঝের দিকে বসে যেতে থাকে। চেয়ারে উপবিষ্ট হুমায়ূন ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে পড়তে শুরু করে। সামনেই ছিল শাওন। চেয়ার মাটি ছোবার আগেই সে তাকে দুই হাত দিয়ে ধরে তুলে খাটে নিয়ে বসায়। সেই সার্জন ডাক্তার ঘটনাটির আদ্যোপান্ত শুনে বললেন, তার এখনকার এই অবস্থার সঙ্গে ওই ঘটনার কোনো যোগ আছ বলে তিনি মনে করেন না। ডাক্তার আমাদের বোঝান, পেটে (abdominal cavity তে) গ্যাস ও তরল পদার্থ থাকায় তার পেট ফুলে উঠেছে।’
এরপর ওইরাতেই হুমায়ূনকে একঘণ্টার মধ্যে ইমার্জেন্সি সার্জারি করবে বলে নিয়ে যাবে। সেখানে পেট থেকে গ্যাস ও পানি বের করবে। তা না হলে তার জীবন সংশয় হতে পারে। এছাড়া অন্ত্রের সেই লিকটাও মেরামত করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে যেখান থেকে গ্যাস ও তরল পদার্থ বেরুতে শুরু করেছে।
ভালোভাবেই সার্জারি হয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
এরপর হুমায়ূন আহমেদ বমি করলে তা ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ দেখা দেয় এবং তার মুখে পাইপ দেয়া হয়, কিন্তু এ নিয়ে তৈরি হয় তার মধ্যে অস্বস্তি।
পূরবী বসু বলেন- আমি কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে তাকে দেখে ফিরে যাব ভেবে তার ঘরের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়াই। দেয়ালের ওপারে ঘরের ভেতর খাটে শুয়ে ছিল হুমায়ূন। হঠাৎ আমি দেখি হুমায়ূন তার দুই হাত দিয়ে তার শরীর থেকে তার সকল নল তার-টার সব খুলে ফেলার চেষ্টা করছে। অথচ মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমরা যখন এখান থেকে যাই, সে গভীরভাবে ঘুমুচ্ছিল। দুদিন আগে ঠিক একই কাজ করেছিল সে। সব কিছু খুলেটুলে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।’
সেদিনই ডাক্তার জানান, হুমায়ূন ১০০% সাপোর্ট পাচ্ছে ভেন্টিলেটর থেকে। হুমায়ূনের দুই হাতের নিচে লম্বা কাঠের পাত দিয়ে প্লাস্টারের মতো করে বেঁধে দেওয়া হয় যাতে সে হাত দিয়ে নাক বা মুখের টিউব খুলে ফেলতে না পারে।
পরদিন দুপুরের পরে ডাক্তার মিলার আসেন এবং বর্ণনা করেন- হুমায়ূনের শারীরিক অবস্থা যখন সে প্রথম আমেরিকায় আসে তখন কেমন ছিল, এখানে আসার পর কেমোথেরাপি নিয়ে কতখানি উন্নতি হয়েছিল। তারপর যে সার্জারি করা হল, সেটাও কী রকম সফল হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার কোলন থেকে পরে`লিক` করতে শুরু করে। ফলে ইমার্জেন্সি সার্জারি করে সেই লিক ঠিক করা হয়েছে।
এরপর বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকে। এমনিতে হুমায়ূনের ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যা তো ছিলই, বাইপাস সার্জারিও পুরোটা করা সম্ভব হয়নি সিঙ্গাপুরে রক্তনালীর অবস্থা খুব ভালো না থাকায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খাওয়ার ফলে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতাও খুব বেশি ভালো ছিল না। তার ওপর স্টেজ ফোর ক্যান্সার ও ক্যান্সারের জন্য ১২টি কেমো নেওয়া। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গিয়েছিল তার। ফলে অতি সহজেই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় সে। একটার পর একটা জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে তার অস্ত্রোপচার পরবর্তী নাজুক শরীর। আগে তাকে ইন্ট্রাভেনাস খাবার দেয়া হতো। পরে পাইপ দিয়ে পাকস্থলীতে সরাসরি খাওয়ানো শুরু হয়। এর ভেতর হুমায়ূনের আরও একটি অস্ত্রোপচার হয়। কেননা দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পরে তার পেটের মাঝখান দিয়ে যে কাটা হয়েছিল সেটা ঠিকমতো জোড়া লাগছিল না। জোড়া লাগবার পরিবর্তে ক্ষতের দুধারেই স্কার টিস্যু তৈরি হয়ে মাঝখানের কাটা জায়গাটাকে আস্তে আস্তে ফাঁক করে দিচ্ছিল। ফলে আরেকটি অপারেশন করে স্কার টিস্যুগুলো পরিষ্কার করে ফেলে দিয়ে চামড়ার নিচে ম্যাশ বসিয়ে দুদিক একত্র করে কাটা জায়গাটি জোড়া লাগাবার প্রচলিত পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা করার আগে পেটের ভেতরের এবসেস, পুঁজ, পানি সব পরিষ্কার করে ফেলে দেয়া হয়েছিল। হুমায়ূনের ডায়াবেটিক শরীর ঘা শুকানোর জন্য অনুকূল ছিল না। কিডনির জন্যও নয়। তারপর এন্টিবায়োটিক চলা সত্ত্বেও তার শরীরে প্রচণ্ড ইনফেকশন থাকার কারণে এক পর্যায়ে কিডনি দুটোও অকেজো হয়ে পড়ে। ডায়ালাইসিসে দিতে হয় তাকে।
এভাবে হুমায়ূনের শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যেতে থাকে। তবে এরই মাঝে আবার কোনোদিন ভাইটাল সাইনগুলো হঠাৎ করে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। অনেক স্বাভাবিক ও সংহত মনে হয় ওর অবস্থা। যেমন হয়েছিল মৃত্যুর আগের দিনও।
অবশেষে ১৯ জুলাই। সেদিন খুব ভোরে ডাক্তার মিলার নিজেই আমাকে মেসেজ পাঠালেন, আমি তাকে ফোন করার আগেই। হুমায়ূনের অবস্থা ভালো নয়, ব্লাড প্রেশার ঠিক রাখা যাচ্ছে না। নিউইয়র্কে হুমায়ূনের স্বজনদের খবরটা দিলাম। পরে আস্তে আস্তে হাসপাতাল থেকে একে একে ফোন পেতে শুরু করলাম। শাওনের, মাজহারুল ইসলামের, লেখক, শিক্ষক জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক, ডাক্তার মিলারের। একসময় ডাক্তার মিলার লিখলেন,`হুমায়ূনের অবস্থা খুব খারাপ। তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনরা তাকে ঘিরে চারপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি ভীষণ দুঃখিত।’
সেই চলে গেলেন তিনি, আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। অনেক রোগভোগ আর অনেকগুলো কষ্ট নিয়ে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।