একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের
এমন উৎকণ্ঠায় প্রশ্ন উঠেছে—এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার চেয়েও কি কঠিন ‘নামি’ কলেজে ভর্তি
হওয়া?
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তিচ্ছু
শিক্ষার্থীর চেয়ে কলেজে আসন সংখ্যা বেশি। তবে সব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন নয়। হাতে গোনা
কিছু কলেজ সবার পছন্দের শীর্ষে। সবাই পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
এতে শেষ পর্যন্ত কলেজ পেতেও বেগ পেতে হয় তাদের। জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে কাঙ্ক্ষিত কলেজ
পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। পরে অনেকে অন্য কলেজ কিংবা পলিটেকনিকেও ভর্তি হতে বাধ্য হন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর দ্বিগুণ আসন
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি বোর্ডে মোট পাস করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩
জন শিক্ষার্থী। অথচ দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট আসন প্রায় ৩৪ লাখ। সেই হিসাবে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ফাঁকা
থাকবে অর্ধেকের বেশি আসন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক (অতিরিক্ত
দায়িত্বে) অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা জানান, সারাদেশে ৯ হাজার ২০০টির মতো কলেজ
ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। মোট আসন সংখ্যা ২২ লাখেরও
কিছু বেশি।
তিনি বলেন, ‘এটা তো গেলো কলেজ-মাদরাসার হিসাব। সরকারি-বেসরকারি
পলিটেকনিকে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সেখানেও তো প্রায় আড়াই লাখ আসন রয়েছে। ভোকেশনাল
যেটাকে আমরা বলি, সেখানেও এইচএসসিতে (ভোকেশনাল) পড়ার সুযোগ রয়েছে ৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর।
সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ আসন রয়েছে।’
যে কারণে প্রত্যাশিত কলেজ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা
গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঘোষিত তিন ধাপে ভর্তি শেষ করতে চাইলেও তা সম্ভব
হচ্ছে না। অনেক সময় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তিন ধাপে ভর্তির আবেদন শেষে কোনো কলেজ
বরাদ্দ পান না।
কারণ হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন,
আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বারবার পছন্দের
কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে
একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
আমরা সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে চাই। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ
না পেয়ে বারবার একই কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখে। এতে তারা নির্ধারিত তিন ধাপে কলেজ বঞ্চিত
হয়। তবে অনেক সময় বিশেষ ধাপে আমরা তাদের ভর্তি করিয়ে নিই।- ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা সব
শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে চাই। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ না পেয়ে বারবার একই কলেজ
পছন্দের তালিকায় রাখে। এতে তারা নির্ধারিত তিন ধাপে কলেজ বঞ্চিত হয়। তবে অনেক সময় বিশেষ
ধাপে আমরা তাদের ভর্তি করিয়ে নিই। কাউকে বঞ্চিত করি না।’
‘নামি’ কলেজে ভর্তির লড়াই
এসএসসি পরীক্ষায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অধিকাংশের লক্ষ্য
দেশসেরা কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসিতে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েও
অনেকে বাড়তি প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসে। এতে রাজধানীর ‘নামি’ কলেজ হিসেবে পরিচিত
প্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র লড়াই চলে। শেষ পর্যন্ত জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীও পছন্দের
কলেজ না পেয়ে হতাশ হন।
গত বছর তিন ধাপে ভর্তির আবেদন করেও কলেজ পাননি সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৬২ জন। তাদেরই একজন পটুয়াখালীর সায়েম
আহমেদ। এবার এসএসসির ফল প্রকাশের পর সায়েম একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে
তিনি লিখেছেন, ‘সবাই সাবধান! জিপিএ-৫ পাওয়ার চেয়েও কিন্তু কলেজে চান্স পাওয়া কষ্ট।
একটু ভুল করলেই বড় খেসারত দিতে হবে। গত বছর আমাকে ভুলের খেরাসত দিতে হয়েছিল। সবাই চেষ্টা
করবা, প্রথম দুই ধাপেই যেন কলেজ পেয়ে যাও।’
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল। ফেসবুকে তিনি
স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, তার ছেলে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঢাকার কোন কলেজে
ভর্তি করলে ভালো হবে, তা শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন। তার পোস্টে বিভিন্নজন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।
মোহাম্মদ ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছেলেটা খোকসায়
একটা বেসরকারি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। সায়েন্সের ছাত্র। একটা বিষয় ছাড়া
সব বিষয়ে এ+ পেয়েছে। একটুর জন্য গোল্ডেন এ+ হয়নি। আমি চাই, ও ঢাকার ভালো কলেজে পড়ুক।
যত কষ্টই হোক ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো।’
কুষ্টিয়ায়ও তো ভালো কলেজ রয়েছে, তাহলে ঢাকায় কেন—এমন প্রশ্নে ইকবালের
সাফ জবাব, ‘ঢাকা হলো রাজধানী। ওখানকার কলেজ কুষ্টিয়ার চেয়ে ভালো হবে। বাড়িতে থাকলে
ছেলে গ্রামের বাজে পরিবেশে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঢাকায় রেখে পড়াবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমম্বয় কমিটির সদস্যদের তথ্যমতে, সারাদেশে ১১
হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ থাকলেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রে
হাতে গোনা কিছু কলেজ। এর মধ্যে ঢাকার কলেজগুলোতে আগ্রহ বেশি। ঢাকার ভালো কলেজ বলে পরিচিত
প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বসাকুল্যে ৩২ থেকে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। আর
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ‘নামি কলেজে’ সবমিলিয়ে আসন ১ লাখ ২০ হাজারের মতো। ফলে ভালো কলেজ
বলে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেই ভর্তির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
ছাত্রীদের পছন্দের কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম ভিকারুননিসা নূন স্কুল
অ্যান্ড কলেজ। এ কলেজে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির সুযোগ পান। ভিকারুননিসা
নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আসন সীমিত। যারা আমাদের
স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে, তাদের আমরা ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেই। এরপর বাইরের
শিক্ষার্থী নেই। দেখা যায়, আবেদনকারী সবাই জিপিএ-৫ পাওয়া। তখন নম্বরের ওপর ভিত্তি করে
শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কমিটি করে।’
শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা আরেকটি কলেজ হলো—রাজউক উত্তরা
মডেল কলেজ। এখানে একাদশ শ্রেণিতে আসন প্রায় ১ হাজার ১০০টি। কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার
জেনারেল এ এস এম বাহাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা আবেদন করেন, সবাই মেধাবী। আমাদের
আসন সীমিত। সেজন্য সবাইকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। আমি মনে করি, সব কলেজে শিক্ষার
মান নিশ্চিত করতে পারলে এ প্রতিযোগিতা কমে যাবে।’
কেন ভালো কলেজের সংকট?
অনুমোদিত কলেজের সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। অথচ ভালো বিবেচিত হওয়া কলেজের সংখ্যা সারাদেশে
মাত্র ৮০০-৯০০টি। বাকি আট হাজারের বেশি কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে পছন্দের
বা ‘ভালো কলেজ’ বলে বিবেচিত হচ্ছে না।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক কলেজ তদবির করে সরকারের কাছ থেকে
অনুমোদন নিয়েছে। অথচ সেখানে শিক্ষক নেই, পড়ালেখার ভালো পরিবেশ নেই। এ কারণে সেসব কলেজে
শিক্ষার্থীরা পড়ার আগ্রহ দেখান না।
কলেজগুলোর সংকট নিরসনে শিক্ষা প্রশাসনের নজর কতটুকু? জানতে চাইলে
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘অধিদপ্তরের
পক্ষ থেকে নিয়মিত কলেজগুলোর খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। পড়াশোনার মান ভালো না থাকায় অনেক স্কুল-কলেজের
এমপিও বাতিলের নজিরও আছে। যেসব কলেজ এখন পিছিয়ে, সেগুলোতে শিক্ষার মান ভালো করার জন্য
আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমম্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘বোর্ডের পক্ষ থেকে নিয়মিত
ইনস্পেকশন (পরিদর্শন) হয়। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার মান নিম্নমুখী হলে এবং শিক্ষক
সংকট থাকলে তা প্রতিবেদন আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাই। বোর্ডের এখতিয়ারের মধ্যে যেটুকু
আছে, সেটাও আমরা করি।’
তিন ধাপে ভর্তি আবেদন, সর্বোচ্চ ফি ৮৫০০ টাকা
প্রতি বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারও নীতিমালার
খসড়া করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করা হবে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী—এবারও
একাদশ শ্রেণিতে তিন ধাপে ভর্তি আবেদন নেওয়া হবে। আগামী ২৯ মে থেকে আবেদন শুরু হয়ে চলবে
১১ জুন পর্যন্ত। পাশাপাশি গত বছরের মতো এবারও সর্বোচ্চ ভর্তি ফি সাড়ে ৮ হাজার টাকাই
থাকছে।
অন্যদিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসনের ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা হিসেবে
বিবেচিত হবে। এসব শূন্য আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং দুই শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর/সংস্থায়
কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে কোটার আসন ফাঁকা
থাকলে তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।
মিশনারি চার কলেজে ভর্তি পরীক্ষা
একাদশ শ্রেণিতে ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি করানো হচ্ছে। তবে খ্রিস্টান মিশনারি
পরিচালিত কলেজগুলো বিশেষ সুবিধা পাওয়ায় তারা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে
ভর্তি করে আসছে। কলেজগুলো হলো—নটর ডেম, হলিক্রস কলেজ, সেন্ট জোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরিজ
স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, আমরা ভর্তি পরীক্ষা
নেই। লিখিত ও একই দিনে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাই করা হয়। ফলাফলে যারা ভালো করে
তাদের আমরা ভর্তি করি। আদালতের অনুমতি নিয়েই আমরা এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে
আসছি। এবারও একই পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হবে।’
জিপিএ-৫ এসএসসি শিক্ষা বোর্ড ভর্তি
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ কয়েকদফা পিছানো হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
১. এইচএসসির ৮ পরীক্ষা স্থগিত: এবারের এইচএসসি পরীক্ষাদের দুর্ভাগ্যই বটে। ৩০ জুন প্রথম পরীক্ষার দিন, বৃষ্টিতে ভিজে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছিল। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরো চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। এ নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে
এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।
২. মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজ বন্ধ: দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এম খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
৩. প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৪. দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ: ২০১৮ সালের পর এবারের দ্বিতীয় দফায় কোটা সংস্কার আন্দোলন মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতায় পর্যবসিত হয়। ফলে আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে ক্লাস ছেড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন আন্দোলনে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। এতে করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর কবে নাগাদ এই আন্দোলন শেষ হবে তার সঠিক নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে সেমিস্টার জটে পড়তে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস রূপের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপনী কার্যক্রম দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা বিশিষ্টজনদের।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তাতে কোটাসংক্রান্ত জটিলতার অনেকটাই অবসান হয়েছে। আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে সরকারের ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালে পরিপত্রের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিল। সম্প্রতি রায়ে আপিল বিভাগ ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি ৭ শতাংশ কোটাভিত্তিক করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে আদালত এটাও বলেছেন যে এই কোটা কমানো-বাড়ানো বা বাতিল করার এখতিয়ার সরকারের।
আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ আসন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। আদালতের এই নির্দেশনার ভিত্তিতে সরকার ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
আন্দোলন পরবর্তী সংঘাতের কারণে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সরকার। ইতিমধ্যে কারফিউ শিথিল করে সীমিত পরিসরে
অফিস আদালত খুলে দিয়েছে সরকার। দৈনন্দিন জীবনযাপন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে
আগামী মাসে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে বলে
আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবিরতা
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরো চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। এ নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানান, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।
এর আগে, কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের, পরে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।
এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের চারদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত হওয়া এসব পরীক্ষা আগামী ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তপন কুমার বলেন, ‘স্থগিত হওয়া সব পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।' আর কোনো পরীক্ষা স্থগিত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ জুলাই যথারীতি সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ আগস্ট এইচএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মন্তব্য করুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। স্থগিত পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি পরে জানানো হবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব পরীক্ষা ২৪ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছিল।
একই কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণিকার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে একই কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীন পরীক্ষা অনির্দিষ্টকাল স্থগিত
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে আরও তিন দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আন্তশিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আগামী ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের অনুষ্ঠিতব্য সকল শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। স্থগিত পরীক্ষার নতুন তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।
এ ছাড়া সব বোর্ডের অধীনে ২৮ জুলাই ও পরবর্তী পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ কয়েকদফা পিছানো হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।