ইনসাইড আর্টিকেল

ওই মহামানব এসেছিলেন বাঙালির মুক্তির বার্তা নিয়ে


Thumbnail

ওই মহামানব আসে;- দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে- মর্ত ধূলির ঘাসে ঘাসে।- সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ, - নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক- এলো মহাজন্মের লগ্ন।- আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত- ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।- উদয় শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব- নব জীবনের আশ্বাসে।- জয় জয় জয় রে মানব অভ্যুদয়, মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে।-  কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই চরণগুলো মনে করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির স্বাধীনতার রূপকার মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের দিনক্ষণ। আজ ১৭ মার্চ। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। দেশে, বিদেশে যথাযথ মর্যাদায় উৎযাপিত হবে জাতির পিতার জন্মদিন। গোপালগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট একটি গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। গ্রামটির কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া মধুমতী নদী। এ গ্রামেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মেছিল এক শিশু। ছোটবেলায় মা-বাবা আদর করে তাকে ডাকতেন খোকা বলে। ছোট্ট গ্রামের এই ছোট্ট খোকা একদিন হলেন বাঙালির বড় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। অবশ্য নামটি রেখেছিলেন তার মাতামহ। আর শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সব শেষে জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জের দেওয়ানী আদালতের ‘সেরেস্তাদার’ ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় শেখ মুজিব স্থানীয় গিমাডাঙ্গা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। চোখের রোগের কারণে তার প্রাথমিক শিক্ষা প্রায় চার বছর বিঘ্নিত হয়েছিল।

কিশোর খোকার জীবন শুরুর দিকে একটি ঘটনা। ১৯৩৮ সাল। খোকা তখন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। স্কুল পরিদর্শন শেষে তারা ফিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের পথ আটকে দাঁড়ালেন এই কিশোর শেখ মুজিবুর রহমান। সবাই বিস্মিত, কিছুটা বিব্রতও। প্রধান শিক্ষক হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ। কিন্তু কেন এ দুই বিশাল ব্যক্তিত্বের পথ আটকানো? কোনো দ্বিধা বা জড়তা ছাড়াই এই কিশোর দাবি করলেন যে, স্কুল ছাত্রাবাসের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। তা মেরামতের ব্যবস্থা না করে মন্ত্রী দুজন যেতে পারবেন না। কিশোরের সাহস আর দৃঢ়তা দেখে মুগ্ধ শেরেবাংলা জানতে চাইলেন, ছাত্রাবাস মেরামত করতে কত টাকা লাগবে। হিসাবটা আগেই করা ছিল বলেই ভবিষ্যতের বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, বারোশ’ টাকা। টাকা তাৎক্ষণিক বরাদ্দ হলো, ছাত্রাবাসটিরও মেরামত হলো। একজন কিশোরের সাহস আর দৃঢ়তার জন্য তা সম্ভব হয়েছিল, স্কুল প্রশাসনের কোনো ভূমিকার জন্য নয়। নেতৃত্ব হঠাৎ গজিয়ে ওঠে না, নেতৃত্ব জীবনের শুরু থেকে সাধনার ফসল। এর কিছুদিন পর ঘটল আরও একটি ঘটনা।

সেবার টুঙ্গিপাড়ায় ফসল ভালো হয়নি। দরিদ্র কৃষকের ঘরে হাহাকার। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কিশোর শেখ মুজিব এমন কয়েক কৃষককে বাড়ি ডেকে নিয়ে এলেন। তিনি ধানভর্তি গোলা থেকে তাদের প্রত্যেককে ধান দিলেন। তিনি তা করেছিলেন বাবার অনুপস্থিতিতে এবং মাকে না জানিয়ে। পরে বাবার বকা খেয়ে তার দৃঢ় উত্তর ছিল। গরিবেরও পেট আছে, তাদেরও খিদে আছে। আমাদের অনেক আছে, তা থেকে কিছু দিয়েছি মাত্র। সেদিন ছেলের মানবিকতায় মুগ্ধ বাবা আর কোনোদিন বকেননি। আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাওয়া বঙ্গবন্ধুর জীবন শুরু হয়েছিল এভাবে। কিশোর বয়স থেকে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

বাংলাপিডিয়া অনুসারে, তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট অফ আর্টস (আইএ) এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণ প্রকাশ পেয়েছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক স্কুল পরিদর্শনে আসেন (১৯৩৮ সাল)। তরুণ মুজিব এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য একটি বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন।

ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৪৬ সালে কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একজন কর্মী এবং ১৯৪৩ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। রাজনীতিতে, তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন এবং গণতন্ত্রকামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় শেখ মুজিবকে ফরিদপুর জেলায় দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করেছিল। দেশভাগের পর (১৯৪৭), তিনি আইন অধ্যয়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কিন্তু এটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। ১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মদদ দেয়ার অভিযোগে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (১৯৪৮) গঠনের পেছনে প্রধান সংগঠক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রকৃতপক্ষে, তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জেলে বন্দী থাকাকালীন সদ্য প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের (১৯৪৯) যুগ্ম সম্পাদকের তিনটি পদের একটিতে নির্বাচন করার মাধ্যমে। ১৯৫৩ সালে, শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, এই পদে তিনি ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন পরে তিনি দলের সভাপতি হন। মুজিবের উদ্যোগেই ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় যাতে দলটিকে ধর্মনিরপেক্ষ মনে করা হয়। এটা রাজনীতির প্রতি তার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। যা ১৯৪৭ সাল থেকেই তাঁর মধ্যে গড়ে উঠেছিল।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে পূর্ণ সময় দেয়ার জন্য শেখ মুজিব মাত্র ৯ মাস দায়িত্ব পালনের পর আতাউর রহমান খানের (১৯৫৬-৫৮) মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে, ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার সাহস ছিল মুজিবের। তবে, তার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা (গুরু), সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানে সাংবিধানিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষ্ক্রিয় রাখার এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট নামে রাজনৈতিক জোটের অধীনে কাজ করার পক্ষে ছিলেন। এসবের মধ্যেই পাকিস্তানের ধারণা সম্পর্কে মুজিবের মোহভঙ্গ হয়েছিল।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ-কাম-আইনসভার সদস্য (১৯৫৫-১৯৫৬) এবং পরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (১৯৫৬-১৯৫৮) হিসেবে তিনি যে ধারণা পেয়েছিলেন তা হলো পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের মনোভাব সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের নয়। ভাষা আন্দোলনের বন্দীদের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন প্রথম (১১ মার্চ ১৯৪৮)।

১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষার প্রশ্নে তাঁর ভাষণ উল্লেখযোগ্য। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দাবি করে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন: ‘আমরা এখানে বাংলায় কথা বলতে চাই, আমরা অন্য কোনো ভাষা জানি বা না জানি সেটা আমাদের জন্য সামান্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি মনে করি যে আমরা বাংলায় নিজেদের প্রকাশ করতে পারি আমরা সব সময় বাংলায় কথা বলব যদিও আমরা ইংরেজিতেও কথা বলতে পারি। যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, আমরা হাউস ছেড়ে চলে যাব, কিন্তু বাঙালিকে এ হাউজে যেতে দেয়া উচিত; এটাই আমাদের অবস্থান।’

পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের নামকরণ পরিবর্তনের প্রতিবাদে শেখ মুজিব গণপরিষদে অন্য একটি ভাষণে (২৫ আগস্ট ১৯৫৫) যা বলেছিলেন তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। শেখ মুজিব বলেন, ‘স্যার, দেখবেন তারা ‘পূর্ব বাংলা’র পরিবর্তে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি বসাতে চায়। আমরা বহুবার দাবি করেছি যে আপনি (পূর্ব) পাকিস্তানের পরিবর্তে (পূর্ব) বাংলা ব্যবহার করুন। বাংলা শব্দের একটা ইতিহাস আছে, একটা নিজস্ব ঐতিহ্য আছে।’

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে রাজনৈতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর ক্যারিসম্যাটিক সাংগঠনিক ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে আন্তঃদলীয় রাজনীতি থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।

একজন দৃঢ় সংগঠক, শেখ মুজিব দলের উপর তার পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে, তিনি তার বিখ্যাত ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন যাকে তিনি ‘আমাদের’ (বাঙালি) বেঁচে থাকার সনদ বলে অভিহিত করেছেন।

পয়েন্টগুলো হলো (১) একটি ফেডারেল প্রদেশ এবং সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে একটি সংসদীয় ধরণের সরকার প্রবর্তন; (২) প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক ব্যতীত সমস্ত বিভাগ ফেডারেটিং ইউনিট বা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হবে; (৩) দুটি প্রদেশের জন্য পৃথক মুদ্রা বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পুঁজির উড্ডয়ন বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা; (৪) প্রদেশে করের সমস্ত অধিকার হস্তান্তর; (৫) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রদেশের স্বাধীনতা এবং (৬) আত্মরক্ষার জন্য মিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের জন্য প্রদেশগুলোর অধিকার।

সংক্ষেপে, কর্মসূচিটি রাজনৈতিক জীবনে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিল। অক্ষরে অক্ষরে ৬ দফা কর্মসূচির অর্থ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছায়া স্বাধীনতা। যদিও সমস্ত রাজনৈতিক দলের রক্ষণশীল অংশগুলো এটিকে উদ্বেগের দৃষ্টিতে দেখেছিল, তবে এটি তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত ছাত্র, যুবক এবং শ্রমজীবী শ্রেণির কল্পনাকে জাগিয়ে তুলেছিল।

মুজিবের চ্যালেঞ্জিং ৬ দফা কর্মসূচি উপস্থাপনের পর আইয়ুব সরকার তাকে কারাগারে বন্দী করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সরকারিভাবে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সঙ্গে আরও ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল পাকিস্তান বিমান ও নৌবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সার্ভিসম্যান। তাদের মধ্যে তিনজন প্রবীণ বাঙালি সরকারি কর্মচারীও ছিলেন। মুজিব আগে থেকেই কারাগারে থাকায় তাকে এক নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে অন্যান্য সহ-অভিযুক্তদের সঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

অভিযোগ ছিল, শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য অভিযুক্তরা গোপনে ভারতের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করার পরিকল্পনা করছিলেন। পাল্টা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ অবশ্য পাল্টা ফলদায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকা কুর্মিটোলা সেনানিবাসের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে বাঙালির আবেগকে আলোড়িত করে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে মুজিবের ক্যারিশমা আরও বেড়ে যায় এবং প্রায় পুরো জাতি তাদের নেতার বিচারের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দ্বারা সংগঠিত গণআন্দোলন ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে এমন গতিতে পৌঁছেছিল যে আইয়ুব সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করে দেশে আসন্ন গৃহযুদ্ধ এড়াতে চেষ্টা করেছিল। শেখ মুজিব ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিঃশর্ত মুক্তি পান।

মুক্তির পরের দিন, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল। তারা রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য গণসংবর্ধনার আয়োজন করে।

সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ (বাঙালির বন্ধু) উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর মধ্যে, তারা এক ধরণের ত্যাগী নেতাকে দেখেছিলেন যিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে প্রায় বারো বছর জেল খেটেছিলেন। বারো বছর জেল এবং দশ বছর নিবিড় নজরদারিতে থাকার পর শেখ মুজিবের কাছে পাকিস্তান থেকে মুক্ত স্বদেশের  জন্য আকাঙ্খা ছিল অনেক বেশি তীব্র।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র মুখপাত্র করে তোলে। তাঁর নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি (৭টি মহিলা সংরক্ষিত আসনসহ) জয়লাভ করে। জনগণ তাকে তার ৬ দফা পক্ষে নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট দিয়েছে। এবার তার বাস্তবায়নের পালা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রমনা রেসকোর্সে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের সময় ৬ দফা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার শপথ নেন।

এই পরিস্থিতিতে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতা জেড এ ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠন করতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা জাতীয় পরিষদের বৈঠক একতরফাভাবে স্থগিত করেন। এই ঘোষণা পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জবাবে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।

পুরো প্রদেশ তাকে সমর্থন করে। অসহযোগের সময় (২-২৫ মার্চ ১৯৭১), পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র বেসামরিক প্রশাসন তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং তার নির্দেশ অনুসারে চলে। তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রদেশের সরকার প্রধান হয়েছিলেন। ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের কথায় (লন্ডনের একটি দৈনিক) শেখ মুজিবুর রহমানকে এখন জনগণের পূর্ণ সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তানের বস মনে হচ্ছে। ধানমন্ডিতে রহমানের বাড়িটি আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, শিল্পপতি এবং সর্বস্তরের মানুষের আগমনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে (১২ মার্চ ১৯৭১)।

এ সময় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষাধিক মানুষের বিশাল সমাবেশে মুজিব ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যা বাঙালি জাতির ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মুজিব তাঁর ভাষণে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলেন- যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়। বক্তৃতার শেষে তিনি ঘোষণা করেন: ‘প্রতিটি বসতবাড়িতে দুর্গ গড়ে তুলুন। আপনার হাতে যা আছে তাই দিয়ে পাকিস্তানি শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখবেন, আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আরও অনেক রক্ত দেব, তবে আমরা এদেশের মানুষকে মুক্ত করব, ইনশাআল্লাহ’। ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

ইতোমধ্যে, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য নেতারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে ১৫ মার্চ ঢাকায় আসেন। পরের দিন সংলাপ শুরু হয় এবং ২৫ মার্চ সকাল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে। এই সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে অবিরাম অসহযোগ ও হরতাল চলতে থাকে।

ইতিমধ্যেই ছাত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন- এমন ঘোষণা দিয়ে আসছিল এবং তা অব্যাহত থাকে। এরই  প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বর্বর দমন অভিযান শুরু করে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ছাত্র, শিক্ষক ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে থাকে। এভাবে নয় মাসব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ও বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করে রাখা হয়।

গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সম্প্রচারের জন্য সাবেক ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে একটি ওয়্যারলেস বার্তা প্রেরণ করেছিলেন।

তাঁর ঘোষণার উদ্ধৃতি: ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন, আপনাদের যা কিছু আছে, শেষ পর্যন্ত দখলদার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য। বাংলাদেশের মাটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শেষ সৈনিককে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের হাতে বন্দী ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাকে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকার নামক অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডারও করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়কালে শেখ মুজিবের ক্যারিশমা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা এবং জাতীয় ঐক্য ও শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।

বঙ্গবন্ধুর বিচারে পাকিস্তানি জান্তা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, বিশ্বনেতারা তার জীবন বাঁচাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদারিত্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সারাদেশে আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে বিজয়ী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে সর্বস্তরের লাখো লাখো মানুষ তাকে বীরত্বপূর্ণ স্বাগত জানান।

তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ব্যাপারে নতুন প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বদানের বিষয়ে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়ে যায়। ডেইলি দ্য গার্ডিয়ান (লন্ডন থেকে প্রকাশিত) ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছিল: ‘শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিমানবন্দরে পা রাখার ফলে নতুন প্রজাতন্ত্র একটি দৃঢ় সত্যে পরিণত হয়।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে তিন বছরের স্বল্প সময়ের জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সরকারকে গোড়া থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অগণিত সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশে রাষ্ট্র-গঠন, জাতি-গঠনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়।

আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী লোকদেরকে জনরোষ থেকে বাঁচানো এবং সবচেয়ে বড় কথা, লাখ লাখ ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং আরও অনেক কিছু ছিল তাঁর সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

এতসব সমস্যার মধ্যেও শেখ মুজিব কখনোই সংবিধান প্রণয়ন করতে পিছপা হননি, যা তিনি দশ মাসের মধ্যে করেছিলেন। স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়। পনের মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় (৭ মার্চ ১৯৭৩)। ১৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথপ্রদর্শক নীতি তুলে ধরেন: ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে, যা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

জয় বাংলা---


মহামানব   বাঙালি   মুক্তি   বার্তা   বঙ্গবন্ধু   শেখ মুজিবুর রহমান  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন