নগর জীবনে একটু প্রশান্তি, একটু সহজ করতে তিনি কাজ করে গেছেন ক্রমাগত। নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। অনিয়মের বিরুদ্ধে হয়েছেন পাহাড়ের মতো দৃঢ়। তারুণ্যের উদ্দীপনায় কাজ করেছেন। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের প্রিয়মুখ ছিলেন। ছিলেন সফল উদ্যোক্তা এবং দর্শকপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি এক স্বপ্নবাজ নগরপিতা প্রয়াত আনিসুল হক। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
আনিসুল হক জন্মেছিলেন ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে। নোয়াখালীর ছেলেটিই স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজধানী ঢাকাকে বদলে দেওয়ার। ব্যবসায়ী থেকে হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার নগরপিতা। ফেনীর সোনাগাজীর নানাবাড়িতে শৈশব কেটেছে তার। আর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
আনিসুল হকের কর্মজীবন শুরু হয় টেলিভিশনে উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে। ১৯৮০ সালে টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে অভিষেক হয় তার। ১৯৯০-এর দশকে বিনোদন জগতে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আনিসুল হক। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’। ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী মোহাম্মদী গ্রুপে কাজ করছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ।
২০০৫ সালে আনিসুল হক বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএ’রও সভাপতি ছিলেন।
২০১৫ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন আনিসুল হক। তিনি চেয়েছিলেন একটি পরিকল্পিত ঢাকা গড়ে তুলতে। সে কারণেই রাজনীতিতে নামেন। ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন লাভ করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকার একাংশের মেয়র নির্বাচিত হন। খুব দ্রুত পৌঁছে যান মানুষের কাছে। উত্তর সিটির উন্নয়নে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেন। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে তার নেতৃত্বে ডিএনসিসি ঐ সড়ক দখলমুক্ত করে। বছরের পর বছর অবৈধ ট্রাক স্টান্ডের কাছে জিম্মি এলাকাটি উদ্ধারে তার পদক্ষেপে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই তিনি ঢাকা শহর থেকে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেন, যা নগরবাসীর কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের যানবাহনে রাস্তা দখল ছিল। ফলে দীর্ঘসময় যানজটে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তা গতিময় করে তোলেন।
দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করেন নগরীর পার্কগুলো। পথচারী নাগরিকদের জন্য নগরীজুড়ে নির্মাণ করেন আধুনিক টয়লেট। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন মেয়র আনিসুল হক। বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এছাড়াও ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি বাগ এ মোনয়েম-এর অবৈধ দখলে থাকা অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়। স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সবুজ ঢাকার। এ জন্য ৫ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সপরিবারে যুক্তরাজ্যে সফরে যান আনিসুল হক। সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায় মস্তিষ্কের রক্তনালি প্রদাহের সমস্যায় (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ভুগছেন তিনি। সেখানে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়। ৩১ অক্টোবর অবস্থার উন্নয়ন হলে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর ফের আনিসুল হকের অবস্থার অবনতি হয়। রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে তাকে আবার আইসিইউতে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৩০ নভেম্বর, বাংলাদেশ সময় তখন রাত ১০টা ২৩ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনিসুল হকের মৃত্যু হয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। গত ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। পদ্মার বুক চিরে এখন এই সেতু বাঙালির গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। আর এর ফলে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদার নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কেবল একটি স্থাপনা নির্ভর নয়। পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে অনেক...
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিপক্ষেই বেশি কথা হয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব নিই, কিছুদিন পর থেকেই ইভিএম নিয়ে কথাবার্তা পত্রপত্রিকায় চাউর হয়েছিল। এর বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা হয়েছে। শুরু থেকে ইভিএম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। ব্যক্তিগত ধারণাও ছিল না। এরই মধ্যে ইভিএম নিয়ে...