ইনসাইড এডুকেশন

মহান শিক্ষা দিবস এবং ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail মহান শিক্ষা দিবস এবং ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন।

স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শরীফ কমিশন নামে খ্যাত এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে গিয়েছিল। প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থবরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। আইয়ুব সরকার এই রিপোর্টের সুপারিশ গ্রহণ এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।

শরীফ কমিশনের শিক্ষা সংকোচন নীতি কাঠামোতে শিক্ষাকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়- প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। ৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে বলে প্রস্তাব করা হয়। উচ্চশিক্ষা ধনিকশ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য পাস নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা ৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর। এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল। রিপোর্টের শেষ পর্যায়ে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল।

শরীফ কমিশনের এই শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে সেই সময়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলার ছাত্র সমাজ। ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস আজ ১৭ সেপ্টেম্বর। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের ৬১ বছর পূর্তির দিন আজ। 

এর সূচনা হয়েছিল অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, গণমুখী শিক্ষা প্রসার, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য-বঞ্চনা নিরসন তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে। এর প্রত্যক্ষ কারণ ছিল ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ। এর শিক্ষায় অর্থ সংস্থান–সম্পর্কিত প্রস্তাব ও মন্তব্য ছিল: ১. শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়। ২. অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল ও নামমাত্র বেতনের মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করাই জনসাধারণের রীতি। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, অবৈতনিক শিক্ষার ধারণা বস্তুত অবাস্তব কল্পনামাত্র।

এ কমিশনের যে সুপারিশ বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনকে তীব্রতর করে ও আশু কারণ হিসেবে দেখা দেয়, তা হলো—দুই বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছর মেয়াদি করার সুপারিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার। প্রথমে আন্দোলন শুরু হয় ঢাকা কলেজ থেকে। তিন বছরের ডিগ্রি পাস কোর্সের বিপক্ষে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ডিগ্রির প্রতিবন্ধী ছাত্র এম আই চৌধুরী এ আন্দোলনের সূচনা করেন। উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিকে অতিরিক্ত বোঝা মনে করে এ স্তরের পরীক্ষার্থীরাও আন্দোলন শুরু করেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কলেজে এ আন্দোলন চলতে থাকে। স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের লাগাতার ধর্মঘট এবং উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রদের ইংরেজি ক্লাস বর্জনের মধ্যে এ আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। জুলাই ধরে এভাবেই আন্দোলন চলে। ‘ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম’ নামে সংগঠন পরে ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম’ নামে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালাতে থাকে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা ড. মোহাম্মদ হাননান লিখেছেন, ‘তবে আন্দোলনের গুণগত পরিবর্তন ঘটে ১০ আগস্ট (১৯৬২)। এদিন বিকেলে ঢাকা কলেজ ক্যানটিনে স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় শ্রেণির ছাত্ররা এক সমাবেশে মিলিত হয়। এ সভার পূর্বপর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কমিশনবিরোধী আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করতেন, শুধু শিক্ষার দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা অসম্ভব। ১০ আগস্টের এ সভায় ১৫ আগস্ট সারা দেশে ছাত্রদের সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দেশব্যাপী ছাত্রসমাজের কাছে তা ব্যাপক সাড়া জাগায়। এরপর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে এক প্রেসনোটে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘট থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। অন্যথায় পরিস্থিতি মারাত্মক হবে বলে হুমকি প্রদান করে। এমতাবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও ছাত্ররা ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেয়। ব্যাপক প্রচারের সাথে চলতে থাকে পথসভা, খণ্ডমিছিল। ব্যবসায়ী সমিতি, কর্মচারী সমিতি, রিকশা ইউনিয়ন, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শহীদ হন নবকুমার স্কুলের ছাত্র বাবুল, বাসের কন্ডাক্টর গোলাম মোস্তফা ও গৃহকর্মী ওয়াজিউল্লা।’

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলের শিক্ষা নিয়ে ধারণার অনেক পরিবর্তন ঘটলেও কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়িত হয়নি। এ রিপোর্টের মূল নির্যাস অক্ষুণ্ন রেখে প্রণীত ২০১০ সালের শিক্ষানীতিরও কাঙ্ক্ষিত পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে কিছু পরিবর্তন লক্ষণীয়। যেমন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রায় দুই যুগ আগে প্রণীত কারিকুলাম সংস্কার, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে ক্লাস শুরু, পরীক্ষার ফল প্রকাশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অনুকূল সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষায় পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, ছাত্রী উপবৃত্তির পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্র ছাত্রদের জন্য উপবৃত্তি চালু, জেন্ডারবৈষম্য হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণ। তবে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন ও কোচিং–বাণিজ্য বন্ধের কথিত উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০- প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের মতে, সমসাময়িক সময়ে শিক্ষায় বিরাজিত মুখ্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো: ১. স্বল্প বরাদ্দ, ২. শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকর্ষণহীনতা, ৩. মেধার অপচয় ও পাচার, ৪. আশঙ্কাজনক হারে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস, ৫. শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ফলপ্রসূ তদারকির অনুপস্থিতি, সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতি, ৬. অপর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ৭. পাঠদানে শিক্ষকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের অদক্ষতা ও শিক্ষার্থীর শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতন, ৮. শিক্ষকদের একাংশের নৈতিক অবক্ষয়, ৯. প্রায় এক যুগেও সমন্বিত শিক্ষা আইন চূড়ান্ত না হওয়া, ১০. শিক্ষাক্রম/পাঠ্যসূচির সঙ্গে কর্মসংস্থান/শ্রমবাজারের সংস্রবহীনতা, ১১. শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য পরিসংখ্যানে অসংগতি, ১২. শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক-প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সংযোগহীনতা, ১৩. শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ। 


মহান শিক্ষা দিবস   ৬২’র   শিক্ষা আন্দোলন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড এডুকেশন

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা ও একাদশের ক্লাস শুরুর বিষয়ে যা জানা গেল

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

আন্দোলন আর অস্থিরতায় স্থগিত হয়েছে এইচএসসির ৮টি পরীক্ষা। নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে না একাদশ শ্রেণির ক্লাসও। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। শিক্ষাবোর্ড বলছে, ১১ আগস্টের পর নতুন সূচিতে শুরু হবে স্থগিত পরীক্ষা। দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে আগস্ট থেকে শুরু হবে একাদশ শ্রেণির ক্লাস।

কোভিডের ধকলে সিলেবাস শেষ না হওয়ায় এমনিতেই এপ্রিলের এইচএসসি পরীক্ষা এবার শুরু হয়েছে জুনের শেষে। তার ওপর একমাস পার হলেও এখনো অধিকাংশ বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কপালে।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলছেন, ১১ আগস্টের পর ক্রমান্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো। স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নিতে যতদিন সময় লাগবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে ততদিন দেরি হবে।

এদিকে ৩০ জুলাই নতুন শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ভর্ভি প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি। তাই আগস্ট থেকে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছে শিক্ষাবোর্ড।


আগস্ট   একাদশ   শ্রেণি   ক্লাস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড এডুকেশন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে ‍শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবিরতা

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৬ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে  এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  এদিকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ কয়েকদফা পিছানো হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

১. এইচএসসির ৮ পরীক্ষা স্থগিত:  এবারের এইচএসসি পরীক্ষাদের দুর্ভাগ্যই বটে। ৩০ জুন প্রথম পরীক্ষার দিন, বৃষ্টিতে ভিজে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছিল। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরো চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। এ নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।

২. মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজ বন্ধ: দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এম খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

৩. প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ:  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

৪. দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ: ২০১৮ সালের পর  এবারের দ্বিতীয় দফায় কোটা সংস্কার আন্দোলন মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতায় পর্যবসিত হয়। ফলে আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে দেশের  সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে ক্লাস ছেড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন আন্দোলনে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। এতে করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর কবে নাগাদ এই আন্দোলন শেষ হবে তার সঠিক নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে সেমিস্টার জটে পড়তে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস রূপের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপনী কার্যক্রম দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা বিশিষ্টজনদের।  

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তাতে কোটাসংক্রান্ত জটিলতার অনেকটাই অবসান হয়েছে। আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে সরকারের ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালে পরিপত্রের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিল। সম্প্রতি রায়ে আপিল বিভাগ ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি ৭ শতাংশ কোটাভিত্তিক করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে আদালত এটাও বলেছেন যে এই কোটা কমানো-বাড়ানো বা বাতিল করার এখতিয়ার সরকারের।

আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ আসন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। আদালতের এই নির্দেশনার ভিত্তিতে সরকার ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

আন্দোলন পরবর্তী সংঘাতের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সরকার। ইতিমধ্যে কারফিউ শিথিল করে সীমিত পরিসরে অফিস আদালত খুলে দিয়েছে সরকার। দৈনন্দিন জীবনযাপন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে আগামী মাসে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


কোটা   সংস্কার   আন্দোলন   প্রভাব   শিক্ষা   ব্যবস্থা   স্থবিরতা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড এডুকেশন

এইচএসসির আরও চারটি পরীক্ষা স্থগিত

প্রকাশ: ০২:৪২ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরো চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানান, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।

এর আগে, কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের, পরে ২১, ২৩ ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।


এইচএসসি   পরীক্ষা   স্থগিত   ঢাকা   শিক্ষা   বোর্ড  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড এডুকেশন

‘স্থগিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে’

প্রকাশ: ১১:১৩ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের এইচএসসি সমমানের চারদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত হওয়া এসব পরীক্ষা আগামী ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তপন কুমার বলেন, ‘স্থগিত হওয়া সব পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।' আর কোনো পরীক্ষা স্থগিত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ জুলাই যথারীতি সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ আগস্ট এইচএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল।


এইচএসসি   পরীক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড এডুকেশন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা অনির্দিষ্টকাল স্থগিত

প্রকাশ: ০৪:১২ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। স্থগিত পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি পরে জানানো হবে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব পরীক্ষা ২৪ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছিল।

একই কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণিকার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একই কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।


জাতীয়   বিশ্ববিদ্যালয়   অধীন   পরীক্ষা   অনির্দিষ্টকাল   স্থগিত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন