মহান মে দিবস
উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মহান মে দিবস’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক
বাণীতে তিনি বলেন, “বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল
ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ‘মহান মে দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মেহনতি
মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক
গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো
শহরে রক্তাক্ত আন্দোলনে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মাহুতি দেওয়া বীর
শ্রমিকদের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির
পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার
প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে
তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় শ্রম নীতি প্রণয়ন করেন এবং প্রথম মহান মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি
দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি
ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন
এবং নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন।
১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি শ্রমিকদের মজুরির হার বৃদ্ধি এবং
যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের এডহক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি
পরিত্যক্ত কল-কারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য
অধিকার নিশ্চিত করেন। জাতির পিতার উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক
শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদস্যপদ লাভ করে।
আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক
অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন
করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক
বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত
করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’
প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে যে কোন শ্রমিক কর্মরত অবস্থায়
দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয়
নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও
আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন।
আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে
কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন
করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ শিল্পের কর্মহীন এবং দুস্থ শ্রমিকদের সর্বোচ্চ
তিন মাসের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ
করা হয়েছে। সকল সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য
ও সেইফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয়
পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা-২০১৩, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং গৃহকর্মী
সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের আন্তরিক
প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরো
সুদৃঢ় হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন
পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার
সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে আমরা শ্রম পরিদপ্তরকে সম্প্রতি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করেছি।
শ্রমিক ভাই-বোনদের যেকোন সমস্যা সংক্রান্ত
অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি
হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি,
মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক-মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয়
উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন। মে দিবসের চেতনায় দেশের শ্রমিক-মালিক ঐক্য জোরদার করে
শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের
সোনার বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো; এটাই হোক আমাদের মে দিবসের
অঙ্গীকার।”
তিনি ‘মহান মে দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে
গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিশ্বায়নের এ যুগে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। এক দেশ থেকে আরেক দেশে নানা প্রয়োজনে ছুঁটছে মানুষ। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অনেক তরুণ তরুণী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কেউ কেউ শিক্ষা জীবন শেষে দেশে ফিরলেও খাপ খাওয়াতে না পেরে ভুগছে হতাশায়। অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষা থেকে থেকে যাচ্ছে বিদেশে। ফলে একদিকে যেমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের হারাচ্ছি আমরা, অন্যদিকে তারাও দেশকে দিতে পারছেন না শিক্ষার ফসল।