নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর
অবস্থানের পর এখন পাল্টে গেছে চিত্র। বাংলাদেশের সঙ্গে নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী
আচরণে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
পেয়েছে নতুন মাত্রা। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ
থেকেই। বাংলাদেশ নিয়ে
ইতিবাচক কথা আসছে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, টানাপোড়েনের পর বাস্তববাদী
দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কারণেই দুই দেশ সম্পর্ক সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছে। এতে
সামনের দিনগুলোয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের।
কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, বাংলাদেশে
আওয়ামী লীগ চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বিষয়টিকে সেভাবে আর
সামনে রাখছে না। নির্বাচনের বিষয়ে তাদের আগের অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের
সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অনেক বেশি আগ্রহী। এটি ¯পষ্ট হতে
শুরু করে নির্বাচনের এক মাসের মাথায় ফেব্রুয়ারির শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় থেকে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরে বিভিন্ন ইস্যু উল্লেখ
করে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা খোলাসা করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন মনোভাব।
নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক
লক্ষ্যগুলোয় সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক
অঞ্চলের জন্য আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারির পরবর্তী অধ্যায়ে
প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন
ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য
এবং আরও অনেক বিষয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখতে আন্তরিক আকাক্সক্ষার কথা জানিয়ে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে
এবং আমাদের জনগণের সঙ্গে জনগণের শক্তিশালী বন্ধনই এ সম্পর্কের ভিত্তি।
বাইডেনের এ চিঠির পর যুক্তরাষ্ট্রের
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন
লুবাখারের নেতৃত্বে ঢাকা সফর করে যান দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি)
সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার। এইলিন লুবাখার ঢাকা সফরে এসে বলেছিলেন, সম্পর্ক এগিয়ে
নিতেই মার্কিন প্রতিনিধি দল সফর করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক শুভেচ্ছাবার্তায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক
এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তিরক্ষাসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলায় ঢাকাকে ওয়াশিংটনের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বার্তায় ব্লিঙ্কেন
বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকটে সাড়া দেওয়া, বিশ্বব্যাপী
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার। আমাদের এ অংশীদারি একটি মুক্ত, উন্মুক্ত,
নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বশেষ স্বাধীনতা দিবসে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এক সংবর্ধনা
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অ্যাম্বাসাডর ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রশংসা করেন।
তিনি ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি নির্মাণে বাংলাদেশি আমেরিকানদের
ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন
ডেমোক্র্যাটদের কাছে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক চর্চা প্রথম অগ্রাধিকার। এ কারণেই বাংলাদেশের
নির্বাচনের বেশ আগে থেকে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকার, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার
মতো বিষয়গুলো সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাদের
পররাষ্ট্রনীতির সফলতা বা ব্যর্থতা মেনে নিয়ে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই তারা
ব্যবসাবাণিজ্য, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তনের
মতো বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগী হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী। এ সম্পর্কের মধ্যে কিছু টানাপোড়েনের ঘটনা যদিও ঘটেছে, কিন্তু বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কারণে সেগুলো ছাপিয়ে দুই দেশই তাদের সম্পর্ক সঠিক অবস্থানে রেখেছে। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি ইমপ্লিমেন্ট করছে। এ অঞ্চলে তাদের মিত্রশক্তি প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের পাশে মিয়ানমার, চীন, ভারত রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান মিয়ানমারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মিয়ানমারের অর্থনীতি ৮০ বিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় সাড়ে চার শ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের একদিকে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিরও উত্থান হয়েছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সম্পর্কের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বজায় রাখছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।