উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের পরেও দেড় যুগ ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৪৫ চিকিৎসক। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পদায়নে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশের এক মাস পার হলেও তা কার্যকরে গড়িমসির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের কার্যালয়ের অবস্থান কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব অভিযোগ করেন।
তাদের অভিযোগ, উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের পরেও প্রায় দেড় যুগ ধরে ৪৫ চিকিৎসকের পদোন্নতি হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পদায়নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশের (আপিল বিভাগ রিট নং- ১৩৭১/২০২৪) এক মাস পার হলেও তা কার্যকর হয়নি বলেও অভিযোগ তাদের।
জানা গেছে, রিটকারী চিকিৎসকরা ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান। পরে তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমডি, এমএস, এফসিপিএস, এমআরসিএস, এমআরসিপি, এমফিলসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই তালিকায় বিএসএমএমইউর মেডিসিন, কার্ডিওলজি, রিউমাটোলজি, হেমাটোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, কোলোরেক্টাল সার্জারি, নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, শিশু সার্জারি, ইএনটি, গাইনি অ্যান্ড অবস, অ্যানেস্থেসিয়া, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, প্রোস্থোডন্টিক্সসহ ৫৪টি বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। যারা যোগদানের পর থেকে একই পদে (মেডিকেল অফিসার হিসাবে) রয়েছেন। অল্প কিছু সংখ্যাক কনসাল্টেন্ট হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্তেও এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদায়ন অথবা পদোন্নতি কোনটাই দেওয়া হচ্ছে না।
পদোন্নতির দাবিতে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর আন্দোলনে নামেন এসব চিকিৎসকরা। তারা তৎকালীন উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেন। সবশেষ ২০২১ সালে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির প্রতি সুবিচার করেনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে যোগ্য বিভাগীয় প্রার্থী থাকার পরও বাইরে থেকে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের।
তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে বঞ্চিত ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদোন্নতির দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাইকোর্ট বিভাগ (রিট নং- ৭৬৮৭/২০২২) ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আবেদনকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করে ১৯৯৯ সালের বিধি মেনে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদেশের সার্টিফায়েড কপি (রায়ের অনুলিপি) প্রকাশ করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি বঞ্চিতরা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে সেই রায়ের কপিসহ পদায়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর ৩ মাসের বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
গত ৩ জুন ২০২৪ এ মহামান্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল বিভাগের ফুল বেঞ্চ রিটকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে অবিলম্বে পদায়ন করার হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে নির্দেশনাসহ রিট নিষ্পত্তি করে।
তবে এরপরেও চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়নি জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, আপীল বিভাগের রায়ের পরেও কর্তৃপক্ষ পদায়ন না করে টালবাহানা করছেন। আপীল নিষ্পত্তির কার্যাদেশ অনুযায়ী অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারী চিকিৎসকগণকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করে রায় কার্যকর করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী দ্রুত রায় কার্যকর না করলে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে।
তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে দাবি করে এসব চিকিৎসক বলেন, বিএসএমএমইউ/১৯/২৭২৪ ও ২০০৮ সালের ২৮তম সিন্ডিকেট বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিএসএমএমইউ দেশের প্রথম ও সবচয়ে বড় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আত্তীকৃত ও স্থায়ীভাবে নিয়োগ তরা মেডিকেল অফিসারদের পদোন্নতির ব্যাপারে ১৯৯৯ সালে (স্বারক নং- সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণীত হলেও পরবর্তীতে ২০০৯ সালের সিন্ডিকেটের (স্বারক নং- বিএসএমএমইউ/২০০৯/৯০১৩) সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর যারা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করবেন, এ ধরনের চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা ছিল। যেখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরে তাদের স্ব-বেতনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেই আইন কার্যকর হয়নি। আমাদের অনেকেরই চাকরি শেষের দিকে। অনেকের সন্তান এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও গ্রহণ করছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।