ইনসাইড বাংলাদেশ

হোয়াইট বোর্ডকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ‘হোয়াইট বোর্ড’ ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংখ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে চারবার রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন- সিআরআই

হোয়াইট বোর্ড: আপনার বেড়ে ওঠার সময়গুলো সম্পর্কে বলুন? সরকার এবং রাজনীতির বিষয়ে আপনার শৈশবের ভাবনাগুলো কেমন ছিল?

শেখ হাসিনা: সত্যি কথা বলতে কি, আমি কখনই ভাবিনি যে আমি প্রধানমন্ত্রী হতে পারব! আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, কিন্তু সারাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি আমার মাথায় আসেনি। কীভাবে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায় বা কীভাবে মানুষের জীবন উন্নত করা যায় সেগুলো সম্পর্কে আমি সত্যিই সচেতনভাবে চিন্তা করিনি।

কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারি যে আমার বাবার আশেপাশে থাকা মানে, অবচেতনভাবে ছোটবেলা থেকেই আমার মনে (রাজনীতি ও দেশ ভাবনার) একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছিল। রাজনীতি তার জীবনের একটি সর্বাঙ্গীন অংশ ছিল এবং এটি এমন কিছু যার মধ্য দিয়ে আমরা বড় হয়েছি। আমরা দিনের সংবাদপত্র নিয়ে তার চারপাশে জড়ো হতাম এবং সারা বিশ্বে এবং আমাদের নিজেদের আঙ্গিনায় কী ঘটছে সে সম্পর্কে তার কথা শুনতাম। অনেক প্রশ্ন, অনেক দীর্ঘ আলোচনা! এভাবেই আমাদের দিন শুরু হতো।

আমরা গ্রামে অনেক সময় কাটিয়েছি। তিনি আমাদের কাছে তুলে ধরতেন যে লোকেরা কীভাবে ভোগান্তির শিকার হয়। কারণ তাদের জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, চাকরি, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা, মর্যাদাপূর্ণ জীবনের মতো মৌলিক অধিকার ছিল না।। তিনি সর্বদা কীভাবে জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে সে সম্পর্কে কথা বলতেন। তার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলো আমাকে আজও পরিচালিত করে।

হোয়াইট বোর্ড: দেশে ফেরার সময় প্রধান চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

শেখ হাসিনা: আমি যখন আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি, তখন এটা স্পষ্ট যে রাষ্ট্র আর জনগণের সেবা করছে না। ১৯৭৫ সাল থেকে, দেশটি গোপনে বা গোপনে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র অভিজাতদের দখলে ছিল, একটি ছোট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য নীতি তৈরি করেছিল। জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। জনগণেরও কথা বলার জায়গা ছিল না। এসব জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

হোয়াইট বোর্ড: সংকটে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব যখন আপনি নিলেন, বাংলাদেশের বয়স এক দশকও হয়নি। সে সময় থেকে পরবর্তী দিনগুলো জন্য আপনি কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন?

শেখ হাসিনা: আশির দশকের গোড়ার দিকে যখন আমি একটি প্রগতিশীল জোটের নেতৃত্ব দিতে শুরু করি তখন আমি একজন তরুণ রাজনীতিবিদ ছিলাম। আমি বাংলাদেশের ভেতর এবং বাহির জানার বিষয়ে আরও আগ্রহী ছিলাম। নিজের জন্য দেশটি দেখতে চেয়েছিলাম। আমাদের নীতির অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য আমি আমার দলের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসেছি। মানুষের চাহিদা বোঝার জন্য আমাকে তাদের কাছে যেতে হয়েছে, তাদের সংগ্রাম দেখতে হয়েছে। সর্বোপরি, আমি কীভাবে কল্যাণমূলক নীতিগুলো তৈরি করব যদি আমি না জানি যে সেগুলো কাদের জন্য? আমি আরামে বসে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

আওয়ামী লীগ বরাবরই একটি তৃণমূল দল, যার সর্বত্র সদস্য রয়েছে। আমি দেশের প্রতিটি কোণায় যেতে শুরু করি, যদিও বেশিরভাগ জায়গায় রাস্তা ছিল না। আমি হেঁটেছি, ছোট ছোট নৌকা নিয়েছি, রিকশা-ভ্যানের পিঠে চড়েছি, মূলত দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর জন্য যা যা দরকার তাই করেছি। দেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরেছি। আমি আমাদের জনগণের কষ্টগুলো সরাসরি গিয়ে দেখেছি । এটি আমাকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি।

হোয়াইট বোর্ড: বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথের দিকে তাকালে, কোনটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে আপনি মনে করেন?

শেখ হাসিনা: রাজনীতির সঙ্গে নীতিকে যুক্ত করতে হবে। আমার রাজনৈতিক সংগ্রামের কারণে আমি একজন নীতিনির্ধারক। দেশের অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ১৯৭০-এর ও ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকের সামরিক স্বৈরশাসকরা। সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ছাড়া আপনি ভালো নীতি গড়ে তুলতে পারবেন না।

বিষয়টি হচ্ছে, জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া, একটি দেশ কেবল উন্নয়ন করতে পারে না। নীতিতে জনগণের দাবিকে প্রতিফলিত করতে হবে। এটি আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে ভোট প্রদানের জন্য আমার প্রচেষ্টাকে উৎসর্গ করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছিল আমাদের অন্যতম বড় অর্জন।

হোয়াইট বোর্ড: একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, আপনার প্রথম দিকের নীতিগত অগ্রাধিকারগুলোর একটি কি ছিল?

শেখ হাসিনা: কিছু অর্জন করতে হলে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে নীতিগত অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি ছিল গৃহহীনতা নির্মূল করা। গৃহহীনতার অনেক কারণ রয়েছে: জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দারিদ্র্য এমন সব বিষয়।

আমার প্রশাসন জনসাধারণকে সরকারি তহবিল থেকে বাড়ি দেওয়ার একটি সহজ নীতির মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলা করেছে। অন্য কথায়, আমরা গৃহহীনদের বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছি। আমরা তিন দশক ধরে এই নীতি বাস্তবায়ন করেছি এবং আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। যখন কারও নিজস্ব ঠিকানা থাকে, তখন তা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

হোয়াইট বোর্ড: আপনার নাম প্রায়শই 'উন্নয়নের রাজনীতি' শব্দটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই শব্দটির ব্যাখ্যা কী আপনার কাছে?

শেখ হাসিনা: আমি আপনাকে একটি সহজ উত্তর দিই। ভালো রাজনীতি ছাড়া ভালো নীতি হতে পারে না। ভালো রাজনীতির জন্য পাকা রাজনীতিবিদ প্রয়োজন। তৃণমূল রাজনীতিবিদরা দেশকে অন্যভাবে বোঝেন, তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা রয়েছে। নীতির দিক দিয়ে উন্নয়ন প্রায়শই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিভাষায় বোঝা যায়। কিন্তু আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা দেশকে নিয়ে ভাবি আরও স্বজ্ঞাতভাবে।

রাজনীতি ব্যক্তিগত লাভ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য হওয়া উচিত নয়, যা আপনি একজন সামরিক স্বৈরশাসক বা বিচ্ছিন্ন অভিজাতদের মধ্যে দেখতে পাবেন। এটি একটি দেশের উন্নয়ন এজেন্ডাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। বাংলাদেশে, আপনি পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন। কারণ দেশটি উভয় পদ্ধতির সরকারই দেখেছে।

শেখ হাসিনা: ফিরে যাওয়া যাক ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশের প্রথম বছর। এটি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ছিল। মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারের নিচে। আওয়ামী লীগ ছিল দেশব্যাপী তৃণমূল মানুষের সাথে গভীর যোগাযোগ স্থাপন করা একটি রাজনৈতিক দল। একজন তৃণমূল রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমান তখন সরকারের দায়িত্ব নেন। তার প্রশাসনকে প্রথম থেকেই শুরু করতে হয়েছিল। তাদের মূলত একটি সার্বভৌম দেশ গড়ে তুলতে হয়েছিল, যা ছিল পূর্বে পাকিস্তানের একটি অবহেলিত প্রদেশ। সমস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন, নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত লোককে পুনরায় একত্রিত করার মতো কাজ ছিল তাদের দীর্ঘ করণীয় কর্ম তালিকায়।

এখানেই রাজনীতির বিকাশ ঘটেছে। একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিই পারে এমন অসম্ভব চ্যালেঞ্জ নিতে। মুজিবের মতো একজন রাজনীতিবিদ যখন এ ধরনের দায়িত্ব পান, তিনি তা ভালোভাবে করতে পারেন। আওয়ামী লীগের মতো নেটওয়ার্ক থাকায় তিনি দ্রুত জনগণের চাহিদা মূল্যায়ন করতে পারতেন। ১৯৭৫ সালে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি জনগণের মাথাপিছু আয় ২৫০ ডলারের ওপরে উন্নীত করতে সক্ষম হন। ১৯৭৫ সালে তাঁকে হত্যার পর, পরবর্তী সংবিধান বহির্ভূত সামরিক জান্তা জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি - কারণ এতে তৃণমূল বা সমাজকল্যাণের আদর্শের অন্তর্দৃষ্টি ছিল না। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনগণের আয় মূলত স্থবির ছিল। জনগণের একজন সত্যিকারের প্রতিনিধির একটি দেশের উন্নয়নের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, যা একজন অভিজাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী করতে অক্ষম। উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা। উন্নয়নকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা যাবে।

হোয়াইট বোর্ড: আমি নিশ্চিত যে আপনি শব্দটি যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিয়ে সমালোচনা থাকবে—

শেখ হাসিনা: অন্যরা কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করেছে তা আমি সত্যিই নিশ্চিত নই। তবে আমি জানতে আগ্রহী।

হোয়াইট বোর্ড: আপনি একটি বাজারমুখী নীতি গ্রহণ করেছেন, আবার সমাজতন্ত্রকেও নীতি হিসেবে রেখেছেন, যা আপনার পিতা মুজিব গ্রহণ করেছিলেন। একই সঙ্গে এই দুটি নীতির মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব আছে কি? যদি না থাকে তাহলে আপনি কিভাবে একটি ভারসাম্য অর্জন করতে সক্ষম হলেন?

শেখ হাসিনা: মুজিব একজন সামাজিক গণতন্ত্রী ছিলেন, যিনি বাংলাদেশকে সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। তিনি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য ও বাসস্থানের মতো মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে উন্নত করার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তিনি 'কাউকে পিছিয়ে না রাখো' ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আরও স্পষ্ট করেছিলেন যে বাংলাদেশ অন্য কোথাও থেকে কোনো ‘মতবাদ’ আমদানি করবে না। অন্য কথায়, আমাদের নিজস্ব মতবাদ অনুসারে সবকিছু পরিচালিত হবে। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বোঝার জন্য আপনাকে আমাদের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।

১৯৭২ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পভিত্তি ছিল ধ্বংসস্তূপ। প্রায় সব শিল্পের মালিকানা ছিল পাকিস্তানি শাসক শ্রেণীর, যারা তাদের কার্যক্রম এ দেশ থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। মুজিব প্রশাসন সমস্ত শিল্পকে জাতীয়করণ করে, কারণ সরকার ছিল একমাত্র নিয়ন্ত্রক। এতে দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ চাকরির সংস্থান হয়েছে। এরপরে প্রশাসনও শিল্পগুলোকে বিদেশীকরণ শুরু করে। এই বিষয়টি সমালোচকরা প্রায়শই উপেক্ষা করে।

মূলত, সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতই অর্থনীতিকে চালিত করেছিল। এই পাবলিক-প্রাইভেট ইন্টারপ্লে বাংলাদেশের সংবিধানে নিহিত ছিল, যা তিনটি ধারার অধীনে অর্থনৈতিক মালিকানা নির্ধারণ করে: সরকারি, বেসরকারি এবং সমবায়। এই ট্রাইফেক্টা ফর্মুলাটি দেশের সেই শুরুর দিনগুলোতেই প্রণয়ন করা হয়েছিল।

আমার কাছে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণই ছিল আমার ‘সমাজতন্ত্র’-এর সংস্করণ। জনগণের সেবা করার জন্য দলকে সময় ও বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে পরিবর্তন করতে হয়েছে। এটা করে, আমি বিশ্বাস করি আমি আমার বাবার নির্দেশ অনুসরণ করেছি; আমি কোন দ্বন্দ্ব দেখি না।

হোয়াইট বোর্ড: চিন্তাধারার পরিবর্তন কীভাবে এল?

শেখ হাসিনা: আসলে, আমরা বিশ্বের বাকি অংশে যা ঘটছে তা উপেক্ষা করতে পারি না। আমি সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ফোরামের এক আলোচনায় যোগ দিয়েছিলাম। এটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম এবং সেখানে মিশ্র-অর্থনীতির মডেলের যোগ্যতা নিয়ে অনেক আলোচনা হতো। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছিল এখানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি গৃহীত হয়েছিল এবং মনে করা হতো বিষয়টি একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালও আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে। সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইউরোপের আয়রন কার্টেনও হ্রাস পেতে শুরু করে। এদিকে বাংলাদেশে অর্থনীতি উন্মুক্ত করার বিষয়ে বিতর্ক ছিল। আমরা তখন বিরোধী দলে ছিলাম।

আমার মনে আছে যুক্তরাজ্যে আমার এক সফরের সময় সেই সময়ের লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের সাথে এই প্যারাডাইম পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা হাউস অফ কমন্সে ছিলাম এবং সাবেক লেবার পার্টির নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ডের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট ছিল যে, 'এই ৪০ বছরের পুরনো অর্থনৈতিক চিন্তা আর কাজ করবে না।'

একই সময়ে, আমি নীতি সংস্কারের পুনর্বিবেচনার জন্য একটি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করি। এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে নীতিগত পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এজেন্ডা ছিল নতুন যুগের জন্য একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা।

এটা সহজ ছিল না, আমাদের অনেক বিতর্ক ছিল। কিন্তু আমরা অবশেষে একটি মিশ্র অর্থনীতি নীতির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২ সালে একটি উন্মুক্ত অর্থনীতির পদ্ধতি গ্রহণ করি। এ নিয়ে বিতর্ক চলার মধ্যে ৯০ দশকের মাঝামাঝি আমি প্রধানমন্ত্রী হই। এই সময় খুব যথাযথ ছিল। আমরা এরপর দ্রুত আমাদের কিছু ধারণা সরকারি নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছি।

হোয়াইট বোর্ড: দলের এই অর্থনৈতিক মূল্যবোধের পুনর্বিন্যাস করার সময় আপনি কি কোনো প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন?

শেখ হাসিনা: আমার দলের মধ্যে কিছু মতাদর্শী একটি মিশ্র অর্থনীতি মডেলের তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া ছিল, মাঝে মাঝে খুব কঠিন। আমাদের অনেক উত্তপ্ত বিতর্ক এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু আমি আমার দলের মধ্যে থেকে আমার সংস্কার এজেন্ডার পক্ষে সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলাম। জনগণের আয় এবং জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আমাদের সর্বোত্তম নীতির প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ একটি প্রাচীন পদ্ধতিকে কঠোরভাবে আঁকড়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে দূরদর্শী নীতি গ্রহণ করতে হয়।

হোয়াইট বোর্ড: অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ কী শিখতে পারে?

শেখ হাসিনা: এটা একটি মজার প্রশ্ন। আপনি বাংলাদেশের ইতিহাস জানলে দেখবেন যে এই দেশের মডেল গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট দেশীয় মূল্যবোধ এবং নীতি ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করে। দেশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিব একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের শাসন চলবে শুধু আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।’ অন্য কথায়, বাংলাদেশ অন্য দেশের উন্নয়ন ফর্মুলা আমদানি করতে পারে না।

আমাদের নীতি-নির্ধারকদের আমাদের কৌশলগত অবস্থান, আমাদের ভূপ্রকৃতি, আমাদের জনগণের চাহিদা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের পরিবেশ এবং আমাদের সম্পদের মতো বিষয়গুলো বুঝতে হবে। উন্নয়নের জন্য বিদেশি পরামর্শ এখানে কখনই কাজ করে না। এর মানে এই নয় যে, আমরা সারা বিশ্বের উন্নয়নে চোখ বন্ধ করে রাখি। বিভিন্ন দেশের ভালো চর্চাগুলো আমাদের প্রয়োজনের জন্য শিখতে হবে।

হোয়াইট বোর্ড: আপনারা কোন বিদেশি নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

শেখ হাসিনা: স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে দারুণ সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা রয়েছে। তারা তাদের জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার একটি বড় উদাহরণ। পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর দুর্দান্ত পরিবহন অবকাঠামো রয়েছে, যা তারা মেধাসম্পন্ন নীতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে।

স্বাস্থ্যখাতের একটি উদাহরণ দিই। আশির দশকে যখন আমি প্রায়শই যুক্তরাজ্যে যেতাম, আমি লক্ষ্য করেছি যে তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিটি পাড়ায় পৌঁছেছে। বাড়ির কাছাকাছি, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে একই ধরনের স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক বিদ্যমান। এই সর্বজনীনভাবে অর্থায়ন করা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সর্বোত্তম প্রাথমিক সেবা প্রদান করে। এগুলোর স্থানীয় চাহিদার জন্যও খুব প্রাসঙ্গিক। তাই, আমি কমিউনিটি ক্লিনিক নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের জন্য তাদের সিস্টেমগুলোকে গ্রহণ করেছি। মূল ধারণা ছিল সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া।

এটিকে টেকসই করার জন্য, স্থানীয়দের মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে একটি পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে। স্থানীয়রা জমি দেবে, ফার্মা কোম্পানিগুলি ওষুধ সরবরাহ করবে এবং সরকার পরিষেবাগুলো সহজতর করবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবার একটি নতুন স্তর যুক্ত করেছে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বোঝা কমিয়েছে।

হোয়াইট বোর্ড: বিদেশী অংশীদাররা দুটি প্রধান হাতিয়ার ব্যবহার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে: সাহায্য এবং নীতির ব্যবস্থাপত্র। দেশ কি এই নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে?

শেখ হাসিনা: বিদেশী নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে এবং এটি আমার প্রশাসনের একটি প্রচেষ্টার কারণেই হয়েছে। এই নির্ভরতার শেকড় অনেক গভীরে ছিল। এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে আমাদের প্রথমে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আপনার নিজেকে সমান হিসাবে দেখা শুরু করতে হবে। এই সমস্যাগুলো যথাযথ সমাধান করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অর্থ এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

যখন অন্যান্য সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেট প্রণয়ন করত, তখন সিংহভাগই বিদেশি অর্থায়ন থেকে আসতো। তাদের আর্থিক নীতি ছিল মূলত 'দাতা-নির্ভর’। সর্বোপরি, জনসাধারণের ব্যয়ের ক্ষমতা ছিল নগণ্য। আমি বিদেশি ধার করা অর্থ প্রত্যাখ্যান করে এই নীতিটি উল্টে দিয়েছি।

আমার প্রশাসন আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ ত্বরান্বিত করেছে। অন্তত টাকা আমাদের নিজেদের সীমানার মধ্যে সঞ্চালিত হবে। দীর্ঘমেয়াদী এই নীতির ফল এসেছে। এখন আপনি দেখতে পাবেন যে আমাদের সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ আসে আমাদের নিজস্ব দেশীয় সম্পদ থেকে।

হোয়াইট বোর্ড: উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারা নির্ধারিত নীতি এবং প্রকল্প সম্পর্কে কী বলবেন?

শেখ হাসিনা: যখন আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতারা আমাদের কাছে বড় প্রকল্প নিয়ে আসে, তখন মূলত অর্থই আমরা তাদেরকে দেই। অনেক বাংলাদেশি নীতি-নির্ধারক কঠিন প্রশ্ন উত্থাপন না করেই তারা যা বিক্রি করছেন তা দ্রুত কিনতে চায়। কনসালটেন্সি ফি কেমন? প্রকল্পের বিনিয়োগের আয় কি? এতে কার উপকার হবে? এসব বিষয় ভাবতে হবে।

আমাদের বেপরোয়াভাবে ধার করা এবং করের বোঝা বাড়ানো উচিত নয়। তবে কিছু বিদেশি আমাদের এটি করতে বলেছে। বড় বড় প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি সুপরিচিত! উপযুক্ত মনে করলে নীতি-নির্ধারকদের অর্থ ব্যবহার করা উচিত। আপনার প্রয়োজন না হলে ঋণ নেবেন না। আপনি যদি অলাভজনক প্রকল্পের জন্য অর্থ নেন তবে এটি কেবল ঋণের বোঝা তৈরি করবে।

আমাদের এখন নীতি-নির্ধারকরা আর সহজে বিদেশিদের প্রণীত প্রকল্পে প্রভাবিত হন না। এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সময় এবং প্রচেষ্টা লাগে। এখন বাংলাদেশিরা বিশেষ করে সরকারি সহায়তায়, সারা বিশ্ব থেকে সেরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। অনেকেই সেরা জায়গা থেকে পিএইচডি করছেন। এটি বাংলাদেশের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সুচিন্তিত নীতির প্রভাব।

আমরা আমাদের দেশের মধ্যে একটি দক্ষ জনবল তৈরি করব। তাহলে নীতি বা প্রকল্প প্রণয়নের জন্য আমাদের আর বিদেশে যেতে হবে না। নীতি প্রণয়ন চিরকাল বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। বাংলাদেশের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। এটা আমার সহজ কথা, আমাদের দেশ আমাদের নীতি।

হোয়াইট বোর্ড: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারকদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?

শেখ হাসিনা: তাদের জন্য, আমি আমার প্রশাসনের নীতির নকশা শেয়ার করতে পারি। শুরুতে, আমরা প্রয়োজন বিশ্লেষণ করি; তারপর, আমরা তিনটি টাইমলাইনে নীতিগুলি তৈরি করি: বর্তমান, মধ্য-মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী৷ ২০০৭ সালে যখন সামরিক নিয়ন্ত্রিত সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল, তখন আমি বাংলাদেশের পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কারাগারের সময়কে কাজে লাগাই। আমি সাক্ষরতা, পুষ্টি, আয় এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো সূচকগুলোতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কাঠামো আমার কারাবাসের সময় তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালে যখন আমার প্রশাসন দায়িত্ব নেয়, তখন আমরা বিভিন্ন সময়ের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিলাম। ১২ বছরের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলে থাকি। এটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য একটি ভবিষ্যৎ-বাউন্ড রেফারেন্স টুল হিসাবে কাজ করে। এই নীতির নকশা কৌশল পরীক্ষা করা হয়েছিল কারণ আমার প্রশাসন ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল। ২০২১ সালের মধ্যে এই নীতি নকশা বাংলাদেশের জন্য সফল ফলাফল এনেছিল। ওই বার প্রথমবারের মতো, একটি দীর্ঘমেয়াদী এজেন্ডা দেশে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

হোয়াইট বোর্ড: আপনি কি মনে করেন যে ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারকদের আপনার দীর্ঘমেয়াদী নীতি অনুসরণ করা উচিত?

শেখ হাসিনা: আসলে তা না। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত কৌশলগত নীতি নির্ধারণের ফলে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এর অগ্রগতি কোন অলৌকিক ঘটনা নয়। নীতি গবেষণা দ্বারা তৈরি একটি সূত্র রয়েছে যা স্থানীয় জ্ঞান, নমনীয়তা, একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে একত্রিত করে। ভবিষ্যৎ নীতি-নির্ধারকরা যদি সূত্রটি বোঝেন এবং নতুন বাস্তবতার জন্য পরিকল্পনাগুলোকে নতুন করে সাজান তাহলে তারা বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারবেন। আমি তাদের কঠোর না হওয়ার পরামর্শ দেব।

হোয়াইট বোর্ড: আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রধান নীতিনির্ধারণী ও আদর্শিক চ্যালেঞ্জগুলো কোথায় দেখছেন?

শেখ হাসিনা: পরিবর্তনই একমাত্র জিনিস যা অনুমানযোগ্য। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, দর্শন - সবকিছু বদলে যায়। আমি সত্যিই সংঘাতের পূর্বাভাস দিতে পারি না তবে আমি জানি যে সংকট অবশ্যই আসবে। আমাদের দূরদর্শিতা দিয়েই আমরা নীতি প্রণয়ন করতে পারি। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞার আমার মেয়াদে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের বড় উদাহরণ।

আদর্শগত কারণে এটি আসতে পারে তবে প্রভাব পরিমাপ করা কঠিন। চরমপন্থী কট্টরপন্থী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও, যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট আদর্শ নেই, তারা ক্ষমতায় এলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। এটা আমাকে মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন করে। উদারপন্থী মতাদর্শের লোকেরা যদি বাংলাদেশকে শাসন করে, তবে তারা অবশ্যই দেশের অগ্রগতি ফিরিয়ে দেবে। এটা অনেক দেশেই হয়েছে।

হোয়াইট বোর্ড: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, আপনি কি আগামী বছরগুলোতে সরকারের ভূমিকা সঙ্কুচিত বা সম্প্রসারিত হতে দেখছেন?

শেখ হাসিনা: আমি দেখছি সরকারের ভূমিকা শক্তিশালী। এটা সঙ্কুচিত হবে না। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে সরকারের এখনও সব সেক্টরে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সুন্দরবনে আগুন, ভয়াবহ রূপে ছড়িয়েছে ৩ কিলোমিটার জুড়ে

প্রকাশ: ১১:০৯ পিএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

পূর্ব সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরইমধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।

শনিবার (৪ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন গহিন বনে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বন বিভাগ ও স্থানীয় এলাকাবাসী আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট সন্ধ্যায় পৌঁছালেও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেনি।

খবর পেয়ে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারেক সুলতান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তিনি জানান, বিকেলে বনরক্ষী ও স্থানীয় এলাকাবাসী আগুন দেখতে পায়। এ সময় বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে পানি অনেক দূরে হওয়ায় রাত ৯টা পর্যন্ত ফায়ার ইউনিটগুলো আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে লাইন স্থাপনের কাজ করছে তারা। সকালে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারে বলে ঈঙ্গিত দেন এ বন কর্মকর্তা।

সুন্দরবন বিভাগের বিটিআরটির সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজ করছে। বিটিআরটি সদস্যরা জানান, তারা পানির অভাবে আগুন নেভাতে পারছে না। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত কাজ শুরু করতে না পারলে তীব্র দাবদাহের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়েছে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও পরে শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটসহ মোট ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। এখন লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। লাইন স্থাপন শেষে দ্রুত আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে।


সুন্দরবন   আগুন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

আমলাদের সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি কেন?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের এখন বাড়বাড়ন্ত। আমলারাই যেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছেন। তারাই যেন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরকম একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিবিদদেরকে ব্যাকসিটে দিয়ে আমলারাই যেন এখন রাষ্ট্র পরিচালনার ড্রাইভিং সিটে। আর এরকম পরিস্থিতিতে আমলারা এখন সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে গেছেন। তাদের বিচার করা যাবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আমলারা যৌন নির্যাতন, নারী কেলেঙ্কারি এবং ফৌজদারি অপরাধ করলেও শুধুমাত্র ইনক্রিমেন্ট বন্ধের মত লঘু শাস্তি পাচ্ছেন এবং সেই লঘু শাস্তিগুলো পরবর্তীতে ক্ষমা করা হচ্ছে।

আমলাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা আয়-ব্যয়ের হিসাবও এখন পর্যন্ত দাখিল করছেন না। অর্থাৎ সরকারি কোনও আইন, নীতি, নিয়ম কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না বাংলাদেশের আমলারা। এর মধ্যে আমলারা নতুন বায়না ধরেছেন। তারা তাদের সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন: সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় চান আমলারা

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে যে সমস্ত শীর্ষ আমলারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই সন্তানরা উচ্চশিক্ষা নেন বিদেশে। তারা শিক্ষাজীবনে একটি পর্যায়ের পর তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দেওয়ার জন্য বিদেশে পাঠান। দেখা যাচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যের মত দেশগুলোতে সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের শতাধিক আমলার সন্তানরা পড়াশোনা করে এবং এদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনই বৃত্তি পান। বাকিদের ব্যয়ভার বহন করেন আমলারাই। এই বিপুল ব্যয় বহনের অর্থ আমলারা কোথায় থেকে পান সেটি যেমন একটি প্রশ্ন, তেমনই আমলাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠানোর প্রবণতা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর তাদের অনাস্থারই প্রতিফলন।

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই মনোভাবটি আবার নতুন করে দেখা দিল- যখন তারা তাদের সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করলেন। প্রশ্ন উঠেছে, আমালাদের বেশিরভাগ সন্তানই যখন বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন তখন তাদের পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি কেন?

আরও পড়ুন: জনজীবনে অস্বস্তি বাড়ছে যেসব ইস্যুতে

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে সমস্ত আমালাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করছেন, সেই সমস্ত দেশগুলোতে এখন মানি লন্ডারিং এবং আয়ের উৎস একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক আমলার সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে এখন বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন। কারণ, কোথায় থেকে তার টাকা আসছে এবং কোথায় থেকে এই শিক্ষা ব্যয় বহন করা হচ্ছে এটি এখন দেশে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাছাড়া টিউশন ফি’র বাইরে আমলাদের সন্তানদের যে বিলাসবহুল জীবনযাপন সেই বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য টাকা পাঠানো এখন আগের মত আর সহজ নেই। আর এ কারণেই আমলারা মনে করছেন যে, ভবিষ্যতে এই মানি লন্ডারিং এবং অর্থ পাচারের ইস্যুতে তাদের বড় ধরনের সর্বনাশ ঘটতে পারে। আর তাই তাদের সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করছেন। কিন্তু আমাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন উঠেছে। আমলারা কি তাহলে তাদের জন্য সুবিধার সবকিছু নিংড়ে নিতে চান? এই প্রশ্নটি এখন সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।


সচিবালয়   আমলা   বিশ্ববিদ্যালয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সিঙ্গাপুরের জন্য চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ: হাইকমিশনার

প্রকাশ: ১০:৩৫ পিএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো বলেছেন, ‌ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিঙ্গাপুরের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ করে চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের বে-টার্মিনালে সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ বিনিয়োগ করছে, বে-টার্মিনাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এ আন্তর্জাতিক বৃহৎ বন্দরে উপনীত হবে। এ সূত্রে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। 

শনিবার (০৪ মে) হাইকমিশনার চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালকম-লীর সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ চেম্বার কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, আখতার উদ্দিন মাহমুদ, মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ, ওমর মুক্তাদির, এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর-এর দক্ষিণ এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট পার্টনার ক্লারেন্স চং, সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ’র লিম উই চিয়াং, বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির।

 


সিঙ্গাপুর   হাইকমিশনার   ডেরেক লো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে ফ্লাইট ওঠানামা

প্রকাশ: ১০:১৩ পিএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

রানওয়ের রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশ কয়েকটি কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আর তাই আগামী ৫ থেকে ৭ মে বিমানবন্দরের এ রানওয়েটি রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, এই ৩ দিন মধ্যরাতে ৩ ঘণ্টার জন্য ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকবে। এই সময়টাতে রানওয়ের মার্কিং করা, বৈদ্যুতিক ও রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কাজ করা হবে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এই ৩ ঘণ্টায় বিমানবন্দরে নিয়মিতভাবে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়ান এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ ও ক্যাথে প্যাসিফিকের ফ্লাইট থাকে। তাদের এই ৩ দিন ফ্লাইটের সময় এগিয়ে বা পিছিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যাত্রীসেবা মানোন্নয়নে রানওয়ের সেন্ট্রাল লাইনে আরও লাইট স্থাপনের জন্য ২ মাস ৫ ঘণ্টার জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ করা হয়েছিল।


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর   ফ্লাইট  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

চ্যালেঞ্জের মুখে তরুণ মন্ত্রীরা

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদেরকে রাজনীতিতে পাদপ্রদীপে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বহু তরুণকে তিনি প্রত্যাশার বাইরে জায়গা দিয়েছেন। নেতৃত্বে, মন্ত্রিসভায় এবং জাতীয় সংসদে নিয়ে এসেছেন। এবারের যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে সেই মন্ত্রিসভা অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে একটি মন্ত্রিসভা বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আরও পড়ুন: উপজেলায় বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিরা

এই মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বেশকিছু তরুণকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তরুণরা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা শান্ত-ধীরস্থিরভাবে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন সেটার উপর নির্ভর করছে সরকারের সাফল্যের অনেক কিছুই।

যে সমস্ত মন্ত্রীরা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-

১. শিক্ষামন্ত্রী: শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন এবারের মন্ত্রিসভায় অন্যতম বড় চমক। গত মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

বিশেষ করে এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা-বন্ধ নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, সেই টানাপোড়েনে সাধারণ অভিভাবকদের কাছে শিক্ষামন্ত্রী সমালোচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে হাইকোর্ট যখন প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। যদিও সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি পরে সরে এসেছেন। তবে তরুণ শিক্ষামন্ত্রীকে সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?

২. জনপ্রশাসনমন্ত্রী: গতবার ফরহাদ হোসেন ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। এবার তিনি পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নানা রকম আমলাতান্ত্রিক ইস্যু এখন ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে এবং সাধারণ মানুষের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্তৃত্ব-বাড়াবাড়ি অন্যান্য ক্যাডারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের একের পর এক পদোন্নতি এবং অন্যান্য ক্যাডারগুলোর অবহেলা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।

তাছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সেই নেতিবাচক মনোভাব কাটানোর জন্য জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রশাসনের ন্যায়নীতি এবং যোগ্য ব্যক্তিদেরকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টিও এখন একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে। চাটুকার এবং মতলববাজদেরকে পদোন্নতি দেওয়ার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের অবস্থান তৈরি হয়েছে।

আমলাদের বাড়বাড়ন্ত এখন সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমলাদের নানা রকম দাবিদাওয়ার ফিরিস্তি সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। এই অবস্থায় আমলাতন্ত্রকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা এবং তাদের খবরদারি-বাড়াবাড়ির লাগাম টেনে ধরা যেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

৩. বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ছিলেন এবারের মন্ত্রিসভায় অন্যতম বড় চমক। এই তরুণ কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এখন পর্যন্ত বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি, শৃঙ্খলাও রক্ষা করতে পারেননি। তার এই দায়িত্বটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পাঁচ ইস্যুতে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র

এই সমস্ত তরুণ মন্ত্রীরা তাদের উদ্ভাবনী নানা রকম দক্ষতা দিয়ে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন সেটার উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারুণ্যের যোগ্যতা নির্ধারণ এবং ভবিষ্যত।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন